ভালবাস চাই, ভালবাসতে চাই
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২৭ বছর বয়সী যেকোনো ছাত্র বা ছাত্রী ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারবেন। আর আরেক ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের খসড়া গঠনতন্ত্রের ৬:১-এর (খ) ধারায় বলা আছে, ছাত্ররাই শুধু সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন।
গঠনতন্ত্রে যা-ই থাক, বাস্তবে এই দুই ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে এখন আর ছাত্ররা নেই। এর বদলে সংগঠন চালাচ্ছেন অছাত্র ও বয়স্করা। বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বয়স এখন প্রায় ৪৭।
পেশায় ব্যবসায়ী এই নেতা গত সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ’৯২ সালেই পড়াশোনা শেষ হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি যে হলফনামা দিয়েছেন তাতেও ’৯২ সালে পাস করার কথা উল্লেখ করেছেন। টুকু বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক।
তাঁর আপন ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম সংগঠক ও গ্রেনেড সরবরাহকারী হিসেবে অভিযুক্ত।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তাঁরও ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে দেড় দশক আগে। ৪২ বছরের এই নেতা ব্যবসা করলেও এখনো নিজেকে ছাত্র বলে দাবি করেন।
একই চিত্র ছাত্রদলের পুরো কমিটিতে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৭১ সদস্যের মধ্যে ১০৩ জনই বিবাহিত। তাঁদের মধ্যে ছয়জন সহসভাপতি, চারজন সদস্যসহ ৩০ নেতার সন্তানেরা স্কুলে যায়। কেন্দ্রীয় কমিটির ১৭১ জনের মধ্যে ১৫০ জনেরই ছাত্রত্ব নেই। ১০২ জনের বয়স ৩৫-এর ওপরে।
সারা দেশের চিত্র আরও হতাশাজনক।
সারা দেশে ছাত্রদলের ৮৫টি জেলা কমিটির একটিরও মেয়াদ নেই। নেতৃত্বে আছেন অছাত্ররা।
ছাত্রদলে কেন এত অছাত্র? এই প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, দলের জন্য যাঁরা কাজে আসবেন, তাঁদের নিয়েই কমিটি করা হয়েছে। তবে এটি ঠিক, অনেকের ছাত্রত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শিগগিরই সম্মেলন করে সবগুলো কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ দেশের অনেক সংগ্রাম-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররা। কাজেই হানাহানি না করে একসঙ্গে বসে সবার আদর্শভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি করা উচিত। আর নিয়মিত ছাত্রদের কাছেই ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত।
একই অবস্থা ছাত্রলীগে: এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান ১৯৯৩ সালে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী ’৯৪ সালে এসএসসি পাস করেন। সভাপতির মাস্টার্স শেষ হয় ২০০১ সালে।
সাধারণ সম্পাদকের মাস্টার্স শেষ হয় ২০০৪ সালে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছরের বেশি বয়সের কারও ছাত্রলীগে থাকার কথা নয়। ২০০৬ সালের সম্মেলনে সেই বয়স বাড়িয়ে ২৯ করা হয়। কিন্তু দুজনেরই বয়স এখন ৩৫-এর কোটায়। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটি অবৈধ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা কত কেউ জানে না। তবে নিয়মিত কার্যক্রমে ছাত্রলীগের ১০০ জন নেতাকে দেখা যায়। এই ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনেরই ছাত্রত্ব নেই। একই অবস্থা সারা দেশে।
এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সারা দেশের ৮৭টি জেলা কমিটির মধ্যে ৮২টিরই নেতৃত্বে এখন অছাত্ররা। গঠনতন্ত্রে ২৭ বছর বয়সের কথা থাকলেও প্রতিটি কমিটির নেতাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে। এমনকি চল্লিশোর্ধ্ব নেতাও আছেন অন্তত ৩৫টি জেলায়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ২৩(ক) ধারায় বলা আছে, কোনো সদস্য বিয়ে করলে সংগঠনে থাকতে পারবেন না। তবে ছাত্রলীগের ১৪ জন সহসভাপতিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ৫০ জন সদস্য বিবাহিত।
আর জেলা কমিটিগুলোতে অবিবাহিত নেতা খুঁজে পাওয়াই কঠিন।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জেলা কমিটির মর্যাদা দেয় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই সংগঠনেরই বেহালদশা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, শাহজালাল, জগন্নাথ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বিভিন্ন সরকারি কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কোনো ছাত্র নেই। একই অবস্থা ছাত্রদলেও।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, এটি সত্যি, এখন ছাত্রলীগে অনেকেই আছেন, যাঁরা নিয়মিত ছাত্র নন। অনেকের বয়সও ৪০-এর ওপরে। কিন্তু গঠনতন্ত্র মেনে তাঁরা সারা দেশের কমিটিগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে অনেকগুলো সম্মেলন হয়ে গেছে। আরও ৪৪টি জেলা কমিটির সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বলেন, আদর্শ ও নৈতিকতা না থাকলে ছাত্ররাজনীতির কোনো মূল্য নেই। তিনি বলেন, নিয়মিত ছাত্রদের হাতেই ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত। ছাত্রদের এমন কোনো অপকর্ম করা উচিত নয়, যেটি মানুষ আশা করে না। তাঁর মতে, দেশ ও মানুষের কল্যাণে ছাত্ররাজনীতি করা উচিত। সত্যিকারের তরুণ ছাত্ররাই সেটি করতে পারে।
অন্য সংগঠনগুলোরও একই অবস্থা: শুধু ছাত্রদল বা ছাত্রলীগই নয়, বাম ছাত্রসংগঠনগুলোরও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে এখন অনেক অছাত্র রয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি রফিকুল ইসলামের বয়স চল্লিশের কোটায়, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায়ের বয়স ৩২ পেরিয়েছে। দুজনের কারোরই ছাত্রত্ব নেই। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন তাঁরা।
জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন আহমেদ তাফছিরের বয়স ৪০ পেরিয়েছে।
ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে দেড় দশক আগে। সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলমেরও ছাত্রত্ব নেই। হোসাইন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নানা কারণে তাঁরা সম্মেলন করতে পারেননি।
ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ফকরুদ্দিন কবির ও সাধারণ সম্পাদক জনার্দন দত্তেরও ছাত্রত্ব নেই। তিনি বলেন, এটি সত্যি, তাঁরা দুজনের কেউ ছাত্র নন।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মানবেন্দ্রের দাবি, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্র ইউনিয়নের সব কমিটিতে এখনো ছাত্র রয়েছে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের গঠনতন্ত্রের ৮ ধারা অনুযায়ী কারও ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার দুই মাস পর তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে। তবে শিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন এখন নিয়মিত ছাত্র নন। সভাপতি ২০০৪ সালে স্নাতকোত্তর এবং সাধারণ সম্পাদক ২০০৮ সালে এমবিবিএস পাস করেছেন। দুজনেরই দাবি, নিয়মিত ছাত্র না হলেও গঠনতন্ত্র মেনেই তাঁরা কমিটিতে আছেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা কত?: ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(ক) ধারায় বলা আছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ২০১ সদস্যের হবে। কিন্তু বাস্তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা কত, তা বলতে পারেননি কোনো নেতাই।
২০০৬ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সদ্য বিদায়ী সভাপতি লিয়াকত সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে ২০ দিনের মধ্যে ২০১ সদস্যের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিন মাস পর গত জুলাই মাসে শেখ হাসিনা ১৩৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন।
মূল ওই তালিকায় উল্লেখ করা বিভিন্ন নামের পাশে ‘অথবা’ চিহ্ন দিয়ে আরও ৩০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই ‘অথবা’গুলো ধরলে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৭। তবে ওই তালিকা গত চার বছরেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সাধারণত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করার কথা থাকলেও অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে গোপনে চিঠি দিয়ে কে কোন পদে আছেন জানানো হয়। প্রায় চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
অথচ বিভিন্ন পদে নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন অন্তত ৩০০ জন।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান জানান, বিজ্ঞপ্তির পরিবর্তে তাঁরা চিঠি দিয়ে মনোনীত কেন্দ্রীয় সদস্যদের পদ পাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এতে অস্বচ্ছতা কিংবা লুকোচুরির কিছু নেই। আর কমিটি গঠনে কোনো অর্থের লেনদেন হয়নি।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের সহসভাপতি থাকবেন ২১ জন।
কিন্তু ৩১ নেতার নাম পাওয়া গেছে, যাঁরা সহসভাপতি হিসেবে নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর মধ্যে হাসানুজ্জামান, রাশেদুল মাহমুদ, অপর্ণা পাল, এমদাদ হাওলাদার, আমিনুল হক, ইলিয়াসুজ্জামান, তারেক আল মামুন, মিজানুর রহমান, গাফফারী রাসেল, শিহাব উদ্দিন, আবু সাইদ, লাভলু মোল্লা, ফজলুল হক কারোরই ছাত্রত্ব নেই। তাঁদের সবার বয়স ৩২ থেকে ৩৬। যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে সৈয়দ আবুল কালাম, ইকবাল মাহমুদ, এ বি এম আরিফ ও মিজানুর রহমানের ছাত্রত্ব নেই। তাঁদের বয়সও ৩৫-এর কাছাকাছি।
কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ পদে একই দশা। কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নেতাকে কখনো কোথাও ক্লাস করতে দেখা যায়নি।
ছাত্রলীগে কতজন ছাত্র আছে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, এভাবে সঠিক সংখ্যা বলা যাবে না। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভবিষ্যতের সব কমিটিতে যাতে ছাত্র থাকে এবং সবার বয়স যাতে ২৯-এর মধ্যে থাকে, সেটি নিশ্চিত করা হবে।
মেয়াদহীন কমিটি: ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল হবে দুই বছর।
এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। নইলে নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। কিন্তু এই নিয়ম না মেনে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠন।
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠন করা হয় ২০০৬ সালের এপ্রিলে। এরপর চার বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটি হয়নি।
সংগঠনের জেলা কমিটিগুলোর অধিকাংশই ২০০৩ সালে করা। বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত চার বছরে মাত্র ছয়টি জেলা কমিটির সম্মেলন করেছে। বাকিগুলোর নেতৃত্বে এখনো আছেন অছাত্র ও বয়স্করা।
ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীর অভিযোগ, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই নেতা নিজেদের ক্ষমতা অটুট রাখতেই নতুন কমিটি করছেন না। বারবার কমিটি গঠনের দাবি উঠলেও তাঁরা নানা অজুহাতে কমিটি গঠন পিছিয়ে দেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এই অভিযোগ ঠিক নয়। জরুরি অবস্থাসহ নানা কারণে কমিটি করা হয়নি। তবে শিগগিরই সম্মেলন করে কমিটি করা হবে।
ছাত্রদলে ছাত্র নেই, বিবাহিতরাই নেতা: ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসংখ্যা হবে ১০১ জন। কিন্তু গত ১ জানুয়ারি গঠনতন্ত্রের বাইরে আরও ৭০টি পদ যোগ করে ১৭১ জনের কমিটি গঠন করা হয়।
অভিযোগ আছে, অতিরিক্ত এই ৭০টি পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে টাকার লেনদেন হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভিন্ন মামলার আসামি, সন্ত্রাসী, ক্যাডার স্থান পেলেও ছাত্ররা স্থান পাননি এমন অভিযোগ সংগঠনের বঞ্চিত নেতা আহসান উদ্দিন খানের। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে এমন একজনও নেই, যিনি ছাত্র।
ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির ১০৩ জন নেতাই বিবাহিত। তাঁদের মধ্যে সুলতান সালাউদ্দিন, সহসভাপতি দুলাল হোসেন, বজলুল করিম চৌধুরী, আবু বকর, ইয়াসিন আলী, রফিকুল ইসলাম, শেখ শামীম, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক তরুণ দে ও আনোয়ারুল ইসলাম ভুঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সাইফুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, আদেল মাহমুদ, জাকির হোসেন, আইন সম্পাদক কামরুজ্জামান, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক এজমল হোসেন, সদস্য এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফখরুল ইসলাম, গোলাম মাওলা ও আজিজুর রহমান বিবাহিত এবং সন্তানের জনক।
এ ছাড়া ছয়জন সহসভাপতি, চারজন যুগ্ম সম্পাদক, চারজন সহসাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক ও ছয়জন সহসাংগঠনিক সম্পাদক, আটজন সম্পাদক, ১০ জন সহসম্পাদক এবং ৩০ জন সদস্য বিবাহিত। তাঁদের কারোরই ছাত্রত্ব নেই।
ছাত্রদলের নতুন কমিটির সহসভাপতি শেখ মো. শামীম ব্যবসায়ী, সহসাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসেন চার বছর ধরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল্লাহ ইমরান, সহসাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও ক্রীড়া সম্পাদক আহসানুল হক তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক।
সহসাংগঠনিক এস এম জাহাঙ্গীর প্রেস ব্যবসায়ী। সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আইনুল হক শ্রমিক নেতা। সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক আবদুল করিম সরকার চিহ্নিত ক্যাডার। স্কুলবিষয়ক দ্বিতীয় সম্পাদক বিপ্লব পান্ডে ও সদস্য নুরুজ্জামান শিপন চাকরি করছেন। এ ছাড়া এক ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক পদে দেখানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউর রহমানকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক এবং একই সঙ্গে নির্বাহী সদস্য বানানো হয়েছে।
ছাত্রদলের সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ১৭১ সদস্যের নতুন কমিটির কারোরই ছাত্রত্ব নেই। বরং ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, হাইকোর্টের আইনজীবী, ব্যবসায়ী, হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক—এমন অনেক পেশার লোক অর্থের বিনিময়ে এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে কতজন ছাত্র আছে, জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, ত্যাগী ও বঞ্চিতদের নিয়েই ছাত্রদলের কমিটি করা হয়েছে। অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে কতজন ছাত্র আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি মুখ্য বিষয় নয়। যাঁরা দলের কাজে লাগবেন, তাঁদের নিয়েই কমিটি করা হয়েছে।
সূত্র :- শরিফুল হাসান | তারিখ: ১৫-০২-২০১০ (প্রথম আলো)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।