প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ
সিট বেল্ট বাঁধা। ‘মহাপতঙ্গ’ চলতে শুরু করল, আস্তে আস্তে গতি বাড়ছে, ফুড়ুৎ করে উড়তে শুরু করল। সে তার দু ডানা মেনে উড়ছে, একবার উপরে আরেকবার আরেকটু নিচে; নিজেকে ওজনহীন অনুভূত হল, আমি তখন শূন্যের পরিব্রাজক। ছোটকাল থেকে যখনই আকাশে বিমান চলতে দেখতাম- সাধ জাগত, আমি কেন নেই সেখানে। তবে আমি আজ সেখানে, আমার মন পড়ে আছে ঐখানে, যেখানে আমার মা হা করে তাকিয়ে আছে শূন্যতার পানে।
যতই উপরে উঠি, বাংলাদেশের রূপ আমাকে মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতর করে; যেন শিল্পী তার নিপুণ তুলিতে মনের সুখে টান দিয়েছেন ক্যানভাসে! ক্লাস নাইনে থাকতে ইংলিশ ফর টুডে তে পড়েছিলাম ‘মিনিএচার’ শব্দটি, সে প্যাসেজ টি ছিল বিমান ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে। অনিয়তভাবে বেড়ে উঠা ঢাকার বিল্ডিংগুলো যেন অই মিনিএচার। বাংলাদেশের ইংরেজি ব্যাকরণের ভাষ্যমতে, সাপের মতন আঁকাবাঁকা রাস্থা গুলো সত্যিই সাপের মত লেগেছিল কি না বলতে পারবো না; তবে জানালার ফাঁক দিয়ে অই দৃশ্য দেখলে যে কেউ মনের অজান্তে বলে উঠে ‘ওয়াও’!
একসময় মহাপতঙ্গ উঠানামা বন্ধ করে, অনেকটা স্থিরভাবে চলতে থাকে। তবে মেঘের রাজ্যে ঢোকার পর থেকে, মেঘের সাথে ঘর্ষণের শব্দ কান ঝালাপালা করে দেয়, তখন থেকে আমি আর স্বস্তিতে ছিলাম না। মেঘের রাজ্য সে তো অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা, পাহাড়ের মতন আঁকাবাঁকা স্তূপাকারের মেঘগুলো রূপকথার সৌন্দর্যকেও হার মানায়, মেঘের সাথে আলোর প্রতিসরণ-প্রতিফলনের লুকোচুরি খেলা চলতেই থাকে।
তবে আমার যাত্রার সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ সময় কেটেছে বেন আফ্ল্যাকের ‘আরগো’ দেখতে দেখতে। মুভিটি সত্যিই অসাধারণ!
গুয়াংজুতে আমাদের ফ্লাইট ল্যান্ড করে সাড়ে পাঁচটার সময়। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। কারণ সাড়ে সাতটায় গুয়াংজু-ইছাং কানেক্টইন। এই অল্প সময়ের মধ্যে বেগেজ নিয়ে বোর্ডিং পাস নেয়া, তারপর আবারো ফ্লাইট ধরা; এক কথায় অনেকটা কষ্ট সাধ্য।
বলাইবাহুল্য, আমার পরিচিত অনেকেই এ কারণে ফ্লাইট মিস করে। তাই আমার তাড়া ছিল, ভাগ্য ভালো সময়মত সব করতে পারায় ফ্লাইট মিস হয় নি। দুঘণ্টার মধ্যেই ইচাং পৌঁছায়। তবে তখন প্রচণ্ড খিদে আমাকে কাতর করে ফেলেছে। ইচাঙ্গে নেমে দেখি দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন ঠাণ্ডা।
সেখানে আমার জন্য দুইজন বাঙ্গালী ছাত্র অপেক্ষা করছিল। ট্যাক্সিতে উঠলাম। আমার দেহ ট্যাক্সিতেই ছিল; কিন্তু মন বলে যে অদৃশ্য বস্তুটি আছে সেটা কোথায় ছিল আমার জানা ছিল না।
কুয়াশা-হিম শীতল বাতাস- নির্জন দ্বীপের মতন নিস্তব্ধতা আমাকে গ্রাস করে ফেলে। শূন্যতা,শূন্যতা এবং শূন্যতা আমাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরে।
আমার গন্তব্য যেন শূন্যতায়।
সেদিন থেকে আমি আর শূন্যতা যেন সমার্থক। অই গানটি গেয়ে গেয়ে শেষ করলামঃ
এই দূর পরবাসে
তারা গুনি আকাশে আকাশে
কাটে নিঃসঙ্গ রাতিগুলো
মাঝেমাঝে স্বপ্নের বেশে
স্মৃতিরা এসে
করে যায় সবি এলোমেলো...[চলবে] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।