আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হোস্টেল জীবনের টুকিটাকি



হোস্টেল জীবনের কথা মনে পড়লে কত কিছু যে মনে পড়ে যায়। কোনটা বাদ দিয়ে কোনটা লিখব সেটাই ঠিক করা মুশকিল হয়ে পড়ে। হোস্টেলের অনেকেরই ছাত্রাবস্থায় বিয়ে হয়ে যেত, বাচ্চাও হত। তারা বাচ্চা নিয়েই হোস্টেলে থাকত। সাথে একজন কাজের মেয়ে নিয়ে থাকত।

একবার এমন হয়েছিল খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে কয়েকজন সিনিয়র আপু আর কিছু জুনিয়র মেয়ের বাবু হয়েছিল। হোস্টেলটা তখন খুব সরগরম থাকত। টিভি রুমে বাবুগুলো একসাথে হয়ে সবার কোলে কোলে ঘুরত। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে নানান রকম অদ্ভূত আওয়াজ করে কথাবার্তা বলত। শুধু আআআআ উউউউ শোনা যেত, কিন্তু ওদের ভাব দেখে মনে হত ওরা বুঝে শুনেই আলাপ-আলোচনা করছে।

চোখের সামনে ওদের বেড়ে ওঠা দেখতাম, আর মুগ্ধ হতাম। ওরাও বুঝে গিয়েছিল যে ওদের আদর করার মানুষের অভাব নেই। সবার কোলে গিয়ে আদর নিয়ে আসত। মাঝে মধ্যে পিটুনিও খেত, সেটাও আদরের পিটুনিই ছিল। একবার আমরা কয়েকজন ক্যারম খেলছি, এর মধ্যে এক পিচ্চি আসল, খেলা রেখেই একজন সেই পিচ্চিকে কোলে নিয়ে আহ্লাদ করা শুরু করল।

খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাকীরা তখন বিরক্ত। একজন বলল, এই বাবু, তুই এই আন্টিটার কোলে পেখানা করে দে। তাড়াতাড়ি পিচ্চিকে নামিয়ে দিয়ে সে বলে, বাচ্চাদের এইসব কুমন্ত্রণা দেয়া ঠিক না। একবার এক জুনিয়র মেয়ে মা হবার পর গ্রাম থেকে একজন মেয়েকে নিয়ে আসল বাচ্চা দেখাশুনার জন্য। সে আগে কখনও হোস্টেল দেখেনি।

কয়েকদিন ধরে দেখেশুনে অবশেষে বাচ্চার মাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আপা, এইখানে এতগুলান বাসা, কিন্তু এই বাসাগুলার পুরুষ মানুষরা সব কই, কাউরে তো দেখি না। এক সিনিয়র আপুর বাচ্চাকে দেখার জন্য একটা ছোট মেয়ে ছিল, সবাই খুব পছন্দ করত মেয়েটাকে, মিষ্টি করে কথা বলত, সবসময় হাসিখুশী থাকত। হঠাৎ দেখি একসময় সে খুব গম্ভীর হয়ে গেছে, টিভি রুমেও খুব বেশি একটা আসে না। পরে জানা গেল, তাকে বিশাল সাইজের ঝাড়ি দেয়া হয়েছে, সম্ভবত গ্রামে আবার রেখে আসা হবে, কারণটা হল তাকে নাকি হোস্টেল ক্যান্টিনের এক ছেলে একটা ফ্রক গিফট করেছে। হোস্টেলে মাঝে মধ্যে চোর ধরা পড়ত।

একবার একজন দিনের বেলা রুমের দরজা হালকা করে ভিড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ খুটখাট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, কিন্তু দেখে রুমে আর কেউ নেই। সন্দেহ হওয়াতে খাটের নিচে উঁকি মেরে দেখে একটা মেয়ে বসে আছে, চুরি করতে ঢুকেছিল, লুকিয়েছে খাটের নিচে। তাকে ধরে আশেপাশের রুম থেকে আরও মেয়েদের ডেকে নিয়ে এরপর হোস্টেল সুপারের কাছে নেয়া হল। চুরি করতে আসা মেয়েটার সে কি ভাব।

বলে, আপনারা আমাকে অপমান করছেন, জানেন আমার হাসব্যান্ড কত সম্মানিত লোক। এত সম্মানিত লোকের বউ হয়ে সে কেন এই কাজ করতে এসেছে সেটা আর বলে না। হোস্টেলে জন্মদিন করতাম খুব মজা করে। কেক কিনে এনে আর নিজেরা চড়ুইভাতির মত করে রান্না করে সবাই মিলে হৈ চৈ করে খেতাম আর চুটিয়ে আড্ডা দিতাম। একবার আমাদের মধ্যে একজনের হুট করে বিয়ে হয়ে গেল।

কোন দাওয়াত নেই, অনুষ্ঠান নেই, এসব কি মেনে নেয়া যায়? আমরা হোস্টেলে ওর বিয়ের অনুষ্ঠান করলাম, শুধু বেচারা জামাইটা এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারল না, আফসুস। বউকে সাজিয়ে গুজিয়ে খাটের মাঝখানে বসিয়ে বড় একটা কেক কাটা হল, সবাই মিলে ফ্রি স্টাইলে ছবি তুললাম। একজন আরেক জনের চুল ধরে টানাটানি করছে, বাকীরা বত্রিশ দন্ত বিকশিত করে তাকে উৎসাহিত করছে, এর মধ্যে বউটা ঠিকই লাজুক লাজুক হাসি দিয়ে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে, আরও কত সব স্টাইলের ছবি। টুকিটাকি লিখতে বসে তো দেখি অনেক লিখে ফেললাম। আবার মনে পড়লে পরে লেখা যাবে, আজকে এটুকুই থাক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.