ওপার বাংলা থেকে অপার বিস্ময়ে এই বাংলাদেশের দিকে তাকানো এক ভারতীয় প্রথমেই বলে রাখি, আমার বক্তব্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়; একান্ত আমার ব্যক্তিগত অভিমত। নিচের বর্ণনার ব্যাপারগুলো প্রায় ৯ বছর আগেকার কিন্তু মনের গভীরের দাগ এখনও শুকায়নি।
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি (ক্লাস টেন= বাংলাদেশে এস এস সির বছর), ১১ বছর বয়স; বাবার মাথায় ভুত চাপল যে আমাকে ভাল কোনো স্কুলে ভর্তি করাবেন। তখন (এবং সম্ভবত এখনও) মধ্যবিত্তের কাছে ভাল স্কুল মানেই ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের চারটি স্কুলের মধ্যে একটি-
১) রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ পুরুলিয়া (এই স্কুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল যে মাধ্যমিকে র্যাংকারদের টপ ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৩/৪ জন এখান থেকে থাকতো। )
২)রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির নরেন্দ্রপুর (এটির সঙ্গে লাগোয়া কলেজটি খুবই বিখ্যা্ত ও ফ্যাকাল্টির দিক দিয়ে দেখতে গেলে ভারতের অন্যতম সেরা কলেজ)
৩)রামকৃষ্ণ মিশন কামারপুকুর (শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুর)
৪) রামকৃষ্ণ মিশন রহড়া (রহড়া হল কলকাতার একটি সাবার্ব খড়দার এক অংশ)
এদের মধ্যে পুরুলিয়া পুরোপুরি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত, ১০০ একর জমি নিয়ে তৈরী এবং সবচেয়ে কাছের জনপদ (পুরুলিয়া শহর) ৫ কিমি দূরে।
রহড়া আর নরেন্দ্রপুর শহুরে পরিমন্ডলে অবস্থিত এবং কামারপুকুর একটি অর্ধশহরের মত।
বাবার খুব ইচ্ছা ছিল আমি যেন পুরুলিয়াতে চান্স পাই। আবার মা চেয়েছিল যেন আমি খুব দূরে না যাই (আমাদের বাড়ী থেকে রহড়া সবচেয়ে কাছে)। আর আমি কি চেয়েছিলাম? কিছুই চাইনি।
যাই হোক, বাবার কড়া তত্ত্বাবধানে পড়াশুনা কিছুটা করে চারটে জায়গার অ্যাডমিশন টেস্টই দিলাম।
রেজাল্ট এলো আজব ধরনের-
১) পুরুলিয়া: সিলেক্টেড।
২)নরেন্দ্রপুর: হয়নি।
৩)রহড়া:হয়নি।
৪) কামারপুকুর: শুধু সিলেক্টেড নয়, একদম ফার্স্ট।
বাবা ঠিক করলেন পুরুলিয়াতেই পাঠাবেন।
প্রথমেই ইন্টারভিউ টাইপের একটা হল, নাম কে ওয়াস্তে যদিও।
সেখানেই শুনলাম, পুরুলিয়াতে নাকি ছাত্রভর্তি হয় মূলত ক্লাস ফোরে, অর্থাৎ আমার নতুন বন্ধুরা পরস্পরকে অলরেডি তিন বছর ধরে চেনে। সেখানে আমরা ক্লাস সেভেনে নতুন অ্যাডমিটরা সংখ্যায় মাত্র তিন।
পরের পর্বে আসল কাহিনী শুরু হবে, কিন্তু আমি কোনরকম মশলা মেশাব না। আমার কাজ নিরাসক্ত হয়ে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মানসিক ট্র্যাজেডির কথা লিখে যাওয়া; হাততালি বা সহানুভূতি আপনাদের হাতে।
বিশ্বাস করুন, আমি হালকা হতে চাই। শেয়ার করতে চাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।