আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ সূর্যোদয় ও ‘ও’

কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
“ছবিটা হবে একটা কনট্রোভিক্টেড ফিল্ম”, যেভাবে ও সবসময় বলে সেভাবেই চোখভরা স্বপ্ন নিয়ে এবারও বলল। কনট্রোভিক্টেড ফিল্ম জিনিসটা যে কী, সেটা নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস হল না। তাহলেই একগাদা কথা শুনতে হবে। প্রথমেই আমাকে বলা হবে যে এটা অতি সাধারণ একটা শব্দ আর আমি সাহিত্যের অনেক দূরে থাকি বলেই জানি না।

আর এরপরে ওর ঝাঁকড়া ইয়া বড় বড় চুলগুলো হাত দিয়ে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে, ডান গালের দাড়ি চুলকে আমাকে জানাবে, এই সহজ শব্দের অর্থ জানি না বলে আমার জীবনের কোন মূল্যই নেই। তাই নিজের জীবনের মূল্য রাখতে আমি ঢোঁক গিলে প্রশ্নটা হজম করে ফেললাম। ও আবেগ নিয়ে রিপিট করল,“ছবিটা হবে একটা কনট্রোভিক্টেড ফিল্ম”। এরপর হাতটা কচলাতে শুরু করল, বুঝলাম, সে এখন আমার সাথে ছবির বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। এখানে একটা বিশেষ ‘কিন্তু’ আছে।

সে বাজেট করবে আর সেখানে তাৎক্ষণিক খরচের জন্য একটা এমাউন্ট ধরা হবে, যেটা আমাকে ধার দিতে হবে। আর যেমনটা সে সবসময় বলে, আমার ঋণ সে কোনদিনও শোধ করতে পারবে না। এই নিয়ে তার বিভিন্ন কার্যকলাপে আমাকে কয়েকবার টাকা দিতে হয়েছে। আর সবগুলোই ছিল ছবি বা মিডিয়া বিষয়ক। কোনবার একশন ছবি, কোনবার আর্ট ফিল্ম, কোনবার গানের ছবি আর এবার নতুন এক অজানা জিনিস নিয়ে কথাবার্তা, কনট্রোভিক্টেড ফিল্ম।

যেভাবে ও শুরু করে, সেভাবে শুরু হল, “ত শুন, এই ছবিটায় খুব বেশি খরচ নাই। খরচ শুধু প্লাটফর্মে। আমাদেরকে স্টেজ বানাতে হবে বুঝছিস? কয়েকটা স্টেজ, বিভিন্ন টাইপের। মৃত মানুষ নিয়ে কথাবার্তা হবে তাই আশরীরী জগতের এরকম কিছু বিষয়ে স্টেজ লাগবে। আর মাঝে দিয়ে একবার নেপালেও যেতে হবে।

” আমি চোখ সরু করে বললাম, “এইটা কী হরর ফিল্ম নাকি? তুই না বললি অন্য কথা?” ও আবার জোরে জোরে ঘাড় নাড়ল, “আরে না, মোটেও হরর না। এইটা একটা রোমান্টিক মুভি হবে ব্যাটা। অন্যরকম রোমান্টিক। অনেক ফুল টুল আর বাগানও লাগবে। ” আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম, “তাইলে এটাকে প্রেমের ছবি বলতে দোষ কী? এই রকম খটোমটো নাম বললি কেন?” যেমনটা আমার কথায় ও সবসময় করে, হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মত ভঙ্গি করে বলল, “উফফ, কনট্রোভিক্টেড মুভি মানেই ত বুঝিস না, তাই বলিস।

রোমান্টিকতার ভিতরেও অনেক কিছু থাকবে রে ব্যাটা। এ জন্যেই ত এবার ইন্সট্যান্ট টাকা পয়সা একটু বেশি লাগবে। তবে ওভারল কমেই যাবে। শুধু কষ্ট করে ইন্সট্যান্ট কিছু খরচ করতে হবে। ” আমি যতটুকু পারি নির্লিপ্ত গলায় বললাম, “তোর যদি টাকা থাকে, ত খরচ কর।

সমস্যা কী!” ও হতাশ হল। ভালই হতাশ হল। আমরা প্রায় সন্ধ্যায় এখানে পিঠ বাঁকা করে দেয়ালের উপর বসে থাকি। ভালই লাগে। যখন ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়, তখন আমি নামি।

ওকে সবসময়ই এখানে পাওয়া যায়। সারাদিন বসে বসে বিড়ি টানে। ছোটবেলার স্কুলের দোস্ত। কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটি শেষে এখনও সবচেয়ে বড় শুভাকাংখী। সে তার অদ্ভূত সব প্ল্যান আমার সাথে শেয়ার করে।

জীবনটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার অনেক সুযোগ ছিল তার, সব নষ্ট করেছে। আমি যে কাজে লাগিয়েছি ব্যাপারটা তা না। আমি সাধারণ গড়পড়তা মানুষ, কিন্তু ওর সম্ভাবনা ছিল অনেক। কোনদিকে গেল না, নকল করে কোনভাবে পাশ করে। আর ছবি বানানোর স্বপ্ন দেখে, আমাকে মাঝে মাঝে নায়কের বন্ধুর ছোট ভাই এর রোল করার জন্য সাধাসাধি করে।

আমি প্রবল বেগে মাথা নাড়াই। এভাবেই চলে আমাদের দিন। “বুঝলি, শুরুতে থাকবে একটা ফটোগ্রাফ। বিকেলে সৈকতে বসে আছে একটা মেয়ে। ফর্সা মেয়ে।

নীল শাড়ি, হাঁটুর উপর হাত রেখে বসা থাকবে। চুলগুলো এলোমেলোভাবে উড়তে থাকবে”, আমি মেয়ে বিষয়ক কথা শুনে একটু আগ্রহী হই। দেয়ালের উপরেই পা গুটিয়ে বসি। “এরপরে আরেকটা ফটোগ্রাফ দেখানো হবে। আগের সেই মেয়েটার ছবি।

কিন্তু এটা একটা ছেলে ফ্রেমে বাঁধাই করে ধরে রেখেছে। এরপর আরও একটা ছবি। সেই ছবির ভিতর ঐ একই জায়গায় ওই ছেলেটা আর মেয়েটা পাশাপাশি বসে থাকবে। এবার মেয়েটার পড়নে থাকবে হালকা হলুদ শাড়ি। মেয়েটা ছেলেটার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকবে।

” আমি ছেলেটা কী পড়বে সেটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করে একটা ঝাড়ি খাই। ও বলতে থাকে, “এরপরে আরও একটা ফটোগ্রাফ থাকবে দোস্ত। ছেলেটা আর মেয়েটা এবারও ওই একই জায়গায় বসে আছে। এবার সময়টা রাত। ছেলেটা মেয়েটার দিকে সরাসরি মুখ ঘুড়িয়ে তাকিয়ে থাকবে।

আর মেয়েটা নিচের দিকে মুখ করে মুখ টিপে হাসতে থাকবে। দোস্ত এই সিনের ছবিটা আমি নিজে তুলব। ” ঘটনার মাঝে একটা ক্লাসিক ভাব টের পাই। ঝালমুড়িওয়ালা ডাক দেই, মনে আশা থাকে ঝালমুড়ির টাকাটা হয়ত ও খেয়ালের বসে দিয়ে দিবে। যা হোক, ঝালমুড়ি নেবার পরে বুঝলাম বৃথা আশা।

সে টাকার নামটাও নিল না। ধন্যবাদও দিল না। মুড়িওয়ালাকে একটু বেশি লেবু আর বেশি মরিচ দিতে বলে বেখেয়ালি হয়ে বসে রইল। মুড়ি চিবাতে চিবাতে পরবর্তী কাহিনী বলতে লাগল, “শুন, এরপরের ফটোগ্রাফে দুজনে পাশাপাশি শুয়ে থাকবে একটা খোলা মাঠে। হাত ধরে।

দুজনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু ওদের উপরে থাকবে ছায়া। কোন গাছের না। এমনি উপরে একটা ছায়া দিব। ধর, দূরের কোন গাছের ছায়াটা বড় হয়ে ওদের ঢেকে দিচ্ছে মধ্য বিকেলে।

মেয়েটার হবে গাড় সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ আর সাদা ওড়না। এরপরে আরো একটা ছবি হবে দোস্ত। ওরা একসাথে বাসায়। সুট কোট পড়ে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটা ওর বুকে মাথা রেখে। দুজনে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে।

মেয়েটার পড়া থাকবে কালো শাড়ি কিন্তু লাল সুতার কাজ করা। ” আমি মুড়ি চিবাতে চিবাতে প্রশ্ন করলাম, “বিয়া করল নাকি? তাইলে ওদের পাশে আত্মীয় স্বজন থাকা উচিত না?” ওকে একটু চিন্তিত লাগল। এরপরে মুখে আরেকটু ঝালমুড়ি নিয়ে বলতে লাগল, “ঠিকই বলছিস। তাহলে এর পরের ছবিটা ওই আগেরটাই হবে। দুজনে একসাথে।

শুধু পাশে আত্মীয় স্বজনের উদয় হবে। এরপরে একটা নেপালের ছবি থাকবে দোস্ত। একটা না কয়েকটা। ওরা কেনাকাটা করছে এই সব টাইপ। তবে, এটা টাকার উপর ডিপেন্ড করে।

টাকা না থাকলে ইন্টারনেট থেকে ভাল কোন ছবি নামিয়ে দিলেও চলবে। আর তারপরের ফটোগ্রাফে দেখা যাবে, ওদের হাতে বাচ্চাদের খেলনা। দুজনে হামাগুড়ি দেয়ার মত করে মেঝেতে বসে আছে। নিচে একগাদা বাচ্চাদের খেলনা। দুজনের মুখ হাসি হাসি।

” আমার মুড়ি প্রায় শেষ। আমি বললাম, “কাহিনী শর্ট কর। এতক্ষণে ত ছবির মাত্র একমিনিট হল। ইলেক্ট্রিসিটি আসলেই যামু গা। ভাত খামু, দুপুরে খাই নাই।

তাড়াতাড়ি বল। ” যেমনটা হয়, ও আমার কথার পাত্তাই দিল না। আমি চলে গেলেও সে যে একাই নিজেকে শুনিয়ে কথা বলতে থাকবে সেটা আমি ভালই জানি। ও বলতে লাগল, “পরবর্তীতে দোস্ত ধুমধাম ছবি দেখায়া দিব। যেমন ধর, ছোট্ট পোলা কোলে নিয়ে বসে আছে মেয়েটা।

বাপ পিছন থেকে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। এরপরে ধর দেখাবো, বাপ মা পাশাপাশি দাঁড়ায়া আছে। আর সামনে পোলা স্পাইডার ম্যানের ছবিওয়ালা লাল ব্যাগ নিয়া স্কুলে যাইতাছে। ছেলেটার কপালের সামনে থেকে ক্যামেরা ধরে ছবিটা তুলতে হবে। এরপরে ধর দেখামু, ওরা তিনজন মিলে ছোট সাইজের ফুটবল নিয়া গাজীপুর পার্কে খেলতাসে।

” আমি একটু বাঁধা দিলাম, “আর কোন পোলা মাইয়া নিব না ওরা? নিতে দে ব্যাটা। ” সম্ভবত ওরও এমনই প্ল্যান ছিল। কিন্তু আমার কথা শুনে চেঞ্জ করল। বলল, “না নিবে না। কন্ট্রোভিক্টেড ফিল্মে বাচ্চা একটা থাকে।

যাই হোক, এই ফটোগ্রাফের সেশন আর বড় করুম না বুচ্ছস! সব মিলায়া দেখামু পোলা রেজাল্ট কার্ড হাতে নিয়া আসছে। বাপ মা রাগারাগি করতাছে। এরপরে পোলা আরেকটা নিয়া আসছে। বাপ মা খুশি। এই টাইপ।

পরে দেখামু পোলা বড় হইয়া গেসে। পরে দেখামু, পোলা হারায়া গেসে। বাপ মা কাঁনতাসে। পরে দেখা যাইব, দুই জনে পোলার কবরের সামনে বাচ্চাদের খেলনা নিয়া দাঁড়ায়া আছে। ” এই দিকের কাহিনী শুনে আমি মোটামুটি ধাক্কা খেলাম।

“কস কি ভাই? পোলা মইরা যাইব? শ্লা, মাইয়া বুড়া হইয়া গেল, পোলা মইরা গেল। ভিডিও শুরুর সময় যুবতী মাইয়া নায়িকা না হলে তোর ছবি কেডায় দেখব?” ও যেমনটা করে, মাছি তাড়ানোর মত হাত নাড়ল। বলল, “শুনতে থাক। ” ও বলে চলল, “এরপরে বুঝা যাইব ওরা বুড়া হইয়া গেসে। বাপটা মুখ গোমড়া কইরা বইসা আছে।

ওরা বইসা আছে একটা পরিচিত বাড়িতে। পিছনের দেয়ালে অন্য ব্যাটাদের ছবি। মানে বুঝছস ত? অন্য কারও বাড়িতে আছে। ধর, বেশি একটা টাকা পয়সা জমায়া যাইতে পারে নাই। বা যতটা জমাইছিল, তা শেষ।

হিসাবের চাইতে দীর্ঘজীবী হইছে আর কী! মাইনষের বাড়িতে বোঝা হয়া আছে। ত এর পরের ফটোগ্রাফে দেখা যাবে, ওরা সেই সমুদ্র সৈকতে। বুড়াবুড়ি। বুড়া কাশতাসে। মেয়েটা ওর বুকে হাত দিয়া আছে।

এরপরের ছবিতে আগের সেই তরুণ তরুণী ফেরত আসবে। ওরা দুজনে হাত ধরাধরি করে সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকবে। এরপরের ফটোগ্রাফটায় ওরা সমুদ্রের পানিতে কোমর পর্যন্ত নেমে একে অপরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা মেয়েটার চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়ে আছে। মেয়েটার পড়া থাকবে একটা হালকা সবুজ রঙের শাড়ি, যেটা সমুদ্রের পানিতে একেবারেই মানাবে না।

সন্ধ্যার আলোর সাথে খাপ খাবে না। সবকিছুর থেকে আলাদা হয়ে সবার চোখে ধরা পড়বে। দোস্ত, এরপরের ছবিটা হবে ভোর বেলায়। সামনে লাল সূর্য আর ওই দুজন তরুণ তরুণী হাত ধরে গভীর সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে। এরপরের ফটোগ্রাফটা শেষ ছবি।

ভোরের সূর্য, চারিদিক গাঢ় কমলা। ” এই পর্যায়ে এসে আমি ধমকে উঠলাম, “শ্লা ছবি শেষ পাঁচ মিনিটেই। তাইলে তুমি কিসের ছবি বানাইলা? বাকি টাইম কী পাবলিক পপকর্নের ঠোঙা খাইবো?” ও বিরক্ত হবে বলল, “শ্লা, কাহিনী শেষ শেষ করলাম কখন? কাহিনী ত শুরু। শুন, ওই যে হরর টাইপ কিছু প্ল্যাটফর্মের কথা বললাম না? মানে, ছবিটা এখন শুরু হল। এই তরুণ আর এই তরুণী এখন জেগে উঠবে, বুঝছিস? মানে আত্মাদের জগতে।

দুইজন দুই কোণায়। দুই জনে মৃতদের সোসাইটিতে চলে গেছে বুঝছিস? এইখান থেকে ছবির শুরু। ঐ খানে সব এক বয়েসী লোকজন। ওদের আলাদা সোসাইটি। ওখানে যা হয় সব ফিক্সড।

বাপ মা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী কিছু নাই। কাকে কখন কী চাইতে হবে, সেটাও ফিক্সড। যেমন, তুই পদ্মা নদীতে গোসল করতে চাইতে পারবি না। তোকে মাস্ট দুধের নদীতেই গোসল করতে হবে। আবার ধর, তুই চাইলে ঝালমুড়ি খাইতে পারবিনা, তোরে মাছের কলিজা নইলে আঙুর খাইতে হইব।

সব দামী দামী খাবার খাইতে হইব। ” আমি চোখ দিয়া ওরে ভম্ম কইরা দিয়া বললাম, “এই নিয়ম তুই কই দেখছস শ্লা? মনে হইতাসে তুই ওদের বেহেশতে পাডাইছস। ঐখানে যা ইচ্ছা খাওয়া যায়। ওই খানে এত নিয়ম নাই। ” ও তাড়াতাড়ি হাত নেড়ে বলল, “আরে না না।

একেবারে স্ট্যাটিক দোযখ বেহেশত দিলে ত কাহিনী হইব না। ক্যামেরাতে বেহেশতের প্ল্যাটফর্ম কেমনে দিমু? হুজুররা ত ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিবো। ঐটা অন্যরকম সোসাইটি হইব। ভালা লোকডি ভালা সোসাইটিতে গেসে, আর খারাপডি কই গেসে দেখানো হইব না। ” আমি একটু আশ্বস্ত হলাম।

ও বলতে লাগল, “ত যেইটা বলতেসিলাম। ঐখানে সবাই সুখী ভাব নিয়ে ঘোরে। শান্তিমত সোসাইটির নিয়ম মেনে চলে। দামী দামী খাবার খায়। ঐখানে তোর সাথে দেয়া হবে তোর পারফেক্ট পার্টনার।

মানে, দুনিয়াতে তোকে যার জন্য ম্যাচ করে পাঠানো হইসিল, তার সাথে এইখানে তোকে বিয়া দেয়া হবে। ধর, দুনিয়াতে তুই তাকে দেখিসও নাই। কিন্তু এইখানে আগের কিছু তোর মনে থাকবে না। এইখানে তোর পারফেক্ট ম্যাচকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকবি। হ্যাপিলি এভার আফটার।

আর পারফেক্ট ম্যাচ হইল একশটা ইমপারফ্যাক্ট ম্যাচের সমান। একশটা পরী থাকলেও এমন ভাল মত থাকতে পারবি না, কারণ ঘটনা ত শুধু সেক্স না, চিরকাল থাকবি সময়ও ত কাটাতে হবে। বুঝলি? ত এইখানে কাহিনী হল, সবাই সুখী কিন্তু ওই মেয়ে সুখী না। তার খালি কী যেন নাই নাই লাগে। তার কিছুতেই মন বসে না।

ওইখানে সব সখীরা সুখী। তারে নিয়া গান গায়। ঐ শকুন্তলা স্টাইলে বাগানে ছুটাছুটি করে গানের দৃশ্য থাকবে। তারা তাকে তার পারফেক্ট ম্যাচের কথা জানায়। বলে যে, ওই ব্যাটা আইতাসে আর মাত্র কয়েকদিন পরে।

এরপরেই এরা একসাথে থাকতে পারবে। ত মেয়েটার মন গলে না। তার সখীরা তাকে বলে ওই ব্যাটার জন্যেই তার এমন লাগতেছে। কিন্তু মেয়ে ত বুঝে, ঘটনা এমন না। আবার পুরা বুঝেও না।

তার ধারণা, যাকে সে মিস করে সে এখানেই কোথাও আছে। এই সময় মেয়েটার পড়া থাকবে ধূসর সালোয়ার কামিজের সাথে সাদা ওড়না। ” আমি চোখ সরু করে বললাম, “ওরে শ্লা, ওখানে এই ড্রেস পড়ে সেটা তোকে কে বলেছে?” ও আমার কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, “কিন্তু আমার ছবিতে এমনটাই হবে। আমার ইচ্ছা। ” আমি ঝালমুড়ির ঠোঙাটার অপর পিঠ দিয়ে হাত মুছে কাগজটাকে ছুড়ে ফেললাম দূরে।

বললাম, “এতটুকু ত হল, কিন্তু সংলাপে এসব কিছু বোঝাতে পারবি? পেছনে ত আর ধারাভাষ্য হবে না। ” ও বলল ও নাকি পারবে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে ক্লাসিক সংলাপে নাকি ভরিয়ে দেবে সব। ও ঝালমুড়ির ঠোঙাটা আমার হাতে দিয়ে দিল। আমি একটু অবাক হলাম, ও সামান্যই খেয়েছে।

আসলে ওর চোখে এত স্বপ্ন বলে এখন হয়ত মুখে স্বাদ নেই। যাই হোক, আমি ঝালমুড়ির দিকে মনযোগ দিলাম। ও বলতে লাগল, “মেয়েটা বুঝতে পারে এই জগত অন্য রকম। এটা অনেক বড়, অনেক বিশাল। আর এখানে নাম জানে না, পরিচয় জানে না, এমন একটা ব্যাক্তিকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার।

সেখানে তুই যা চাবি তাই পাবি, সে অনেকবার ইচ্ছাশক্তিকে প্রয়োগ করেছে, কিন্তু লাভ হয় নি। নিয়ম বহির্ভূত কিছু চাওয়া যায় না। ত এই মেয়ে সব কিছু ফেলে বসে থাকে এমনি এমনি। সে কিছু না খেয়ে দিন কাটাতে লাগল। কিন্তু অসুস্থ হবার কিছু নেই।

এখানে ক্ষিধা লাগে না আসলে, মানুষ খায় ইচ্ছার কারণে। মেয়েটার অবস্থা অন্যদের থেকে আলাদা হতে লাগল দিনকে দিন। তার এখন কিছুই ভাল লাগে না। সে কারও সাথে কথা বলে না, তার বাগানে যায় না। তার একমাত্র শখ, একগাদা ফুল যোগাড় করে কুচি কুচি করে ছেঁড়া।

এ সময় মেয়েটা হলুদ আর সবুজ ফুলের কাজ করা সাদা সালোয়ার কামিজ পড়বে। সাথে থাকবে কালো ওড়না। ব্যাকগ্রাউন্ডে স্যাড একটা গান বাজবে। ” ও দম নিল। আমি মুখে ঝালমুড়ির ঠোঙাটা উপুড় করে শেষ কয়টা মুড়িও মুখে ঢাললাম।

ইলেক্ট্রিসিটি মাত্র আসল। কিন্তু কাহিনী ছেড়ে ওঠার কোন মানে হয় না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তারপর? ওই পোলার কী হল? ওর কী কিছু মনে আছে?” ও বলতে লাগল, “আসলে ওই ছেলের কী হবে সেটা নিয়ে আমি তেমন ভাবি নি। ধর, ওই ছেলেকেও পলিটিকাল কারণে মন খারাপ করে থাকতে হবে। নইলে, ছবি বেশি হিট হলে কনস্পিরেসি শুরু হবে যে, আমি নারীদের ছোট করসি।

বুঝছই ত। ” আমি পয়েন্টটা ধরতে পারলাম। আমি বললাম, “দোস্ত ছেলেটার ড্রেস কী হবে?” যেমনটা হয় আর কি, ফালতু প্রশ্ন করার জন্য আবারো ঝাড়ি খেলাম। ও আবার শুরু করল, “ধর, মেয়েটার কাহিনী দেখাতে লাগলাম, মাঝে মাঝে কিছু শর্ট সিনে দেখালাম,ছেলেটা বনের মাঝে এমনি এমনি একা একা হেঁটে যাচ্ছে। ইয়া বড় বড় সব গাছ থাকবে।

দুপাশে পাহাড় আর টিলা থাকবে। তার উপর গাছ। তার মাঝে দিয়ে পায়ে হাঁটা সরু পথ। সূর্যের আলো সেখানে পড়বে কম। এর মাঝে দিয়ে ছেলেটা একাকী মন খারাপ করে হাঁটছে।

যাই হোক, মেয়েটার ব্যাপারে ফিরে যাই। আর মাত্র ৪ দিন বাকী। এর মাঝেই মেয়েটার পারফেক্ট ম্যাচ এখানে হাজির হবে। এখানে ওখানে প্রস্তুতি চলছে, অনেক মেয়েরা এসে মেয়েটার সাথে দেখা করে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার আর কিছুই ভাল লাগে না।

” আমি একটু বাঁধা দিলাম, “ধর দোস্ত, ওই মেয়ের পারফেক্ট ম্যাচ দোযখ টাইপ জায়গায় গেল, তাহলে হিসাবটা কেমন হবে?” ও মনে হয়, একটু চিন্তায় পড়ে গেল। ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে যাচ্ছে। ও এভাবে আগে ভাবেই। আমরা দুজনে মিলে একটা সল্যুশন ঠিক করলাম, কারও পারফ্যাক্ট ম্যাচ যদি এইখানে আসতে না পাবে, তাহলে তার জন্য আরেকটা পারফেক্ট ম্যাচ বানানো হবে। কিন্তু রুল ইজ রুল।

পারফেক্ট ম্যাচের সাথেই চিরকাল কাটাতে হবে, নইলে এইখানে পরকীয়ার প্রচলন শুরু হয়ে যেতে পারে। যেহেতু যার যা ইচ্ছা করতে পাবে। পারফ্যাক্ট ম্যাচ থাকলে, মানুষের আর আজেবাজে ইচ্ছা করবে না, এমনটাই ঠিক করা। যাই হোক, ও আবার কাহিনী শুরু করল, “ওই মেয়ের পারফেক্ট ম্যাচও মনে হয় ভাল লোক। সে এখানে আসার যোগ্য।

ত তার আসার দিন যত এগিয়ে আসে, মেয়েটা ভিতরে ভিতরে তত বিচলিত হতে থাকে। সে সবাইকে সাফ জানিয়ে দিল, সে কারও সাথে যাবে না। কারও সাথে তার লেনদেন নাই। যেই ব্যাটা আসতেছে সেই ব্যাটার প্রতি তার আগ্রহ নাই। সে ওই ব্যাটার সাথে থাকবেও না, তাকে যেন বিরক্ত না করা হয়।

মেয়েটা যার জন্য অপেক্ষা করছে, সে নাকি এখানেই আছে। কিন্তু কোথায় মেয়েটা তা জানে না। মেয়েটা এখন শুধু ফুল জমা করে আর শখ করে কুচি কুচি করে। এভাবেই সে দিন কাটাবে অলে জানায়। সবাই ত হায় হায় করে উঠল।

এমনটা যে হতে পারে, কারও ধারণা ছিল না। কিন্তু এখানে এটাই নিয়ম। আর এমনটাই হবে। মেয়েটার উপর অনেক প্রেশার পরে। তাকে জানানো হয়, নিয়মের বহির্ভূত কিছু হবার নিয়মও এখানে নেই।

তাই সে কথা না শুনলে তাকে এ জায়গা ছাড়তে হবে। মেয়েটা চিন্তায় পড়ে গেল, সে অন্য জগত সম্পর্কে জানে। ফিজিকাল টর্চারের সামনে পড়তে সাহস পাচ্ছে না। আর যার জন্য অপেক্ষা করছে, সে এখানে থাকলে আর মেয়েটা চিরকালের জন্য অন্যখানে চলে গিয়ে লাভ নাই ত কোন। ” ঘড়িতে দেখি অনেক বাজে।

আমি ওকে তাড়া দেই, “শ্লা সন্ধ্যা শেষে মধ্যরাত বানাবি নাকি? ক্ষিধা লাগসে আমার। কাহিনী প্যাচাবি না। লাস্টে কী হল বল। বাসায় যামু, ভাত খামু। ” ও আবারও মাছি তাড়ানোর মত হাত নাড়ল।

“যা ভাগ” বলে নিজে নিজে কাহিনী বলা শুরু করল। “এই ভাবে কাহিনী অনেক এগিয়ে যাবে দোস্ত। সাসপেন্স কাজ করবে। একটা সময় সেই ব্যাটা এসে হাজির হবে, ওই মেয়ে ছেলেটাকে দেখেই ধাক্কা খাবে। কল্পনার মত ছেলেটা।

ছেলেটা এসে কিছুই বলে নাই। তাও মেয়েটার প্রচণ্ড ভাল লাগা শুরু হয়ে যায়। ওর মনের মেঘ কাঁটতে শুরু করে। ” ওর এই কথা শুনে আমার চোয়াল ঝুলে পড়ে। “কস কী ভাই? মাইয়া ত সুবিধার না।

” ও বিরক্ত হল, “অসুবিধার কী আছে ? মাইয়াডি ত এমুনই। দুনিয়াতে পুরুষদের সবচেয়ে বড় ফ্যান্টাসী হল, এখনও ২২ বছরের কোন কুমারী মেয়ে আছে। ” আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম। গলা দিয়ে হাহাকার বেড়িয়ে আসল, “নাই?” ও পাত্তা না দিয়ে পুরানো কাহিনীতে ফেরত গেল। “ওদের বিয়ে হতে ধর আর দুই দিন লাগবে।

আনুষ্ঠানিকতার একটা ব্যাপার আছে না? ত মেয়েটা এখন এই নতুন আসা ছেলেটার সাথে সারাদিন ঘোরে। বাগানে বসে। পাখি দেখে। দোলনায় দোল খায়। মানে, ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা সুন্দর গান থাকবে, ওটা যতক্ষণ শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন আদুরে টাইপ ন্যাকামী দুজনে মিলে করতে থাকবে।

মেয়েটার পড়া থাকবে, সাদার মাঝে হলুদ কাজ করা সালোয়ার কামিজ। সাথে হলুদ ওড়না। ” মেয়েটার ড্রেসের বিষয়ে ওর চয়েস আমার ভালই লাগছে। এখানে একটা ব্যাপার আছে, মেয়েটা মনে হচ্ছে খুব ফর্সা হবে। ও বলে চলে, “ত পরের দিন রাতে ওদের বিয়ে।

সকাল থেকে একসাথে দুজন। এখানে আনুষ্ঠানিক খাওয়াদাওয়ার কোন ব্যাপার নাই। সবাই যার যার ইচ্ছামত যখন তখন খায়। যাই হোক, ছেলেটার সাথে ঘুরতে ঘুরতে মেয়েটা হঠাৎ ছেলেটাকে নিয়ে যায় তার রুমটা দেখাতে। সেখানে যেয়ে মেয়েটা শক খায়।

সে যে ফুল জড়ো করে কুচি কুচি করে ছিঁড়ত সেটা মনে পড়ে। সে একটু বিচলিত হয়ে পড়ে। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার সাহস পায়। মনে হয়, পুরা বাড়িটা যেন ফুলের চাদর হয়ে আছে। অনেকগুলো ছেড়া গোলাপ আর লাল পদ্মফুলের পাঁপড়ি ছিড়ে কমা করে রেখেছে সে কোণার দিকে।

ছেলেটার সাথে ওখানে পাশাপাশি বসে ও। গল্প করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে। ” আমি উঠে পড়ি। আর সময় দেয়া যাচ্ছে না। কবে যে কাহিনী শেষ হয় আল্লাহ মালুম।

আমি চলে যাব এমন একটা ভাব ধরতেই, ও খেয়ালি চোখে আবার শুরু করে, “ছেলেটার ডাকে মেয়েটার ঘুম ভাঙে। সন্ধ্যা তখন। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে হবে কিছুক্ষণ পরেই। মেয়েটা চোখ খোলে। চোখের সামনে গোলার আর লাল পদ্মের খেলা।

শোয়া থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না আর। চোখ বন্ধ করে, আবার খোলে। বাইরে একটু দূরে অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চের উপর সাদা আলো জ্বালিয়ে রাখা। জানালার ফাঁক দিয়ে সেই সাদা আলো,লাল ফুলের পাঁপড়ির ভেতর দিয়ে সাদা আলো মেয়েটার চোখে পড়ে। সব কিছু তার চোখের সামনে যেন কমলা রঙের মত ফুটে উঠে।

তার মনে পড়ে যায় সেই ভোরের সূর্যটার কথা, যার ভেতর দিয়ে সমুদ্রের মাঝে নেমেছিল সে। ভোরের সূর্য আর চারিদিক গাঢ় কমলা। মেয়েটা চমকে উঠে পড়ে। কিছু একটা ঘটে গেছে, কিছু একটা এলোমেলো হয়ে গেছে যেটা এখানে হবার কথা না। মেয়েটার পাবফেক্ট ম্যাচ পরম মমতায় মেয়েটার দিকে হাত বাড়ায়।

মেয়েটা তার হাতে হাত রেখে উঠে দাঁড়ায়। ছেলেটা এবার তার হাত ছেড়ে দেয়। যেহেতু সে পারফেক্ট ম্যাচ, সে মেয়েটার মনের কথা বুঝে ফেলেছে। এই মেয়েটা আর কোনদিন তার হবে না। মেয়েটা কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়।

মেয়েটা হাঁটতে থাকে। সে হাঁটতে থাকে যেন অনন্তকাল। মেয়েটা বনের মাঝে এমনি এমনি একা একা হেঁটে যাচ্ছে। ইয়া বড় বড় সব গাছ আছে। দুপাশে পাহাড় আর টিলা।

তার উপর গাছ। তার মাঝে দিয়ে পায়ে হাঁটা সরু পথ। সন্ধ্যাবেলার সূর্যের আলো সেখানে পড়বে কম। এর মাঝে দিয়ে মেয়েটা একাকী হাঁটছে। এখান দিয়ে হয়ত কয়েকদিন আগে সেই ছেলেটা হেঁটে গেছে যাকে সে খুঁজছে।

এখানকার বাতাস গুলো মেয়েটার কাছে অনেক আপন মনে হচ্ছে। রাত হয়ে যায়। মেয়েটা হাঁটতে থাকে। চারিদিকের শীতল বাতাসে নিজেকে মিলিয়ে দিতে থাকে। মেয়েটা হাঁটতেই থাকে।

কতদিন হেঁটেছে কতটুকু হেঁটেছে কারও ধারণা নেই। রাত হয়, ভোর হয়, দুপুর হয়, মেয়েটা হিসাব হারিয়ে ফেলে। কিন্তু একসময় এই পাহাড়ি বন শেষ হয়। এক ভোরে তার সামনে ফাঁকা দেখা যায়। মেয়েটা আরও এগোয়।

সামনে শব্দ, একটা পরিচিত শব্দ পায়। মেয়েটা স্থির দাঁড়িয়ে পরে। হঠাৎ করে সবকিছু ভুলে সে সামনে ছুট দেয়। তার সামনে উন্মোচিত হয় বিশাল সাগর। ভোরের সূর্য তার কমলা আলো নিয়ে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করছিল।

সৈকতে কে যেন সূর্যের দিকে মুখ করে বসে আছে। মেয়েটা তার পিঠ দেখছে শুধু। ছেলেটা হাঁটু ভাঁজ করে তার উপর হাত রেখে বসে আছে। মেয়েটা অনেক চেষ্টা করেও তার চেহারা দেখতে পারছে না। শুধু একবুক আশা নিয়ে মেয়েটা সামনে ছুটে গেল।

মেয়েটা অজানা আশা বুকে নিয়ে কাঁদছে, যেটা কখনও এই জগতে হয় নি। এখানে এর আগে কেউ কাঁদে নি। ” আমি বললাম, “তারপর? তোকে স্পষ্টভাবে বুঝাতে হবে ওটাই সেই ছেলেটা কী না। নইলে যে বসে আছে, ঐ ব্যাটা ত নেটিভও হইতে পারে। ” ও নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিল, “তা ত পারেই।

” আমি চেতেমেতে গেলাম, “এইটা কেমন কথা? এর আগের সিনে ছেলেটা যেই ড্রেস ছিল, এখানে কী সেই ড্রেস পড়া থাকবে?” ও আবারও নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দিল, “ভোরের কম কম আলোয় যে বসে আছে তার ড্রেস দেখা যাচ্ছে না। তাই বলা যাচ্ছে না। ” আমি চরম বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, “এই মুভির নাম কী হবে?” ও বলল, “সত্যিকারের কুমারী মৌটুসীর ভালবাসা। ” যুগপৎ বিস্ময় আর বিরক্তির ঠেলায় তাল সামলাতে না পেরে আমি ওকে ধরে শক্ত একটা ঝাঁকি দিয়ে দেয়াল থেকে নামিয়ে আনলাম, “মানে? হাড়ামি, মজা নেস? শ্লা, এই রকম একটা মুভির এই নাম দিবি? এইটা কোন কথা হইল?” ও বলল, “তোর তাতে কী? তুই কী এই মুভির কিছু? তোর ভূমিকা কী? তুই ত এটার বাজেটেও শেয়ার করবি না। আর তোকে দিয়ে অভিনয়ও হবে না।

” আমি চেঁচিয়ে বললাম, “অবশ্যই করব। তোর ইন্সট্যান্ট বাজেটও আমি শেয়ার করব। তুই দয়া করে এইরকম একটা নাম দিবি না। দোহাই লাগে তোর। ” বলেই বুঝলাম এটা একটা টোপ ছিল।

আমি আবারও ওকে টাকা দিতে রাজি হয়ে গেছি। এই মুভি কোনদিন বানানো হোক বা না হোক, আমার টাকা একবার ওর পকেটে গেলে আর কোনদিন ফেরত আসবে না। আমি ওকে ছেঁড়ে দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ফেরত আসলাম, “তোর কন্ট্রোভিক্টেড ফিল্মের যা ইচ্ছা নাম দিস। ভাগ শ্লা। ” এখনই বাসায় ঢুকে ঘুমাতে যাবো, কাল ভোরের দিকে সূর্যোদয় দেখতে হবে।

© আকাশ_পাগলা [ অনেকদিন ধরে হাতে যেন লেখা আসছিল না কোন। মাঝে দিয়ে একটা ক্যান্টাসী দিয়েছিলাম, কিন্তু আসলে ওটা আরও কয়েক মাস আগের লেখা। তার পরের পর্ব পর্যন্ত এখনও লিখতে পারি নি। মাঝে মাঝে গল্প লেখার জন্য যদি বসতাম, শুধু যেন ধারাভাষ্য হত। তাই আর গল্প টল্প লেখা হয় নি।

আজকে হঠাৎ ভাবলাম, ধারাভাষ্য ভাবটাকে ব্যবহার করে কিছু একটা লিখে ফেলতে। তার ফলশ্রুতি এই। এত কষ্ট করে এত বিশাল গল্প যারা পড়লেন, তাদের আগাম ধন্যবাদ। ]
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।