জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় এক বছরে শিক্ষক ও ছাত্রদের তিনটি আন্দোলনের প্রতিটিতেই তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠেছে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দাবিগুলো সামনে আসেনি। আবার কিছু শিক্ষক নেতার পদ-পদবি পাওয়ার পরই আন্দোলন থেমে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে ও ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা হওয়ার আগ মুহূর্তে প্রতিটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। শিক্ষকদের একটি অংশ ওই পদ পাওয়ার পর পরই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে একজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগের ওই নেতার শাস্তির দাবিতে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন শুরু হওয়ার এক দিন পরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি প্রধান হয়ে ওঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্যের আমলে যেসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন হয়েছে, তার দায়দায়িত্ব উপাচার্য এড়াতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি ও নিপীড়নের ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই অন্যায়গুলো এখনো রয়ে গেছে।
কিন্তু এ জন্য উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ও শিক্ষক ধর্মঘটকে আমি সমর্থন করি না। ’ তিনি বলেন, এ ধরনের আন্দোলনের ফলে কিছু শিক্ষক নেতা লাভবান হতে পারেন। কিন্তু এতে শিক্ষাসংক্রান্ত দাবিগুলো থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরে যায়।
পদ পেতে আন্দোলন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ৫ মে কোষাধ্যক্ষ পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই পদ পেতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিভিন্ন অংশ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ১৪ এপ্রিল থেকে আন্দোলন করছেন, এমন কয়েকজন শিক্ষকও কোষাধ্যক্ষ পদ পেতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকেরাও উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে শুরু থেকেই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এই অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অজিত কুমার মজুমদার। এ আন্দোলনে বেশি সক্রিয় অধ্যাপক মুস্তাহিদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি উপ-উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক সমিতি।
একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে দুজনকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হলে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন স্থগিত করে দেয়।
উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মতিন এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আফসার আহমেদ। এরপর প্রায় এক মাস বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত ছিল। আগামী ৫ মে বর্তমান কোষাধ্যক্ষ নাসিরউদ্দিনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।
এই পদে নিয়োগ পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী চারজন শিক্ষক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থী আবদুল মালেকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে দুই উপ-উপাচার্যের নিয়োগের ব্যাপারে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষকদের বিভিন্ন অংশের আলোচনা শুরু হওয়ার পর আন্দোলন থেমে যায়।
গত বছরের আগস্টে দুই শিক্ষার্থীকে হল থেকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হলে শিক্ষক সমিতিও এতে যোগ দেয় এবং উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলে। তখন সামনে ছিল ডিন নির্বাচন।
যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চান। কিন্তু গুটি কয়েক শিক্ষক পাঠদান ও শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে মনোযোগ না দিয়ে শুধু উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন। তাঁদের এ ধরনের নেতিবাচক অবস্থান থেকে সরে এসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তবে অজিত কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের ওপর হামলার বিচার চাওয়ার পরও কোনো বিহিত না হওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করা হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ বা অন্য কোনো পদ পেতে উপাচার্যের ওপর চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে এই আন্দোলন হচ্ছে না।
সাভারে ভবনধসের ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনগুলো তাদের সব কর্মসূচি স্থগিত করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তা করেনি। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষক সমিতির ডাকে গতকাল থেকে সেখানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।