আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইকোনমিস্টের বিষোদ্গার-নেপথ্যে।

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। দেশের সংবিধান, অপরাধ, ট্রাইব্যুনাল ও আইন বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে কোন সীমাবদ্ধতা (লিমিটেশন) নেই। বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) পৃথিবীর অন্যান্য ট্রাইব্যুনাল থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। এখানে অভিযুক্তরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা বিচার নিয়ে যে প্রতিবেদন করেছে তা বস্তুনিষ্ট নয়।

তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত (মোটিভেটিভ) হয়ে করেছে। তাদের আশঙ্কা এর পেছনে বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে। জামায়াত বিদেশে যেসব লবিস্ট নিয়োগ করেছে তাদেরই এ কাজ। এ ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্র্রারের প্রতিবাদ পাঠানো উচিত। উল্লেখ্য, দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন ‘যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলদেশের বিচার ও রাজনৈাতিক ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করছে।

এ রিপোর্টের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীগণ বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন, হঠাৎ করে ইকোনমিস্ট পত্রিকা বাংলাদেশের মানবাতবিরোধীদের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক লেখা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ের পর দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা কোথায় ছিল? তখন হত্যাকা- ও বিচার নিয়ে কোন প্রতিবেদন ছাপা হয়নি। অথচ যখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে তখন বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দ্য ইকোনমিস্ট উঠেপড়ে লেগেছে। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

পরবর্তীতে মামলার সংখ্যা ও বিচার স্বচ্ছ করার স্বার্থে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দুটি ট্রাইব্যুনালে ১৪টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। অন্য মামলাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। আরও কিছু মামলার তদন্ত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যখন বিচারকাজ দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন দ্য ইকোনমিস্ট তাদের মনগড়া প্রতিবেদন ছাপিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা (এ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকা ইদানীং বাংলাদেশ সম্পর্কে যে রিপোর্ট করছে তা সৎ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে না। যারা প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী তারা এখনও জীবিত। আর সবচেয়ে মূল কথা ফৌজদারি অপরাধ কখনও তামাদি হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে কেন ইকোনমিস্ট বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পর্কে এমন কথাবার্তা লিখছে। এখানে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিচার হচ্ছে।

শুধুমাত্র যারা প্রভাবিত হয়েছে তারা ছাড়া সবাই একবাক্যে বলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। তাদের স্বীকার করতেই হবে। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, দ্য ইকোনমিস্টের রিপোর্ট দেখে আমি হতবাক হইনি। আমার কাছে দুটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, প্রথমত আমার সন্দেহ পয়সা দিয়ে লেখানো হয়েছে। হঠাৎ করা ২০১৩ সালে কেন এই বোধদয় হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার সঠিকভাবে হচ্ছে না।

বাংলাদেশে সত্যি সত্যি যখন হত্যার বিচার হতো না, তদন্ত হতো না তখন ইকোনমিস্ট মতো পত্রিকা কোথায় ছিল? বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে ২১ বছর সময় লেগেছে। তখন বঙ্গবন্ধুর হত্যার ওপর লেখা দেখিনি। আনিসুল হক দুঃখ করে বলেন, আমার সন্দেহ হচ্ছে এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লেখা। দ্বিতীয়ত কিসের ওপর ভিত্তি করে দ্য ইকোনমিস্ট প্রতিবেদন লিখছে। তারা কি ট্রাইব্যুনাল দেখেছে।

প্রসিকিউটরদের সঙ্গে কথা বার্তা বলেছে। এ রিপোর্ট লেখার পেছনে অবৈধ লেন দেন রয়েছে। নিশ্চয়ই কোন পক্ষ তাদের টাকা পয়সা দিয়ে এ ধরনের রিপোর্ট করাচ্ছে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সংবিধান বিশেষঞ্জ এ্যাডভোকেট শ. ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, ইকোনমিস্টের সংবাদ ভাষ্য ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত। বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল কোনভাবেই ‘ওয়্যার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালস’ নয়।

এটি ইন্টারন্যাশনাল (ক্রাইমস) ট্রাইব্যুনাল। যেখানে যুদ্ধাপরাধের নয় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছে। অপরাধের ধরন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও ট্রাইব্যুনালটি ‘ডোমেস্টিক। ’ সম্ভবত নিবন্ধ লেখক এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে অজ্ঞ। সে কারণেই তিনি চলমান ট্রাইব্যুনালকে ‘বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করার অভিযোগ তুলেছেন।

আইন এবং বাস্তব ঘটনা গত কারণে এ ট্রাইব্যুনাল কোনভাবেই বাংলাদেশের বা আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করছে না। বরং স্বচ্ছতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে। শ. ম রেজাউল আরও বলেন, বিশ্বের চলমান এ জাতীয় ট্রাইব্যুনালেঅভিযুক্তদের জন্য যে সুযোগ রাখা হয়নি, বাংলাদেশে তা রাখা হয়েছে। এর দ্বারা অভিযুক্ত পক্ষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার সকল সুযোগ দেয়া হয়েছে। আসামিদের ইচ্ছা অনুসারে একাধিক আইনজীবী নিয়োগ, জিজ্ঞাসাবাদ করাকালে আইনজীবী বা প্রতিনিধির উপস্থিতি থাকা, রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সাফাই সাক্ষী দেয়া বাদী পক্ষের সাক্ষীদের দিনের পর দিন জেরা করা, জামিনের মুক্তি পাবার সুযোগ লাভসহ অকল্পনীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে আসামিপক্ষ।

যা পৃথিবীর অন্য কোন ট্রাইব্যুনালে আসামিদের জন্য রাখা হয়নি। এতদসত্ত্বে¡ও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় চলমান ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে অভিযোগ উপস্থাপিত এবং শিষ্টাচারহীন অভিযোগের ধরন কোনভাবেই বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকের পরিচয় বহন করে না। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এই নেতা আরও বলেন, কোন অপরাধীই তামাদি দোষে বারিত হয় না। কোন আইনেই এ জাতীয় অপরাধের দায়মুক্তি দেয়া হয়নি। ফলে বিচার বিলম্বে হওয়াকে কোনভাবেই ভিন্ন দৃষ্টিতে দেয়ার সুযোগ নেই।

অপরদিকে এ জাতীয় অপরাধের জন্য গঠিত বিশ্বের অন্যান্য দেশের ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘ বিলম্বে ও বিচার চলার বিষয়টি বিস্তৃত হওয়ার নয়। অভিযোগ রয়েছে এই ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তরা বিশাল অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সরকার, মধ্যস্থতাকারী ও মিডিয়াকে তাদের পক্ষে ভূমিকা রাখতে প্রভাবিত করছে। এ ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর (এ্যাটর্নি জেনারেলের মর্যাদায়) সৈয়দ হায়দার আলী বলেছেন, দ্য ইকোনমিস্ট যে রিপোর্ট করেছে তা সঠিক হয়নি। ফৌজদারি আইনে কোন লিমিটেশন নেই।

জাতিসংঘের সনদে বলা হয়েছে, যে সব দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের লিমিটেশন আছে তা তুলে দিতে। আর মানবতাবিরোধী অপরাধের সবচেয়ে সুযোগ সুযোগ সুবিধা পেয়েছে আসামিপক্ষ। পৃথিবীর অন্য কোন ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষ এ ধরনের কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি। এ্যাডলফ আইখম্যান বিষয়ে তিনি বলেন, তারা যদি সেই বিচার মানতে পারে তা হলে কেন বাংলাদেশের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ট্রাইবুনাল হচ্ছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. জহির বলেছেন, মানবতাবিরোধী বিচারে অন্য দেশে লিমিটেশন আছে। কিন্ত আমাদের এখানে নেই। ৪০ বছর কেন? মানবতাবিরোধীদের বিচার করতে ৬০ বছর লাগলেও তা করা যাবে। তিনি আরও বলেন, এটা দেশের জনগণ ও দেশের অপরাধ। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তার মোটিভিটেট হয়ে এ কাজগুলো করছে।

এখানে কোন অবস্থাতেই টাইমের লিমিটেড নেই। প্রসিকিউটর রানাদাশগুপ্ত বলেছেন, ইকোনমিস্ট পত্রিকা শুরু থেকেই বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তার ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। যেমনটি ভাবে এখানে বিএনপি-জামায়াত অভিযোগ করে আসছে। তিনি আরও বলেন আমার কাছে মনে হয়, তারা প্রচুর টাকা দিয়ে বিদেশে যে লবিস্ট নিয়োগ করেছে তারাই এ কাজগুলো করাচ্ছে।

আইখম্যানে বিচার সম্পর্কে বাংলাদেশের বিচারের যে তুলনা করা হয়েছে এটা যথার্থ নয়। বিবাদী পক্ষের সব সাক্ষীকে সাক্ষী দেয়া হচ্ছে না বলে যে কথা বলা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এটাও ঠিক নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে ধরনের বিচার হয় তা থেকে আসামিপক্ষ বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোথায় বিবাদী পক্ষের সব সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়। কারণ তারা প্রয়োজন বোধ করে না।

এটার পেছনে একটা কারণ মামলার প্রমাণের দায়িত্ব আসামিপক্ষের নয়। এর দায়িত্ব প্রসিকিউশন পক্ষের। সুতরাং বিচারকাল ক্ষেপণ করা এবং বিচারের অহেতুক বিলম্ব সৃষ্টি এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করা। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার আদালতের ডিলিবারেশনে হস্তক্ষেপ করছে। বিচারকার্যে জনসম্পৃক্ততা সীমিত করা হয়েছে।

ডিফেন্স (অভিযুক্তের পক্ষের) সাক্ষী সঙ্কুচিত করা হয়েছে। ডিফেন্সের এক সাক্ষীকে কোর্ট অঙ্গন থেকে অপহরণ করা হয়েছে। একটি মামলায় প্রিসাইডিং বিচারপতি পদত্যাগ করেন। সেই মামলায় ৩ বিচারপতি আসামিকে মৃত্যুদ- দেয়, যে বিচারপতিরা সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুনেননি। অন্যদিকে ডিফেন্স পক্ষকে মামলায় প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি।

তারপরও মৃত্যুদ- দেয়া হলো। এখানে বিচারকের ভধরষরহমং দেখা গেছে, এখানে ট্রায়ালের মানদ- যেমন পূরণ হয়নি, তেমনি বাংলাদেশী আইনী মানদ-ও রক্ষা করা হয়নি। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , ডিফেন্স (অভিযুক্তের পক্ষের) সাক্ষী সঙ্কুচিত করা হয়েছে। ডিফেন্সের এক সাক্ষীকে কোর্ট অঙ্গন থেকে অপহরণ করা হয়েছে। একটি মামলায় প্রিসাইডিং বিচারপতি পদত্যাগ করেন।

সেই মামলায় ৩ বিচারপতি আসামিকে মৃত্যুদ- দেয়, যে বিচারপতিরা সকল সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুনেননি। এ প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর রানাদাশগুপ্ত বলেছেন, মৃত্যুদ-ের রায় দিয়েছেন তিনজন বিচারপতি। যারা পুরো সাক্ষ্য শুনেন না। রায় দেয়ার সময় তিনজন বিচারপতিকে থাকতে হবে। এক বিচারপতি রায় ঘোষণা করবেন।

ফরমাল চার্জ গ্রহণের সময় তিনজন বিচারপতি বসবেন। সাক্ষ্য চলাকালে যেকোন একজন বিচারপতি থাকলেই চলবে। আর ট্রাইব্যুনাল থেকে সাক্ষী অপহরণের ঘটনাটিও সত্য নয়। এটা জামায়াতে ইসলামীর অপপ্রচার। যা দ্য ইকোনমিস্ট এখন করছে।

এবং কোন প্রমান ছাড়া। সুত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.