বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
অনাকাঙ্খিত ২৬ মিনিট : ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট । । রেজা ঘটক । ।
গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ রোজ শুক্রবার সন্ধ্যা ঠিক ৬:০০টায় রমনা কালীমন্দির গেট থেকে বাংলা একাডেমী অমর একুশে বই মেলায় প্রবেশ করার সময় বাংলাদেশ পুলিশের মহান সদস্যরা সর্বজনাব এস.আই. সহিদ, এস. আই. মিজান, এস.আই. আনোয়ার, কনস্ট্যাবল কালাম, কনস্ট্যাবল ছালাম, কনস্ট্যাবল বেলায়েত সহ বেশ কিছু পুলিশের সঙ্গে বইমেলা প্রাঙ্গনে ঢোকা নিয়ে প্রথমে বচ্চা শুরু হয়।
পুলিশের বক্তব্য আমাকে মেইন গেট থেকে ঘুরে ঢুকতে হবে। ওনাদের কাছে আমার একান্ত রিকোয়েস্ট ছিল আমার এক লেখক বন্ধু বাংলা একাডেমীর প্রধান ফলকে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে, আর এনটিভি-তে আমার ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য একদল টিভি সাংবাদিক লিটল-ম্যাগ-চত্তরে অপেক্ষা করছেন। সময় জ্ঞান মাথায় রেখেই আমি সোজা পথ ধরেছি। মেইন গেটের ঘুর পথে অনেক সময় নষ্ট হবে। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
সময়টা একটু বিবেচনা করুন। ঠিক যে সময়টায় পুলিশের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল, তখন আমার সামনে দুইজন মহিলা ওই একই গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছিলেন। আমার প্রশ্ন ছিল ওনাদের জন্য আপনাদের এই আইনটি দেখালেন না কেন? পুলিশের জবাব ছিলÑ ওনারা ঢুকে গেছেন, কি করব বলুন। আপনারা আমাদের কথা না শুনলে আমরা কি করতে পারি? আমি বললামÑ আর আমি রিকোয়েস্ট করায় আমাকে হাতির পাঁচ পা দেখাচ্ছেন, না? আমি এই পথেই ঢুকব, পারলে ঠেকান? পুলিশ আমার সঙ্গে তখন খুবই উক্তেজিত অবস্থায়। আমিও রাগের চরম মুহুর্তে।
আমার সঙ্গে ছিল আমার বন্ধু নাট্যকার ও অভিনেতা আমিনুর রহমান মুকুল। মুকুল খুব ঠা-াভাবে তখন পুলিশের স্বনামধন্য অফিসারদের কাছে আমাদের তাড়ার হেতু গুছিয়ে বর্নণা করছিল। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। আমাদের নির্লজ্জ পুলিশ, অশিক্ষিত বর্বর পুলিশ, সরকারের সরকারি লাঠিয়াল বাহিনী, আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় বেতনভুক পুলিশ, জনগণকে সেবা প্রদানের পরিবর্তে জনতাকে বেহায়ার মতো তিক্ততা সরবরাহকারী পুলিশ, জনতার স্বাধীন চলাফেরায় অনাকাঙ্খিত নাক গলানো পুলিশ, সংবিধানে প্রদ্ত ৫৪-ক্ষমতাধারী জনতা নির্যাতনকারী পুলিশ মুকুল আর আমার কোন রিকোয়েস্ট শুনলেন না। তারা শুনলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এস.আই. সহিদের কথা।
পুলিশ ডিটারমাইন্ড আমাকে ওই পথে যেতে দেবেন না। আমি ডিটারমাইন্ড আমি ওই পথেই যাবো। পৃথিবী উল্টে গেলেও এখন ওই পথেই আমাকে বাংলা একাডেমী বইমেলা প্রাঙ্গনে ঢুকতে হবে। কারণ, আমার সময়ের অনেক মূল্য। পুলিশের সময় জ্ঞান নেই।
পুলিশের সঙ্গে ভদ্রতা করার সকল সৌজন্যতা পুলিশই আগ মাড়িয়ে নষ্ট করেছে। আমি তখন পাল্টা প্রশ্ন করলাম, মহিলা দুইজন ঢুকেছে, বুঝলাম, ওনারা লেডিস, ওনাদের আপনারা ছাড় দিছেন। পরে যে আরো দুই দফায় তর্ক-বিতর্ক চলাকালীন পুরুষ লোক ঢুকলো, তারা কারা? তারা ঢুকতে পারলে আমি ঢুকতে পারবো না কেন? তাছাড়া অমর একুশে বইমেলা হচ্ছে লেখক, প্রকাশক, পাঠক, দর্শকদের মেলা। বাঙালির প্রানের মেলা। পুলিশের বরং এই মেলায় অনুপস্থিত থাকার কথা।
অথচ সেই আপনারা অযথা আমাদের সঙ্গে বচ্চা করছেন। এটা ঠিক নয়। একই রাষ্ট্রে একই স্থানে আইনের দুই রকম, চার রকম ব্যবহার হতে পারে না। এটা অন্যায়। আপনারাও অন্যায় করছেন।
আমি এই অন্যায় আচরন মানি না। আমি একজন লেখক হিসেবে এই পথেই ঢুকব। দেখি কোন পুলিশে আমাকে আটকাতে পারে।
এরপর আমি রমনা কালীমন্দিরের ছোট্ট গেট দিয়ে বাংলা একাডেমীর সড়কে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, তখন আমার পিছন দিক থেকে এস.আই. সহিদ প্রথমে আমাকে ধাক্কা মেরে গেট থেকে সরিয়ে দেন। আমি আবারো চেষ্টা করলে আরো দুজন পুলিশ সদস্য এস.আই. সহিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাকে গেট থেকে থাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
ওই পর্যায়ে আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। একেবারে বিনা মেঘে বর্জ্রপাতের মতো শুরু হয়ে গেল হাতাহাতি।
সরকারের প্রশিক্ষিত পুলিশের সঙ্গে আমার মতো সাহিত্য লেখিয়ে পরোটা-চা খাওয়া শক্তিশালী ফাইটারের বেশিক্ষণ টেকার কথা নয়। এক পর্যায়ে আমি খেয়াল করলাম তিনজন পুলিশ আমাকে চ্যাংদলা করে ওই ছোট্ট গেট থেকে ঢুকিয়ে বাংলা একাডেমীর সড়ক দিয়ে একাডেমী প্রাঙ্গনের মূল ফটকের কাছে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তখন সত্যিই অসহায়।
আমি বারবার ওদের বলছিলাম যে আমাকে কোথায় নিতে চান বলুন, আমি আপনাদের সাথে হেঁটে যাই। আমি দৌড়ে পালানোর মতো কেউ নই। আমি একজন লেখক। এই বইমেলায়ও আমার চারটা বই প্রকাশ পেয়েছে। আমাকে এভাবে অপমান করাটা আপনাদের উচিত হচ্ছে না।
কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের বেজন্মা তিন কুত্তার বাচ্চা আমাকে তখন অন্য ভয় দিচ্ছিল। তারা বলছিল, থানায় নিয়ে তোর সব ক্ষমতা আমরা দেখব। আমি তখনো বলছিলাম, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি কোনো হুমকিও দিচ্ছি না। এসব কি বলছেন আপনারা? পুলিশ তখন আমার ঘাড়ে দু-তিনবার গুতা মারল।
আমি এরপর চুপ হয়ে গেলাম।
সন্ধ্যা ৬:১৫ মিনিট। বাংলা একাডেমী মূল ফটকের প্রবেশপথে পুলিশের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন অফিসারের সামনে আমাকে হাজির করা হল। আমি কোন কিছু বলার আগেই এস.আই. সহিদ ব্যাখ্যা করছিল যেভাবেÑ স্যার, ও পুলিশকে চুততে চায়। এসবিকে চুততে চায়।
ক্ষমতা দেখাতে চায়। আমাদের ওপরে চড়াও হয়েছিল, স্যার।
পুলিশের শাদা পোষাকধারী অফিসারের জবাব ওই রুমে আটকে রাখো। গাড়ি আসলে তুলে দিও। থানায় নিয়ে ওর ব্যাপারে শুনবো।
আমি জানতে চাইলামÑ আমার অপরাধ কি? আর আমি কখন গালি দিলাম? কি গালি দিলাম? কাকে গালি দিলাম? ওনারা মিথ্যা বলছেন। আপনি ওনাদের কথা শুনবেন না। আমি নিজে মিথ্যা বলাকে প্রচ-ভাবে ঘৃণা করি। মিথ্যা বলা অপছন্দ করি। ওনারা মিথ্যাচার করছেন।
এটা ঠিক নয়। এটা অন্যায়। আমি কেনো গালি দিতে যাবো? আমার কথা আপনি মন দিয়ে শুনুন প্লিজ। আমি একজন রাইটার। আমি ওনাদের কাছে ওই গেট দিয়ে প্রবেশ করার ব্যাপারে সদয় রিকোয়েস্ট করছিলাম।
কারণ, আমার সময়ের তাড়া ছিল।
অফিসারটি আমার কথা কিছুই গুরুত্ব দিলেন না। গুরুত্ব দিলেন তার স্বনামধন্য এস.আই. আর কনস্ট্যাবলদের কথা। আমি তখন আবারো রিকোয়েস্ট করছিলাম আর আমার হাতে থাকা আমার সদ্য প্রকাশিত গল্প সংকলন সোনার কঙ্কাল বইটি ওনাকে দেখার জন্য রিকোয়েস্ট করছিলাম। কিন্তু উনি আমার কথাকে একেবারেই আমলে নিলেন না।
উল্টো আমাকে বললেনÑ ইউ আর আন্ডার এ্যারেস্ট। যাও ওই রুমে আটকে রাখো।
আমাকে পাশের রুমে নিয়ে আসা হলো। আমি তখন মোবাইল বের করে বন্ধু টোকন ঠাকুরকে ফোন করে বলিÑ পুলিশ আমাকে এ্যারেস্ট করেছে। গেটের কন্ট্রোল রুমে আছি।
টোকন আমার কথা শুনতে পেল কিনা আমি তখন জানি না। কারণ, এস.আই. সহিদ ততোক্ষণে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি তখন চিৎকার করে বলছিলাম- ওরা আমাকে আটকে রেখেছে। এস.আই. সহিদ মোবাইলটা আমার হাতে পুনরায় দিয়ে বললেনÑ এটা বন্ধ কর। আর তোর ক্ষমতা থানায় নিয়ে দেখাচ্ছি।
আমি মোবাইলটা পুনরায় হাতে পেয়ে ওটা বন্ধ না করে বন্ধু আলফ্রেড খোকনকে রিং করলাম। খোকন ফোন ধরার আগেই ওরা আবারো মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
এবার আরেক পুলিশ কনস্ট্যাবল এসে আমাকে বলতেছিলÑ বয় শালা, এই মাটিতে বয়। নইলে ঘাড় মটকে দেব। আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে কাচের বাইরে তাকাছিলাম পরিচিত কাউকে দেখলে দরজা ঠেলে জোর করে আবারো বাইরে যাবো কিনা? নাকি কাচ ভেঙ্গে বাইরে চলে যাবো? আমি তখন দ্বিধাহীন।
আমি তখন অসহায়। আমি তখন দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। আমি জানি না আমার কি অপরাধ? আমি জানি না আমি কী করণে এ্যারেস্ট? আমি জানি না আমাকে কেন ওরা আটকে রাখছে? আমাকে কেন ওরা থানায় নিতে চায়?
আমার মাথায় তখন হাজারো প্রশ্ন। ওরা কি গতকাল আমাকে মিছিলে দেখেছে। জাতীয় জাদুঘর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গতকাল একটা মিছিল হয়েছে।
তিনটার সময়। পাহাড়ি জনপদে নতুন করে সৃষ্ট সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে সেই মিছিল হয়েছিল। ওই মিছিলে শ্লোগান ছিলÑ পাহাড়ে গুলি কেন? শেখ হাসিনা জবাব চাই। আমার মা কাঁদে কেন? সেনাবাহিনী জবাব চাই। আমার ভাই মরল কেন? জবাব চাই, জবাব চাই ইত্যাদি।
আমি অবশ্য ওই মিছিলের পুরোটা ছিলাম না। মিছিল টিএসসি রাজু চত্বর ক্রস করার সময় আমি মিছিল থেকে নিজেকে গুটিয়ে বইমেলায় যাবার জন্য বাম পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। রাজু চত্বরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ছাত্রছাত্রীরা মিছিলে তখন যোগ দিচ্ছিল আর মিছিলটা শহীদ মিনারের দিকে চলে যাচ্ছিল। আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মিছিলের সঙ্গে আমার একাত্মতা কামনা করছিলাম। আর তাদের দাবীর পক্ষে আমার সমর্থণ জানিয়েছিলাম মাত্র।
তবে কী ওরা আমাকে এই করণে আজ এভাবে আটকে দিল?
আমি তখন হাজারো চিন্তা করছিলাম। নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি তখন অনেকটা অসহায়। আমি কেবল ভাবছিলাম, টোকন আমার কথা শুনতে না পেলেও মুকুল তো বাইরে আছে। দেখি ওরা কী করে আর আমার বন্ধুরা কী করে! আমি ভিতরে ভিতরে মোটেও নার্ভাস না হয়ে বরং বিষয়টার শেষ কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য অসহায় অপেক্ষা করছিলাম। পুলিশ কনস্ট্যাবল আমাকে অন্তত ছয়বার মাটিতে বসবার জন্য জোরাজুরি করছিল।
আমি তাতে কোন ধরনের পাত্তা না দিয়ে উল্টো ঘোষণা করলামÑ আমি মরে গেলেও মাটিতে বসবো না। পাশেই একটা চেয়ার খালি পড়েছিল। আমি বরং ওটাতে বসতে চাচ্ছি। ওরা আবারো ঘোষণা দিলÑ থানায় নিয়ে তোর ক্ষমতা আজ দেখব?
আমি ঠিক জানি না আমি আগের জন্মে এইসব অসভ্য পুলিশ সদস্যদের শত্রু ছিলাম কীনা? আমি ঠিক জানি না কেন আজ ওরা আমার উপর চড়াও হোল। আমি ঠিক জানি না কেন ওরা এতো আস্ফালন করছে? ওরা কি কোন দাগী সন্ত্রাসীকে এইমাত্র পাকরাও করেছে? নাকি নিরিহ একজন লেখককে আটক করেছে? আমি ওদের কোন কথার আর কোন জবাব না দেবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি ঘোষণা দিলাম আমি দাঁড়িয়েই থাকবো। ওরা তখন হুমকি দিচ্ছিলÑ শালাকে তিন-চারটা খুন আর আমর্স কেসে জড়িয়ে দেব, শালা ক্ষমতা দেখাতে আর জায়গা পাও না ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমি কী তখন ঝিম মেরেছিলাম? আমি কী তখন স্বজ্ঞানে ছিলাম? আমার কী তখন কোন বুদ্ধি কাজ করছিল? আমি কেবলই তখন অসহায় অপেক্ষা করছিলাম। কখন ওদের গাড়ি আসে তার জন্য অপেক্ষা তখন আমার।
আমি আর কিচ্ছু জানিনে। আমার কী তখন প্রচ- ঘাড় ব্যথা করছিল? আমার মনে পড়ে না। আমার কী তখন প্রচ- কান্না পাচ্ছিল? আমার বিছুই মনে পড়ে না। আমার কী তখন নিজের প্রতি নিজের প্রচ- ঘৃণা হচ্ছিল? আমার কিছুই মনে পড়ে না। আমার কী তখন নিজেকে পৃথিবীর সেরা বেকুফ মনে হচ্ছিল? আমার কিছুই মনে পড়ে না।
আমি কেবলই ঠায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
সন্ধ্যা ৬:২২ মিনিট। পুলিশের সেই শাদাপোষাকের অফিসার সাহেব আমার রুমে আসলেন। জানতে চাইলেনÑ
: কী করেন? আমি বললামÑ আমি একজন লেখক ও গবেষক।
: কী প্রমাণ?
: আমি আমার হাতের বইটা ওনাকে দেখিয়ে বললাম, এটা গতকাল প্রকাশ পেয়েছে।
এখানে আমার সব পরিচয় পাওয়া যাবে।
উনি আমার বইটা হাতে নিলেন। উল্টে পাল্টে ভালো করে দেখলেন। তারপর প্রশ্ন করলেনÑ: পুলিশকে গালি মারলেন কেন?
: ওনারা আগে আমাকে ধাক্কা মেরেছে। আপনাকে কেউ বিনা কারণে ধাক্কা মারলে আপনি কী বলতেন?
: না, আপনারা কবি সাহিত্যিকরা পুলিশকে মানুষ মনে করেন না? আপনি থানায় যাবেন।
আপনার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।
: আমার বই এটা। আমি আবারো বলছিÑ আমি কোন সন্ত্রাসী নই যে আমাকে থানায় যেতে হবে এ্যারেস্ট হয়ে।
ঠিক তখন কাচের দরজা ঠেলে বন্ধু আমিনুর রহমান মুকুল আবারো ওখানে হাজির হল। এবার পুলিশ অফিসারটি মুকুলের কথা শুনতে চাইলেন।
মুকুল জানালোÑ আগে ওনারা ধাক্কা দেবার পরে ও গালি দিয়েছে। পুলিশ অফিসারের পাল্টা মুকুলকে জেরাÑ
: গালি দেওয়াটা উনি ভুল করেছে?
: মুকুলের জবাব, হ্যা, গালি দেওয়াটা উচিত হয়নি। কিন্তু ধাকাকা না দিলে ও গালি দিতো না।
: আপনি ওনাকে চেনেন?
: জি, আমার বন্ধু। আমি ঘটনার সময় ওর সঙ্গেই ছিলাম।
পুলিশ অফিসারটি এবার আমার দিকে তাকালেন। বললেনÑ আপনারা শিক্ষিত মানুষ পুলিশকে কোনো মানুষ মনে করেন না। আপনারা লেখালেখি করেন। আপনারা সবকিছু একটু বেশি বুঝতে চান। যান, এখন থেকে নজরে থাকবেন।
আমি বললামÑ শুনুন, আপনি যেভাবে এখন আমার সাথে ভদ্র ব্যবহার করলেন, কই, এখন কিন্তু আপনাকে আমি গালি দিলাম না। একজন নিরিহ মানুষ কখন আপনাদের গালি দেয় তাকি আপনারা বুঝতে পারেন? আপনাদের কী সে বিষয়ে কোনো ট্রেনিং দেওয়া হয়? আপনারা অনেক কিছু পারেন। আজও সেটা আমার বেলায় প্রমান হল।
পুলিশ অফিসারটি এবার নরম গলায় বললেনÑ আপনার ভয়েস এখনো সেই একই টোনে আছে। আপনারা কবিরা একটু বেশি ঝামেলার।
যান, চলে যান। এখন থেকে নজরে থাকবেন।
আমি পুলিশ অফিসারকে থ্যাঙ্ক ইউ জানিয়ে মুকুলের সাথে কাচের দরজার দিকে পা রাখলাম। আমার ঠিক পিছনে পুলিশ অফিসারটিও বের হচ্ছেন। আমি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললামÑ সেনাবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ সব বাহিনীতেই আমার পরিবারের সদস্যরাও আছেন।
কেউ ওদের গালি দিলে সেটা আমার গায়েও লাগে। ইচ্ছে করে কেউ গালি দেয় না। আর আমি মোটেও বেশি বুঝিনি। হুদাই আমার সময়টা নষ্ট হল।
পুলিশ অফিসারটা আর কোন কথা বললেন না।
কাচের দরজা ঠেলে আমাদের আগেই বেড়িয়ে গেলেন। পিছন পিছন আমরাও। বাইরে তখন বাংলা একাডেমী মঞ্চে গান হচ্ছিলÑ জাত গেল জাত গেল বলে.... আমরা গান শুনতে শুনতে পাকা সড়ক ধরে বাংলা একাডেমীর লিটল-ম্যাগ চত্তরের দিকে হঁটতে থাকলাম। পিছনে পড়ে থাকল জীবনের অনাকাঙ্খিত ২৬টি মিনিট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।