১
প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন মেয়ের বাসায় যাওয়া হচ্ছে। কনে দেখা। বিশাল লিস্ট থেকে বাছাই করে যেসব সিলেক্টেড হয়েছে সেগুলোর ছবি দেখছি। তাঁর ভেতর থেকে আমার পছন্দের গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ‘আমরা একটু আসতে চাই।
‘ কনের বাড়ীতে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। শুধু দয়া করে জানাতে হচ্ছে আমরা কতজন যেতে চাই। প্রথম কয়েকজনকে বেশ উৎসাহ নিয়েই দেখলাম। এরপর কেমন একঘেয়ে লাগতে লাগলো।
আসলে আমি কি চাচ্ছি, নিজেই জানি না।
যে কয়জন কে দেখলাম। কেউ ই খারাপ না। সবাই যথারীতি সুন্দরী। সবাই প্রায় ভালো কোথাও পড়াশুনা করছে। দুইজন ছিল হবু ডাক্তার পাত্রী।
আর কিছুদিন পরে ডাক্তার হয়ে যাবে। গ্রিন কার্ড হোল্ডার পাত্র এমনিতেই দামী। তাঁর সঙ্গে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং ভালো চাকরী থাকলে তো কথাই নেই। তবে এভাবে খুব বেশীদিন চললে আমার জন্য সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে। উৎসাহী জনতা ক্ষান্ত দেবে।
‘বেশী খুতখুতে’ এমন একটা অপবাদ প্রায় জড়িয়ে গেছে আমার সঙ্গে।
আজকেও একজনকে দেখতে যাওয়ার কথা। খুব ইন্টারেস্ট বোধ করছি না। কিন্তু যেতেই হবে। এই মেয়েকে নাকি পছন্দ হবেই।
মেয়ে ডাক্তার, এখন ইন্টার্ন করছে। একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে। ছবি দেখেছি, নিঃসন্দেহে সুন্দরী। ফ্যামিলি ভাল। ওদের খুবই ইচ্ছা।
আমি ছাড়া বাকীরা খুবই উৎসাহ বোধ করছে। আমি রাজী হলে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচবে। আমারও কেন যেন মনে হচ্ছে আজ কিছু একটা হবে।
ভাইয়া তোর ফোন।
নিজের ঘরে শুয়েছিলাম।
উঠে যেয়ে ফোন ধরলাম। ‘হ্যালো’।
‘আজকে আপনি আমাকে দেখতে আসবেন না। ‘ মেয়েলি কণ্ঠস্বর। প্রথমটায় কেমন থতমত খেয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ সময় লাগলো স্থির হতে। কেন যেন খুব এক্সাইটেড ফিল করলাম। এতদিনের সবগুলো মেয়ে দেখার মধ্যে এই একটা ব্যাপার ছিল না। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, আপনি?
আমি লিপি। আজকে বিকেলে আপনি আমাকেই দেখতে আসছেন।
কিভাবে বিশ্বাস করব আপনি সেই মেয়ে। বিয়ে ভাঙ্গানোর জন্য অন্য কেউ তো ফোন করতে পারে।
এই বিয়েতে আমার মত নেই।
সেক্ষেত্রে সলিউশান হচ্ছে আপনার প্যারেন্টস কে বলা। অবশ্য আদৌ যদি আপনি সেই মেয়ে হন।
অ্যান্ড যদি উনারা অমত করেন, সেক্ষেত্রে আমরা যাব না।
সেটা সম্ভব না।
ইন দ্যাট কেস আমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছে। আর কিছু বলবেন?
ফোনটা রেখে দেয়ার আওয়াজ হল। বেশ মজা লাগলো।
আসবার পর থেকে প্রতিদিন মেয়ে দেখতে দেখতে কেমন যেন একটা অহংকার জন্মে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল আমি পৃথিবীর অন্যতম দামী একটা পাত্র। প্রচুর মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে পাত্র হিসেবে পাওয়ার জন্য। এই প্রথম মনে হল আমাকে কেউ রিজেক্ট করতে পারে। আমাকে কারো অপাত্র মনে হতে পারে।
কেমন যেন একটা চ্যালেঞ্জ ফিল করলাম। একজন মেয়ের মন জয় করার চ্যালেঞ্জ। খারাপ না। দেখি কি হয়। অবশ্য যদি সত্যিই সেই মেয়ে ফোনটা করে থাকে।
২
প্রায় প্রতিটা মেয়ে দেখতেই স্যুটেড বুটেড হয়ে গিয়েছি। ছেলে বিদেশে থাকে এমন একটা ছাপ নিজের অজান্তেই রাখার একটা চেষ্টা করছিলাম হয়তো। কিংবা কমপ্লিটে স্বচ্ছন্দ বোধ করি বলে হয়তো। আজ কেন যেন অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করল। পায়জামা পাঞ্জাবী পড়লাম।
এবং কিছুক্ষণের ভেতরেই টের পেলাম কি বিচ্ছিরী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার একমাত্র ছোট বোন আমাকে দেখে নাক সিটকাল। ‘তুই জামাই সেজেছিস কেন?’
এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। আবার ড্রেস চেঞ্জ করতে যাওয়া মানে আরও দেরি হওয়া। মেয়ের বাড়ী থেকে বার দুইএক ফোন এসে গেছে।
আমাকে কিছুটা অব্যাহতি দেয়া হল। ‘পুরুষ মানুষ একটা কিছু পড়লেই হল। ‘ এরপর অনেকের মনে হতে লাগলো খারাপ লাগছে না। সবচেয়ে বড় কথা, এই মেয়ের চেয়েও সুন্দরী মেয়েকে যেহেতু আমি না বলেছি তাই এবারো না বলব বলেই সবাই ধরে নিয়েছে। তার ওপর এ মেয়ের বয়স তুলনামুলক একটু বেশী।
পাশ করে গেছে, মানে স্টুডেন্ট আর নেই। দুএক বছর লুকিয়ে থাকলে, আসল বয়স হয়তো বা ছাব্বিশ সাতাশ হবে। বাইশ তেইশ কে পারফেক্ট ধরেই এগোনো হচ্ছে।
অবশেষে আমরা রওয়ানা হলাম। প্রথমবারের মত উত্তেজনা বোধ করছি।
মেয়ের ছবি দেখেছি। ফলে মেয়েটাকে দেখার খুব বেশী শখ নাই। অপেক্ষা করে আছি, মেয়েটার সঙ্গে কথা বলার জন্য। একা কথা বলতে চাই বললে কি বাজে দেখাবে? কয়েকটা মেয়ের ক্ষেত্রে তো মেয়ে পক্ষই বলেছিল, ‘তোমরা কি আলাদা কথা বলতে চাও?’ এবার কি বলবে? সমস্যা হয়ে যাবে যদি না বলে। আমি কি নিজে থেকে এমন অফার করতে পারি? খুব কি অকওয়ার্ড দেখাবে ব্যাপারটা?
দেখাই যাক না কি হয়।
হয়তো বেশি বেশী ভাবছি। দেখা যাবে অন্য কেউ ফোন করেছিল। মেয়ের কোন অমত নেই। কিন্তু সেক্ষেত্রে তো পুরো এক্সাইটমেন্টটাই মাটি। আসলে আমি কি চাইছি? মেয়ে অমত করুক তারপর আমি তাঁর মন জয় করি? হাতে তো সময়ও বেশী নেই।
ভিসা আছে আর দিন পনের। এই কয়দিনে একটা মেয়ের পূর্ণ অমত কে মতে পরিণত করা। ব্যাপারটা তো তা না। হাতে সময় তো আরও কম। কারণ মত দেয়ার পরে বিয়ের আরেঞ্জমেন্ট এর জন্য দিন পাঁচেক তো লাগবেই।
মানে দশ দিন থাকছে হাতে।
নাহ। খুব বেশী ভাবছি। দেখাই যাক না কি হয়। পৌঁছে গেছি।
সবাই নামলাম। মেয়ের বাবার নিজস্ব ফ্ল্যাট। সুন্দর করেই সাজানো। আমার আজকে কি হয়েছে। এর আগের অনেক মেয়েরই বাবার নিজস্ব ফ্ল্যাট ছিল।
তখন তো এসব নিয়ে ভাবিনি। কিংবা ঘর কেমন করে সাজানো। আজকে কেন যেন ঘরের সাজ সজ্জা খুব সুন্দর লাগলো। কর্নার টেবিলের ওপর রাখা ফুলদানীটা কে মনে হল খুবই পারফেক্ট চয়েজ। ঘরে মেয়েটার একটা ছবি ঝোলানো আছে।
সুন্দর হাসিময় মুখ। সবাই ড্রইং রুমে বসলাম।
হালকা কিছু গল্প গুজব হল। আমি কোথায় থাকি। ওখানে কেমন লাগছে।
ফেরত আসতে চাই কি না। এক ফাঁকে নাস্তাও এলো। এরপর খুব স্বাভাবিক বেশে মেয়েটা আসলো। সালাম পর্ব শেষ হল। কিছু গতানুগতিক প্রশ্ন।
খুব সাবলীল ভাবেই উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রাণপণে ক্লু খোঁজার চেষ্টা করছি, এই মেয়েই ফোন করেছিল কি না। গলার আওয়াজ মনে করার চেষ্টা করলাম। পারছি না। হতে পারে।
কিংবা মনের ভেতর যেহেতু সন্দেহ কাজ করছে, তাই সব এক রকম লাগছে। অপেক্ষা করে আছি সেই মোক্ষম সুযোগের জন্য। ‘ওরা বরং নিজেরা একটু একা কথা বলুক। আজকালকার ছেলে মেয়ে তো। নিজেদেরকে একটু বুঝে নিক।
কি বলেন?’
কিন্তু সুযোগটা এলো না। পরে মতামত জানাবো বলে চলে আসা হল।
৩
মনে মনে ফোনটা আশা করছিলাম। বিভিন্ন বাহানাতে তাই এই দুইদিন মেয়ে সম্পর্কে মতামত দিই নি। আজকে ফোনটা আসলো।
আপনাকে বারণ করেছিলাম না দেখতে আসতে।
সেজন্যই তো আরও উৎসাহ নিয়ে গিয়েছিলাম। ব্যাপারটা কি জানবার জন্য।
জানতে তো চাইলেন না।
তোমার কথাবার্তায় তো মনে হল না তোমার বিয়েতে কোন অমত আছে।
আমি তো আপনাকে বলেইছি, বাড়ীতে আমি এই অমতের কথা বলতে পারবো না।
এখন?
এখন আপনি জানাবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয় নি। ব্যাস।
কিন্তু পছন্দ তো হয়েছে।
আপনি সুখী হবেন না।
সেটাই তো আমার চ্যালেঞ্জ।
মানে?
মানে আমি নিজেও এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চাই, যে মনে প্রানে আমাকে অপছন্দ করবে। আর আমার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তাঁর মনে নিজের জায়গা করে নেয়া।
কোনদিনই পারবেন না।
সেতো আরও ভালো।
যত শক্ত চ্যালেঞ্জ ততো বেশী উত্তেজনা।
বিয়ে আপনার কাছে খেলা?
শোন, বিয়ের আর তিন দিন আছে। সো তোমার হাতে তিন দিন সময় আছে। বিয়ে ভাঙলে তোমাকে ভাঙতে হবে।
আমি আরেকজনকে পছন্দ করি।
জানি। ছেলেটার নাম সাব্বির। ওর সম্পর্কেও খোঁজ নিয়েছি।
তারপরও আপনি রাজী হয়েছেন?
তারপরেই রাজী হয়েছি।
মানে?
ছেলেটা গতকাল আমাকে হুমকি দিতে এসেছিল।
বিয়ে না ভাঙলে আমাকে মেরে ফেলবে।
তারপর?
তারপর এখন সে হাজতে।
আপনি ওকে পুলিশে দিয়েছেন?
পুলিশ কিছু আদর যত্ন করেছে। তাতে সে সব উগলিয়েছে।
কি বলেছে?
বলেছে, সে পয়সার জন্য আপনার সঙ্গে প্রেম করছে।
বড়লোকের একমাত্র মেয়ে। তোমার দেয়া পয়সায় নেশা করে, এইসব আর কি।
অসম্ভব।
কোন হাজতে আছে জানতে চাও?
আপনি কেন এমন করছেন?
কারণ আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি। সাব্বির ছেলেটাকে ভাল লাগলে হয়তো আমি নিজেই সরে যেতাম।
কিন্তু ঐরকম একটা ছেলের পাল্লায় পরে তোমার জীবনটা নষ্ট হোক আমি চাই না। একথা তোমার বাবা মাও জানেন। তাই তাঁরাও এই ছেলেকে পছন্দ করেন নি। আর কিছু বলার আছে?
হ্যালো। রেখে দিল নাকি? হ্যালো হ্যালো...
ভাইয়া ওঠ।
এই নে। তোর ফোন এসেছে।
কার ফোন?
একটা মেয়ে ফোন করেছে।
কি নাম?
নাম তো বলে নি।
আজকে যে মেয়েটাকে দেখতে যাব তাঁর নাম কি লিপি?
হ্যাঁ।
আচ্ছা তুই যা।
হান্ডসেট টা নিলাম।
ও, একটা কথা তো আপনাদের বলাই হয় নি। মাঝে মাঝে আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। স্বপ্নে।
আমি জানি কে ফোন করেছে আর কি বলবে। কি? বিশ্বাস হচ্ছে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।