Everyone is entitled to my opinion.
আমার খুবই প্রিয় একজন ব্লগার সোজা কথা পাহাড়ী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একটি অসাধারণ কবিতা লিখেছিলেন। উনাকে যে কোন কারণেই হোক ইদানীং আর ব্লগে দেখা যায় না। সোজা কথার লেখা আমার প্রিয় একটি কবিতা বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় পোস্ট করলাম।
১.
ও পাহাড়ী,
দুহাতে কপাল চেপে নি:শ্বাস করে ভারী
কোন কষ্টে নিলে আড়ি?
এই জলাভূমিতে একদিন
পিতা ভোরে ছুটে যেত জুমচাষে -
বাঁকা কাস্তে, ঢেঁড়স-তরমুজের বীজ হাতে ।
মায়ের পিঠে ঘুম ভাঙতেই কানাকোকা, বনমোরগের ডাকে
তুমি দেখতে কমলা সুর্যালোক,
দন্ডকলসের চিনির গন্ধ ছড়াতো বাতাসে ।
চৈতে নবান্নে বিজুর রং খেলায়,
চুম্বনে-সোহাগে একদিন তুমিও পেতেছিলে ঘর
শুকর বিছানো উঠোনে, খালি পায়ে খেলতো
তোমার শিশু,
বহুনল বাঁশিতে ফুঁ চলতো- উচু মাচার ঘরে
পেনিলোপের মত চরকায় সুতো
কাটতো তোমার বোন
১৯৬২, ও পাহাড়ী ----
মরার শেষ দমের মত বিভৎস গোঙানিতে
ভরেছিল কাপ্তাই -চেটে খেয়েছিল তোমার সম্বল ।
সেদিন জেনেছ কোন জমি তোমার নয়
কোন এক মানচিত্রময় দেশের মানুষ
অনেক আগেই তা নিয়েছে বন্ধক,
বৈধ দস্যুতায়
মাইলকে মাইল বৃক্ষ উপড়ে ভেসেছে আর
ঐরাবতের লাশ, মৃতপ্রায় হরিণেরা
আঁকড়ে ধরেছে প্রকাণ্ড শেকড় ।
বৃদ্ধা মাতামহকে জড়িয়ে
পর্বতশৃঙ্গ থেকে দেখেছিলে - কর্ণফুলির রাগ,
সভ্যমানুষের দরকার ছিল আশি মেগাওয়াট ।
২.
ও পাহাড়ী,
আরেক কাঠের জঙ্গলের কথা
উল্লুক, গুইসাপের আনাগোনা,
তিতির, বনরুই ছুটে চলে গেলে হাততালি যেখানে,
মধুপুর - বাওয়ালী গাছ বেয়ে উঠে গেছে
অচেনা বেগুনীফুল ঝোপে ঝোপে
সেখানে এক কাপড়ে বেঁচে থাকো তুমি
মাটির লেপা ঘর, কুড়াল আর বাদ্যযন্ত্র
একখন্ড থাকার জমিনে
সভ্যমানুষের চাই পরিবেশ-বাগান
প্রতিবাদে পাপ হলো-অপরাধ, তক্ষকের ডাক --
সেদিন জোনাকী জ্বলেনি মধুপুর ঝোপে
চাবুক ক্লান্ত হলে, থেমেছিল মিছিল,
রক্ত-ছাল উদাম দেহে চিরমুক্তি পেয়েছিল চলেশ রিছিল ।
৩.
পাহাড়ী বোন, তুমি কাঁদছো?
পৃথিবীতো সবলের জলসাঘর
শহরে বাতি জ্বলে,
পাখা ঘোরে,
পথে পথে জ্বলে সোডিয়াম চাঁদ
পাহাড়ে সন্ধা থাকে প্রতিদিনই,
চোখের পাতাকে চেপে ধরে আজ একটু ঘুমাও
ছবির চিত্র মধুপুর ইকোপার্কের প্রতিবাদে নিহত পীরেন স্নালের বাড়ি - তার স্ত্রী সীতা নকরেক, পুত্র উৎস এবং কন্যা রাত্রি সন ।
**১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির দুর্গম বাঘাইছড়ির নিউ ল্যাইল্যাঘোনা গ্রাম থেকে সেনা কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট ফেরদৌস অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে। কল্পণার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এই পোষ্টে ।
***কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুত উৎপাদন করার খেসারতি দিতে নিমজ্জিত হয় ৪০% জমি, হারিয়ে যায় ২৯ বর্গমাইল বনভূমি, ২৩৪ বর্গমাইল বনজ জমি, ১৮ হাজার পরিবারের প্রায় ১ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব হারায়
সোজা কথার পোস্ট: http://bdmukto.amarblog.com/posts/68565/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।