পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের বিচার গতকাল শুরু হয়েছে। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে গতকালের বিচার কার্যক্রম শেষ হয়। আজ সকাল ১০টায় ফের আদালত বসবে। পিলখানার রক্তস্নাত দরবার হলেই গতকাল বেলা ১২টায় বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের বিচার শুরু হয়। এক বছর আগে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে যে স্থানটি থেকে রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিলো, ঠিক এক বছর পর সেই দরবার হলেই দুপুর ১২টায় শুরু হয় ঢাকা সেক্টরের বিদ্রোহীদের বিচার।
বিশেষ আদালত-৫ এ দুপুর ২টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম চলে।
সাবেক ডিএ তৌহিদসহ ৮৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করার পর গতকাল চার্জ গঠন করা হয়। এই ৮৬ জনের মধ্যে ১৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন ও পলাতক রয়েছেন ২ জন; বাকি ৬৫ জন ব্যারাকে রয়েছেন। আদালত আজ আসামীদের হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বেলা সোয়া ১২টায় জুনিয়র কমান্ডিং অফিসার সুবেদার মেজর শাহআলম ভুঁইয়া অভিযোগ উত্থাপন করেন।
প্রসিকিউটর হিসেবে রয়েছেন মেজর মতিউর রহমান। এই বিচারে সাক্ষী রয়েছেন ৩০ জন। বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিচারক প্যানেলের অন্য সদস্যরা ছিলেন -লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম রাব্বানী ও মেজর সাঈদ হাসান তাপস। এছাড়া এটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ আলী কিসলু।
যে ৮৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন ও চার্জ গঠন করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন সুবেদার মেজর ফজলুল হক, মো: ওয়ালিউল্লাহ, নায়েক সুবেদার নুরুল ইসলাম, নায়েক সুবেদার সুলতান আহমেদ, হাবিলদার আবুল হোসেন সিকদার, হাবিলদার আব্দুল মতিন, হাবিলদার মোস্তফা মিয়া, হাবিলদার আজিজুল্লাহ ভুঁইয়া, হাবিলদার মামুনুর রহমান, হাবিলদার আবু হোসেন, হাবিলদার গোলাম মোস্তফা, হাবিলদার মোমেনুল ইসলাম, নায়েক কবিরুল আলম, নায়েক মোয়াজ্জেম হোসেন, নায়েক নজরুল ইসলাম, নায়েক আবুল কালাম আজাদ, নায়েক মজিবুর রহমান, নায়েক আলমগীর হোসেন, নায়েক এনামুল হক, নায়েক দীপক কুমার মজুমদার, নায়েক একেএম ফজলে হোসেন, নায়েক জহিরুল ইসলাম, নায়েক আবু সায়েম, নায়েক আলতাফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্যরা।
এদিকে ঢাকার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক দুইজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বিডিআর আদালত। একইসঙ্গে মামলার আসামি সদর দপ্তরে কমর্রত ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পিলখানা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১৯ জনকেও বিদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতেও নির্দেশ দিয়েছে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মইনুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন ওই আদালত।
পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহীদের মামলার প্রথম দিনের শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর শুনানি বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
আদালতের কার্যক্রমের শুরুতেই মামলার বাদি নায়েব সুবেদার শাহ আলম ভূঁইয়া আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান।
বর্তমানে তিনি ঢাকা সেক্টরের সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্রোহের সময় তিনি পিলখানায় ছিলেন।
এ মামলায় মোট ৮৬ জন অভিযুক্ত, এর মধ্যে দুইজন পলাতক এবং ১৯ জন পিলখানা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন বলে মঞ্জুর আলম সাংবাদিকদের জানান। অপর ৬৫ জনের মধ্যে সিপাহি নাসির উদ্দিন বিডিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
বাদি তার অভিযোগে বলেন, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সিপাহি মইনুদ্দীন প্রথমে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করলে উপসি'ত কর্মকর্তারা তাকে নিরস্ত্র করে।
ওই সময় আসামিদের মধ্যে ৪০ জন সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। অন্য ৪৬ জন সেখানে থাকলেও বিশৃঙ্খলা থামাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আদালতে বিচারক প্যানেলের অপর দুজন হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম রব্বানী ও মেজর সাঈদ হাসান তাপস।
এ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন মাহমুদ উল্লাহ কিসলু। বিশেষ প্রসিকিউটর হিসেবে রয়েছেন মোশাররফ হোসেন কাজল, শেখ বাহারুল ইসলাম, মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহনাজ টিপু।
প্রসিকিউটার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মেজর মতিউর রহমান।
আদালত মুলতবি করার পর ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আজিজ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "গত বছরের এই ঘটনা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরোচিত ঘটনা। বিডিআরের অধিকাংশ সদস্য চায় এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। "
প্রসিকিউটর মেজর মতিউর রহমান বলেন, বিডিআর সদস্যরা আদেশ অমান্য করেছে, দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি, তথ্য গোপন করেছে। আর এ জন্য বাংলাদেশ রাইফেল অর্ডার ১৯৭২ এর আর্টিক্যাল ১০ এ (১) এর আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
পিলখানায় হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধের বিচার হবে প্রচলিত আদালতে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হত্যা, ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের তদন্ত করছে। বিদ্রোহের বিচারকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
বিদ্রোহের প্রথম দফায় পিলখানায় অবসি'ত ঢাকা সেক্টর সদর দপ্তরের বিডিআর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত বিদ্রোহের বিচার এই আদালতে সম্পন্ন হবে। দেশের কয়েকটি স্থানে বিদ্রোহের বিচার ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
বিডিআর আইনে চলমান এ বিচারে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর কারাদণ্ড।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় মেজর জেনারেল শাকিলসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। ওই সময় রাজধানীর বাইরে কয়েকটি স্থানেও বিদ্রোহ হয়। বিদ্রোহের অভিযোগে সারাদেশে সাড়ে ছয় হাজার বিডিআর সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
রাঙামাটিতে গত বছরের ২৪ নভেম্বর ১২ ব্যাটালিয়নের নয়জন জওয়ানের বিচারের মাধ্যমে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই মামলার রায় হবে।
এদিকে নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় গতকাল মঙ্গলবার আরও নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই নয়জনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে।
এদিকে এ মামলায় দু-এক দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে কি না, জানতে চাইলে জিআরও শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) রতন শেখ জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে এবং তদন্ত পর্যায়ে নয়জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে; বর্তমানে আরও চার-পাঁচজন রিমান্ডে আছেন। তাই দু-এক দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল সম্ভব নয়।
এদিকে আদালত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। আর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিডিআর হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশও দেন আদালত।
এ বিচারে আসামি ৮৬ জন। এর মধ্যে দুজন পলাতক, হত্যা মামলায় ১৯ জন গ্রেপ্তার ও ৬৫ জন ব্যারাকে আছেন। ব্যারাকে থাকা এই ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে আদালত গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের কাল আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। এ মামলার সাক্ষী ৩০ জন।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই দরবার হল থেকেই বিডিআরের বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে রাঙামাটিতে দুটি এবং ফেনী, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিচার শুরু হয়েছে।
বিডিআর সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, সারা দেশে বিদ্রোহে জড়িত বিডিআরের সদস্যদের বিচারের জন্য ছয়টি আদালত গঠন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকায় দুটি ও ঢাকার বাইরে চারটি আদালত আছে। ঢাকায় স্থাপন করা দুটি আদালতে ১০টি ইউনিটে বিদ্রোহের বিচার হবে। এতে সাড়ে তিন হাজার জওয়ানের বিচার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিডিআরের কর্মকর্তারা সংখ্যার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তাঁরা বলেন, ১০টি ইউনিটের তদন্ত শেষ হওয়ার পরই এ সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।