কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ইহাতে উহারা কষ্ট পায়
দীর্ঘ প্রায় একটি বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে অবশেষে বিডিআর ডিজি মহোদয়ের নেতৃত্বে পিলখানায় বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের বিচার কাজ আজকে শুরু হয়েছে। এই বিচার কাজ কতদিনে শেষ হবে, সত্যিকার ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে কিনা ইত্যকার নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
তদন্ত রিপোর্ট বের হওয়ার আগেই তদন্তের সমন্বয়কারী বাণিজ্যমন্ত্রী যেভাবে ঢালাও মন্তব্য করেছেন তাতে আমাদের মনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ায় সন্দেহ সংশয় থাকাই স্বাভাবিক। তদন্তের ফলাফল কি হয়েছে, জনগণ পুরোপুরি জানে না, আবার প্রকৃত অপরাধী কারা তাও জন সমক্ষে আসেনি। অন্যদিকে নিরপরাধ জওয়ানরা দিনের পর দিন কারাগারে আটক থাকছেন।
মোটামুটি তাদের সাজা শেষ হবার পথে।
বিগত প্রায় ১ বছর ধরে কারান্তরালে আটক রয়েছেন হাজার হাজার বিডিআর জওয়ান। কেউ কেউ মারাও গেছেন, ৭৩ জনের অস্বাভাবিক এই মৃত্যুনিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যায়। বিডিআরের পক্ষ থেকে একটা সাদামাটা প্রেস নোট দিয়েই বিডিআর ডিজি তার দায়িত্ব শেষ করছেন। অথচ মৃত্যুবরণকারী জওয়ানদের পরিবার হতে নির্যাতনের বিস্তর অভিযোগ বার বার করা হয়েছে।
কিন্তু তার কোন সদুত্তর এই ডিজি দেননি বা দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি। তারই অধীনে বিচার কতটুকু নিরপেক্ষ আর গ্রহণযোগ্য হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেই ভারতে গিয়ে বিএসএফকে ধন্যবাদ দিয়ে আসেন। আবার মিডিয়ার সামনে উন্নাসিক ভাবে বলেন, বিডিআর নামটি নিতে ঘৃণা হয়, এদের পোষাকে রক্তের দাগ লেগে আছে। আবার অন্যদিকে বিগত ইদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ঈদকার্ডে নিজেকে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-এর পরিচালক হিসেবে লিখেন।
এটা নিয়ে সব সম্ভবের দেশে ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ একটু উচ্চ বাচ্য করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথাসময়ে পরিস্থিতি নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন, তার নিজস্ব কায়দায় নিশ্চুপ নিবরে। অর্থাৎ কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেও, মিলিটারী রুল ভেঙ্গে অপরাধী হন না বিডিআর ডিজি। পার পেয়ে যান অদৃশ্য শক্তির ইশারায়। সৎ ও দক্ষ কয়েকজন অফিসার সেনাবাহিনীর চাকুরী হারান কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই। এহেন একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির অধীনে ন্যায় বিচার যে পাওয়া যাবে তার গ্যারান্টি আমরা দিতে পারি না।
যিনি একটি বাহিনীর প্রধান হয়ে সেই বাহিনীর পোষাক পড়েন না, গোটা বাহিনীকে যিনি ভিলেন আখ্যায়িত করেন তিনি বিচারের নামে যে প্রহসন করবেন না তা কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আমাদের মনে রাখতে হবে, অভিযুক্ত বেশীরভাগ বিডিআর জওয়ানই একটা পরিস্থিতির স্বীকার। তারা চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে আইন ভঙ্গ করেন, যদিও তা গ্রহণ যোগ্য নয়। তারপরও সময় ক্ষেপন ও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ইত্যাদি কারণে কিছু কিছু সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠে। যা সুশৃংখল একটি বাহিনীর জন্য তথা দেশের জন্য মারাত্নক এবং গুরুতর অপরাধ। তাদের বিচার অবশ্যই করা উচিত।
নেপথ্যে যারা ছিল তাদের বিচার হয়তো এই সরকার করতে পারবে না।
আমরা বিশ্বাস করি কাদের প্ররোচনায় এবং সহযোগিতায় এটা করা হয়েছিল সরকার তা নির্দিষ্ট করেই জানে। তারপরও তারা সেটার উদঘাটন করছে না। বিচার করছে সাধারণ সিপাহীদের-দীর্ঘদিন পরিবার পরিজনহীন যারা কারান্তরালে অবস্থান করছে তাদের।
এই বিচার করার আগে আমাদের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখতে হবে।
গণহারে জেল জরিমানা ও শাস্তি স্বরূপ চাকুরীচ্যুতি, পেনশন না দেয়া ইত্যাদি করা হলে সমাজে একটি অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। বিডিআর আইনে যাই থাকুক, বিচারকের প্রজ্ঞা আর মানবিকতা যদি না থাকে তবে পেনশন বিহীন চাকুরীচ্যুতি ঘটলে বিশাল সংখ্যক জওয়ান হতাশায় ডুবে সমাজ বিরোধী কাজে অংশ নিতে পারে। বিষয়টি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় আশংকাজনক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সকলকে অপরাধ অনুযায়ী গণহারে খালি হাতে বিদায় না করে যাদের চাকুরী ১০ বছরের বেশী হয়েছে তাদের বিধি অনুযায়ী পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে বাহিনী হতে ফেরত পাঠানো যেতে পারে। এবং এটা করলে বিরাট সংখ্যক পরিবার উপকৃত হবে। দেশও আশংকা মুক্ত হতে পারবে।
আমরা দাবি করবো বর্তমান ডিজির নেতৃত্বে যে বিচার কার্য চলছে তা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। কোন ব্যক্তিকেই আক্রোশমুলক শাস্তি দেয়া হবে না এই গ্যারান্টি থাকতে হবে।
ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করবে না এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী ও বিডিআর উভয়েই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে নিয়োজিত। তারা কেউ কারও প্রতিপক্ষ নন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।