আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হায়রে অভাগা দেশ আমার



একজন মানুষ নিজেকে, তার মা-বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী সন্তানকে যতটুকু ভালবাসে, আমি মনে করি তার নিজের দেশকে তার চেয়ে কম ভালবাসে না। যদি তা না হত, তাহলে নিজের জীবনকে বাজি রেখে ১৯৭১ সালে এত মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ত না। আমার বিশ্বাস একটি দেশের প্রতিটি নাগরিক নিজের দেশের সাফল্যে যেমন আনন্দে উল্লসিত হয়, আবেগে আপ্লুত হয় তেমনি দেশের ব্যর্থতায় বেদনায় কাতর হয়, হতাশায় জর্জরিত হয়। ১/১১র পট পরিবর্তনের পর ভেবেছিলাম আমাদের দেশের রাজনীতিতে, দেশ পরিচালনায় নতুন সরকারের মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে। আমরা সাধারণ জনগণ নতুন আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম, আছি, থাকব।

কিন্তু কয়লা ধুলে যে ময়লা যায় না এই সত্যকে অস্বীকার করার তো কোন উপায় নেই। আমি খুব বেশী কিছু নিয়ে আমার লেখাটুকু দীর্ঘায়িত করব না। শুধু একটি বিষয় এখানে তুলে ধরতে চাচ্ছি। এই কথাটি আমরা সবাই কম বেশী জানি ‍‍‌ '' বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়" কিন্তু আমাদের দেশে নাম নিয়ে এত মাতামাতি আর টানা হ্যাচড়া যে বৃক্ষ আর ফলের জীবন সারা। সরকার পরিবর্তনের সাথে নামের পরির্তনের রেওয়াজটা যেন সব সরকারের একটা ফরয কাজ হয়ে গেছে।

এই পরিবর্তন করে তারা কোন উদ্দেশ্যকে হাসিল করতে চান তা ভেবে পাইনা। তারা কি মনে করেন নাম দিলে মানুষ বেশী মনে রাখবে আর শ্রদ্ধাবনত চিত্তে সারা জনম ভক্তি করবে? শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা এসব মানবিক বোধগুলোকি জোর করে আদায় করা যায়। শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা জানানো আর স্মরণীয় করে রাখার জন্যই যদি তাদের উদ্দেশ্য হয় তাহলে পূর্ববর্তি সরকার যেই নাম গুলো রেখে যায় পরবর্তি সরকার এসে সেগুলো মুছে দিয়ে মানুষের মন থেকেও কি সেই শ্রদ্ধা ভক্তিকে মুছে দিতে চান। তাদের মাথায় কি এতটুকু বোধ নেই কারো শ্রদ্ধা ভালবাসা পেতে হলে অন্যকেও শ্রদ্ধা সম্মান করতে হয়। পুরনো নাম থাকলে কি ক্ষতি ? আর নতুন হলেই বা দেশের বা জনগণের কি লাভ !? একটি জায়গার নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম কিংবা স্থাপনার যখন নাম করণ করা হয় তখন সেই নামকরনের সাথে সেই বিষয়টির সম্পৃক্ততা কতটুকু আছে বা কোন ব্যাক্তির নামে যখন রাখা হবে সেই ব্যাক্তির সাথে সেই প্রতিষ্ঠানের বা জায়গায় কিংবা স্থাপনায় তাঁর অবদান কতটুকু আছে সেটি অবশ্যই বিবেচ্য হওয়া উচিত।

তা হলেই সেই নাম করণে সার্থকতা এবং গ্রহণ যোগ্যতা থাকে। কিন্তু আমাদের সরকার গুলো কি সেই বোধটুকু আছে ? জনগণ কি তাদের ভোট দিয়ে সব ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে, যে যা ইচ্ছা তারা তাই করে বেড়াবেন? জানি না কোন চামচাদের প্ররোচনায় সরকারগুলো নাম পরিবর্তনের সংস্কৃতি এ দেশে চালু করল। তাদের একবার ভেবে দেখা উচিত এই নাম নিয়ে টানা হ্যাচড়া জনগণ কতটুকু সমর্থন করে। দেশ পরিচালনার যেই গুরু দায়িত্ব জনগণ তাদের দিয়েছে সেই দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে তারা কতটুকু পালন করছেন তার হিসাব করে তার পুরস্কারতো জনগণ একসময় ঠিকই বুঝিয়ে দেবে। দুঃখ হয়, আমাদের সরকারগুলো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।

তারা বার বার পূর্বসুরীদের বিতর্কিত বিষয়গুলোকেই অনুসরণ আর অনুকরণ করেন। জানি না কেন তারা পুরনো ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। কেন তারা তৈল মর্দনকারীদের এত পছন্দ করেন ? আমরা আর কবে দেশের সাধারণ জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখতে পাব তাদের কর্মকান্ডে? যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন কি শুধু আশায় বুক বেঁধে আলেয়ার পেছনেই আমরা ছুটে বেড়াব? আর কখনও কি আসবে ৭১ এর মত সময়, যখন সরকারী দল বিরোধী দল ভুলে গিয়ে দেশের জনগণের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়নে হাতে হাতে রেখে সবাই কাজ করবে। জানি এ এক অবাস্তব কল্পনা আমার। তাইতো দেশটাকে বড় অভাগা মনে হয়।

শুধু ভাবি যারা দেশের জন্য চিন্তা করে তারা কাজ করার সুযোগ পায় না। আর যাদেরকে তারা সে সুযোগটুকু করে দেয় সেই মানুষ গুলো সেই সুযোগগুলোকে দেশের কাজে লাগায় না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.