আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বলেছিলো, জবাই করে ফেলবে!



যখন ঘটনাটি ঘটতে শুরু করেছে তখন তাপসী কি যেন বলছিল। আমি মুখে আঙুল তুলে ইশারায় ওকে চুপ করতে বললাম। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আশে পাশে কেউ আছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না। হাটা থামিয়ে দিলাম।

চট করে এ সময় একটু পর পর তিনটা মৃদু শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হচ্ছিল আমাদের দিকে কিছু একটা এগিয়ে আসছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। কি এগিয়ে আসছে! আমি তাপসীর মুখের দিকে তাকালাম। তাপসী দ্বিধান্বিত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

যেন একটু পরেই বলবে, ‘কোথায় কি? শুধু শুধু ভাবছো?’ আমার চোখ এ সময় পড়লো একটা গাছের দিকে। বিশ-পঁিচশ গজ দূরের ওই গাছটার গোড়ায় হুট করে একজনকে বসে পরতে দেখলাম। ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন যেন মনে হল। বলা নেই-কওয়া নেই একজন এসে ওখানে ওভাবে বসে পরবে! একঝলক তাকিয়ে যা মনে হল, চিকনমত লম্বা একটা ছেলে আমাদের দিকে এক সাইড হয়ে বসে আছে। আমি ছেলেটিকে দেখিয়ে তাপসীকে বললাম দেখো, ‘ইনিই হচ্ছে সেই রহস্যজনক ব্যক্তি।

তুমি দাঁড়াও আমি দেখি কে ওখানে!’ তাপসী কোন কথা বলার আগেই আমি পকেট থেকে সেলফোনটা বের করে টর্চটা অন করলাম। তারপর ছেলেটার দিকে দু’পা ফেলে এগিয়েছি। ঠিক তখুনি আমার ডান পাশ থেকে শুরু হলো আক্রমণ। আচমকা আরো দু’জনকে দেখতে পেলাম। তাদের হাতে লোহার পাইপ আর রড।

আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাইপ আর রড দিয়ে আমাকে মারতে শুরু করে দিল দু’জন। একসাথে অনেকগুলো সম্ভাবনা আমার মাথায় খেলে গেল। তবে কি হচ্ছে সেটা বোঝার আগেই স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে আমি একজনের হাতের রড ধরে ডান পা তুলে লাথি মেরে বসলাম। লাথিটা কতটুকো লেগেছে সেটা বোঝার সময় পেলাম না। শুধু এক ঝলক দেখতে পেলাম ওই বসে থাকা ছেলেটাও মুহুর্তে ছুটে এলো আমার দিকে।

তার হাতেও একটা রড বা পাইপ। হাতাহাতি শুরু হয়ে গেল আমার সাথে ওদের। ধাক্কায় আমার পা থেকে স্যান্ডেলের একটা খুলে গেল। চোখ থেকে চশমাটা পরে গেল। এরপর শুধু খেয়াল করলাম আমি মাটিতে পরে গেছি আর আমার বুকের উপরে বসে একজন আমার গলায় একটা লম্বা বাঁকানো ছোড়া ধরে আছে।

আরেকজন পেটের দিকে আরেকটা ছোঁড়া বা ধারালো কিছু ধরে আছে। দেখতে পাচ্ছিলাম না। এই অবস্থায়ও আরো কয়েকবার পাইপ দিয়ে মারলো ওরা। তারপর কেউ একজন বলে উঠলো নড়াচড়া বা চিৎকার করবি তো একেবারে জবাই করে ফেলবো। আমার তখন মনে হলো বলে দেই, ‘জবাই করার মতো ধারতো দেখছি, এই ছুড়িতে নেই।

জং ধরে বুড়ো হয়ে গেছে। আরো ধারালো টাইপ কিছু জোগাড় করে আনো। ’ কিন্তু এসব বললে আরো মার খাবার সম্ভাবনা হান্ড্রেড পারসেন্ট। মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত ছিনতাইকারীর হাতে পরলাম।

সব কিছু নিয়ে যায় যাক কিন্তু তাপসী কোথায়!? তিনজনই তখনো আমাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি শুধু একটাই প্রার্থনা করছিলাম, ‘আল্লাহ, ও যেন চলে যেতে পারে। ’ এই সময় যদি ও চলে যেতে পারে তাহলে আর কোন টেনশান নেই। আমার যা হয় হোক ওর যেন কিছু না হয়। এই সময় ওরা চমৎকার একটি গামছা আমার মুখ হাঁ করিয়ে দু’প্যাঁচে মাথার পেছনে বেঁেধ দিল।

হলিউডি মুভিতে দেখা এরকম কিছু দৃশ্যের কথা মনে পরে গেল। মুভিতে অবশ্য কাপড় বা রশি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাস্তবে গামছা!! মুখ বাঁধার পর আমার গলা থেকে ছুঁড়িটা সরিয়ে নেয়া হলো কিন্তু শক্ত করে হাত দুটো ধরে রেখেছিল একজন। ওরা দ্রুত প্যান্টের পকেটে বারবার হাত দিয়ে দেখে নিচ্ছিল সব নেয়া হয়েছে কি-না। আর আমি ভাবছিলাম নেবার মতো কি কি আছে পকেটে।

দুটো পেনড্রাইভ, একটা কার্ড রিডার প্লাস মেমরি কার্ড, চাবির রিং, রুমাল। সেলফোনতো নিয়েই নিয়েছে, আর মানিব্যাগ। মানিব্যাগে বেশি টাকা নেই। সাড়ে তিনশোর মতো হবে আর কিছু ভাংতি নোট। কিন্তু চারটা সিম, ভার্সিটির আইডি কার্ড আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলোর জন্য আফসোস হচ্ছিল।

এ সময় দেখি বেল্টটা ওরা খুলতে শুরু করেছে। বেল্টটা কিনেছি একমাসও হয়নি। এটাও বোধহয় নিয়ে যাবে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। বেল্টটাকে ওরা একপাশ থেকে খুলে নিয়ে বকলেসটাকে আংটার মতো ব্যাবহার করে পেঁিচয়ে আমার হাত দুটো পিছমোরা করে বেঁধে ফেললো।

ওদের দক্ষতা বেশ মুগ্ধ করার মতো। কাজ দেখে মনে হচ্ছিল এসব কাজে অভ্যস্ত। কোন আনাড়ি ভাব ছিল না। এর মাঝেও তাপসীর কথা বারবার মনে হচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই-প্রার্থনা করা ছাড়া।

যাই হোক ওরা আমাকে মোটামুটি প্যাকেট করে দিল। এবার পা’দুটোও বাধবে কি-না ভাবছিলাম। এর মাঝে আমার বিশালদেহী শক্তপোক্ত এক বন্ধু বাপ্পির কথা মনে পরলো । আমার যায়গায় ও থাকলে রড-পাইপ কোন কিছুই কাজে দিতো না। খালি হাতেই তিনজনকে তাম্র মুদ্রায় পরিণত করার সম্ভাবনা প্রবল ছিল।

শেষ দিকে ওরা আর তেমন কথা বলছিল না। চলে গেছে কি-না বুঝতেও পারছিলাম না। অন্ধকারে মাথাটা ওরা লম্বা ঘাসের দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলে রেখেছিল। মুখটা তুলে আশেপাশে তাকালাম। কাউকেই দেখতে পেলাম না।

তাপসী কি চলে যেতে পেরেছে! প্রশ্নটা বারবার খেলে যাচ্ছিল মাথায়। কিন্তু কিভাবে বুঝবো। চিৎকার করারও কোন পথ নেই। আর করে লাভও নেই এখান থেকে কেউই শুনতে পাবে না। আমি মুখটা নাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।

জিভ দিয়ে গামছাটাকে ঠেলে সরানো যায় কি-না ভাবছিলাম। একটু নাড়াচাড়া করতেই জিভ দিয়ে গামছাটাকে থুতনির নিচে ফেলে দিতে পারলাম। এরপর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। কারণ কোমড়ের সাথে হাত একেবারে ফিক্সড হয়ে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে রয়েছে।

এমনিতে হাত বাধা থাকলে পায়ের নিচ দিয়ে সামনে এনে মুখ দিয়ে খোলার চেষ্টা করা যেত। কিন্তু এখনতো দাঁড়াতেই পারছি না। একবার মনে হলো দু’পা একসাথে বাঁকা করে মাটিতে আঘাত করে একটা লাফ উঠে দাড়াই। এটার এক রকম প্র্যাকটিস ছিল আমার। কিন্তু অনেকদিন এরকম করে উঠে দাঁড়াই না।

তাছাড়া ওরা কিভাবে আমাকে মেরেছে সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। যদি এভাবে দাড়াঁতে গেলে কোন সমস্যা হয়। তাই প্ল্যানটা বাতিল করে দিলাম। কিন্তু উঠে দাঁড়াতে না পারলে এখানেই পরে থাকতে হবে। কেউ আমাকে নিতে আসবে না।

কিছু করার নেই ভেবেই হাত মোচড়াতে শুরু করলাম। খানিকক্ষণ এরকম করার পর মনে হলো বাঁধনটা হালকা হতে শুরু করেছে। এরপর হাতটা খুলে বেল্টটাকে কাঁেধর উপরে ফেললাম। এরপর অন্ধকারে আশেপাশে হাত ফেলে দেখলাম আমার চশমা কিংবা স্যান্ডেল পাওয়া যায় কি-না। কিন্তু কিছুই পেলাম না।

সবগুলো পকেট হাত দেয় দেখলাম। সব ফাঁকা। নিজেকে রিসাইকল বিন মনে হতে লাগলো তখন। যেন আমার ওপর রাইট বাটন ক্লিক করে এম্পটি রিসাইকল বিন করে দিয়েছে। ভেবেছিলাম অন্তত রুমাল আর চাবির রিং টা নেবে না।

কিন্তু নেই। রুমালের বদলে অবশ্য একটা গামছা পেয়েছি কিন্তু চাবির রিংয়ের বদলে কিছুই পাইনি। আশা ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে পরলাম মেইন রোডে। খালি পায়ে হাটতে শুরু করলাম হল গেটের দিকে। খানিকটা পথ যাওযার পর দেখি তন্ময় ছুটে আসছে।

আমি ওকে দেখে হাসলাম। আমার কাছে এসে বললো, ‘কিরে কি হইছে? কে মারছে তোরে?’ আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না। শুধু বললাম, ‘তাপসী কোথায়? ওরে দেখছিস?’ তন্ময় হাত নেড়ে বললো, ‘তাপসী আছে। তোরে কোন জায়গায় মারছে?’ আমি হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলাম। হল থেকে সবাই দৌড়ে বের হয়ে আসছে।

আমাকে সাঁই সাঁই করে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। চশমা না থাকায় সবাইকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম না। মঈনকে দেখলাম একঝলক উড়ে চলে গেল পাশ থেকে। পায়ে স্যান্ডেল নেই। যাক্ অন্তত একজনের সাথে আমার পায়ের অবস্থার মিল পাওয়া গেল।

জসিম ভাই আমার পাশ দিয়ে দৌড়ে যাবার সময় আমার কাঁেধ ফেলে রাখা বেল্টটা এমন এক ভঙ্গিতে নিয়ে গেলেন যেন বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে ছিনতাইকারীদের ছাল তুলবেন। তার ভঙ্গিটা আমার বেশ ভালো লাগলো। আমিও তাদের সাথে আবার ওখানে যাবো কি-না ভাবছিলাম। এ সময় খেয়াল করলাম হলের কাছাকছি তাপসী দাঁড়িয়ে আছে। ও আমাকে দেখে এগিয়ে আসছিল।

আমিও এগুতে লাগলাম। ও কাছাকাছি আসতেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার কিছু হয়নি তো?’ তাপসী আমার হাত ধরে বললো, ‘আমার কিছু হয়নি কিন্তু তোমার এ কী অবস্থা!’ এতক্ষণ খেয়াল করিনি, তাপসীর কথা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি ছোপ ছোপ রক্তে আমার পাঞ্জাবী আর প্যান্ট ভিজে উঠতে শুরু করেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.