আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য "রাষ্ট্রীয়ভাবে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ইশারা ভাষা দিবস" পালনের দাবীকে সমর্থন করি

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই । কাদঁতে আসিনি ফাসিঁ দাবী নিয়ে এসেছি ।

শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী এবং বাংলা ইশারাভাষী (সাইন ল্যাংগুয়েজ)ব্যক্তিদের সমন্নয়ে এসডিএসএল নামে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর গণসংগঠন (ডিপিও) গঠিত হয়েছে। দেশে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষদের মাতৃভাষা বাংলা ইশারা ভাষার বিকাশ ও প্রসারে এসডিএসএল শুরু থেকেই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এছাড়াও শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

মানব সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাষা। সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশ লাভ করে ভাষাকে কেন্দ্র করে। জন্মের পর শিশুর বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভাষা। শিশুর যথাযথ বিকাশে মাতৃভাষা চর্চার কোন বিকল্প নেই। মানুষের জীবনযাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভাষা।

আমরা বাঙালিরা ভাষার এই গুরুত্ব বুঝতে পেরেই ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছি। সরকারের স্বীকৃতির বাইরে ১৯৫৩ সাল থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাংলা ভাষা দিবস পালন করে আসছে। এর স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্র ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের ভাষাকে প্রাঞ্জল রাখার মহান উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবস এখন সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। অথচ এই দেশের সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীর ভাষার বিকাশে বৈষম্যপূর্ণ ব্যবস্থা বিরাজমান।

আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের মধ্যে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাদেশে প্রায় ২৬ লাখ শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের বসবাস রয়েছে। শ্রবণ প্রতিবন্ধিতার কারণে এই মানুষেরা কথ্য ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেনা। বাংলা ইশারা ভাষা এই মানুষদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এছাড়াও অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার) নাগরিকদের মধ্যে ইশারা ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

দেশে বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না থাকলেও ভাষাগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে আদিবাসী ভাষাগুলোর ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের কথা স্বীকৃতি পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার এই আদিবাসী ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চলতি বছরে কমপক্ষে ৫ টি আদিবাসী ভাষায় পাঠ্য বই প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ ভাষাগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইশারাভাষী জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তাদের ভাষার স্বীকৃতি বা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি। অন্যান্য ক্ষুদ্র ভাষাগোষ্ঠী জীবনযাপনের তাগিদে নিজস্ব ভাষা পরিহার করে অন্য ভাষা শিক্ষা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন।

অথচ বাঙালি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সামর্থ্যের প্রতিবন্ধকতার কারণে নিজস্ব ভাষা পরিহার করার কোন সুযোগ নেই। ইশারা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে এর চেয়েও বড় কোন যৌক্তিকতা নেই। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে সরকার ছয় জেলায় ৬ টি ইনস্টিটিউট স্থাপিত করেছে। গত দুই দশক ধরে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ১৯৯৪ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জাতীয় বধির ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান প্রকাশ করা হয়।

গত দেড়যুগে এই জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলা ইশারা ভাষা প্রসার ও বিকাশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এখন পর্যন্ত আর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারী ভাবে বিভিন্ন দিবস পালিত হয়ে আসছে। যেমন, ১৫ অক্টোবর বিশ্ব সাদা ছড়ি নিরাপত্তা দিবস ও ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস। এই দিবসগুলো সার্বিকভাবে বিশেষ ধরণের প্রতিবন্ধী নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে উদযাপিত হয়ে থাকে। কিন্তু এদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় অংশ শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি সব সময়ই অবহেলিত থেকেছে।

এ প্রেক্ষিতে এসডিএসএলসহ শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী মনে করে এ দেশের শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিতকরণের আন্দোলন জোরদার করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ইশারা ভাষা দিবস উদযাপন বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাগরিকের জন্য বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস যেমন স্বাতন্ত্র্যতাকে উপস্থাপন করে, তেমনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী নাগরিকের উন্নয়নের জন্য স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এমন বিষয়কে এগিয়ে আনা প্রয়োজন। শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীসহ এসডিএসএল মনে করে, শ্রবণ প্রতিবন্ধী নাগরিকের জন্য ইশারা ভাষা একটি মূখ্য বৈশিষ্ট্য। বাংলা ইশারা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী মানুষদের দীর্ঘদিনের দাবী। ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর এসডিএসএল ইশারা ভাষার স্বীকৃতির জন্য একটি অনুষ্ঠানে কার্যকর সহযোগিতা করে।

এসডিএসএল ধারাবাহিকভাবে বাংলা ইশারা ভাষার স্বীকৃতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদানসহ শ্রবণ প্রতিবন্ধী নেতাদের নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গত ২৭ জানুয়ারি ২০০৯, তার অনুমোদনক্রমে বাংলা ইশারা ভাষার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানে পরিপত্র জারি করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 'একুশে বইমেলা'র উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন 'বাংলা ইশারা ভাষা এ দেশের অন্যতম ভাষা'। তিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বিটিভিসহ সকল টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান সংবাদে ইশারা ভাষা উপস্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে তার নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তথ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী আন্তরিক অভিনন্দন জানায়। এই প্রেক্ষাপেট ২০০৯ সালে ২৬ মার্চ দেশ টিভি সম্প্রচারের প্রথম দিন থেকেই সন্ধ্যা ৭ টার সংবাদ বাংলা ইশারা ভাষায় উপস্থাপন করে আসছে। ১২ জুলাই ২০০৯ থেকে বিটিভি বিকাল ৫ টার সংবাদ নিয়মিতভাবে বাংলা ইশারা ভাষায় উপস্থাপন করছে। এসডিএসএল বাংলা ইশারা ভাষায় টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপনের জন্য দেশ টিভি এবং বিটিভিকে সংবাদ উপস্থাপক এবং ইশারা ভাষা সংক্রান্ত অন্যান্য কারিগরী সহায়তা প্রদান করছে। বিটিভিতে রাত ৮টার সংবাদে এবং অন্যান্য টিভি চ্যানেলসমূহের মূল সংবাদ বাংলা ইশারা ভাষায় উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ও কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

২০০৯ সালে একুশে বই মেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলা ইশারা ভাষাকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম ভাষা হিসাবে ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলা ইশারা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আন্দোলন একটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ভাষা এবং ফেব্রুয়ারি মাসের সম্পর্ক একান্ত অবিচ্ছেদ্য। ২১ ফেব্রুয়ারি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সারা বিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে। গত ৩০ অক্টোবর ২০০৯ এসডিএসএল আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ২৫ টি জেলা পর্যায়ের শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী নাগিরকেদর গণসংগঠনসমূহ বাংলা ইশারা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের আন্দোলন জোরদার করতে রাষ্টীয় ভাবে প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি - বাংলা ইশারা ভাষা দিবস হিসাবে উদযাপনের বিশেষ দাবী জানায়। এ ব্যাপারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে দেখা করে দাবী উপস্থাপন করা হয়েছে।

৮ জানুয়ারি ২০১০ ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এসডিএসএল এর আয়োজনে বাংলা ইশারাভাষা দিবস উদযাপনের দাবীতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসডিএসএল চেয়ারম্যান এম. ওসমান খালেদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি শামসুজ্জামান খান, মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমী, বিশেষ অতিথি কাজী আবু জাফর মো. হাসান সিদ্দিকী, মহাপরিচালক বাংলাদেশ টেলিভিশন, রাবেয়া সুলতানা, সেক্টর হেড, একশন এইড বাংলাদেশ এবং শিরিন বেগম, সভাপতি বাংলাদেশ বধির মহিলা কল্যাণ সংস্থা, ঢাকা বধির সংঘের সভাপতি মিজানুর রহমান, যশোর জেলা বধির সংঘ সাধারণ সম্পাদক আজাদসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী নাগিরক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় দাবীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। গত ১ জানুয়ারি থেকে এসডিএসএল এর উদ্যোগে সকল জনগোষ্ঠীর সমর্থন আদায়ে ইন্টারনেটে একটি পিটিশনের (আপনি স্বাক্ষরের জন্য ক্লিক করুন) মাধ্যমে সমথর্ন স্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের এই দাবীর প্রতি আপনাদের সমর্থন প্রত্যাশা করছি ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।