সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
অভ্যাস কিছুটা বদলাক
আতাউস সামাদ
বাংলাদেশে খবরের কাগজ, টেলিভিশন ও রেডিওর ভবিষ্যৎ খুব ভালো বলে মনে হয়, না হলে এত পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলের আগমনবার্তা শুনছি কেন? রাজধানী ঢাকা থেকে কোনো কাগজ বের হলেই সেটাকে জাতীয় পত্রিকা বলা হয়। এ মুহূর্তে এই শ্রেণীর ৭৮টি দৈনিক পত্রিকার নাম দেখলাম প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টের ২০০৮ সালের টেলিফোন গাইডে। কারো পক্ষেই এত পত্রিকার নাম মনে রাখা সম্ভব নয়। এসব খবরের কাগজের সব কয়টির একটি করে কপি একসঙ্গে দেখেছেন এমন কারো সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি।
পিআইডি, ডিএফপি ও পিআইবি প্রতিষ্ঠান তিনটির কোনো একটিতে কাজ করেন এমন কেউ হয়তোবা একবার না-একবার এর প্রত্যেকটিই দেখেছেন চাকরির দায়িত্বপালন করতে গিয়ে। এসব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন এমন দু-চারজন পাওয়া যেতে পারে ঢাকার দাপুটে দুই হকার সমিতির কেন্দ্রীয় অফিসগুলোতে। এ রকম হতে পারে তা আমি আন্দাজ করছি এ জন্য যে আমাদের হকার সমিতিগুলো প্রায় প্রত্যেক পত্রিকা ও ম্যাগাজিন বিক্রির অনেক টাকা বাকি রেখেছে, ফলে এসব কাগজের পক্ষ থেকে রোজই লোক এসে ধরনা দেয় বকেয়া থেকে কিছু উসুল করার কাতর মিনতি জানাতে। ফলে এ সমিতির সম্মুখ-দপ্তরে (ফ্রন্ট অফিস) যাঁরা বসেন তাঁরা সব পত্রিকার নামই কমবেশি শুনতে পান। ঢাকার সব পত্রিকার নাম জানতে পারেন আরেকজন লোক_তিনি ঢাকার ডেপুটি কমিশনার অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের করণিক।
তিনি জানবেন এ জন্য যে তার কাছে পত্রিকা প্রকাশের সরকারি অনুমতিপত্রের দলিলাদি জমা পড়ে এবং জমা থাকে। ঢাকার এত দৈনিক পত্রিকা নিয়ে সামান্য কিছু বললাম এ জন্য যে তার মানে দেশজুড়ে নানান রুচি ও মেজাজের পাঠক আছেন আর তাঁরা নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী এসব পত্রিকা কিনছেন বলে এগুলো চলছে। 'জাতীয় পত্রিকা'র মধ্যে আবার একটা বিশেষ শ্রেণী আছে। সেই শ্রেণীর পত্রিকাকে সাধারণভাবে বলা হয় 'আলোচিত পত্রিকা'। ধরে নেয়া হয়, যিনি যে পত্রিকাটিই তাঁর পছন্দের বলে পড়ুন না কেন, সবাই এ পত্রিকাগুলোর নাম জানেন।
এ রকম আলোচিত জাতীয় পত্রিকার সংখ্যাও ২০-২৫টির কম নয়। আঞ্চলিকভাবে প্রচার আছে বিভিন্ন জেলা সদর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার কথা এখানে তুললামই না। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ চালু আছে অন্তত ১০টি টিভি চ্যানেল। বাংলাদেশ বেতারসহ চলছে চারটি রেডিও স্টেশন। শুনেছি ভারতীয় দুটি টিভি চ্যানেলকে বাংলাদেশে দপ্তর ও স্টুডিও করার অনুমতি দিয়েছে বর্তমান সরকার।
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) বাংলাদেশি দুটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সম্পর্কিত তাদের তিনটি অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। এ অনুষ্ঠানগুলো তৈরি হয় বাংলাদেশেই। এর ওপর বিদেশি ও দেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা, উদ্যোগ ও অর্থানুকূল্যে গান-বাজনা-নাচ-রোমাঞ্চ (অ্যাডভেঞ্চার)-খেলার (গেম শো) অনুষ্ঠান বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে লেগেই আছে। আধুনিকদের ভাষা ধার করে বলা যায়, বাংলাদেশে যেন একটা মিডিয়া এক্সপ্লোসন (গণমাধ্যম বিস্ফোরণ) ঘটেছে। কিন্তু এখানেই থেমে নেই গণমাধ্যম।
বর্তমান সরকার অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে আরো আট-নয়টি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খোলার অনুমতি দিয়েছে। অনুমান করি, মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ামাত্র অনেকে টেলিভিশন চ্যানেল খোলার অনুমতি চেয়েছিলেন আর নতুন সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মতো দীর্ঘসূত্রতা না করে পটাপট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ ক্ষেত্রে জোট ও মহাজোট সরকারের একটি ব্যাপারে দারুণ মিল দেখা গেছে, সেটা হলো_আগেরটি যেমন তার দলের লোকদের লাইসেন্স দিয়েছে, এবারেরটিও তাই করেছে। টিভি চ্যানেলের লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে জনা দুই-তিনেক প্রভাবশালীকে দেখা গেছে। দুর্জনেরা বলছেন, বাকি লাইসেন্সগুলো নাকি চিনি বা ভোজ্যতেলের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বিক্রির মতো সর্বোচ্চ মূল্যে কিনবেন এমন ক্রেতার জন্য বাজারে অপেক্ষা করছে।
এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় টেলিভিশন চ্যানেলের বাজার আছে। যদিও কেউ কেউ বলে থাকেন চালু চ্যানেলগুলোর মধ্যে তিনটি ছাড়া বাকিগুলো নাকি এখনো বাণিজ্যিক লোকসান দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মালিকরা হয়তোবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছেন। যা-ই হোক, টিভির বাজার বেশ সরব ও গরম।
এ পরিবেশের মধ্যে অন্তত ঢাকা থেকে তিনটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
একটি হলো কালের কণ্ঠ। অন্যটির নাম সম্ভবত সকালের খবর। তৃতীয়টির নাম জানতে পারিনি, তবে সেটির প্রস্তুতির কথা শুনেছি। এ তিনটি পত্রিকার প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের মালিক আলোচিত তিনটি খুব বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। কাজেই সব মেলালে তো বলাই যায়, বাংলাদেশে গণমাধ্যম-ব্যবসা এখন রমরমা, নিদেনপক্ষে 'প্রাণচঞ্চল'।
বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূলধন নিয়ে বা তার সরাসরি মালিকানায় খবরের কাগজ বের হলে সাধারণত চার রকম কথা শোনা যায়_যেমন, (১) দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করতে ও চালাতে অনেক টাকার দরকার হয়, বড় মূলধন জোগাতে পারে এমন মালিক হলে কাগজটির ব্যবসাসফল হওয়ার সম্ভাবনা ভালো, (২) একটি পত্রিকার পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে আবার যথেষ্ট পরিমাণে বিজ্ঞাপন পেতে হলে বড় পাঠকসংখ্যা দেখাতে হয়। অতএব পত্রিকা প্রকাশনাকে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা হিসেবে মেনে নিতে হয়, যেটা বড় মূলধনের মালিকের পক্ষে সম্ভব, (৩) পত্রিকা ব্যবসা করে লাভের মুখ দেখতে অনেক সময় লাগবে জেনেও যাঁরা এত অর্থ বিনিয়োগ করেন তাঁরা পত্রিকায় পরিবেশিত খবর বা তাতে প্রকাশিত মতামত মারফত প্রভাব বিস্তার করে অন্য ব্যবসা পেতে চান, এর অর্থ হচ্ছে পত্রিকাটির সম্পাদক বা সম্পাদকমণ্ডলী সব সময় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না, তাঁদের মালিকের ইচ্ছানুযায়ী চলতে হবে; এবং (৪) পত্রিকার মালিক রাজনীতিতে কোনো না কোনো দলে যোগ দেবেন ফলে তার পত্রিকাটিকে তার ও দলের রাজনৈতিক স্বার্থে লেখালেখি করতে হবে এবং অন্যের লেখা প্রকাশের জন্য সেটিকে ওই আলোকে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ এ কারণে পত্রিকাটি একপেশে সম্পাদকীয় নীতি গ্রহণ করবে আর এ ক্ষেত্রে মালিকের নির্দেশই হবে শেষ কথা (যদিও সব ক্ষেত্রে এমনটা বা এতটা হয় না)।
আজকাল বাংলাদেশে কোনো ধনী ব্যক্তি সংবাদপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিলে আরো দুই রকম কথা শোনা যায়। যার একটি হলো অঢেল সম্পদ অর্জন করার পর এখন সামাজিকভাবে সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার মানসে তিনি পত্রিকা বের করছেন।
অন্যটি হচ্ছে, ধনী ব্যক্তিদের তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা নানাভাবে সমালোচনার মধ্যে ফেলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে সন্দেহভাজন করে তোলেন বা নিন্দিত ব্যক্তিতে পরিণত করেন। এসব প্রতিদ্বন্দ্বীকে কঠোর প্রত্যুত্তর দিয়ে পরাভূত করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি কার্যকর প্রচারমাধ্যম নিজের হাতে রাখার তাগিদে বড় ব্যবসায়ীরা পত্রিকা প্রকাশে নেমেছেন। পত্রিকা বা অন্য মাধ্যম মারফত এ রকম আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের ঘটনা গত কয়েক বছরে আমরা বেশ কয়েকটি দেখেছি। যুদ্ধের পর শান্তি ঘোষিত হয়েছে এ রকম একটি ঘটনার এক পক্ষের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রসঙ্গটি তুললে তিনি আমাদের বলেছিলেন, 'বড় লোকদের মধ্যে এমন ধরনের কলহ ভালো নয়, এতে দুই পক্ষেরই ক্ষতি হয়। ' তবে সাম্প্রতিক একটি দুটি ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, সব বড় লোক, অর্থাৎ ধনী ব্যক্তি এবং সম্পাদক এখনো তাঁর মতো শিক্ষা গ্রহণ করেনি।
অতএব এ রকম লোকদের ব্যবসায়িক কোনো প্রতিপক্ষ গণমাধ্যমের মালিকানার বর্ম ব্যবহার করতে আগ্রহী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
গণমাধ্যমের পারিপাশ্বর্িক অবস্থা সম্পর্কে এতক্ষণ যা আলোচনা করলাম তাতে সাংবাদিকদের কথা আসেনি। অর্থাৎ আমার নিজের গোত্র সম্পর্কে কিছু বলিনি। এ ব্যাপারে দুঃখের সঙ্গেই বলছি যে আমরা অনেক ক্ষেত্রে তথ্যের বদলে গুজব পরিবেশন করছি। সে গুজব বহু ক্ষেত্রেই ভুল বা অসত্য বলে প্রমাণিত হয়।
কিন্তু তাতে আমরা লজ্জা পাচ্ছি না, দমছি না তো বটেই। প্রায় প্রতিদিনই আমরা কোনো না কোনো খবরের কাগজে কারো না কারো বিরুদ্ধে বিষোদগার দেখি। এ রকম ভাষ্য, মন্তব্যে বা প্রতিবেদনে প্রমাণিত বা সরেজমিন তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য প্রায় থাকেই না। যৎসামান্য যা থাকে তা ব্যবহার করা হয় অসত্য বক্তব্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য। এসব ক্ষেত্রে সংবাদের সূত্রের পরিচয় প্রায়ই থাকে না।
বাংলাদেশের সংবাদপত্রে বানোয়াট, অসত্য বা অর্ধসত্য 'খবর' পরিবেশনের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অসাংবিধানিক শক্তি দেশে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধূরী দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এবং সাবেক সিএসপি ও বিশ্বব্যাংক-ফেরত আমলা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ সরকারপ্রধান হিসেবে ছিলেন, ক্ষমতা প্রয়োগের কেন্দ্রে। তাঁদের ঘিরে বৃত্তে ছিলেন আরো কয়েকজন। ওই বৃত্তের একটি অংশ ছিল সশস্ত্রবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ডিজিএফআইর নির্দিষ্ট একটি বিভাগ। ওই বিভাগটি তদন্তের ফলাফলের নামে বহু রাজনীতিবিদ এবং কয়েকজন ব্যবসায়ী সম্পর্কে দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে দিত বিশেষ কয়েকটি সংবাদপত্রের সম্পাদক বা প্রতিবেদকের কাছে।
পত্রিকাগুলো নিজস্ব কোনো তদন্ত ছাড়াই সেগুলো ছেপে গেছে দিনের পর দিন। দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পদের হিসাব দাখিল করার জন্য বহু সাবেক মন্ত্রীকে কমিশনে হাজিরা দিতে বাধ্য করে। ওই রাজনীতিকরা হিসাব জমা দিয়ে দুদক অফিস থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ ও র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করত। সেসব গ্রেপ্তার ও টানাহেঁচড়ার দৃশ্য দেশবাসী দিনের পর দিন দেখেছে টেলিভিশনের পর্দায়। কিছু সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের কয়েকটি টকশোর কল্যাণে দেশের ওপর গায়ের জোরে চেপে বসা অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হোতারা বনে যান 'জাতীয় বীর' আর তাঁরা যাঁদের গ্রেপ্তার করলেন তাঁরা সবাই হয়ে যান জাতীয় খলনায়ক।
তাঁদের মধ্যে কোনো একজনেরও আত্দপক্ষ সমর্থন করার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের অধিকারী কি না সেই খবর জানা যায়নি পত্রিকা পড়ে বা টেলিভিশন দেখে। অথচ পরে দেখা গেল, তাঁরা প্রায় সবাই উচ্চ আদালত আবেদন করে শুনানি শেষে জামিন পেয়েছেন। অনেকের মামলা স্থগিত হয়ে গেছে। দুই অতি ধনী ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছিলেন থানায় গিয়ে, আরেকজন চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তার বছর দেড়েক পর যখন জরুরি অবস্থা যায় যায় তখন এ অভিযোগকারীরা তড়িঘড়ি করে তাঁদের অভিযোগ প্রত্যাহার করলেন এবং বিবৃতি দিলেন যে তাঁরা বিশেষ পরিস্থিতির চাপে এসব মামলা করেছিলেন।
আমাদের সংবাদপত্রগুলো তাদের কথা ছেপে দিয়েই দায় সারল_আগে কার চাপে, কিসের চাপে ওই ব্যক্তিরা মামলা করেছিলেন আর এখনই বা কোন কারণে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে গেলেন, আমাদের পত্রিকা বা টেলিভিশন সেসব খোঁজ করল না আর পাঠক ও দর্শকও সত্য যে কী, তা জানতে পারল না। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিশেষ কিছু নেতা যেসব মিথ্যাচার করে গেলেন তা বিনা প্রশ্নে পাঠক ও দর্শকের সামনে যথারীতি হাজির হলে পাঠক-দর্শক নতুন সংবাদ-বন্যায় হাবুডুবু খেতে লাগল। আগের খবরগুলো ওলটপালট হয়ে গেল কেন সে কথা জানতে চাওয়ার ফুরসতই পেল না। আর নির্বাচনের পর ডিজিএফআই ও দুর্নীতি দমন কমিশন প্ররোচিত মিডিয়া ট্রায়ালের মঞ্চ স্থানান্তরিত হলো জাতীয় সংসদের কতিপয় স্থায়ী কমিটিতে ও কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তরে। পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে এ রকম যে আমরা পাঠকরা খবর জানতে আগ্রহী থাকছি বলে নিয়মিত পত্রিকা কিনছি আর নিজের গরজে পত্রিকা কিনি বলে পত্রিকা প্রস্তুতকারীরা আমাদের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা দেখাচ্ছে না।
এখানে আমি কিছুতেই এ কথা বলছি না যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে তারা সবাই নির্দোষ। আমি জানতে চাইছি, এসব অভিযোগ সম্পর্কে পত্রিকার নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান থাকছে না কেন? এবং ক্ষেত্রবিশেষে ডিজিএফআই বা এসিসি বা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দেয়া তথ্য ও বক্তব্য পত্রিকার নিজস্ব অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের মতো করে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে কেন? সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে বলেছে, জেনারেল মতিন দুর্নীতি করেছেন এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। এ ঘটনার পর পত্রিকার সম্পাদকরা অন্তত কোনো কোনো বিষয়ে নিজস্ব তদন্তের প্রয়োজনের যুক্তি দেখা দিয়েছে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমরা বেচারা পাঠকরা জল্পনা-কল্পনার ফানুস কম এবং প্রকৃত খবর বেশি করে পাব। দিন বদলায়, মিডিয়ার অভ্যাসও বদলাক।
লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক
মূল লিঙ্ক :
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।