আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মদের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে যুবসমাজ



একটি দেশের যুবসমাজ জাতির প্রাণশক্তি। যুবসমাজের উপর নির্ভর করছে জাতির সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি। বাংলাদেশ গঠন ও উন্নয়নে যুবসমাজের গৌরবজ্জ্বোল ও সাহসী ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ এ যুব সমাজের একটি বিশাল অংশ মদের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়েছে। যে পরিবারে একজন তরুণ মাদকাশক্ত হয়েছে সে পরিবারের দু:খ দুর্দশার শেষ নেই ।

ভাবতে অবাক লাগে বর্তমানে তরুণ তরুণীর একটা বৃহৎ অংশ মাদকাশক্ত হয়ে পড়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সিলেটের মৌলভিবাজারে কর্মরত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ধনাট্য অভিজাত পরিবারগুলোর প্রায ৬০ ভাগ তরুণ- তরুণী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে তরুণ তরুণীরা এর প্রতি অত্যধিক হারে ঝুকে পড়েছে। আজকাল মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর নেশা ইয়াবা। ইয়াবা যুবসমাজকে ব্যপকহারে গ্রাস করে ফেলেছে।

তবে এখন পর্যন্ত ধনী পরিবারগুলোর ছেলেদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা এই ইয়াবা নামক মাদক গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে নকল ইয়াবা তৈরী হচ্ছে বলে এর দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে পৌছায় সকলের সাধ্যের মধ্যে এসে পড়েছে মরণনাশক ইয়াবা। ফেনসিডিল ,গাঁজা,হেরোইন, প্যাথেডিন,টিটিজিসি ইনজেকসন ও যুবসমাজকে আকড়ে ধরেছে। ধনী পরিবারগুলোর সন্তানরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে মাত্রাতিরিক্ত হারে ছাত্রছাত্রীরা মাদকে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে বর্তমানে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ছাত্রছাত্রীরা ও এই নেশার প্রতি আসক্ত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে চলছে মাদকের আড্ডা। ঢাবি’র মহসিন হলের মাঠে, পলাশী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ গেটে, মলচত্বর, ব্যবসা প্রসাশনের গ্যারেজ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, গাওসুল আযম মার্কেটে এসব স্পটে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। রাবি’র চা স্টলে, কাজলা, বিনোদপুর, তালাইমারিতে চলে মাদকের আড্ডা। প্রতিদিন সন্ধার পর এসব চলে স্থানে অবাধে মাদক গ্রহণ। খোজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকের সহজলভ্যতার কারণে দেশের যুবসমাজ মরণ ছোবল নেশার দিকে পা বাড়াচ্ছে।

নেশাজাতীয় দ্রব্য ফেনসিডিল আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে আসছে বানের পানির মতো। শুধুমাত্র বাংলাদেশে পাচার করার জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে তৈরী করেছে অসংখ্য ফেনসিডিলের কারখানা। ভারতের লালগোলার লতিবাপাড়াতে রয়েছে ফেনসিডিলের অসংখ্য কারখানা। জানা গেছে গত ১২ বছরে প্রায় ৩০টি কারখানা তৈরী করা হয়েছে শুধুমাত্র বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য। আর এই ফেনসিডিগুলো আসছে বিভিন্ন চোরাই পথে।

রাজশাহী সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়াতে মাদকচোরাকারবারীরা রাজশাহীর সীমান্ত গুলোকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নেয়। যে পথগুলো দিয়ে মাদক আসছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাজশাহীর জাহাজঘাট,, ডাশমারী, তালাইমারি, পঞ্চবটি, আলুপট্টি, বুলনপুর, গোদাগারি, মাদারপুর, মহিশালবারি, চারঘাটের মুক্তারপুর, বালুঘাট। সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হল গোদাগারি। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে এই গোদাগারি হয়েছে হেরোইন পাচারের স্বর্গ রাজ্যে। রাজশাহী সিমান্ত দিয়ে আসা এই ফেনসিডিল গুলো ঢাকা আসছে রেলপথে।

এক্ষেত্রে চোরাকারবারীরা ব্যবহার করছে নিরাপত্তাবাহিনীকে । রেল পথ ছাড়াও তারা ব্যবহার করছে পণ্যবোঝাই ট্রাক। পণ্য বোঝাই ট্রাককে পুলিশ বেশী ঝামেলা করেনা বিধায় মাদক কারবাররা নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে একে ব্যবহার করে। আমাদের যুবকরা কি পরিমাণ মাদক গ্রহণ করছে তা জানা যাবে নিচের গ্রেফতারকৃত ফেনসিডিলের বোতল থেকে। এই বছরের ৮ অক্টোবর কাগজ বোঝাই ট্রাক থেকে ১২৩২ বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

একই বছরের ৭ জুলাই যশোরের বেনাপোল থেকে আসা পেয়াজ আমদানিকৃত ট্রাক থেকে ৯৩৪ বোতল ফেনসিডিল আটক করে। তাছারা ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ৬০০ বোতল, নারায়ণগঞ্জে ১০২, কেরানীগঞ্জে ৫০, বনানীতে ২০৪৮ বোতল মদ, জয়পুরহাটে ১০৩৬ ফরিদপুওে ৪৫০ কুড়িগ্রামের বৌমারিতে ৪০ ও নেত্রকোনার দূর্গাপুরে ৪৮টি ফেনসিডিলের বোতল উদ্ধার করে র‌্যাব পুলিশ বিডিআরসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এই চিত্র শুধু একদিনের। এরকম প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার ফেনসিডিলের বোতল উদ্ধার হচ্ছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হল গত কয়েকমাসে দিনাজপুরে আটক হয়েছে ৫৪ হাজার বোতল।

বিভিন্ন পদ্ধতি ও অভিনব কায়দায় এই ফেনসিডিলের বোতল দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরাবরাহ করা হচ্ছে। ফেনসিডিল বহন করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মহিলাদেরকে। তাদেরকে কম টাকা দিয়ে রাজি করিয়ে অভিনব কায়দায় ফেনসিডিলের বোতল বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। মহিলারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে অভিনব কায়দায় ফেনসিডিল বহন করে থাকে। তাছাড়া কুমড়ার ভেতর, ড্রাম, কাপরের আচলে, বাজারের ব্যাগসহ, নানা কায়দায় তারা এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

স¤প্রতি পুলিম বেশকিছু বোতল নারিকেলের ভেতর থেকে উদ্ধার করে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন সীমান্ত প্রহরার শিথিলতার কারণেই বাংলাদেশে ঢুকছে ফেনসিডিল সহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের গ্রাম হাটগঞ্জ্রের বন্তিতে মাদকসেবীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে , গত ফেব্র“য়ারী মাসে বিডিআর জওয়ানদের মধ্যে অস্থিরতা ও নানা অনিশ্চয়তার কারণে সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিডিআরের অস্থিরতা ও নিরাপত্তা শিথিলতার পুরা সুযোগ নিচ্ছে সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারীরা।

একটি দেশ ভবিষ্যতে শক্তিশালে হয়ে ওঠে যুবকদের উপর ভরসা করে। আর স্ইে যুবসমাজকে হীনয়ড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদক সরবরাহ করে। সর্বত্র মাদক পৌছানোর লক্ষে মাদক দ্রব্যের দাম ও এখন কমিয়ে আনা হয়েছে। যার কারণে সহজেই এই মরণনেশা ফেনসিডিল সহ মাদক দ্রব্য সকল তরুণ তরুণীদের কাছে পৌছে যায়। যে দেশ থেকে এত পরিমাণ ফেনসিডিল আসে সেই দেশের তরুণরা এর নাম ও জানেনা।

এমনই কথা বললেন দিনাজপুরের সীমান্ত এলাকায় আটককৃত এক চোরাকারবারী । সে বলে বাংলাদেশে আশির দশকে কফের সিরাপ হিসেবে ব্যবহৃত হত এই ফেনসিডিলটি। এখন সিরাপটি ভারতের কোথাও পাওয়া যায় না। সেদেশের তরুণ যুবকরা এর নাম গন্ধও জানেনা । এটা পানও করে না।

বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। যার অধিকাংশই শিক্ষিত তরুণ তরুণী। এসব তরুণ তরুণীদের অধিকাংশই প্রথমদিকে বন্ধদের পাল্লায় পড়ে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়। আর একসময় ঝূকেঁ পড়ে মাদকের দিকে । সিগারেট খাওয়া থেকেই যে মাদকাক্ত হয়এতে সন্দেহের অবকাশ নেই ।

এক জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৯৮ শতাংশই ধুমপায়ী অর্থাৎ তারা মাদকাসক্ত হওয়ার আগেই ধুমপান দিয়ে তাদের নেশা শুরু করে। তরুণ ছাত্রদের অনেকে ধূমপানকে তারুণ্যের ফ্যাশন হিসেবে মনে করে। বিজ্ঞানীদের মতে সিগারেটের নিকোটটিনও একটি মাদক দ্রব্য যা হোরোইন ও কোকোনের মত নেশা জাতীয় দ্রব্য। এসব বস্তু যেমন তরুণ তরুণীদের নেশগ্রস্ত করে তুলতে পারে তেমনি সিগারেটের নিকোটিনও তাদের নেশা গ্রস্ত করে তুলতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা মাদকের বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা ।

দু’দশকে আগে বাংলাদেশের মানুষ হেরোইন নামের নেশাকে চেনত না। সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বোচ্চ নেশাগ্রস্থ দেশের মধ্যে সপ্তম। মাদকাক্তরা বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মাদকদ্রব্য কেনার পেছনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। অথচ ধূমপান ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য কোন আন্দোলন ও আইনের বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।

বর্তমানে ইয়াবা নামক মাদকের বিস্তার এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলার প্রায় চার হাজার ইয়াবা আসক্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ’ড্রাগস ইনফরমেশন এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- ইয়াবা হেরোইনের চেয়ে ও ভয়াবহ। চিকিৎসকদের মতে, ইয়াবা সেবনের পর যে কোন সময় মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিড়ে যেতে পারে। যার ফলে ষ্ট্রোক ও রক্তক্ষরন হতে পারে এবং হৃৎপিন্ডের গতি ও রক্তচাপ বাড়বে, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস আগমন নির্গমনের কারণে ফুসফুস কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে ধীরে ধীরে। ইয়াবা এতই ভয়াভহ যে, ইয়াবা থেকে সমাজ রক্ষায় জন্য থাইল্যান্ড সরকার সে দেশের গণমাধ্যম হিসেব অনুযায়ী তিন হাজারের ও বেশি ইয়াবা বিক্রেতা ও সেবীকে ক্রসফায়ারে মেরেফেলে।

এছাড়া সে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে গণ্য করা হয়। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের শাসন আমলে মাদক ব্যবসায়ীদের সরাসরি মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো। মাদকের ব্যবহার তরুণদের মেধা ও মননকে শেষ করে দেয়, বিনষ্ট করে সুপ্ত প্রতিভাও সুস্থ চিন্তা। মাদক গ্রহণের ফলে শরীরের স্নায়বিক ভারসাম্য ভেঙ্গে পড়ে। মাদক দ্রব্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতি সাধন করে মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্র।

তাছাড়া এক জরিপে দেখা গেছে, মাদকাশক্তদের প্রায় ৪০শতাংশই কোনো না কোন সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িত। ১৯৯০ সালে আমাদেও দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন করা হলেও এখনো পর্যন্ত তা পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। সাধারণত মাদক দিবসকে কেন্দ্র করে মাদক নিয়ে আমাদের দেশে সভা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এটিই যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও আন্দোলন।

ধেয়ে আসা সর্বনাশের কালো ড্রাগন প্রতিহত করতে হলে আমাদের যুবকদের মনে এক বিরাট পরিবর্তন আনতে হবে। মনের আধাঁর ঘুচিয়ে সেখানে আলো জ্বালাতে হবে। তাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগাতে হবে। মরুময় অন্তরে ফাটাতে হব্ েমনুষত্বের ফুল। তাহল্ইে এসমাজ থেকে মাদক নামক অভিশাপ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করা যাবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.