আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঁধন ও দ্রৌপদী (রিপোস্ট)

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

বাঁধন ও দ্রৌপদী (রিপোস্ট) বাঁধন আবারো দ্রৌপদী হয়ে ফিরে এলো এই যুগে। কালের বিবর্তনে এখন বুঝি ঘোর কলিকাল! দ্রৌপদীর মতো বাঁধনের বস্ত্র হরণেও উল্লাসে ফেটে পড়ি আমরা- শকুনীদের মতো। বাঁধন আর দ্রৌপদীর একটাই অপরাধ- ওরা নারী, আমাদের মতো পুরুষ নয়। আমাদের অহংকার আমরা পুরুষ, কখনও ভাবিনা আমরা মানুষ- সৃষ্টির সেরা জীব। একই সূত্রে বাঁধন কিংবা দ্রৌপদীও মানুষ নয়, ওরা নারী- আমরা যেমন পুরুষ! মানুষ মানুষের বস্ত্র উন্মোচিত করে, নগ্ন করে, ভাবতেও ঘৃণা হয়।

ঘৃণা হয় নিজেকে মানুষ ভাবতে, সৃষ্টির সেরা ভাবতে। মানুষ খুব সহজেই পুরুষ হতে পারে, তার চেয়েও সহজে পশু হতে পারে। মানুষ কখনও লোভ লালসার উর্দ্ধে নয়। মানুষের ভেতরের পুরুষেরা সব সময়ই সক্রিয়, সুযোগ পেলেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে সাপের মতো। ভেতরের কীটসর্বস্ব রিপুগুলো সর্বদাই কিলবিল করে; বেরিয়ে আসতে চায় যে কোন অশুভ মুহূর্তে।

নর্দমার নোংরা জলের মতো চোখের দৃষ্টি দিয়ে- কিংবা আচরণের মধ্যে দিয়ে। পুরুষের নগ্ন দৃষ্টি সহজেই প্রসারিত হয়, অসুন্দরের মহীমা কীর্তনে। আর নান্দনিক দৃষ্টি! সদা সংকুচিত, নির্লিপ্ত! ঘুমিয়ে থাকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো- মনের গভীর গোপনে। কুৎসিৎ আর নোংরামীর প্রকাশ্য বিচরণ- ঘৃণ্য সন্ত্রাসীর মতো, বীর দর্পে শাসায় নিরীহ ভদ্রতাকে। বেচারা ভদ্রতা! চিরদিন মুখ লুকিয়ে রাখে লোকচক্ষুর অন্তরালে।

দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণে কিংবা বাঁধনের সতীত্ব রক্ষায়, ওর কোন ভূমিকাই নেই। ধৃতরাষ্ট্র আর শকুনীর মতো আমাদের চোখ অহরহ খোঁজে-বাঁধন আর দ্রৌপদীকে। নববর্ষের মহতি উৎসবে প্রয়োজন পড়ে মশলাসমৃদ্ধ নারীমাংশ আর বিয়ারের ক্যান। আফ্রিকার আদিমতম অসভ্য জংলীদের মতো- আমরাও নারীদেহ ঝলসানোর মন্ডপ রচনা করি, উন্মাদের মতো নৃত্য করি। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আদিম রিপুগুলো এখনও লালন করে আসছি- নিজেদের ভেতর।

বর্বরতার ডিএনএগুলো এখনো গ্রোথিত আছে দেহকোষে। সভ্যতার উল্টোরথে আজ আমরা ফিরে যেতে চাই বর্বরতার সেই কালযুগে। তাইতো আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই-আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। রচনাঃ ০১.০১.২০০১ (২০০১ সালের থার্টিফাস্ট নাইটে টিএসসি’র সামনে “বাঁধন” নামের এক মেয়ের উপর বর্বরোচিত আচরণের প্রেক্ষিতে লেখা। )


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।