আজ খুব রংপুরের কথা মনে পড়ছে।
খুবই।
বড় হবার সাথে সাথে অনেক কিছুই হারিয়েছি।
যেমন কান্না করবার অধিকার।
আমার খুব কানতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু বড়দের কাঁদতে নেই।
আচ্ছা কেন এমন হয়?
কেন আমার প্রতিদিন তিন চারবার জিলা স্কুলের কথা মনে পরে?
ঝকঝকে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকষ প্রফেসররা কেন সবসময়ই ম্লান সুবোধ স্যার, জয়েন স্যারদের কাছে?
কারো কিছুই যায় আসে না।
দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসে কোনো যুবকের চোখ জিলা স্কুলের দেয়ালের মতো স্যাত্স্যাতে হয়ে গেলেও কারো কিছুই যায় আসে না।
কেমন আছেন মান্নান ভাই?
স্কুল খোলা থাকলে এই মানুষটার কি কোনদিনই অসুখ করে না?
কোনদিনই কি তার নতুন লুঙ্গি পরে বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে না?
ভাতিজার আকিকা কিংবা জামাই বাড়ি?
আর কাশেম ভাই.....সবার বয়স বাড়ে.....এই মানুষটার বয়স কেবলই কমে।
এখনও কি টিফিন পিড়িয়ডে বেয়াড়া কয়েক কিশোর প্রাচীরে পা ঝুলিয়ে বসে?
জয় সুরিয়ার সেন্চুরি.....কিশোর-রবিন-পাশা.....হিন্দি সিনেমার নায়িকার বুক.....মহাকর্ষ বল.....নতুন কেনা কোন প্রাপ্তবয়স্কদের বই.....আনা ফ্র্যাংকের ডায়েরি, কি নেই সেই আড্ডায়?
দোস্ত, বিশ্বাস কর, এই মাত্র যে গার্লস স্কুলের মেয়েটা রিকশায় গেল, ও আমার দিকে চেয়ে হাসি দিছে.....আরে বাদ দেনা, ক্যান্টেরগুলা দেখ।
আকাশি ফ্রকগুলা দেখ, বড়লোকের মেয়ে।
স্কুলের কাকগুলোর জন্য মায়া হচ্ছে খুব।
ওরা বুঝি সিঙ্গাড়া আর জিলাপী খেতে খেতে ক্লান্ত।
স্কুল পালিয়ে চিকলির বিল।
কাঁপা কাঁপা হাতে কোন কিশোরীর হাত ধরা.....তারপর চম্বন......তারপর লজ্জায় কেউ কারো দিকে না তাকিয়ে বসে থাকা.....আহ! কোথয় সেই দুপুরগুলো,কোথয় সেই বিশুদ্ধতা।
ঢাকায় যখন প্রথম আসলাম কোচিং করতে তখন যৌথ অভিযান চলছে।
এক রাতে কাকে যেন বাসে তুলে দিয়ে রুমে ফিরছি।
পথে আর্মির জেরা।
বললাম ছাত্র।
বললো ট্রান্সলেশন করো " সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড় "।
ফটাফট বলে দিলাম।
সে খুব খুশি.....বললো তোমার বয়েসি ছেলের তো এটা জানার কথা না।
গর্বে বুক ফুলে উঠলো.....আফজাল স্যার ক্লাশ এইটে এটা পড়িয়েছেন।
জহুরুল হক স্যার, কামরুজ্জামান স্যার, রফিয়ুল কাদের স্যার এখনো কি বারান্দা দিয়ে ত্রাশ সৃষ্টি করে হাটেন?
কিংবা এম.টি.এম স্যারের " ইন দ্যা ইয়ার..... "?
স্কুল থেকে বের হবার পর একদিন কুদ্দুস স্যারের সঙ্গে রাস্তায় দেখা।
কি জানি নিয়ে খুব হাসাহাসি লাফালাফি করছিলাম।
স্যার চিনলেন, সেই থমথমে গলায় প্রথম প্রশ্ন " কিরে ভালো হবি না বান্দর "?
আমার লজ্জায় কাঁদতে ইছে করছিলো।
কিন্তু বড়দের কাঁদতে নেই।
আচ্ছা কি এমন আছে রংপুরে?
কেন এত ভালো লাগে?
কেন ভীষন মন খারাপ হয়?
ইতালীয়ান রেস্তোরার সুস্বাদু পাস্তা, সুন্দরী রমণীদের ভূবন ভুলানো হাসিতে পরিবেষনা.....
ধুর এসব মানুষ খায়?
সুযোগ থাকলে দেখিয়ে দিতাম.....সিঙ্গাড়া হাউস, নেহাল,মিতালী হোটেল।
মন একটু ভালো লাগছে এখন।
আমি ভালো আছি।
তুমি ভালো থেকো রংপুর।
(রিপোস্ট)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।