আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আক্কেল আলীর পেয়াজ ইলিশ গোলক ধাধা রম্য



আক্কেল আলীর ইলিশ খাওয়ার শখ হয়েছে। ইলিশের কেজি মাত্র আঠারোশ টাকা! ইলিশের দু পেয়াজো করে খাওয়ার খুব শখ । পেয়াজের দামও আকাশ ছুয়েছে। ৮০ টাকা কেজি। পেয়াজের দেখাদেখি টমেটো কাচা মরিচ সকল কাচা তরকারীর ই পাখা গজিয়েছে।

সেগুলো আকাশ ছোঁয়ার জন্য উড়োউড়ি শুরু করেছে। অন্য মাছগুলো ও বেকে বসেছে। তাদের দামও বেড়ে গেছে। সবকিছু ছাড়িয়ে ইলিশের হাহাকার সবচাইতে বেশি। বিশেষ করে সৌখিন যারা তাদের সখ দারুণ ভাবে শক খেয়েছে।

যাদের বাড়াবাড়ী রকমের দেশপ্রেম তাদের হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় নাই। কাচা বাজারে সব হাব্রিড প্রজাতি ভেটকি মেরে তাকিয়ে থাকে। আর স্বাধীন বাংলাদেশের সব কাঁচাবাজার ভারতীয় পিয়াজ ,রসুন, আদা, কাঁচা তরকারীর দখলে বেশ আগে থেকেই। দেশীগুলান নিরবে নিভৃতে এক কোনায় ডুকরে ডুকরে কাঁদে। তাদের দাম বেশি আর পরিমানে কম হওয়াতে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীর মত বাঁচাও বাঁচাও করছে।

এ দৃশ্য দেখে আক্কেল আলীর দুঃখ আরো বেড়ে গেছে। আফটার অল আক্কেল আলী নাম্বার ওয়ান দেশপ্রেমিক ! তার প্রেমিকার প্রতিও প্রেমের কমতি নাই। আক্কেল আলীর দুঃখ তার জানে জিগার তেসো তারে ডিজিটাল খানা খাদ্যি ইলিশ ভাজা আরো রকমারী খানাপিনার লোভ দেখিয়ে তার জিহবার পানিতে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে মাগার এখন পর্যন্ত তার বউ হয়ে ঘরে আসার কোন খবর নেই। জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে তাতে তেসোর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সময় হয় ইলিশ মাছ আর রান্নার রকমারীর দাম আক্কেল আলীর নাগালের বাইরে চলে যাবে। আক্কেল আলী অবশ্য তেসোকে মোহরানা হিসেবে হালি খানেক ইলিশ আর কেজি দশেক পেয়াজ দেয়ার মানত করেছেন।

তেসোর দাবী এক ডজন ইলিশ, কেজি বিশেক পেয়াজ আর দশ লিটার রূপচান্দা সওয়াবিনতেল, এক আলমারী পুতুল আর এক বস্তা মিনিকেট চাল । তার আবার হাতের কনুই পর্যন্ত মেহেদি লাগানোর শখ। আরেকটা শখ আছে সেটা বলা ঠিক হবে না। তারে আবার তার বডি গার্ড হিসেবে একটা কুকুর কিনে দেয়া লাগবে। দেশী না বিদেশী ।

ডগি তার চাই ই চাই। আহারে সেই দিন কবে আসবে ? তেসোর তৈরী খাবার চোখের সামনেভেসে ওঠে। আক্কেল আলীর জিহবায় জল চলে আসে। কাচা তরকারীর বাজারে এনে এইসব ভেবে লাভ কি? এই জিহবায় জল চলে আসা লগণে এক পাগলী হাত পাতে। মাথা ভর্তি কালো গিজগিজা চুল ।

চুল সমানের দিকে ঝুলে আছে। এত মানুষ থাকতে আক্কেল আলীর কাছে হাত পেতেছে। পাগলী দেখতে হরর ছবির পেত্নীর মত। কেউ সাহস করে মহীলার দিকে তাকাবে না ফিট খাবার ভয়ে। টেরা চোখে মাথা কাত করে পাগলী।

অক্কেল আলী ভয়ে ভয়ে পেত্নী ভীক্ষিকাকে ১০ টাকার একখাননি নোট দিয়ে দ্রুত উক্ত স্থান ত্যাগ করে। আক্কেল আলী নিশ্চিৎ তার চেহারা ভিক্ষুক শ্রেণীর প্রথম পছন্ড। কাঁঠাল ভাঙা চেহারা । পরিস্কার ভাষায় বলতে গেলে যার চেহারা দেখলে তার মাথায় কাঠাল ভেঙে খেতে মন চায় এমন। আজ আর ইলিশ কিনবে না আক্কেল আলী।

পিয়াজও না। দেশী ইলিশ । জাতীয় মাছ তাও বিজাতীয় পিয়াজ দিয়ে ভেজে খাওয়াটা আর কারো ভাল লাগলেও আক্কেল আলীর ভাল লাগবে না। ইলিশ ভারতে রপ্তানী না করলে ভারত আবার পেয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানী করবে না বলে গু ধরার জোর আলাপ শুনাগেছে। পিয়াজ আগে না ইলিশ আগে এই নিয়ে আক্কেল আলীর আক্কেল গুরুম অবস্থা।

পিয়াজের কি কোন বিকল্প আছে? ইলিশ সবগুলান চালান হয়ে গেলে এই ইলিশ বেলায় শুধু পিয়াজ দিয়ে কি হবে? কপাল টাই খারাপ পান্তভাত আর কাঁচা মরিচ সঙ্গে ইন্ডিয়ান পিয়াজ । মোহরানার আইটেমে ইলিশ বাদ পড়লে তেসো বেকে বসবে না তো। তাহলে আক্কেল আলীর মাথায় হাত। মন ভাল করার বিশেষ জায়গাটি আর নেই। মহখালী ফ্লাইওভার যেখানে গেলে মনটা ভাল হয়ে যেত তেমনটি এখন আর হচ্ছে না।

এ জায়গায় আসলে মনে হত ইউরোপ এমেরিকার কোন রাষ্ট্রে আক্কেল আলী প্রমোদ ভ্রমনে আছে। আহারে বিলবোর্ড গুলা গেল কই। কত সুন্দর সুন্দর উন্নয়নের কখা লেখা ছিল সেগুলায়। দেখলে ছ্যাকা খেয়ে বেকা হয়ে যাওয়া আদমীও সীনা টান করে সোজা হয়ে হাটা দিত। দোষ বিরুধী দলের পাশাপাশি আক্কেল আলীরও কম নয়।

সেই তার গোপন ভাল লাগাটা প্রকাশ করেছে। আর বিলবোর্ডও ওধাও হয়েছে। দেশে এখন দারুণ সময় যাচ্ছে! সামনে নির্বাচন। প্রধাণ দুই দল নির্বাচন ইস্যুতে দুই মেরুতে বাস করছে। হাতে সময় একেবারেই নাই।

এর মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আর সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনের কোন সুযোগ নাই এই দুইয়ের সমন্বয়ে সংবিধানের ভিতরে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ঢোকার মত আলৌকিককোন ঘটনা ঘটা সম্ভব কিনা। মনে হয় না কস্মিনকালে তা ঘটবে। নাকি চুল ও নড়বে না আর পরচুলা উড়ে যাবে দুই ক্রিয়ার ভয়াবহ লব্ধিতেদেশে মহাপ্রলয়দেখা দিবে। তেল -পানি সিনেমার নির্ভেজাল বিনোদন চলছে। আক্কেল আলীর মনে শান্তি নাই খালি যুদ্ধ যুদ্ধ আর যুদ্ধ ।

মনে মনে সারক্ষণ যপ করতে থাকে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে চাই। তবে তেসোর সঙ্গে ঝগড়ার মত শান্তি অন্যকোন কাজে নাই।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৭৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.