ছবি-সিলেট জেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকা
রনি বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিসিএস জব করছে। তার আদর্শ দাদা। ছোট বেলা থেকেই দাদার কাছ থেকে সব কিছু হাতে কলমে শিখেছেন। আত্নীয়দের মধ্যে একমাত্র বন্ধু বলতে দাদা যার কাছে সব শেয়ার করা যায়। এই দাদা আর সে একসাথে বেড়ে ওঠেছে বলতে গেলে তার ছায়ায যেহেতু দাদা তার চেয়ে বছর সাতেক বড়্ ।
সাম্প্রতিক প্রেম সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত। কণা ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছে ওখানেই তার সমস্যা নিহিত। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পাত্রী ছাড়া তার বিয়ে দিবে না তার পরিবার!যদিও তার বোনরা সব গর্ধব শ্রেণীর ছাত্রী। বিনা আপার বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগে। ক্লাস সিক্সে থাকার সময়ই এলাকার এক রংবাজ টাইপ ছেলের সাথে তার প্রেম জমে ওঠে।
কুন্তল ভাই এলাকার স্থানীয় অশিক্ষিত একজন মানুষের বখাটে ছেলে। বিনা আপা রূপের দেবী। এই রকম দেবী ভালো থাকা খুব কঠিন। দুষ্ট ছেলেদের বদ নজর পরাতে তারা বখে যেতে সময় লাগে না। একবার কুন্তল ভাই আর বিনা আপু পলিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত নেয়্ ।
পালিয়ে যাওয়ার পথে আরেক রোমিও দুঃখিত ভিলেইন সুজন ভাই দেখে ফেলে। ব্যাস আর যায় কোথায়?আপাকে বাসায় বন্দি রাখা হয়। তাকে বুঝানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালনো হয় কুন্তল ভাইয়ের চৌদ্দগুষ্ঠীতে লেখাপড়ার গন্ধ নেই। আর তার একমাত্র যোগ্যতা রাস্তাঘাটে সুন্দরী মেয়ে দেখলে সুন্দর করে শিষ বাজানো। বিস্ময়কর শিষ বাজানো প্রতিভা ! সিনেমায় নায়করা বাশিঁ বাজিয়ে নায়িকাদের বিমুগ্ধ করে আর কুন্তল ভাই হয়তোবা শিষ বাজিয়েই বিনা আপার হৃদয় হরণ করেছেন!দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত কোন সিনেমায় শিষ বাজিয়ে আওরাত বেওয়ারা করার কোন ঘটনা দেখা যায় নাই।
বিনা আপা প্রথম সুন্দরী যিনি কুচকুচে কালো গোফওয়ালা পুরুষের শিষাক্রান্ত হয়ে লাইলী হয়ে গেছেন। ভাগ্যিস রনির বাবা বদলী হয়ে স্বপরিবারে চট্টগ্রাম চলে যায়। রনির বাবা ভাবত আর আতকে উঠতো। লোকজন জিজ্ঞাসা করলে কি জবাব দিতো? যে একজন প্রখ্যাত শিষ বাদকের সঙ্গে তার রূপবতী কন্যার বিবাহ হয়েছে। লাইলী মজনুর বিচ্ছেদ হয়।
কুন্তল ভাইকে ছাড়লে কি হবে প্রেম ছাড়ে নাই বিনা আপাকে। প্রাইভেট টিউটর সুদর্শন মিলন ভাই তার প্রেমে পড়ে নতুন কাহিনীর জন্ম। কি আর করা তার বাবা বুঝতে পারলেন তাকে বিয়ে না দিলে এই প্রেমরোগ তাকে ছাড়বে না। তাই বিনা আর মিলনের প্রেম পরণতি লাভ করে। ফলফল মেট্রিক পরীক্ষায় বিনা আপা ফেল করলেন।
পরে তিনি এই পরীক্ষায় হ্যাট্রিক ফেলের গৌরব অর্জন করেন। যদিও বিয়ের পর তিনি সন্তানের জননী হওয়ার পর ভালো রেজাল্ট নিয়ে সম্প্রতি ডিগ্রী পাস করে নজির স্থাপন করেছেন।
তবে ছোট বোন কলি কিন্তু একই কায়দায় প্রেমে জড়িয়ে পরে বিয়ে করেন এলাকার প্রখ্যাত গুন্ডা জগলু ভাইকে । ফলাফল রনির বাবার হার্ট এটাকে মৃত্যু। রনি ভাবতো দাদার প্রেমে পড়েছে ছোট আপু।
দাদা তার চাচাত ভাই। শুনেছে দাদা আর কলি আপু একসাথে বড় হয়েছে। কয়েকদিনের জন্য দাদা ধার্মিক হয়ে গেলে দেখে কলি আপুও বোরখা পরে কলেজে যায়। দাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তার সম্পর্কে অনেক কানা ঘুষা শুনে। সে নাকি কিসের লিডার?কলি আপু পড়ালেখায় ভালো না।
আর দাদা দারুন প্রতিভাবান। শেষমেষ কলি আপু এক লিডারকে বিয়ে করে প্রেমের বিয়ে। লিডার বলতে এলাকার যত বাজে ছেলে আছে তাদের লিডার। মদ গাজা খাওয়া মেয়েদের উত্যোক্ত করা সহ সকল মন্দ কাজের গুরু হলেন জগলু ভাই। এলাকার ছেলেদের নষ্ট করার নিপুণ কারিগর জগলু ভাই।
কলি আপুর কাছে জগলু ভাই অসাধারণ মানুষ। জগলু ভাইয়ের বাবা সুন্দর আলী কাঠের ব্যবসায়ী। অনেক ধনী মানুষ্। ঢাকায় কয়েকটা বাড়ী আছ্। বাড়ী থাকা পাত্র হলো এক নাম্বান পাত্র।
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা? তাকে ছোট বেলায় কেউ স্কুলে যেতে দেখে না্ই। স্কুল কলেজ না মারিয়েই তিনি ডিগ্রী পাশ বিরল কৃতিত্বের অধিকারী!আরজ আলী মাতব্বর টাইপ। তার ছেলে বেলা গেছে অন্যের বাড়ীর ডাব চুরি করে । মুরগীর খোয়ার লুট করে। গাজার আড্ডা জমিয়ে।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ভালো কাজের ভ ও তার মধ্যে নেই। এমন বেগুন পুরুষ হয়তোবা বাংলাদেশে একজনই। একটা যোগ্যতা আছে আর সেটি হলো তার কালো বরণ দেহ খানা ! তারা পালিয়ে বিয়ে করে। বাসার সবাই কলি আপুকে বর্জন করার সিদ্ধান্তে অটল। রনির মায়ের কান্নাকাটিতে এগিয়ে
আসেন দাদা।
সেই সুন্দর আলীর বাড়ি গিয়ে বাসার প্রতিনিধিত্ব করে নতুন নওসাসহ কলি আপুকে বাসায় নিয়ে আসে। কলি আপু অনেক ফর্সা আর তার সব সময়ের পছন্দ কালো। ম্যাচের কাঠি পুড়িয়ে গন্ধশুকা কয়লা খাওয়াসহ অদ্ভুত সব কাজ করে বেড়াতো । দাদা তাকে খেপাতো কলি সব কালো জিনিস পছন্দ করে । সে অবশ্যই কালো একটা ছেলে বিয়ে করবে।
সে কালো ছেলেই বিয়ে করলো এমন কালো যে ভদ্র সমাজে মুখ দেখানোর জু নাই। রনির চোখে ভাসে কলি আপু আর জগলু ভাই দুজন মিলে টিকটিকির লেজপুড়ে গাজা খাচ্ছে আর কলি সাথে কিছু কয়লাও খাচ্ছে। রনি মায়াবতির সঙ্গে বোটানিকাল গার্ডেনে গিয়ে দুর থেকে দেখে একটা যুগল গভীর চুম্বনে ক্যাকটাস কর্ণারে। একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখে জগলু হারামজাদা আর কলি আপা! এই রকম একটা অসভ্য লোককে এই ভাবে কেউ চুমো দেয় ।
আওয়ারা ফ্যামিলির প্রেমের সিলসিলায় রনির প্রেম মায়াবতির সঙ্গে।
মায়বতি মায়ার আধার। রনির সাতজনমের আরাধ্য। কিন্তু তার বোনরা বোন জামাইরা এমন কি মাও এই বিয়ের বিপক্ষে। তারাই মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা তোলে। মেয়েটার সবচেয়ে বড় দূষ সে খাটো।
রনি লম্বায় প্রায় ছয় ফুট আর মায়াবতি পাঁচফুট। রনির মা বাচ্চাদের প্রেমকীর্তিতে মহাবিরক্ত্ । রনি মায়ের একান্ত বাধ্যগত। একসময় তাকে মেয়ের ছবিও দেখায়। কুলসুম বেগম আকাশ থেকে পরেন্ ।
প্রেমের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়?পরীর মতন মেয়ে তার ছেলের বউ হবে। আর রনি কেমন মেয়ের ছবি দেখাচ্ছে। সে স্রষ্টাকে ডাকে আর এও বলে রনির বাবা আমাকে নিয়ে যাও। খোদাকে ভর্তসনা দেন তিনি মরেন না কেন?সে খোকাকে তার নিজের ছেলের মতই আদর করে। রনি হওয়ার আগে সে ছিল বাসার একমাত্র ছেলে।
দাদার কাছে রনি সব সবদুঃখ শেয়ার করে। মায়াবতির দেয়া আচার খাওয়ায় সে । দাদাকে রনির মা নিজের ছেলের মতই আদর করতো্। দাদা রনিকে খুব স্নেহ করে। দাদা চমৎকার লোক।
যখন তাকে মায়াবতীর কথা বলল। সে পড়ালেখা আর ফ্যামিলি সম্পর্কে জানতে চাইলো। তারপর সুন্দর করে বলল রনি তুমি একজন শিক্ষিত এবং বিবেকবান মানুষ তোমার ওপর আমার আস্থা আছে। তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার ব্যক্তিগত পছন্দ তোমারই। তবে মার মনে কষ্ট দেয়া ঠিকনা।
আমি তোমার সঙ্গে আছি। সবাইকে ম্যানেজ করার চেষ্টা কর । অপেক্ষা কর । তোমার প্রতি আমার শুভকামনা। যাতে ভালো থাক ,সুখে থাক।
যদি সোজা আঙ্গুলে ঘি না ওঠে আঙুল বাকা করে হলেও তোমার বিয়ে হবে।
দাদা তার আদর্শ। সবসময় তার ছায়ায় থেকেছেন। খোকাভাই একসময় খুব ভালো ক্রিকেট খেলতেন। তিতলি আপু তাদের বাড়ীর ছাদে ওঠে দাদার খেলা দেখতেন।
তিতলি আপু এই পাড়ার বিউটি কুইন দাদার চেয়ে দুই ক্লাস ওপরে পড়ত । তারপরও দাদাকে সে পছন্দ করতো। নিজের বয়স লুকাতে চাইতো । দাদাকে সে বলত সে বয়সে তার চেয়ে তিন মাসের বড়্ । দাদাভাই হাসত ।
সে এই এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। মেয়েরা তার প্রেমে পড়াই স্বাভাবিক্। খোকাভাইয়ের কাজ ছিলো লেখাপড়া করা আর দুর্দান্ত সব শট খেলে প্রতিপক্ষের বলারদের নাস্তানাবুদ করা্ । আর তিতলিদের কাজ ছিল তার প্রেমে পরে গড়াগড়ি করা। তিতলির বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের আগের দিন ২০ পৃষ্ঠার লম্বা একটা চিঠি অর্ক ভাইকে ওরফে দাদাকে ধরিয়ে দেয়। সেই চিঠিতে দাদা ভাই আর তার কয়টা বেবি হবে তাদের কি নাম হবে এমনকি বৃদ্ধ বয়সে তারা কি করবে তাও লিখা ছিল। চিঠি পড়ে অর্ক ভাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। কি জানি হয়তো কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার প্রেমেও পরেছিলেন। ওই পর্যন্তই।
দাদা যে প্রেমে পরেন নাই সেটি ঠিক না। সে এক অসম প্রেম।
রনির বাসার অবস্থা বুঝা হয়ে গেছে আক্কেল আলী ভাই ওরফে দাদা ছাড়া আর কোন গতি নাই । আঙ্গুল বাঁকা করা লাগবে। তিনিই পারেন তার বিয়েতে হেল্প করতে ।
রনির মাকে দাদা বললেই সে রাজি হয়ে যাবে। তাছাড়া কোর্ট ম্যারেজ করলেও প্রধান ভরসা দাদা। মায়াবতি বিয়ের জন্য ফ্যামিলি থেকে ব্যাপক চাপের মুখে। দ্রুত একটা কিছু করা লাগবে। রনির মনটা খুব খারাপ।
দাদা কিন্তু এমি নামের এক বিদেশী এমেরিকান মেমের প্রেমে পড়েছিলেন। মেয়েটিও তাকে মনে প্রাণে চেয়েছিলো । এইজন্য তিনি হয়তো আর কোন মেয়ে পছন্দ করতে পারেন নাই। এদিক দিয়ে দাদাভাইকে কল দিয়ে পাও যাচ্ছে না । কল দিলেই দা মোবাইল কেন নট বি রিচড এট দা মোমেন্ট প্লিজ ট্রাই এগেইন লেটার।
রাত সাড়ে এগারোটা বাজে চাচিকে কল দেয়। চাচিয়াম্মা দাদা কোথায়। চাচি খবর জানায় খোকা এখনো আসে নাই। তার মোবাইল বন্ধ। বুধবারে মোবাইল বন্ধ !বুধবার দাদার জন্য অলুক্ষণে।
দাদা ভাই কি দুর্ঘটনায় পড়লো?মায়াবতির চিন্তায় বাঁচে না এদিক দিয়ে তার একমাত্র ভরসা দাদা ভাইকে ও পাওয়া যাচ্ছে না। এটা খুব বাজে লক্ষণ। মায়াবতীর সঙ্গে তার বিয়েটা বোধ হয় হবে না। দাদা ভাই মহানায়ক । মৃত্যুঞ্জয়ী ।
এইটা তার দ্বিতীয় জনম। কোন দেবতা জানি বার বার জন্মগ্রহন করতো?জিউস। আক্কের আলী ভাইও তা্ই । কিন্তু ওনি গেল কোথায়?ডাবের পানি খেয়ে তিনদিন অজ্ঞান থেকে ঠিকই জ্ঞান ফিরেছিল তার। রনি হলে মরে পচে থাকতো।
রোহান যেভাবে সাতরাতে গিয়ে মরে গেল সাঁতার জানা সত্বেও। তিনি গেলেন কোথায় ? বারবার মোবাইল টিপছে দা মোবাইল ক্যান নট ..........মায়াবতির ব্যাপারে আগামীকাল ফাইনাল সিদ্ধান্তে আসতে হবে। অর্ক ভাই কোথায় গেল ? রনির দাদার বন্ধু লিটন সাহেবকে ফোন দেয় ভাইয়াকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না । ওনি কোথায় আছে আপনি জানেন ? লিটন জানে না বলে দেয়?লিটন ফোন দেয় আক্কেল আলীর মুঠোফোনে । সেটি বন্ধ রাত অনেক হয়েছে ।
বিরক্তি আর শঙ্কা মনে বিড়বিড় করে বলতে থাকে আক্কেল আলী কোথায় গেলি । #) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।