'কেকে' নামের একজন শিল্পী আসছে বাংলাদেশে। নকিয়ার ব্যানারে গান করবে। সাথে থাকবে বাংলাদেশের এলআরবি এবং আর্টসেল।
দেশের ব্যান্ড শিল্পীদের কনসার্টের দেখার আমি এক রিটায়ার্ড দর্শক-শ্রোতা। সেই এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আর্মি স্টেডিয়াম, মিরপুর স্টেডিয়াম, সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স...
কোথায় যাইনি? সে মাঠগুলোর ঘাস আর মাটি হয়তো এখনো দেখা হলে আমাকে চিনবে।
দেশী ব্যান্ডগুলোর কনসার্ট বেশ কিছুদিন হলো ছেড়ে দিয়েছি। অনেক দেখেছি, ভাবখানা এমন বয়স হয়ে গেছে।
বিদেশীদের কনসার্টও বেশ কিছু দেখেছি। সুমন, অমিত সানা, রাহুল সাক্সেনাদের কনসার্টও বেশ ঝামেলায় টিকেট সংগ্রহ করে দেখেছি।
কেকে'র কনসার্টে যাওয়া নিয়ে মন এমনিতেই সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল।
যাবো না যাবো না? তাই টিকেটও সংগ্রহ করিনি। কিনিওনি। চাইলে অফিস থেকেও একটা ম্যানেজ করা যেতো।
যেহেতু যাওয়া নিশ্চিত না, তাই ঝামেলায় যাইনি। কোথায় বিক্রি হয় সেই খোঁজও করিনি।
সকালে অফিসে গিয়ে দুপুরের দিকে বের হয়ে ধানমন্ডিতে গেলাম এক কাজে সাথে এক ছোটো ভাই। ধানমন্ডির কাজ সেরে ওই ছোট ভাই বলল, চলেন একজনের বাসায় যাই। দুপুরে খেয়ে আসি। যার কাছে যাবো তার নাম ইকবাল, বাসা মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডে। যা নিয়ে তার বাহাদুরির অন্ত নেই।
প্রায়ই বলে, আমি মানুষের নামের রোডে থাকি না। তো সেই বাহাদুর ইকবালকে আমার সাথে থাকা ছোটো ভাই রাসেল বেশ বাহাদুর ভঙ্গিতে ফোন দিল, আপনার বাসায় আমরা দুপুরে আমরা দাওয়াত গ্রহণ করলাম। বলেই ফোন কেটে দিল।
আমরাও যথাসময়ে গিয়ে হাজির। তার বাসায় খেয়ে দেয়ে বের হচ্ছি হঠাৎ ব্যাপক গানের সাউন্ড আর লাইটিং।
মনের ভেতরে ব্যাপক কাপুনি শুরু হলো।
প্রথমে শীতের মনে হলেও, পরে বুঝলাম কনসার্টের শব্দ শুনে এই অবস্থা। একটা রিকশায় করে তাজমহল রোড যাচ্ছিলাম। রিকশাওয়ালা বলল, কলেজের মাঠে ভারত থেইকা এক মহিলা শিল্পী আনছে। অনেক বীড়।
ওই দিক দিয়েই যামু দেইখ্যেন কি অবস্থা!
আমরা গেলাম। রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এলাকায় গিয়ে আর রিকশায়েকেন জানি বসে থাকতে পারলাম না। কোনো দিকপাশ চিন্তা না করে রাসেলকে বললাম কী আছে চলেন যাই। যদিও তখনও নিশ্চিত না কতটুকু হয়েছে। দুই তিনজন টিকেট বিক্রী করছে।
মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে ঢুকে গেলাম। গিয়ে দেখি না আর্টসেল চলে গেছে। বাচ্চু ঝড় চলেছে। বাচ্চুর গিটারের জাদু যারা কনসার্টে দেখেছে তারা জানে বাচ্চু কি জিনিস। বেম কিছুক্ষণ বাচ্চুর ঝড় দেখলাম।
শুনলাম তার কনসার্ট মাতানো গানও।
তারপর মঞ্চে কেকে। কৃষ্ণ কুমার কুন্নাথ। আমার অসম্ভব প্রিয় এক শিল্পী। ভারতের হালের ফিল্মে প্রতি বছরই যার হিট গান অনেক।
যার কনসার্ট দেখতে যাচ্ছি না, এমন একটা কষ্টের অনুভূতি নিয়ে থেকে কাকতালীয় ঘটনায় তাকেই এতো সামনে মঞ্চে দেখার অনুভূতি অন্যরকম। তবে প্রথমে দাঁড়াতে হলো একেবারে পেছনে।
উল্লেখ্য, কনসার্টে ভাব-এর একটা দাম একটা আছে। ভাব নিতে পারলে অনেক কিছুই করা যায়। হঠাৎ ছোট ভাই রাসেল পরামর্শ দিল, ভাই আপনার পকেটে প্রেসকার্ড থাকতে এতো পেছনে দাঁড়াইয়া কনসার্ট দেখমু কেন?
আমারও মনে হলো আসলেই তো! চলেন একটা ভাব নেই।
অতঃপর বাবের দুনিয়ার সকলই কাত। ভলান্টিয়ারদের কাত করে আমরাও ঢুকে গেলাম ভিআইপিতে, সংরক্ষিত আসনে। খুব কাছ থেকে কেকে'র মোটামুটি পুরো কনসার্টই দেখা হলো। প্রায় বিশটি হালের জনপ্রিয় গান করে ঢাকার প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে বিদায় নেন প্রথমবারের মতো আসা এই শিল্পী। তিনি যেমন ঢাকার দর্শককে মুগ্ধ করেছেন, ঢাকার দর্শকের ব্যাপক উপস্থিতি এবং উচ্ছাস তিনিও ছিলেন ব্যাপক মুগ্ধ।
যা বারবার বলেছেন গানের ফাঁকে ফাঁকে। তবে ব্যাপক প্রশংসার দাবী রাখে নকিয়া। এতো সুন্দর স্টেজ-এর জন্য।
উল্লেখ্য নকিয়াতে এই প্রথম মুগ্ধ হলাম। আমি কখনোই নকিয়াতে মুগ্ধ না।
নকিয়া ব্যাবহার করিনা। আমি সনি এরিকসনের নিয়মিত কাষ্টমার ।
কনসার্ট শেষে ভালোলাগা তো ছিলও ছিল অন্যরকম এক রোমাঞ্চ। ছিলাম কই? কেন-ই বা হঠাৎ করে গেলাম ধানমন্ডিতে কাজে, কেন-ই বা দুপুরে ভাতের রিজিক টেনে নিয়ে গেলো মোহাম্মদপুর, তাও একবোরে রেসিডেন্সিয়াল মডের কলেজের কাছে, কেনই বা আসাদ গেট দিয়ে বের না হয়ে তাজমহর রোডের দিকে গেলাম?
আসলে কনসার্টই টেনে নিয়ে গেছে তার কাছে।
শেষে বাচ্চুর গানের মতো-ই হলো, আমরা তো কনসার্টকে টানিনি।
কনসার্ট-ই আমাদের টেনে নিয়েছে। তাও একবারে মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর।
অবশেষে নকিয়ার কনসার্টের দুয়েকটি ছবি সনি এরকিসন মোবাইলের ক্যামেরায় তুলে রওয়ানা দিলাম বাড়ীর দিকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।