সততায় বিশ্বাসী
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষায় ভাব প্রকাশ করে আমরা স্বস্তি পাই, এ ভাষায় কথা বলে আমরা যে তৃপ্তি পাই অন্য ভাষায় তা পাইনা। এজন্যই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বের করেছিল ভাষার দাবিতে অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন। তাদের আন্দোলনের কারণেই আমরা ফিরে পেয়েছিলাম আমাদের মুখের ভাষার অধিকার।
সেই বাংলা আজ পরিষ্ফুট হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। সিয়েরালিওনের রাষ্ট্রভাষা আজ বাংলা। আফ্রিকার দেশগুলোতে আজ ক্রমাগতভাবেই বাংলা ভাষার প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলা ভাষার দাবি আদায়ের দিনটিকে এখন বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।
ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোতেও এখন বাঙ্গালি অভিবাসীদের মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রসার হচ্ছে। ইংল্যান্ডে গড়ে উঠেছে বাংলা টাউন। বাংলা ভাষাভাষীরা আজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন, সাথে নিয়ে যাচ্ছেন তার মায়ের ভাষা বাংলাকে। এভাবেই প্রসারিত হচ্ছে আমাদের বাংলা ভাষা।
শত-হাজার ভাষার মধ্যে পৃথিবীতে এখন বাংলা ভাষার স্থান ৬ষ্ঠ।
প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা। বিশ্বব্যাপী যখন বাংলা ভাষার প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তখনই বাংলা ভাষার আবাসভূমি বাংলাদেশে চলছে এই ভাষার চরম অবমূল্যায়ন। ব্লগগুলোতে অযাচিতভাবে চর্চা করা হচ্ছে বাংলাকে। অনেক পত্রপত্রিকাতেও আজ বাংলা ভাষার বিশুদ্ধ চর্চা হচ্ছেনা। এফএম রেডিও স্টেশনে বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণে ‘বাংলিশ’ ভাষা প্রচারিত হচ্ছে।
উচ্চ আদালতে আজো বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয়না। সর্বত্র আজ বাংলা ভাষার অবমাননা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই আজ মনে প্রশ্ন জাগে এই বাঙ্গালিরাই কি একদিন বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল।
বিশ্বায়নের এই প্রতিযোগিতার যুগে এক দেশের সংস্কৃতি, ভাষা অন্যদেশের ভাষা, সংস্কৃতিকে সহজেই গ্রাস করছে। বাংলা ভাষা বিভিন্ন স্থানে প্রসারের সাথে সাথে আজ ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার সাথে প্রতিযোগিতায় অনেকটা পিছিয়েও পড়ছে।
বিশ্বব্যাপী আজ যেসব দেশের অর্থনীতি ভালো সেসব দেশে যে ভাষায় মানুষ কথা বলে সেই ভাষাগুলোর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আমরা জানি বর্তমানের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভাষা ইংরেজি। তাছাড়া বিশ্বের আরো কয়েকটি অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ, যেমন ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিংগাপুর, নিউজিল্যান্ডের ভাষা হল ইংরেজি। আর এসব দেশের সাথে সংগতি রাখতেই এখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে অনিচ্ছা সত্বেও ইংরেজি শিখতে হচ্ছে। তাই আজ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হল ইংরেজি।
এজন্য ইংরেজির প্রভাব বাংলাদেশেও ঠেকানো যাবেনা এটা চরম সত্য। এমনকি আমরা যদি ইংরেজি বিমুখ হয়ে পড়ি তাহলে জাতি হিসেবে আরো পিছিয়ে যেতে পারি। ব্রিটিশদের আমলে মুসলমানরা সহজে ইংরেজিকে গ্রহণ না করায় তারা হিন্দুদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল। তাই শেষপর্যন্ত মুসলমানরা বাধ্য হয়েই ইংরেজিকে গ্রহণ করেছিল। অতএব, বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে।
আমাদের নতুন প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা বাংলা ও ইংরেজিতে সমানভাবে পারদর্শী হয়। আমরা অবশ্যই অন্যান্য ভাষাগুলোও শিখবো তবে তার জন্য বাংলা ভাষাকে যেন অবজ্ঞা করা না হয়। অর্থাৎ একজন বাঙ্গালি হিসেবে বাংলা ভাষাকে আগে সবোর্চ্চ মূল্যায়ন দিতে হবে।
একটি ভাষা তখনই এগিয়ে যাবে যখন ওই ভাষাভাষী মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান ভালো হবে। যে রাষ্ট্রটি যত বেশি অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ তার ভাষা বিশ্বে তত সমাদৃত।
তাই পরোক্ষভাবে বাংলা ভাষার উন্নয়নে আমাদের সর্বপ্রথম অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একটি ভাষা তখনই বিশ্ব দরবারে গৃহীত হবে যখন সেই ভাষার পরিশুদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থাকবে। অবশ্য আমাদের বাংলা ভাষার উজ্জ্বল সংস্কৃতি রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেয়ার আরেকটি উপায় হল বাংলা সাহিত্যের কর্মগুলোকে অনুবাদের মাধ্যমে সাহিত্যের মূল প্রবাহের শক্তিটিকে বিশ্বধারায় পৌছে দেয়া। এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন সম্ভব, বিশ্বের দরবারে বাংলাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।