সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার
এই ঈদে আব্বার সেরা ডায়ালগ।
'কয়েকটা ঝামেলা আছে। সমাধান করতে তিনমাস লাগবে। চতুর্থ মাসে তোর বিয়ে। '
এই বিষয়টা বুঝতে আবাবার ২২ বছর কেমনে লাগল বুঝলাম না।
ভদ্র ছেলের মতো ভাব নিলাম।
'কি বলছেন আব্বা? আমি কেবল পড়ছি। '
'সেজন্যি তো বললাম। বিয়ে করলে কোন চিন্তা থাকবে না তোর। টেনশনহীন ভাবে দুইজনে পড়বি।
'
আবার মজা লাগল। টেনশন যে আমার মাঝে মাঝে হয় এটা কিভাবে বুঝল? কঠিন ভদ্রলোকের মতো বললাম,
'না বাবা। পাশ করে কিছু কামাই করি। নিজের টাকায় ধুমধাম করে বিয়া দিবেন। তিনটা পোলাতো শেষ।
বাকী তো একটায় আছে না?'
'কোন কথা হবে না। এটায় আমার ফাইনাল ডিসিশন। রেডি হ। কোন ঘুটু লাইন থাকলে কাটছাট কর। মেয়ে আমি নিজেই ঠিক করে রাখছি।
চেয়ারম্যানের মেয়ে। ভার্সিটিতে পড়ে। '
আমি অবাক হলাম,
'কোনটা মেয়ে আব্বা? ছোটটা না বড়টা?
'ছোটটা। '
আনন্দে আত্মহারা। চেয়ারম্যানের মেয়ে তাও আবার ছোটটা।
খুশীতে মাথায় বাজনা বাজছে। অত্যন্ত সাবধানে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রনে রাখলাম। আব্বা জেদী লোক। আমার হাসাহাসি দেখলে সিদ্ধান্ত বদলাতে এক সেকেন্ড সময় লাগবে না। চেয়ারম্যানের মেয়ে না বলে বলবে মইন সাহেবের বড় মেয়ে।
মইন সাহেব আব্বার বন্ধু মানুষ। এই সন্মন্ধটাও মন্দ না। চিন্তাকে ফোকাস করতে হবে। মইন সাহেবের বড় মেয়ে থেকে চেয়ারম্যান সাহেবের ছোট মেয়ের উপর দৃষ্টি ফোকাস করতে হবে। আমি ফোকাস করলাম।
খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বললাম,
'মনে হয় না চেয়ারম্যান সাহেব তার ছোট মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে। '
আব্বার জেদের শিখাটা দপ করে জ্বলে উঠল। গম্ভীর স্বরে বলল,
'মেয়ের বাপের আবার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কি?'
'যদি না দেয়?'
'দিতে বাধ্য। '
আমি আগুনে ঘি ঢাললাম। অদ্ভুত একটা ভাব নিয়ে বললাম,
'আব্বা?'
'আবার কি?'
'মেয়ের দুলাভাই নাকি আমার সাথে তার শালীর বিয়ে হতে দেবে না।
'
আব্বা চিৎকার করে বলল,
'দুলাভাই বিয়ে দেবার কে? বিয়ে দেবার মানুষ লাগে। সেই মানুষ আমি। ছেলের বাপ। চিন্তা করিস না। '
আমি কাচুমুচু হয়ে বললাম,
'আব্বা?'
'আবার আব্বা আব্বা করিস কে? চিন্তা করিস না।
'
'তবুও চিন্তা হয় আব্বা। তবে আপনি আমাকে যে সাহস দিলেন তাতে আর চিন্তার কিছু নাই। আপনার মুখের কথার যে নড়চড় নাই সেটা আমি জন্ম থেকেই দেখে আসছি। ইশ্রাফিল (আঃ) শিঙ্গায় ফু দিতে ভুলে যেতে পারেন কিন্তু গোলজার হোসাইন সরকারের কথার নড়চড় নাই। তিনমাস যখন বলেছেন।
তিনমাস পরেই হবে। একদিন বেশীও লাগবে না। পাক্কা নব্বই দিন। আজকেই ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখি। কি কন আব্বা? একটা হিসাব থাকল আর-কী!'
আব্বা আমার কথার কথায় খুবই প্রীত হলেন।
ছেলের কথায় প্রীত হয়ে ছেলের মাকে ডাক দিলেন।
'ও বউ, কই গেলা। '
আব্বার ডাক শুনে মা আসল। আব্বা হাসতে হাসতে বলল,
'পোলার বিয়া দিমু। মাইয়া রেডি।
চেয়ারম্যানের ছোট মাইয়াটা। গাধাটার সাথে কেমন মানাইব কওতো? আমি তো ভাবি, পোলার আর চিন্তা থাকবে না। '
আমার মা এই মেয়েকে দীর্ঘদিন থেকেই পছন্দ করেন। মহামান্য পতিদেবের মুখে এমন অমায়িক কথা শুনে হেসে ঊঠলেন।
'চিন্তার তো অনেক কিছুই আছে।
মেয়েরে সোনাদানা দিতে হবে। বিয়ে দিতে হলে তো মাইক্রো ভাড়া করতে হবে। এই গায়ে তো মাইক্রো নাই। বউ কেমনে বাসায় তুলবেন?'
মনের মাঝে ধুক করে উঠল। এটা কেমন কথা বলছে মা? মেয়ে প্রয়োজন হলে হেটে হেতে শ্বশুর বাসায় উঠবে।
ঘর না থাকলে স্বামীর সাথে গাছতলায় থাকবে। সোনাদানা না পেলে ইমিটেশনের অলঙ্কারে জড়ানো হবে। আমি ভয়ে ভয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় মাকে বললাম,
'মা?'
'কি বাবা?'
'মেয়ের বাপ যদি বিয়া না দেয়?'
মা হেসে বলল,
'তাতে তোর চিন্তার কি? পালাইয়ে বিয়ে কর। একবার মেয়ের খালি এই বাসায় নিয়া আয়। তারপর দেখ কি হয়।
মেয়ের বাপ-মা জামাই জামাই বলে ছুটে আসবে। '
'এটা কি কও মা?'
আমার মনের মধ্যে অসম্ভব পরিমান খুশবু হইল। খুশবুর সুগন্ধ কোন মতে চেপে রাখলাম। মা বলল,
'যা বাবা চিন্তা করিস না। চিন্তা করতে করতে তোর মুখখানা শুকিয়ে শুটকী হয়ে গেছে।
যা একটু ঘোরাঘুরি কর। তোর আব্বার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যা। পেট্রোল কিনে চেয়ারম্যানের বাড়ীর আশেপাশে ঘোরাঘুরি কর। '
আমি থ।
কিছু বলার নাই।
আবেগ অদ্ভুত একটা জিনিস। প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা সবাইকে দেওয়া হয় নি। আমিও সেই হতভাগাদের দলে। ঈদের পর থেকে কি যে খুশীতে আছি। আগামী ইদেই মনে হয় দিল্লিকা লাড্ডুটা মুখে পুরতে হচ্ছে।
আমার জন্য দোয়া করবেন।
কেমন জানি ভয় ভয় লাগতেছে। বুকের মাঝে কাঁপন আর শিরশিরানীর অদ্ভুত অনুভূতি। অনুভূতি নিশ্চয় ভুল জায়গায় স্থান করিয়া লইয়াছে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।