জন্মের প্রয়োজনে ছোট ছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি
ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৩। বাংলাদেশ এর ইতিহাসে অনন্য একটি দিন হয়ে থাকবে। কাদের মোল্লার বিতর্কিত রায় এর সাথে সাথে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় ব্লগ থেকে শুরু করে ফেসবুক পর্যন্ত। এক পর্যায়ে সেটা কম্পিটারের টেবিল থেকে রাস্তায় নেমে আসে। ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিষ্টরা প্রতিবাদে অবস্থান নেয় শাহবাগ মোড়ে।
একটি মোমবাতির শিখার আগুন ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি কোনায় কোনায়। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখে এক অনন্য প্রতিবাদ। যেখানে কোন ভাংচুর নেই, নেই কোন সহিংসতা। কেবল মাত্র মৌনতা, গান, নাটক, কবিতা আর স্লোগনে স্লোগানে মুখরিত এক ব্যতিক্রমী আন্দোলন। যে ব্লগকে একসময় চটির সাথে তুলনা করা হত, যে তরুনদের একসময় “লাইক জেনারেশন” বলে অভিহিত করা হত পরবর্তীতে তাদের কাছেই মাথানত করতে হল সে সকল বোদ্ধাদের।
দিনের পর দিন ক্লান্তিহীন, অবিশ্রান্ত ভাবে চলছে আন্দোলন। দিনে দিনে এর তীব্রতা বাড়তেই থাকল, বাড়তে থাকল জনসমাগম। এক সময় সরকার আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিল ও গতকাল (১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩) সে আইন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সাময়িক একটি বিজয় অর্জিত হল। কিন্তু এর মাঝে পিছু ছাড়েনি দুষ্টচক্রের সমালোচনা। আন্দোলনকারীরা যখন বিজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, যখন আন্দোলনের সময় ২৪ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৭ ঘন্টায় নিয়ে আসা হয়েছিল তখনই আচমকা ব্লগার “থাবা বাবাকে ” নির্মম ভাবে হত্যা করা হল।
শোক ও ক্ষোভে ফেটে পড়ল শাহবাগ। কিন্তু সহিংসতা হয়নি। হয়নি একটি গাড়িও ভাংচুর। বরং আশ্চর্যরকম সহনশীলতা ও ধৈর্য্য দেখাল এই তরুন আন্দোলনকারীরা।
কিন্তু এই সহনশীলতার সুযোগ নিতে এতটুকু পিছপা হয়নি ধর্মান্ধ-মৌলবাদী জামাত শিবির এর দল।
অত্যন্ত সুক্ষভাবে ছড়িয়ে দিল মানুষ নয় একজন নাস্তিক কে হত্যা করা হয়েছে। এতে ধর্মের মান রক্ষা হল, ধর্ম রক্ষা হল, উদ্ধার হল মোসলমান এর জাত কুল। ব্লগে এখন পোষ্টের ছড়াছড়ি। হঠাৎ করেই লুকিয়ে থাকা নব্য মুসলিম জাগ্রত হয়ে উঠল। এ আন্দোলন নাস্তিকদের আন্দোলন, ইসলাম ধর্ম কে নিধন করার আন্দোলন।
আন্দোলন কে বিতর্কিত করার কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি এ চক্র। যতই দিন যাচ্ছে এরা দিনে দিনে যেনো আরো শক্তিশালী আর সক্রিয় হচ্ছে। নিশ্চিত করে বলতে পারি, কিছুদিন পরই আন্দোলনকারীদের নানারকম ব্যাক্তিগত ছবি দিয়ে চরিত্রহননের চেষ্টা করা হবে, কে কবে ইসলামের বিরুদ্ধে (জামাতের বিরুদ্ধে বলাই কি ইসলামের বিরুদ্ধে ???) কথা বলেছিল তার স্ক্রিনশট দেওয়া হবে। কোন ভাবে যদি চীড় ধরানো যায় এ আন্দোলনে, কোন ভাবে যদি জনসমর্থন কমানো যায়।
সেই সব মাথামোটা মানুষগুলোকে বলছি, যারা ইসলামের ঝান্ডা হাতে নিয়ে মানুষ হত্যা করার লাইসেন্স নিয়েছে তাদের বলছি, যারা ১৯৭১ সালে গনিমতের মাল বলে নারী ধর্ষন করেছিল তাদের বলছি, আমরা যেদিন জন্মেছি সেদিনি মৃত্যুরদিন নির্ধারন করেই আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন।
মৃত্যুর ভয় আমরা করিনি। মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে আন্দোলনে নামিনি। বরং কেয়ামতের দিন যাতে গর্বকরে বলতে পারি যারা ইসলামের নামে অন্যায় করেছিল, যারা ইসলামের নাম দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল, যারা ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করছিল, যারা প্রতিনিয়ত পদে পদে ইসলাম ধর্মকে মানুষের মনে বিষিয়ে দিচ্ছিল তাদের কে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি।
আজ ১৫ দিন ধরে চলমান বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময়ের অর্জন যদি বলি তবে এখন পর্যন্ত জনসাধারনের আকুন্ঠ সমর্থন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তত ঘুনে ধরা বাংলাদেশীদের মনে আরেকবার জেগে উঠার সাহস হয়েছে।
এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দেখেছে কিভাবে সহিংসতা না করেই আন্দোলন করা যায়, দাবি আদায় করা যায়। যে দেশের মানুষ ভুলে গিয়েছিল প্রতিবাদ করতে, যে দেশের মানুষ ভুলে নিজের মেরুদন্ড সোজা করে দাড়াতে, এ আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে প্রতিবাদ করা যায়, কিভাবে সোজা হয়ে ঘুরে দাড়ানো যায় অন্যায় এর বিরুদ্ধে। কিভাবে একত্রিত হওয়া যায় কোন দলের লেজুরবৃত্তি না করে।
কিন্তু এতকিছুর মাঝেও থেমে নেই ষড়যন্ত্র। এখনো ঝুলে আছে দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর রায়।
গোলাম আজমের শুনানীর দিন পেছানো হচ্ছে বার বার নানা ছুতায়। ছড়ানো হচ্ছে গৃহযুদ্ধের সংকা। অথচ কি আশ্চর্য লাগে, যে আন্দোলনকারাীরা এখন পর্যন্ত একটি গাছের পাতাও ছেড়েনি তাদের কে ঘিরে গৃহযুদ্ধের কথা বলা হয় !!
নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি সামনে অনেক কঠিন একটি সময় আসছে। আন্দোলনকারীদের নানা ভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজিব কে হত্যা করার পর থেকেই ব্লগতো একরকম জামাতীদের দখলেই চলে আসছে।
প্রতিনিয়ত বলা হচ্চে নাস্তিকের আন্দোলন। আন্দোলনের মাঝে ধর্মকে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে কোন ভাবে এ থেকে জন সমর্থন কমানো যায়। ঠিক যেমনটি তারা ১৯৭১ সালে করেছিল। ধর্মের কথা বলে পাকিস্তান যাতে না ভাংগে সেজন্য হেন কোন অপরাধ বাদ ছিলনা যে তারা করেনি।
আজ যেনো তারা ঠিক একই কাজ করেছে আজও। সরকারও যেনো সময় নিচ্ছে। নানা রকম আইনের দোহাই দেয়া হচ্ছে। অথচ সংসদে সরকারের দু তৃতীয়াংশ ক্ষমতা রয়েছে। চাইলেই সংবিধান এফাড় ওফাড় করতে পারে।
কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে গড়িমশি।
জানিনা আগামী দিনে কি অপেক্ষা করছে। জানিনা এদেশ কোখনো এ যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদীদের থাবা থেকে বের হতে পারবে কিনা। কেবল এ এ আশায় আন্দোলনে আছি, বেঁচে থাকি বা না থাকি.. এ আন্দোলন যেনো অন্তত আমার মেয়েকে এমন একটা দেশে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয় যে দেশে ধর্মের নামে ধর্ম ধ্বংস করা না হয়, যে দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের আস্ফালন না থাকে, যে দেশে দুর্নীতিবাজদের অভয়ারন্য না হয়। সে দেশ যেনো হয় বাংলাদেশ।
সে দেশে যেনো আমার মেয়েটি বড় হয়। যেনো মেয়েটিকে কখনো বলতে ন হয় ”বাবা এ কেমন দেশ তোমরা রেখে গেলে আমার জন্য” যেমনটি বলতে হয়েছিল আমাকে আমার বাবাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।