আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৃষ্টি আকর্ষন: প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ, শাহবাগ স্কয়ার আর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

আমি একদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম এভাবে, "আপনি যদি প্রগতিশীল হন তবে আইন থেকে মৃতু্যদণ্ড বাদ দিতে একাত্নতা প্রকাশ করুন। অপরাধী একজন যুদ্ধাপরাধি হোক আর সাধারণ খুনি হোক। প্রগতিশীল মানুষ এখন মৃতু্যদণ্ড বিধানের বাইরে। আর আপনি যদি রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় আবদ্ধ থাকতে চান তবে রাজাকারদের ফাসির জন্য নিরন্তর আন্দোলন করে যান। আপনার মতামত যা-ই হোক! আমি সংরক্ষনশীলতার নীতিতে অটুট মনে-প্রানে ও বাইরে।

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা মনে রক্ষনশীলতা ধারণ করেন আর ভাব প্রদর্শন করে যান প্রগতিশীলতার। " আমার প্রশ্ন ছিল এসব মানুষ কি বড় রাজাকার না? আমার স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং যথারীতি তির্যক প্রতিক্রয়া প্রদর্শন করেছেন এমন কি আমার প্রানপ্রিয় ভূতনীও! দেশের একটি জনপ্রিয় ব্লগের বিশিষ্ট ব্লগার মুর্তালা রামাত ব্যাক্তি জীবনে আমার খুব পরিচিত মানুষ। জাতীয়, রাজনৈতিক, সাহিত্য বিষয়ে আমাদের তর্কযুদ্ধ বাঁধে সুযোগ পেলেই। কখনও ৫ মিনিটেই সমাপ্ত হয়ে যায় আবার অনেক সময় দীর্ঘসময়েও শেষ হয় না। তো প্রথম প্রতিক্রয়া যে তার কাছ থেকেই আসবে সেটা সহজেই অনুমেয় ছিল।

হাজার হাজার মানুষের মৃতু্যর জন্য যারা দায়ী; তাদের জন্য কোনো মানবতা নেই। অন্য সবার জন্য হয়তো রহিত হতে পারে না কিন্তু এসব নরপশুদের জন্য ফাসির দঁড়ির কোনো বিকল্প নেই। আমি তার বক্তব্যকে সমর্থন করি। মানবাধিকার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বার্টেণ্ড রাসেলের কথা বলেছন; তাকে মানবাধিকার আইনের জনক বলা হয়। তিনি খুব সুন্দর এবং যৌক্তিক কোট করেছেন।

একজন মানুষ খুব উত্তেজিত হয়ে হাতে অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে কয়েকজনকে খুন করে ফেলল। আপনাকে তখন বুঝতে হবে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এমন লোকের মৃতু্যদণ্ড সমর্থন করি না কিন্তু যুদ্ধাপরাধী; যারা নিশ্চিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত হয়ে খুন এবং তাণ্ডবলীলায় মেতে ছিল; তাদের জন্য মৃতু্যদণ্ড অনেক কম শাস্তি। নিজেকে একজন রক্ষনশীল মনোভাবী মনে করি।

সংগত কারনেই অন্যায়ের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতকরনে আমার সমর্থন। রাজাকারদের ফাসিতে ঝোলাতে আমার কোনো দ্বিমুখী মনোভাব নেই। নেই কোনো রাজনৈতিক ছলা-কলা! আমার আছে দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংঘর্ষ। সমস্যা প্রগতিশীলতা আর রক্ষনশীলতায়। কারন তারা পরস্পর সাংঘর্ষিক।

আমার উদ্দেশ্য এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তাদের দেখিয়ে দেয়া। আমার প্রানপ্রিয় ভূতনী অনেক সরল। আমার শক্ত কথা ওর মাথায় ধরে না। সেও আমাকে বুঝতে না পেরে এসএমএস করে বলল, আমি কি পাগল হয়ে গেলাম নাকি? সে ভেবেছে রাজাকারদের আমি সহানুভূতি দেখাচ্ছি! তখন তাকে সবিস্তারিত বুঝিয়ে শান্ত করতে পারাটা শাহবাগ যুদ্ধজয়ের চেয়ে কম মনে হয় নি। হয়তো অনেকেই বলবেন, দেশপ্রেমে বলীয়ান শাহবাগ স্কয়ার আর একটা মেয়ের মন জয় করার সাথে তুলনা কি করে সংগতিপূর্ন হলো? আমি রক্ষনশীল বলেই সহজ উত্তর! "যে কোনো কঠিন এবং অসাধ্য সাধনের একটাই উপমা; শাহবাগ স্কয়ার"।

মানুষ তো উপমা দিতে চাইলে উৎকৃষ্ট কিছুকেই বেছে নেবে। এখন আপনাকে বাঘের বাচ্চা বললে আপনি ঠিক ততটাই খুশি হবেন ঠিক যতটা রাগ করবেন কুকুর ছানা বললে। কিন্তু ভেবে দেখেন তো কে হিংস্র আর কে সাহসী এবং উপকারী। জীব-জানোয়ারের সাথে তুলনা করাটা রক্ষনশীল মানুষের মনোভাব আর আপনিই ভাবুন জীব-জন্তু প্রীতি আমাদের সমাজে কতটা প্রচলিত এবং আপনি কিভাবে দৃষ্টভঙ্গির সাথে মিশে আছেন! প্রগতিশীল সমাজ একজন মানুষের তুলনা শুধু মানুষকে দিয়েই দেবেন। আমরা মানুষ বলেই অনেক ভুল করি তেমনি মানুষ বলেই আমরা সংশোধিত হই।

ধারন করি মানবতা। আর মানবতা তাকেই প্রদর্শন করা যায় যিনি কিনা সত্যিকার অর্থে অনুতপ্ত। নিমখারামের কোনো মাফ নেই। এটাই হচ্ছে রক্ষনশীল মানুষের মতাদর্শ। আর সে জন্য অবস্থানগত প্রতিবন্ধকতার জন্য শাহবাগে আসতে না পারলেও মন থেকে জনসমুদ্রের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করছি।

মানুষ সুন্দরের পূজারী। নিজেকে মানুষ বলেই মনে হয় কারন আমি ব্যাতিক্রম কেউ না। সংবাদপত্রে যখন খুন, গুম, জবাই, ধর্ষন খবর পড়তে হয়; অসুন্দর বাংলাদেশের ছবি ভেসে ওঠে। বিষন্নতায় মুখ লুকাই। আবার যখন েদখি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় বড় ক্রিকেট পরাশক্তিকে ভূমিস্মাৎ করছে, ফুটে উৎসব মুখর এক বাংলাদেশের ছবি।

যেটা অনেক সুন্দর। আমার দেশ দুর্নীতিপরায়ন, অবিচারে ভরপুর, অনিরাপদ! আমার দেশে হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেংকারি হয়, পদ্মা সেতু নিয়ে মেগা সিরয়াল হয়, আরো কত কি যে হয় সেটার লিস্ট লিখে শেষ করা আর দুর্নীতির উপর ডক্টরেট করা একই কথা। এত অনিয়মের মধ্যেও তো এটা আমার দেশ। মানুষগুলো আমার। দেশকে ভালবাসি, ভালবাসি।

একজন পতিতা মায়ের সন্তানও তার মায়ের অমর্যাদা সহ্য করতে পারে না। মা তো মা-ই। কাজেই যেসব সাগু'রা আম-জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কেন জনমত হচ্ছে না শাহবাগে। এটা নাকি তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। তাদের একটাই কথাই বলতে চাই যারা এদেশকেই চায় নি, যারা বেঈমানি করেছে এ দেশের মানুষের সাথে, তাদের বিচার হবে সবার আগে।

তারপর ধরা যাবে সে সব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের। মূল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করা হবে। সর্বোপরি আমি একজন আস্তিক। সৃষ্টকর্তার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। কিন্তু আমি ধর্মান্ধ নই।

আমি ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করি না, রাজনীতি করি না, সুবিধাও আদায় করি না। এসব আমার মৌলিক বিশ্বাস। আর আমার মনে হয় দেশের বেশিরভাগ মানুষ আমার মত সাধারণ। তাই মোমবাতি জ্বালিয়ে শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলন আমার কাছে পূজা মনে হয় না। মনে হয় আমরা যেই আঁধারে আছি তা বিদীর্ণ করার প্রতিকী চেষ্টা।

তা না হলে লোড-শেডিং প্রবন বাংলাদেশে কেউ মোম জ্বালাতো না। যাই হোক, ধর্মের প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার মনোভাব যদি সুধীজনদের কাছে আমাকে মৌলবাদী পরিচয়ে পরিচিত করে তোলে তবে সতি্যই আমার কোনো আফসোস নেই কারন দেশের অধিকাংশ মানুষ আমারই মত সাধারন। একটু ঝেড়ে কাঁশি! আপনি নাস্তিক হতেই পারেন। সৃষ্টকর্তায় আপনার বিশ্বাস বা আস্থা আপনার নাই থাকতে পারে। সেটা একান্ত আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

এখানে আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনি যুক্তি দিয়ে আপনার নাস্তিবাদী প্রতিষ্ঠা করুন। আমার মতে এটাই রক্ষনশীলতা। কিন্তু আপনার কোনো অধিকার নেই ব্যাঙ্গাত্নক কিছু প্রকাশ করে আমার অনুভূতিকে আঘাত করা। এটা আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার।

এটা কি প্রগতিশীলতা? এটা কি আসলেই গুনগত দিক থেকে প্রকৃষ্ঠ বলে বিবেচিত? উত্তর আপনারাই দেবেন আশা করি। ব্লগার রাজীব আমার সহযোদ্বা। আমাদের অস্ত্র কলম। সে আমার অনুভূতিতে আঘাত হানলেও; আমি তার এমন করুন মৃতু্যতে মর্মাহত এবং শংকিত। আমিও নিজেও লিখি আর লেখার কারনে আমি এমন মৃতু্য চাই না।

দেশের মাটিতে স্বাভাবিক মৃতু্য আমার চাওয়া আর রাজীবের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে নিজামী, গোলাম আযম, মুজাহিদ, সাঈদী, কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের সাথে একই দঁড়িতে ফাসি দিয়ে মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করা আমার স্বপ্ন কারন আমি রক্ষনশীলতা ধারন করতে এখনও মগ্ন। শেষ কথা একটাই, শাহবাগ স্কয়ার কোনো ধর্মের নয়, কোনো দলের নয়, নয় কোনো ব্যাক্তি স্বার্থে নিয়োজিত। এটা ধর্মযুদ্ধ নয়, এটা কোনো রাজনৈতিক পোল্টি নয়, এটা কোনো আড্ডাবাজি বা নোংরামি নয়। এটা প্রানের বাংলাদেশকে নতুন করে ফিরে পাবার লড়াই। মনে রাখবেন, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।

আর এই কঠিন সময়ের ভিতরে এখন গোটা দেশ পতিত। অন্তত এখন আমরা দলগত, মতগত, আদর্শগত, স্বত্ত্বগত মতভেদ ভুলে মা ও মাটিকে কলংকমুক্ত করতে একসাথে রুখে দঁাড়াই। বুকের মধে্য ধারন করি প্রানের বাংলাদেশকে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.