ব্যস্ত শহর ঠাঁস বুনটের ভিরে আজো কিছু মানুষ স্বপ্ন খুজে ফিরে........
দহগ্রামের মানচিত্র
ভারতীয় ভুখন্ডে বাংলাদেশের যে কটি ছিটমহল আছে তার মাঝে সর্ব বৃহত দহগ্রাম। এটি লালমনির হাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এর আয়তন ২২.৬৮ বর্গ কিমি। আর জনসংখ্যা ২০০৫ এর হিসাব অনুসারে ১৪৬৬৪ জন। বাংলাদেশের মুল ভুখন্ডের সাথে এই ছিটমহলের সংযোগ তিন বিঘা করিডোর দিয়ে।
পাটগ্রাম থেকে ভ্যান দিয়ে ১৮ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে তিন বিঘার সামনে আসতেই পথ থামায় বিডিআর নিজেদের পরিচয় দেই।
তিন বিঘা করিডোরে ছবি তুলা নিষেধ। সর্বত্র সাইবোর্ডে বাংলায় "ছবি তুলা নিষেধ" হিন্দিতে "ফটু খিচনা বর্জিত হে" ইংরিজিতে "ডোন্ট টেইক পিচার" দেখে বিডি আর জোওয়ান্দের বিকল্প কি করা যায় তা জানিতে চাই,উনারা আমাদের নিরাপদ দুরত্বে থেকে কিভাবে ছবি নেয়া যায় তার ব্যাপারে আন্তরিক ভাবেই সহযোগীতা করল। মুল বাংলাদেশ ভুখন্ডে করিডোরের সামনে বসে ফটো সেশন করে অতক্রম করলাম বর্ডার। চার পাশে কাটা তারের বেড়া।
ডানে ও বায়ে বি এস এফ জোয়ান দের সতর্ক পাহারা। ১৭৮ মিটার/৫৬০ ফুটের মত লম্বা করিডোর পেরিয়ে আবার প্রবেশ করলাম আরেকটি বাংলাদেশে!দগ্রাম ছিটমহলে। ্সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা এই করিডোর খুলা থাকে।
রাস্তা ঘাটা পাকা,ভিতরে পাকা রাস্তার পরিমান ১০ কিমি। ছিটমহলের ভিতরে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম সব কিছু।
এমন বাড়ীও আছে যার অর্ধেক বাংলাদেশের বাকীটা ভারতের!দহগ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে ২ টা নদী তিস্তা ও সাকেরা!!!হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম ইউনিয়নের শেষ গ্রাম আঙ্গরপোতা জিরো পয়েন্টে। সেখান থেকে কয়েক গজ দুরেই ভারতীয়দের বসতবাড়ী। বিনা বাধায় আমরা সেসকল বাড়িতে গেলাম,কথা হলো তাদের সাথে। বাংলা ভাষাভাষি। মুল গেইটে যে কড়া কড়ি দেখলাম তার কিছুই বুঝা গেলনা ভিতরে।
যাক তাদের সাথে কিছু ছবি তুলে চলে এলাম ছিটমহলের ভিতরকার বিডি আর ক্যাম্পে। কথা বললাম জোয়ানদের সাথে। এই ছিটমহলের নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৭০ জন জোয়ান নিয়োজিত। তাদের ভাষ্যমতে এই ছিটমহলের কেউ এখন পর্যন্ত বি এস এফ এর নির্মম গুলিতে প্রাণ হারায়নি। সেই সাথে সেনাবাহীনির উপর তাদের ক্ষোভ সেটিও পরিস্কার ভাবে আমাদের বুঝি দিল।
আমরা যখন বললাম আমরা কতটা গর্ব করি তাদের জন্য,শুনে হেসে বলল,পেটে ভাত থাকে না এই গর্ব দিয়ে কি করব!!!সেখানে কিছুটা পানি জল খেয়ে আবার ঘুরা শুরু করলাম। যেখানেই তাকাই দিগন্ত জোরা ধান ক্ষেত এত উর্বর ফসলি জমি খুব কম দেখেছি।
এখানে আজো বিদ্যুত যায় নি। কিন্তু অবাক হই মোবাইল নেটওয়ার্ক দেখে!গুরুত্ত্বপুর্ণ স্থাপনা গুলিতে সৌর বিদ্যুত ব্যবস্থা দেখা গেল। আছে ১৫ টা মসজিদ আর একটি মন্দির।
২ টি বাজার বা হাটও আছে। এরকম একটিতে বসে চা আর বিস্কুট খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিলাম। খুব ভালো খাবারের ব্যবস্থা পাবেন না সেখানে। তার পাশেই দহগ্রাম উচ্চামাধ্যমিক বিদ্যালয়। অবাক করার মত আধুনিক স্থাপনা।
১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নব নির্মিত ভবনটি উল্লেখ করার মত। আছে একটি পোস্ট অফিস। মজা করে তা থেকে পোস্ট করলাম বেয়ারিং চিঠি পরিচিতদের উদ্দেশ্যে। তার পাশে উনিয়ন পরিষদের ভবন। সেখানে কথা হয় স্কুলের নবম শ্রেনীর এক ছাত্রের সাথে।
আমাদের অবাক করে দিয়ে সে তার ইতিহাস সচেতনতা বুঝিয়ে দিল। ইন্দিরা মুজিব চুক্তি থেকে শুরু করে ৯২ এর চুক্তি সব বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরল। জানালো সেখানকার নানা অভাব অভিযোগের কথা। জানালো কি করুন জীবন কাটিয়েছে তার পুর্ব পুরুষেরা যখন তিন বিঘা না থাকায় ১৯৪৭ থেকে ৯২ তারা আবদ্ধ ছিল । জানালো আজ যখন ১২ ঘন্টার মুক্ত জীবন পেয়েছে তার পরেও কত সমসযায় জর্জরিত এই জন পদ।
এক মাত্র যে সাস্থ্য কেন্দ্র আছে তাতেও নেই ডাক্তার। সন্ধ্যার পর কেউ অসুস্থ হলে তাকে মুল ভুখন্ডে নেয়া যায় না ইত্যাদি ইত্যাদি। ভিতররের বাকীটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম,বুঝার চেষ্টা করলাম জীবনটাকে। মানুষগুলি খুব ভদ্র ও আন্তরিক বলেই মনে হল। সেখানে ১ রাত থেকে তাদের আতিথিয়তা গ্রহনের জন্যেও বলল।
সব শেষে আবারো পায়ে হেটে বেড় হলাম করিডোর দিয়ে। পাটগ্রামে এক ভদ্রলোক বলেছিলেন "ছিটমহল দেখার চেয়ে অনুভবের বিষয়" ।
সত্যি এই করিডোর দিয়ে হাটার সময় সেটি টের পেলাম। ২ টি দেশ কিভাবে সীমানা দিয়ে বিভক্ত হয়,এক ইঞ্চি জমি কতটা মুল্যবান,আর পরাধিনতা কতটা যন্ত্রনা দায়ক,আর মুক্তি কতটা উচ্ছাসের আর আনন্দের। তার সব কিছুর একটা ককটেল হলো এই করিডোর।
যারা যেতে চানঃ
ঢাকা থেকে বাসে করে পাটগ্রাম যেতে হবে। শ্যমলী,গাবতলী থেকে অসংখ্য বাস আছে। ৩৫০ টাকা পরবে ভাড়া। হানিফ,বাবলু,খালেক এন্টারপ্রাইজ,ডিআর এন্টারপ্রাইজ,শাহ আলী, লালমনি এক্সপ্রেস, এস আর ট্রাভেলস এর বাস পাবেন। সময় লাগে ৯/১০ ঘন্টা।
ট্রেনে গেলে লালমনির হাট নামতে হবে। তার পর বাকী ৯৩ কিমি বাসে করে যেতে হবে।
পাটগ্রাম থেকে ভ্যানে করে তিন বিঘা যেতে হবে,খরচ জন প্রতি ৩০ টাকা। প্রতি ভ্যান রিজার্ভ ২০০ টাকা। সময় লাগে দেড় ঘন্টা করে।
পাটগ্রামে থাকা ও খাওয়ার সু ব্যবস্থা আছে। যারা ছিটমহলের ভিতর থাকতে চান তারা খাবার সাথে নিয়ে গেলে ভালো। খাবারের মান ভালো,দামে কম।
সময় করে ঘুরে আসুন,অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা পাবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।