রাত নয়টা। খাওয়ার পাট চুকে গেছে। পায়েলের নানা-নানী রুটিনমাফিক ঝগড়া সেরে ঘুমানোর আয়োজন করছেন। মা গেছেন পাশের গ্রামের ফুপুর বাড়িতে। সেখানেই থাকবেন।
বোতল মামা তার ঘরে একটা কিছু নিয়ে মহাব্যস্ত। পায়েলের দিকে খুব একটা ফিরে তাকাচ্ছেন না। পায়েল রাগও করতে পারছে না। কারণ সে এখনো পুরোপুরি অবিশ্বাস করতে পারছে না। মামা সত্যিই কি মঙ্গলে যাবেন? কিভাবে যাবেন? রকেট কোথায়? আরো কতো কি লাগবে! একটা প্রশ্ন করারও সুযোগ পাচ্ছে না পায়েল।
প্রশ্ন করতে গেলেই একটা কাজ ধরিয়ে দিচ্ছেন মামা।
Ñ - শোন, ফ্রিজ থেকে যা যা পাবি সব প্যাকেট করগে।
Ñ - কিন্তু মামা!
Ñ - কিসসু হবে না। কেউ জানবে না। তাছাড়া, আমরাই তো খাব।
মঙ্গলে গেলে পানি পেতে পারি। কিন্তু খাবার পাবো কোথায়!
পায়েল কিছু না বলে ফ্রিজ থেকে খাবার চুরি করতে গেলো।
একগাদা জিনিস কিনেছেন মামা। স্ক্রু ড্রাইভার থেকে হিটারের কয়েল, পানির বোতল থেকে চিমটা। লিস্ট করতে গেলে সারারাত পেরিয়ে যেতে পারে।
কোনটা কী কাজে আসবে সে প্রশ্ন করে মামাকে রাগিয়ে দিতে চাইলো না পায়েল। কেননা, তার মনে এখনো ক্ষীণ আশা আছে, মামা তাকেও সঙ্গে নেবেন। রাগিয়ে দিলে সেই আশাটাও উবে যাবে। কিন্তু পায়েল বুঝতে পারছে না তার কি মঙ্গল অভিযানের জন্য জামা-কাপড় প্যাকেট করতে হবে কি-না। তাছাড়া যে রকেটে চড়ে তারা যাবে, সেটার সাইজ কতোটুকু তাও জানা হলো না।
- প্যাকেট কর ভালো মতো। বাতাস যেন না ঢোকে। পঁচে গেলেই সর্বনাশ। মঙ্গলে অক্সিজেন নেই। রান্না করা যাবে না।
- অক্সিজেন ছাড়া যে আগুণ জ্বলে না তা জানিসতো?
পায়েল উপর-নিচ মাথা নাড়লো। সে এখন সবই জানে। জানি না বললেই বিপদ। মামা চটে যেতে পারেন।
Ñ- শোন, একদিন থাকবো।
চাইলে তুইও যেতে পারিস। তবে তার জন্য আপার কাছ থেকে একটা লিখিত অনুমতি নিলে ভালো হতো।
পায়েল হেসে ফেলল। যাক মামা তাহলে এখন ইয়ার্কিও করছে। তারমানে তার যেতে কোনো সমস্যাই নেই।
রাতারাতি ফিরলেই হলো।
গোছাগোছির পালা শেষ। রাত বাজে এগারোটা। এখনো রকেটের দেখা নেই। মামা তার পকেটে রাখা সুপারকম্পিউটার তেপান্তরে কী যেন টেপাটেপি করছেন।
সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেললো পায়েল।
Ñ - মামা আমরা কীসে যাবো?
Ñ - পেছনে তাকা।
পায়েল পেছনে তাকালো।
Ñ- কোথায় কি? এখানে তো একটা চেয়ার শুধু।
Ñ- হ্যাঁ আমরা ওই চেয়ারে বসেই মঙ্গলে যাবো।
রকেটে চড়ে যাবেতো নাসার গবেটগুলো। তেল না পুড়িয়ে যে কোথাও যাওয়া যায় তা ওদের ঘিলুতে নেই।
Ñ- তাই বলে চেয়ার! অসম্ভব!
মামা এবার রাগলেন না। মৃদু হাসলেন শুধু। পায়েলের দিকে তাকিয়ে দম নিলেন।
দীর্ঘ লেকচার শুরুর সঙ্কেত।
Ñ- শোন, এই যে আমার আর ওই চাঁদের মাঝামাঝি কী আছে বলতো?
Ñ - বাতাস।
Ñ - ধর বাতাস নেই। বাতাস ছাড়া কী আছে?
Ñ - খালি জায়গা।
Ñ - হ্যাঁ, ঠিক ধরেছিস, খালি জায়গা আছে, এবার বল খালি জায়গাটা কি আসলেই খালি।
পায়েল চিন্তায় পড়ে গেলো। তার চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিতে মামা বললেন, 'খালি জায়গা যদি সত্যিই খালি হতো তাহলে এই খালি জায়গাটা দেখাই সম্ভব না। এখানে শূন্যস্থান আছে। বুঝলি?'
Ñ- হ্যাঁ বুঝলাম। তারপর।
Ñ- এবার এই শূন্য জায়গাটাকে একটা চাদরের মতো কল্পনা কর। করেছিস? হ্যাঁ গুড, এবার চাদরটার ওপারে চাঁদকে রাখ আর এপারে পৃথিবীকে রাখ।
কল্পনা করতে কষ্ট হলেও বোঝার জন্য পায়েল ধরে নিল খালি জায়গা মানে একটা চাদর, যার ওপারে চাঁদ এপারে তাদের সোনাপুর গ্রামটা আছে।
- বিছানার চাদরের মতো কল্পনার চাদরটাকে ভাঁজ করে ফেল।
Ñ- করলাম।
Ñ- এতে কী হলো।
পায়েলের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সে বুঝে গেছে।
Ñ- বল কি মামা! তাহলেতো হুট করে চাঁদটা এখানে চলে আসবে।
Ñ- হ্যাঁ, আপাতত এটুকুই বুঝে নে।
আমি মঙ্গল আর পৃথিবীর মাঝের শূন্য-চাদরটাকে ভাঁজ করে টুপ করে একটা লাফ দেবো। এক সেকেন্ডেই মঙ্গলে পা।
Ñ- কিন্তু মামা, খালি জায়গাকে ভাঁজ করবে কী করে?
উত্তরে মামা রহস্যজনক হাসি দিলেন। কিছু বললেন না। মাথা দুলিয়ে বললেন, সবই সম্ভব।
নাথিং ইজ ইম্পসিবল।
পায়েলের মাথায় লাইনটা খট করে বেঁধে গেলো। নাথিং ইজ ইম্পসিবল... নাথিং ইজ ইম্পসিবল... বেজেই চলছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।