সহজ সরল সবকিছুই ভালবাসি। জটিলতা পছন্দ করি না।
খুব ছোটবেলার ঘটনা। আমি আর আমার বড় ভাই তখন হয়ত ক্লাস ফোর ফাইভে পড়ি। ছোট ভাইটি সবেমাত্র হাটঁতে শিখেছে।
সারাদিন গুঁটিগুঁটি পায়ে এঘর থেকে ওঘর, ওঘর থেকে এঘর।
মজা করার জন্য আমরা দু'ভাই পাশাপাশি দু'টি বিছানা থেকে শরীরের খানিকটা বের করে দিয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করতাম আর বলতাম, পড়ে যাচ্ছি...বাচাঁও বাচাঁও।
ছোট ভাইটি ছুটে এসে তার ছোট ছোট নরম দুটি হাত দিয়ে একবার ভাইয়াকে বিছানায় তুলবার চেষ্টা করত। ভাইয়াকে কোনরকমে তুলে দিয়েই আমার কাছে ছুটে আসত যেন পড়ে না যাই। আমাদের দু'ভাইকে বাচাঁনোর জন্য তার সে কি আপ্রাণ চেষ্টা! একসময় হেসে উঠে আমরা যখন তাকে কোলে তুলে নিতাম, আমাদের দু'ভাইকে বাঁচাতে পেরে তার মুখে তখন বিজয়ের হাসি।
বড় দু'ভাইয়ের প্রতি সেই ছোট্ট অবুঝ মনের অকৃত্রিম ভালবাসার কথা কল্পনা করলে আজ এতবছর পরেও চোখ ছলছল করে উঠে। কিছুতেই চোখের জল ধরে রাখতে পারিনা।
সেই ছোট্ট তুলতুলে ভাইটি চোখের সামনে কখন যে এত বড় হয়ে গেল বুঝে উঠতে পারিনি! মাকে মাঝে মাঝে বলি, ও যদি সেই ছোট্টটি থাকত, তবে এখনও সেইরকম আদর করতে পারতাম। মা কপট রাগের সুরে বলেন, হুঁ ! তোমাদের আদরের জন্য সে সারাজীবন ছোট্টটি থাকুক। তাকে আর লেখাপড়া শিখতে হবেনা, বড় হতে হবেনা।
সত্যি সত্যি সে আজ অনেক বড় হয়ে গিয়েছে! কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিবিএ পড়ার জন্য বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে।
এই প্রথম আমরা কোন ঈদ তাকে ছাড়া করলাম। রোজার ঈদের নামাজ শেষে ঘরে ফিরেছি, মাকে সালাম করতে যাব- দেখি মায়ের চোখে শ্রাবণ বইছে। অঝোর ধারায়। কি বলে মাকে স্বান্তনা দেব! তারপরও বললাম, কেন কাঁদছ।
গতকালও ত ওর সাথে কথা বলেছ। তোমার কাছ থেকে রেসিপি নিয়ে ঈদের দিন মেরাগপোলাও রেধেঁছে। ল্যাপ্পিতে তোমাকে দেখিয়ে খেয়েছে। সে ভাল আছে, নিয়মিত ক্লাস করছে। তবে কাঁদছ কেন?
মার কাছ থেকে আমি কোন উত্তর পাইনি।
ছোট ছেলেটির কথা ভেবে ভেবে তখনও তিনি আচঁলে চোখ মুছছেন।
আমার ছোট ভাইটির খুব পছন্দের একটি খাবার মায়ের হাতের মোরগ পোলাও। এই ঈদেও মা মোরগপোলাও রেধেঁছে আর শুধুই কেদেঁছে। কিন্তু একফোটাঁ ও মুখে দেয় নি। আদরের ছেলেটি সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে বসে আছে, তাকে না খাইয়ে নিজে কেমন করে খান।
এরি নাম হয়তো মা। মা তোমরা এমন কেন গো ? মা অশ্রু মাখা কন্ঠে বলে, মা হলে বুঝতি!
মনে আছে জাহানারা ইমামের '৭১ এর দিনগুলি' পড়েছি আর পড়তে পড়তে কতবার যে কেদেঁছি। এক ছেলে মুক্তিযুদ্ধ থেকে মায়ের কাছে চিঠি লিখেছে,'' মা এখানে খুব কষ্ট। মাটিতে শুতে হয়। কোন কোন দিন একবেলা ভাতও জোটে না।
রুটি গুড় মুড়ি খেয়ে থাকতে হয়। '' যুদ্ধ শেষে সেই ছেলে আর ঘরে ফেরেনি। যতদিন বেঁচে ছিলেন সেই মাও আর কোনদিন বিছানায় ঘুমাননি; ভাত মুখে দেননি। যুদ্ধকালীন ছেলে যে তাঁর ইঁট মাথায় মাটিতে শুয়েছে, খেয়ে না খেয়ে থেকেছে।
মায়েরা এমনই হয়! তাদের সমস্ত পৃথিবী জুড়ে শুধুই তাদের সন্তানেরা
( আপনারা আমার এই আদরের ছোট ভাইটির জন্য দোয়া করবেন।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।