আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উচ্চাভিলাষ ও মাদকেই তরুণীদের সর্বনাশ

মাদকের প্রভাব, অতি আধুনিক ও উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনে আকৃষ্ট হয়ে ও অসৎ সঙ্গে পড়ে দেশের তরুণীরা ক্রমেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। এ অপরাধীদের মধ্যে যেমন সমাজের বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর তরুণী রয়েছেন; তেমনি আছেন শহরের বস্তিবাসী ও গ্রামের দরিদ্র তরুণী। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ঢাকার বাইরে থেকে আগত যে সব তরুণী রাজধানীর বেসরকারি হোস্টেলগুলোতে থাকছেন তাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা তুলনামূলক বেশি। এছাড়া সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের আচরণও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো।

বিশেষজ্ঞরা জানান, তরুণীদের এ পরিবর্তন কিছুটা হচ্ছে মাদকের প্রভাবে। আবার অনেক মাদকাসক্ত তরুণী যথাযথ কাউন্সিলিং সেবা গ্রহণ না করায় বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় তারা তরুণীদের অপরাধ জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে সুষ্ঠু পারিবারিক মূল্যবোধ, কন্যাশিশুর সঙ্গে অভিভাবকদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং মাদকাসক্ত সন্তানকে চিকিৎসায় উদ্বুদ্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

সম্প্রতি পুলিশ দম্পতি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাদেরই মাদকাসক্ত কন্যা ঐশী রহমান। পুলিশের কাছে ঐশী তার জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারের পাশাপাশি নিজের মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার কথাও জানান। এর আগে দেশে কোনো পুত্র সন্তান কর্তৃক অভিভাবকদের হত্যার ঘটনা ঘটলেও কন্যাসন্তানের মাধ্যমে অভিভাবকদের খুন হওয়ার ঘটনাটি এই প্রথম গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। স্বাভাবিকভাবেই দেশবাসীর কাছে এটি ছিল একইসঙ্গে অকল্পনীয় ও দুঃখজনক ঘটনা।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, নারীদের অপরাধে জড়ানোর পেছনে অর্থনৈতিক বিষয়টি অন্যতম। চারপাশে এত চাকচিক্য দেখে অতি লোভী এক শ্রেণীর তরুণী উচ্চাভিলাষী হয়ে নিজেকে অপব্যবহার করছে। তবে একটি চক্র এ ধরনের তরুণীদের খোঁজে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। ডিজে পার্টি বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার নাম করে চক্রটি মেয়েদের অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত করাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হোস্টেলের বেশ কিছু বোর্ডার আধুনিক ও উন্নত জীবনের আশায় অসৎ কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। এছাড়া স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোরীরাও ক্রমে বিপথে পা বাড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী ডা. মোহিত কামাল বলেন, সম্প্রতি ঐশী রহমান নামের কিশোরীর নিজের মা-বাবাকে হত্যার ঘটনাটি দুঃখজনক। সাধারণত মাদক গ্রহণের কারণেই কিশোর ও তরুণীদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন হচ্ছে। এতে মাদকাসক্ত ব্যক্তির আচরণ নির্মম হয়ে যায়, রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে যায়। বর্তমানে কিশোরী-তরুণীদের অতিমাত্রার ইয়াবা গ্রহণের প্রভাবে 'সাইকোসিস' রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেশি। সাইকোসিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এক ধরনের হ্যালুসিনেশন তৈরি হয়। আর এ রোগে আক্রান্তরা খুন করার মতো ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করেন না। তবে ঐশীর ঘটনা থেকে অন্য অভিভাবক যাদের সন্তানদের মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তাদের শিক্ষণীয় এই যে, সন্তান মাদকাসক্ত হলে তাকে ঘরে আটকে না রেখে চিকিৎসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীদের আচরণ আতঙ্কিত হওয়ার মতো। শৈশব থেকেই একজন কিশোরীকে সামাজিক কারণে নানারকম নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়। তাকে সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব কিন্তু সে দায়িত্ব রাষ্ট্র যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে পারছে না। বিশ্বায়নের প্রভাবে তারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করাকে মনে করছে অতি আধুনিকতার একটি বৈশিষ্ট্য। অভিভাবকরা সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে পারছে না। তারা এখনো সন্তানদের সঙ্গে 'রক্ষকে'র মতো আচরণ করছেন যা তরুণীদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। সংকটময় এ পরিস্থিতি কাটাতে আমাদের সমাজ, পরিবার ও সরকার সবারই মিলিতভাবে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.