আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেডিওর খবরে শুনলেন ফাঁসি না হওয়ার কথা

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে একাকী কাদের মোল্লা। আর ৪৫ মিনিট পর তাকে সেল থেকে বের করা হবে। করানো হবে শেষ গোসল। মসজিদের ইমাম পড়াবেন তওবা। হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। রাত ১২টা ০১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে তাকে। চিন্তামগ্ন কাদের মোল্লা নিজ সেলে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। রেডিও শুনছিলেন আনমনে। খবরে হঠাৎ কাদের মোল্লার প্রসঙ্গ। রায় স্থগিত! এমন খবর শুনে তিনি নড়েচড়ে বসেন। মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যান তিনি। এক কারা রক্ষীকে ডাকেন। জানতে চান, তিনি কি ভুল শুনছেন? কারারক্ষী তাকে নিশ্চিত করেন। বলেন, আপনি রেডিওর খবরে যা শুনছেন, সঠিক শুনছেন। আমরাও তাই-ই শুনছি।

কারাগারের একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, কাদের মোল্লা রেডিওর খবর শুনে নিশ্চিত হন, রাতে তার ফাঁসি হচ্ছে না। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে যখন তার স্ত্রী, সন্তান ও নিকটাত্দীয়রা দেখা করতে যান তার সঙ্গে, তখনই তিনি জানতে পারেন রাতেই তার ফাঁসি হচ্ছে। এ সময় তিনি রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে, তার ফাঁসি রাতেই হবে। এ সময় চারদিকে কারারক্ষীরা অবস্থান করছিলেন। তাদের ডেকে কাদের মোল্লা জিজ্ঞাস করেন, কী ব্যাপার। আজ কি আমার রায় কার্যকর হবে? কারারক্ষীরা জানান, আমরা বলতে পারব না। আমরা জানি না। তাকে না জানালেও তিনি বুঝতে পারেন, তার ফাঁসি রাতেই হচ্ছে। তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েন। চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে পড়ে। কিন্তু তার এই অবস্থা বেশিক্ষণ থাকেনি। মৃত্যুভয় নিয়ে তিনি কাটিয়েছেন মাত্র দুই ঘণ্টা। ওই দুই ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টা কাটিয়েছেন তার আত্দীয়স্বজনদের সঙ্গে উপদেশমূলক কথা বলে। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্যে সব চলছিল ঠিকঠাক। সন্ধ্যার কিছু পরই ফাঁসির মঞ্চ লাল কাপড় দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল। নতুন বাতি লাগানো হয় সেখানে। স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের জন্য কারাগারে নেওয়া হয় কফিন। রাত ৮টার দিকে একজন কারারক্ষী সাবান, মোমবাতি, কর্পূর, আগরবাতি, গোলাপজল, কাফনের কাপড় নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢোকেন। রাত ৯টা থেকে জল্লাদ ছিল প্রস্তুত। ফাঁসি কার্যকর করার সময় কমপক্ষে ১২ জন বন্দুকধারী রক্ষী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। সেই ১২ রক্ষীও মঞ্চের কাছে মোতায়েন করা হয়।

সূত্র জানায়, রাত ১০টার আগেই কারাগারে উপস্থিত থাকেন কারা মহাপরিদর্শক, পুলিশ ও র্যাবের ঊধর্্বতন কর্মকর্তা, জেল সুপার, জেলার, সিভিল সার্জন ও দুজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। তবে ঢাকা জেলা প্রশাসক তখনো পেঁৗছেননি কারাগারে। তিনি রাত সোয়া ১০টায় খবরে জানতে পারেন রায় স্থগিতের কথা। এরপর কারা কর্মকর্তাকে ফোনে তিনি জানান, প্রয়োজন পড়লে যেন তাকে খবর দেওয়া হয়। এরপরই কাদের মোল্লার আইনজীবীরা প্রবেশ করেন কারাগারে। রায় স্থগিতের কাগজ দেখান কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। রাত ১১টায় ফাঁসির চূড়ান্ত কাজ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা উঠিয়ে নেওয়া হয়। রাত ১২টার পর একে একে চলে যেতে থাকেন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, রেডিওর খবর শুনে কাদের মোল্লার চেহারায় হাসি আসে। কারারক্ষীদের সঙ্গে তিনি ডেকে আবারও কথা বলেন। এরপরেও তিনি টেনশনে ছিলেন। আবার কোন ঝামেলা হয়! রাত ১২টার কিছু পর ঘুমুতে যান কাদের মোল্লা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.