আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী লীগ-ইইউ ও কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি

জাতীয় নির্বাচনসহ দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। তারাও আগামীতে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান। যার মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। গতকাল বিকালে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরা গুলশানের একটি হোটেলেপ্রধান বিরোধী দল বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্যদিকে সন্ধ্যায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। পাঁচ সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির বহিঃসম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তা ব্যালথাসার বেঞ্জ। ধানমনন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের দলীয় অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা যায়। এর আগে রবিবার জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

কূটনীতিকদের সঙ্গে রুদ্বদ্ধার বৈঠক : আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সংলাপের বিষয় নিয়ে বিদ্যমান সংকট নিরসনে বিরোধী দলের সর্বশেষ অবস্থান কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে লিখিত আকারে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। আগামী সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা চলাকালে এ বৈঠক করেন তারা। হোটেল হেরিটেইজে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে এ বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ-ইইউ বৈঠক : ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন করার তাগিদ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। একই সঙ্গে তারা দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে বলেছে। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হাইকমিশনার উইলিয়াম হান্না সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি ও উপ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণালকান্তি দাস এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে উইলিয়াম হান্নার নেতৃত্বে মি. বিং, মুলা চিলকারি, ক্রিস্টিনা আলভিস, টম বিল, পেড্রো আলমেইদা, মি. প্যাটজেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং দেশের চলমান রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন ইইউর প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আমরা তাদের জানিয়েছি এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে ১২ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনে এসে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় সংলাপের জন্য প্রস্তুত। আর সংলাপের জন্য উত্তম স্থান জাতীয় সংসদ।

তবে সংসদে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে সংসদের বাইরেও আলোচনা হতে পারে বলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে তিনি জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের বলেন।

হানিফ আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তারা আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে। বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কি না_ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বিদেশিরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যে কোনো পরামর্শ দিতে পারে। তারা তাদের পর্যবেক্ষণের কথা আমাদের বলেছেন। তবে কেউ কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না। আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে সংবিধানসম্মতভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হানিফ। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলেও দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। হানিফ জানান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই প্রতিনিধি দল ১৫ দিন বাংলাদেশে থাকবে। এই সময়ে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে বলে ইইউর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে, বলেন হানিফ।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হাইকমিশনার উইলিয়াম হান্না এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক যাত্রা অব্যাহত থাকুক এটা আমাদের সবার প্রত্যাশা। নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপের দ্বার উন্মোচিত হওয়ার এখনই সঠিক মুহূর্ত। আমাদের ইচ্ছা সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আমরা নির্বাচনকালীন পর্যবেক্ষক দল পাঠাব, যা আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় আমরা নির্বাচন কমিশনকে প্রাযুক্তিক সহযোগিতা করব।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.