"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"
আল-ওহ্হাব (الْوَهَّابُ) অর্থ: সব কিছুর দাতা অর্থাৎ যিনি সব কিছু দান করে থাকেন।
মহান আল্লাহ তাআলার যে ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো শুধু আল্লাহর জন্যই, কারণ এইগুণগুলো শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে।
إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ (ইন্নাকা আনতাল ওহ্হাব)
অর্থ: তুমিই সব কিছুর দাতা। (সূরা আল ইমরান : ৮)
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ ( রাব্বানা লা তুজ্বিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লা জুনকা রহমাতান, ইন্নাকা আনতাল ওহ্হাব)
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর।
তুমিই সব কিছুর দাতা। (সূরা আল ইমরান: ৮)
কেউ যদি আল্লাহর গুণবাচক নাম রাখতে চায় তাহলে সে সরাসরি সেই নাম রাখতে পারবে না কারণ আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো শুধু আল্লাহর জন্যই, এইগুণগুলো শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে, অন্যকারো নেই।
তবে আল্লাহর গুণবাচক নামের আগে “আবদ” (عبد) যার অর্থ হচ্ছে বান্দাহ বা দাস, যুক্ত করে সে নামটি রাখতে পারবে। যেমন: আর-রহমান অর্থ পরম করুণাময়, এখন কেউ যদি শুধু রহমান নামটি রাখতে চায় তাহলে রহমান শব্দটির আগে “আবদ” শব্দটি যোগ করতে হবে; আব্দুর রহমান যার অর্থ হলো পরম করুণাময়ের বান্দাহ বা দাস। আবার, আব্দুল্লাহ যার অর্থ হলো, আল্লাহর বান্দাহ বা দাস।
একইভাবে কেউ যদি ওহ্হাব নামটি রাখে তখন হবে আব্দুল ওহ্হাব অর্থাৎ সব কিছুর দাতা’র বান্দাহ বা দাস।
ব্লগের একজন জ্ঞানী লেখক তার অনেক লেখাগুলোতেই ‘ওহাবী’ বলে সউদি সরকারকে গালাগালি করে থাকেন এবং সেই সাথে আমাদের দেশেও অনেক মানুষকে এই নামটা বলে গালাগাল করা হয়। এইভাবে “ওহাবী” বলে কাউকে গালাগাল করাটা মোটেই ঠিক না কারণ এইটা আল্লাহ একটি গুণবাচক নামকে বিকৃত করে তৈরী করা হয়েছে।
কিভাবে এই নামের সূত্রপাত হলো সে সম্পর্কে একটু তথ্য দিই:
মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব হিজরী দ্বাদশ শতকের একজন অন্যতম আলেম ছিলেন। তিনি ১১১৫ হিজরী মোতাবেক ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে সউদি আরবের নাজদ এলাকায় এক ধর্মপ্রাণ ও সম্মানিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
উনার পিতা ছিলেন একজন খ্যাতনামা আলেম এবং তার নাম ছিল আব্দুল ওহ্হাব।
আরবী লোকদের নাম রাখার স্টাইল হলো, তাদের নাম থাকে একটা আর এরপর তারা তাদের নামের সাথে তাদের বাবা’র নাম, দাদার নাম যোগ করে রাখে।
যেমন: আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু) যার অর্থ হলো, উমরের পুত্র আব্দুল্লাহ। আবার আনাস বিন মালিক যার অর্থ মালিকের পুত্র আনাস। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে, আসমা বিনতে আবু বকর অর্থ আবু বকরের মেয়ে আসমা।
অর্থাৎ ইবনে এবং বিন শব্দটির অর্থ হচ্ছে ছেলে আর বিনতে শব্দটির অর্থ হচ্ছে মেয়ে। আপনারা হয়তো অনেক সময় খেয়াল করে থাকবেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক সময় মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ বলা হয়ে থাকে যার মানে হলো, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ, কারণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ।
এখন মূল ঘটনায় আসি, মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব যার অর্থ হলো আব্দুল ওহ্হাবের পুত্র মুহাম্মদ। মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব শিরকের বিরদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ইসলামকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার জন্য আহবান জানান। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীদের তথা ইসলামের শত্রুদের এই বিষয়টি পছন্দ হলো না, তাই তারা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব এর শিরকের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ভিন্নখাতে প্রাবাহিত করার জন্য নানা ধরণের প্ররোচনা চালায় আর এ জন্য তারা একটা যুতসই উপাধি খুজছিল।
যেহেতু উনার আসল নাম হচ্ছে মুহাম্মদ যা আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি নাম, তাই মুহাম্মদী বা মুহাম্মদী ইসলাম বলে যদি প্ররোচনা চালানো যায় তাহলে লাভ হবে না বরং হিতে বিপরীত হবে। তাই তারা “মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব” নামটি থেকে ওহ্হাব নামটি নিল আর তাকে উপাধি দিল ‘ওহাবী’ বলে। কেউ শিরক বিরুধী কোন কথা বললে, বিদআত বিরুধী কোন কথা বল্লে এবং সহীহ হাদিসের অনুসরণ করলে তাদের “ওহাবী” এবং সউদি সরকারের দালাল বলে গালিগালাজ করা হয়ে থাকে আমাদের দেশে। যা মোটেই ঠিক নয়, কারণ আমি লেখার শুরুতেই বলেছি আবারও বলছি, “ওহ্হাব” নামটি হচ্ছে আল্লাহর একটা গুণবাচক নাম আর এই নামের বিকৃত করে উপস্থাপন কারা মোটেই ঠিক নয়। আপনাদের যদি তাদের ভাল নাই লাগে তখন চুপ থাকুন আর যদি গালিগালাজ করতেই হয় তাহলে অন্যকোন নাম বেছে নিন, দয়াকরে “ওহাবী” বলে গালিগালাজ করবেন না।
ব্লগের এই জ্ঞানী ব্লগার এত কিছু জানেন অথচ তিনি এই বিষয়টি কেন জানেন না তা আমার বোধগম্য হলো না। কারণ, উনার লেখা দেখলেই বুঝা যায় উনি অনেক পড়াশুনা করেছেন তবুও তিনি কেন এই গালিগালাজটি ব্যবহার করে ইসলাম বিরুধীদের সাথে তাল মেলান তা আমি বুঝতে পারলাম না। উনার নিকট আমার অনুরোধ রইল, গালিগালাজ যদি করতেই হয় অন্যকোন নাম ব্যবহার করুন, দয়াকরে “ওহাবী” নামটি ব্যবহার করবেন না।
মহান আল্লাহ আমাদের শয়তান ও তার অনুসারীদের, বিভ্রান্তকারীদের, বিদআতীদের এবং শিরকপূর্ণ কথা, কাজ ও চিন্তা থেকে হিফাজত করুন। আমীন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।