আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেন্ডার ও দখলবাজিতে মামা-ভাগ্নরে ঐক্য!

দেশের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদেরই...আসুন দেশটাকে সুন্দর করি।

দেশব্যাপী টেন্ডারবাজি ও দখলবাজি নিয়ে চলছে সমালোচনা। এই নিয়ে সংঘর্ষ, মারামারি ও নানাধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কিন্তু সরকার বদল হলেও টেন্ডারবাজি ও দখলবাজদের কোন পরিবর্তন হয় না। এরা সবসময় মামাভাগ্নে এবং টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছে।

টেন্ডারের লাইসেন্স এক ব্যক্তির। তবে কোটি কোটি টাকার কাজ কথিত মামাভাগ্নে ও লাইসেন্সধারি ব্যক্তির মধ্যে ভাগাভাগি হয়। এই ভাগাভাগির অনুপাত সরকার ও বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রায় সমান। বরং ক্ষেত্রবিশেষ লাইসেন্সধারি ঠিকাদার কম পেয়ে থাকেন। এ কারণে প্রকৃত ঠিকাদারকে কাজ করতে গিয়ে পুকুর চুরি করতে হয়।

অপরদিকে প্রকৌশলী ও বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘাটে ঘাটে উৎকোচ দিতে হয়। প্রকৃত ঠিকাদারকে লাভের অংশ বাদ দিয়ে পরে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হয়। এতে কাজের গুণগত মান থাকেনা বললেই চলে। রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ করার পর ঐ কাজ বৃষ্টি হলে পিচ ঢালাই উঠে যায় সহজে। রাজধানীর কয়েকটি গণপূর্ত অফিস এবং ঢাকার বাইরে সড়ক ও জনপথসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে প্রকৃত ঠিকাদার ও কর্তব্যরত প্রকৌশলীসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে টেন্ডারবাজি এবং দখলবাজি নিয়ে এই সকল তথ্য জানা যায়।

প্রকৌশলীরা জানান, প্রতি এলাকার গণপূর্ত এবং সড়ক ও জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের ঠিকাদারি কাজ স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা কর্মীরা দখল করে নেয়। সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীরা যোগ দেয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ‘মামা’ ও বিরোধী নেতা-কর্মীদের ‘ভাগ্নে’ বলে উপাধি দেয়া হয়। এই দুই গ্রুপের মধ্যে ৯৮ ভাগের ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। প্রকৃত ঠিকাদারকে সিডিউল প্রায়ই ক্রয় করতে দেয় না।

মামা-ভাগ্নে গ্রুপ প্রকৃত ঠিকাদারের নামে সিডিউল ক্রয় করে নেয়। পরে তার নিকট কাজ বিক্রি করে দেয়। প্রকৃত ঠিকাদারের লাইসেন্সের নামে মামা-ভাগ্নে গ্রুপ দরপত্র পাইয়ে দেয়ার চুক্তির কাজ করে। চুক্তি অনুযায়ী দরপত্রের কাজের টাকার ভাগ মামা-ভাগ্নেরা অফিস আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করে নেয়। এইভাবে চলছে টেন্ডারবাজি।

কোন কোন এলাকায় সরকারী দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কিংবা বিরোধী দলের সঙ্গে একই কারণ নিয়ে মারামারি ও সংঘর্ষ ঘটে। সরকার ক্ষমতায় আসার ৫ থেকে ৬ মাস পর টেন্ডার নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারামারি ও সংঘর্ষ হয়ে থাকে। পরবর্তীতে টেন্ডার ও দখলদারদের মধ্যে ভাগাভাগির মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর নিরবে টেন্ডার ও দখলবাজির ঘটনা ঘটে বলে প্রকৌশলীরা জানান। কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে প্রকৃত লাইসেন্সধারীদের নিয়ে এ ব্যবসা অথবা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রকৌশলীগণ।

আজিমপুর ডিভিশন এলাকার গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা টেন্ডারবাজদের দাপটের কারণে অফিস ছেড়ে বেশীরভাগ সময় অন্যত্র কাটান। তাদের কথামত কাজের ব্যয়বরাদ্দ ধরার জন্য ফোনে প্রতিদিন হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ কারণে প্রকৌশলী ও অন্যরা অফিসে থাকেন না বলে জানান। এই চিত্র বিগত সরকারের আমলেও ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে একই অবস্থা।

খিলক্ষেত এলাকায় ১৯৯৪ সালে ২২শে জানুয়ারী আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী মোহাম্মদ হানিফের এক পথসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণদানকালে হামলা চালান হয়। এই হামলায় জড়িত রফিকুল ইসলাম, রাকিব হোসেন, মোবারক হোসেন ও শাহীনসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে খিলক্ষেত থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এই আসামিরা এখন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী পরিচয়ে এলাকায় জবর-দখলসহ টেন্ডারবাজি করে আসছে বলে এলাকাবাসি অভিযোগ করেন। কুমিল্লায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা-নিয়ন্ত্রণ করছে টেন্ডার কার্যক্রম-কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ৩ জন সংসদ সদস্যের অনুগত নেতা-কর্মীদের অন্তঃর্দ্বন্দ্বে কুমিল্লায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত ক’মাস যাবত আওয়ামী লীগ দলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের টেন্ডার ব্লক, টেন্ডার বাক্সে পানি ঢেলে দেয়া, প্রকাশ্য অস্ত্র মহড়া, গুলি ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে কুমিল্লার ঠিকাদারি কাজগুলো জিম্মি হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদের হুইপ মজিব বলেন, কুমিল্লায় টেন্ডার ভাগাভাগি হয় তা আমি জানি না। এ খবর আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট নিয়মে সঠিকভাবে টেন্ডার হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পয়সা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে।

আমি সততার মধ্য দিয়ে সারা জীবন রাজনীতি করেছি। এখন আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। কুমিল্লা-বরুড়া আসনের সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এ ব্যাপারে বলেন, আমি নিজে এ সব টেন্ডারের ব্যাপার থেকে অনেক দূরে। আমার দলের লোকেরা আমার জন্য খেটেছে। তাদের আমার কাছে দাবি থাকতে পারে।

তারা নিয়ম মাফি টেন্ডারের কাজ পেলে ভালো। না পেলে আমার কিছু করার নেই। আমি প্রভাব খাটিয়ে তাদের জন্য কিছু করতে পারবো না। এ সব নিয়মমাফিক হবে তাই চাই। আমি নীতির বাইরে কিছু করতে পারবো না।

নেত্রকোনা সংবাদদাতা । । মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেত্রকোনায় ঠিকাদারি কাজের হাত বদল হয়েছে। তবে জোট সরকারের আমলে যারা ঠিকাদারি কাজ করতেন তাদের লাইসেন্স দিয়ে আওয়ামী লীগ ও যুব লীগের একটা অংশ ঠিকাদারি কাজ করছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, স্বাস্থ্য বিভাগ বা জলমহাল ইজারা নিতে বর্তমান সরকার দলীয় লোকজন তৎপর।

কোন টেন্ডারের কাজ হলে সরকার দলীয় লোকদের তৎপরতা বেড়ে যায়। গড়ে তোলে ঠিকাদারি কাজের সিন্ডিকেট। ঠিকাদার নূরখান মিঠু জানান, নেত্রকোনায় টেন্ডার নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। সকল নিয়ম মেনেই এখানে টেন্ডার ড্রপ করা হয়। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সকল ঠিকাদারি কাজ তারাই নিচ্ছে।

অন্যদের টেন্ডার ড্রপে ধারে-কাছে যেতে দেয়া হয় না। এদিকে কোন কোন ক্ষেত্রে জোট আর মহাজোটের ঠিকাদার মিলেই টেন্ডার দেয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সিডিউল নিলেও অনেকে সরকার দলীয় ক্যাডারদের ভয়ে টেন্ডার ড্রপ করেন না। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল আহসান জানান, টেন্ডার নিয়ে সকল সরকারের আমলে প্রথমদিকে কিছু ঝামেলা হয়। পরে তা আবার মিটে যায়।

তবে এখানে কোন কোন ক্ষেত্রে সরকার এবং বিরোধী দলের তরুণরা এক্ষেত্রে মিলে ঠিকাদারি কাজ করে থাকে বলে তিনি জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা । । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুইজন ঠিকাদার জানান, বিভিন্ন প্রকৌশল অফিসগুলোতে টেন্ডার ভাগাভাগি হয়। বিশেষ করে ঠিকাদার নয় এমন লোকজন বেরিকেড দেয় যেন প্রকৃত ঠিকাদাররা টেন্ডার ফেলতে না পারে।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত। প্রকৃত ঠিকাদাররা এখন কোণঠাসা। জোট সরকারের আমলেও একই অবস্থা বিরাজ করেছিল। নোয়াখালী এলজিইডিসহ অন্যান্য অফিসে টেন্ডার ও জবরদখল ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে। এখানে কোন মামা-ভাগ্নে গ্রুপ নেই।

যে সরকার ক্ষমতায় আসে সেই সরকারের দলীয় নেতাকর্মীদের দখলে চলে। বিগত সরকারের আমলে অনুরূপ অবস্থা ছিল। পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ বলেন, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কঠোর। জড়িত ব্যক্তি যে দলের হোক তাদের ছাড় দেয়া হবে না। র‌্যাবের মহা পরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাব তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়।

এই ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই বলে তিনি জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.