ধন্যবাদ
Click This Link সময় পত্রিকায় প্রকাশিত] বহিষ্কৃত বিগ্রেডিয়ার আমান আযামী বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবঃ-
দুলাল আহমদ চৌধুরীকে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী'র পাল্টা প্রশ্ন
বিগত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে ‘দুলাল আহমদ চৌধুরী' নামে একজন ‘আমাদের সময়' পত্রিকায় আমার নামে মিথ্যার বেসাতি করেছেন। প্রতিবেদনটি পড়ে হাসলাম, করুণা হলো লেখকের জন্য। যে আমার সম্পর্কে এতগুলো মিথ্যা প্রচার করতে পারে, আমার মানুষের সংজ্ঞানুযায়ী সে মানুষের কাতারে পড়ে না। মুসলমান হিসেবে তিনি কুরআন-হাদীসের শিক্ষার কতটুকু তোয়াক্কা করেন তা তার ঘনিষ্ঠজনেরাই বলতে পারবেন। তবে তিনি হাদীস অনুযায়ী, আমার নামে গীবত করে তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেয়েছেন এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কুৎসা রটনা করে মহাপাপ করেছেন।
আর তার সাংবাদিকতার যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা কি? তা যাই থাকুক না কেন, তিনি সাংবাদিক নামের এক ‘কলঙ্ক'। এতগুলো জলজ্যান্ত মিথ্যা কি তিনি নিজেই লিখেছেন, নাকি তাকে দিয়ে লেখানো হয়েছে?
আমি আত্মপ্রচার পছন্দ করি না। কিন্তু সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞ উপদেষ্টার বক্তব্য হিসেবে আমার সম্পর্কে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার হয়। বাধ্য হয়ে আমি পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে উনাকে চ্যালেঞ্জ করি। তিনি সাথে সাথেই ‘কিছু বলিনি' বলে পত্রিকায় বিবৃতি দেন এবং আরো কিছু মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করেন।
আমি সেটাকেও চ্যালেঞ্জ করি। তিনি এখনো তার জবাব দেননি। এ অবস্থায় আমার ব্যাপারে চৌধুরী সাহেবের(!) এরূপ মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য রহস্যজনক বৈকি!
চৌধুরী সাহেব(!), আপনার প্রশ্নের জবাবের আগে, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই :
প্রথমত, আমার সেনাবাহিনীর প্রায় ৩০ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরে ও বাইরে কেউ কোনদিন প্রশ্ন না করলেও এখন ‘বিভিন্ন মহলে কিছু প্রশ্ন উঠেছে' বলে আপনি কোন্ কোন্ মহল বোঝাচ্ছেন তা সুস্পষ্ট করে দেশবাসীর অবগতির জন্য প্রকাশ করুন।
দ্বিতীয়ত, আপনি আমার সম্পর্কে যা যা বলেছেন, তার দু'একটা সত্য এবং বাকি সব মিথ্যা হলেও এর মধ্যে এমন অনেক তথ্য আছে যা গোপনীয় এবং আপনার জানার কোন সুযোগ নেই। আপনি ঐ গোপনীয় তথ্য কিভাবে পেলেন? চুরি করে? গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে? নাকি কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এসব গোপনীয় তথ্য আপনাকে দিয়েছে? যদি আপনি চুরি বা গুপ্তচরবৃত্তি করে এসব তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন, তাহলে মাননীয় সেনাপ্রধানকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, আমার প্রাণপ্রিয় সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা রক্ষাকল্পে আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
আর যদি এক বা একাধিক ব্যক্তি আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য আপনাকে এসব গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকেন, তবে তার বা তাদের সততা, উদ্দেশ্য, প্রাতিষ্ঠানিক আনুগত্য, শৃক্মখলা, দেশপ্রেম সবতো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেই, সেই সাথে চরম গর্হিত অপরাধের কারণে তারাও শাস্তিযোগ্য।
তৃতীয়ত, আপনার লেখনির লাইনে লাইনে বহু বক্তব্যে আপনি আমার প্রাণপ্রিয় সেনাবাহিনীর মান, নিয়ম-নীতি, কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ইত্যাদির ব্যাপারে কটাক্ষপূর্ণ প্রশ্ন তুলে জাতির সামনে দেশের সম্পদ এ প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত ও পেশাগত দক্ষতায় নৈপুণ্য প্রদর্শন করা এ সেনাবাহিনীকে আপনি কি ‘মগের মুল্লুক' মনে করেন নাকি? আপনার এত বড় স্পর্ধা কোত্থেকে হলো? আপনার কোন্ খুঁটির জোরে আপনি দেশের এ মহান প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে এত উপহাস বা তাচ্ছিল্য করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন? এটা কি কোনো নীল-নক্শার অংশ নাকি? সেনাবাহিনীর এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তকে বিগত তিরিশ বছরে কাউকে এত কটাক্ষপূর্ণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেখিনি। আপনার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত। এর জন্য আপনার বিচার হওয়া উচিত।
আপনি সেনাবাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে নিজেকে দেশের শত্রু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। আমি আপনাকে আজ থেকে ‘দেশ শত্রু' উপাধি দিলাম।
এবার আপনার প্রশ্নের জবাব :
আপনার প্রতিবেদন সত্য হলে প্রমাণিত হয় যে, ‘আযমী' এত ক্ষমতাধর যে, মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ‘চোখ ফাঁকি দিয়ে' সে সেনাবাহিনীতে ঢুকে, প্রেসিডেন্ট এরশাদকে ‘টেক্কা দিয়ে' তাঁর হাত থেকেই সে ‘সোর্ড অব অনার' ছিনিয়ে নেয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ‘বোকা বানিয়ে' সে ডিগ্রি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় কলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে (সে-ই পরীক্ষায় একমাত্র প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত) একাডেমির দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার স্বর্ণপদক বাগিয়ে নেয় এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ করে' সে রণকৌশলে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য একাডেমির তৃতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ট্যাকটিক্স প্ল্যাক অপহরণ করে। সে এত ধুরন্ধর যে, মাত্র একুশ/বাইশ বছর বয়সে সে অবলীলাক্রমে এতগুলো জ্যেষ্ঠ, বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও ক্ষমতাশালী কর্তৃপক্ষের নাকের ডগার উপর দিয়ে এতকিছু করে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জন করে একাডেমি থেকে বেরিয়ে এল, আর সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল, তালি দিল, বাহবা দিল! পরদিন (২৭ ডিসেম্বর ১৯৮১) বেশিরভাগ পত্রিকাতে তা আবার ছবিসহ প্রচারিতও হলো! আসলে আমার কাছে যে আলাউদ্দিনের চেরাগ আছে তা বোধ হয় আপনার জানা নেই- সে'ই তো সব করল! আমিতো শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম!
আপনার লিখনে মনে হয়, বাংলাদেশ ও এর সেনাবাহিনী আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমি যখন ইচ্ছা, যা ইচ্ছা করলাম, আইন-কানুনের তোয়াক্কা করলাম না, কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেপরোয়াভাবে প্রায় তিরিশ বছর সেনাবাহিনীতে পার করলাম- আর সক্কলে আমার, আর আমার (আপনার ভাষায় পাকিস্তানি) বাবার ভয়ে জবুথবু হয়ে 'জী হুজুর, জী হুজুর' করলেন, কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ধৃষ্টতা(!) দেখালেন না।
চৌধুরী সাহেব(!) হেমায়েতপুরের ‘ঐ' হাসপাতালে যান, ওটাই আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান। সুস্থ মানুষের জগতে আপনি অচল!
আপনার বক্তব্যে আমার জন্মতারিখ, সাল, স্থান, সিলেট থেকে এসএসসি পাস, বিলেত গমন, এইচএসসি'তে ফলাফল খারাপ, সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া, আমার বাবা সিলেটে ও চট্টগ্রামে আমার বাসায় বেড়াতে যাওয়া- এসব তথ্যই সঠিক। তবে বাকি সব তথ্য মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রাসঙ্গিক বহু তথ্যও আপনি গোপন রেখেছেন। মিথ্যাটাও আপনি যোগ্যতার সাথে বলতে পারেন না!
আমি আপনার কথিত ‘বিভিন্ন মহল' (দেশী না বিদেশী?) এবং পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি ১৯৭২ সালের শেষ পর্যন্ত ঢাকা গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ছাত্র ছিলাম।
আপন চাচা সিলেট মেডিকেলের প্রিন্সিপাল থাকায় পারিবারিক সমস্যার কারণে চাচার কাছে চলে যাই। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে (১৯৭৫-এ নয়) প্রথম বিভাগে লেটারসহ ফার্স্ট গ্রেডে স্কলারশিপ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করি। এরপর ঢাকা নটরডেম কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হই। ১৯৭৫-এর শেষদিকে আমি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যাই। সেখানে বাবার সাথে থাকিনি, ভিন্ন শহরে ভাইদের সাথে বসবাস করি।
১৯৭৬ সালে ‘ও' লেভেল পাস করি। ১৯৭৭-৭৮ সালে ‘এ' লেভেল করি। ১৯৭৮'র শেষে বাবা দেশে ফেরার পর আমিও দেশে আসি। ১৯৭৯ সালে কোনোরূপ প্রস্তুতি ছাড়াই এইচএসসি পরীক্ষা দেই। প্রকাশিত ফলাফলে দ্বিতীয় বিভাগের নম্বর এবং এক বিষয়ের খারাপ থাকায় বোর্ডে চ্যালেঞ্জ করি; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে সুযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদান করি।
আচ্ছা চৌধুরী সাহেব(!), আপনার স্বপ্ন দেখার অভ্যাস নেই তো? আপনার প্রতিবেদনে লেখা, ‘নিজস্ব ঠিকানা না থাকায় সিলেটস্থ কোনো দূরসম্পর্কীয় চাচার ঠিকানা দিয়ে ভর্তি' এবং ‘সবার জন্য নির্ধারিত তারিখের এক মাস পর আমার একাডেমিতে যোগদান'- এসব বোধ হয় আপনার অসুস্থ মস্তিষ্কের কল্পনা, না হয় স্বপ্ন। এর সাথে সত্যের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। আমার বাবার ঢাকায় জায়গা/বাড়ি আছে এবং আমি সে ঠিকানা দিয়েই সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছি। এখনো আমার ঠিকানা ওটাই।
আর এক মাস পর যোগদান? আমি ৪ দিন পর যোগদান করি এবং তাও সেনাসদরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই। তাই এ ৪ দিন বিলম্বের কারণও কর্তৃপক্ষই, আমি নই। আমাকে প্রথমে ০১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০-তে যোগদান করার জন্য লিখিত নির্দেশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে, সম্ভবত ২৭/২৮ জানুয়ারিতে, অজানা কারণে ঐ যোগদান নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়। পরে, সম্ভবত ০১ ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাকে সেনাসদরে ডেকে নিয়ে ০৪ ফেব্রুয়ারিতে যোগদানের জন্য পুনরায় লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়।
আমি ভুল ঠিকানা দিয়ে নির্ধারিত তারিখের এক মাস পর সেনাবাহিনীতে যোগ দিলাম আর কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে শৃক্মখলাভঙ্গের অভিযোগ এনে বিচার না করে বরং জামাই আদর করে ‘সর্ববিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্যাডেট' বলে ভূষিত করে ‘সোর্ড অব অনার' দিল, ডিগ্রি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১ম স্থান ধরিয়ে ‘স্বর্ণপদক' দিল এবং রণকৌশলে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘ট্যাকটিক্স প্ল্যাক' দিয়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফলাফল দিয়ে সম্মানিত করল! আপনি মানসিক ডাক্তারের চিকিৎসা নিন। আর হ্যাঁ, আপনি আরও লিখেছেন, ‘আমি যখন সেনাবাহিনীতে যোগদান করি, তখন আমার বাবা পাকিস্তানি পাসপোর্ট বহন করেন', যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আমার স্টাফ কোর্সের (ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কোর্স নয়) এক পর্যায়ে আমি গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হই। আমার বেশ কিছুদিন ক্লাস মিস হয়। সম্ভবত, শতকরা ১০/১১ ভাগ।
দুর্ঘটনা না হলে আমার প্রথম স্থান অধিকার করারই আশা ছিল। আমি প্রথম হইনি এটা জানি। কেউ বলে দ্বিতীয়, কেউ বলে তৃতীয়, আবার কেউ বলে চতুর্থ; আপনি বলছেন পঞ্চম! যে অবস্থানই হোক, এ ফলাফল গোপনীয়। আমি নিজে লে. কর্নেল ও কর্নেল পদবীতে স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষক অবস্থায়ও এগুলো জানতে পারিনি। আপনি কি জ্বীন পোষেন নাকি যে, তারা চুপি চুপি লকার থেকে এগুলো দেখে এসে আপনাকে বলেছে! তো আপনার এ প্রশ্নটা আমাকে না করে নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গকে করেলেই ভালো হয় :
১. মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল ফারুক খান (অব.); তিনি তখন স্টাফ কলেজের ‘কর্নেল জিএস' হিসেবে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সবকিছু তদারকি করতেন।
২. মেজর জেনারেল তারেক (অব.); মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা এবং আমার তৎকালীন প্রশিক্ষক।
৩. লে. জেনারেল মাহবুব (অব.); সাবেক সেনাপ্রধান এবং তৎকালীন স্টাফ কলেজ প্রধান (কমান্ড্যান্ট)।
আর হ্যাঁ, আমার ‘সোর্ড', ‘গোল্ড মেডাল' আর ‘ট্যাকটিক্স প্ল্যাক' কি ‘ঘুষ দিয়ে' না অন্যভাবে ‘আদায়' করেছিলাম, তা জানতে জিজ্ঞাসা করুন :
১. মেজর জেনারেল সালাম (অব.); বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য, যিনি তখন একাডেমি প্রধান ছিলেন।
২. বাংলাদেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি, মরহুম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের ছেলে এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মাননীয় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই, ব্রিগেডিয়ার জে. সাফায়াতুল ইসলাম (অব.)।
৩. জেনারেল মঈন (অব.); সাবেক সেনাপ্রধান।
২ ও ৩নং ব্যক্তি তখন একাডেমির প্রশিক্ষক ছিলেন। ৬ জনের কাছে কী উত্তর পেলেন সৎ সাহস থাকলে তা দেশবাসীকে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
হ্যাঁ, আমি সাঁতারে দুর্বল। তবে আপনাকে যিনি এ তথ্য ‘খাইয়েছেন' তিনি এটা বলেননি যে, আমাদের কমিশনিংয়ের সময় সাঁতারে পাস করা বাধ্যতামূলক ছিল না। করুণা হচ্ছে আপনার জন্য- এত মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে সেই তথ্যের জালে আপনি নিজেই ধরা পড়ছেন।
আর কর্নেল পর্যন্ত কিভাবে পদোন্নতি পেলাম তা আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? যাঁরা আমাকে প্রমোশন দিয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন। সকল সাবেক সেনাপ্রধান-সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ, লে. জেনারেল আতিক (অব.), লে. জেনারেল নূরুদ্দীন (অব.), লে. জেনারেল নাসিম (অব.), লে. জেনারেল মাহবুব (অব.), লে. জেনারেল হাসান মশহুদ (অব.) এবং জেনারেল মঈন (অব.)। মরহুম লে. জেনারেল মুস্তাফিজ ও লে. জেনারেল হারুন (অব.) এই দু'জনের নাম উল্লেখ করলাম না। কারণ, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ১৯৯৬-২০০১ ক্ষমতায় থাকাকালীন উনারা সেনাপ্রধান ছিলেন এবং সে সময়ে আমার মেজর থেকে লে. কর্নেল পদোন্নতি অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল।
মালয়েশিয়াতে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় আমার কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ঐ দেশে জামায়াতে ইসলামী নামে কোনো সংগঠন নেই। তাই ঐ সংগঠনের কারো সাথে সখ্যতার তথ্য হাস্যকর। আমার বাবা ঐ সংগঠনের সাবেক আমীর হলেও আমি কোনো দিন জামায়াত বা শিবির করিনি। আমার শত্রুও (যদি থাকে) আমার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথা বলতে বা প্রমাণ করতে পারবে না। ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত সংবর্ধনায় আমি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম।
ঐ অনুষ্ঠানে ঐ দেশে অবস্থিত অনেক বাংলাদেশী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে পরিচয় হয়। সে বছর রমযান মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী শিক্ষক-ছাত্ররা এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে আমাকে নিমন্ত্রণ করা হলে আমি যাই। মাননীয় হাই কমিশনার সাহেবও ঐ পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন। ইফতার মাহফিল কি করে রাজনৈতিক হয়? আসলে চোখে রঙ্গিন চশমা পরে থাকলে তো সব রঙ্গিন দেখাবেই।
আর যদি শৃক্মখলা ভঙ্গ করেই থাকি, তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধা দিল কে? কী ধারণা আপনার? জাদুটোনা করে কর্তৃপক্ষকে আমি বিরত রেখেছিলাম?
আমার বাবা আমার বাসায় মাত্র দু'বার বেড়াতে যাবার কথা উল্লেখ করে ক্ষ্যান্ত হলেন কেন? জেনে রাখুন, তিনি আমার বাসায় মোট ৮ বার গিয়েছেন। প্রথমবার, আমি ১৯৮৫-৮৭ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এমপি মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভুঁইয়া (অব.) ব্রিগেডিয়ার থাকা অবস্থায় বান্দরবানে উনার স্টাফ অফিসার ছিলাম। তখনই আমি বিয়ে করি এবং পরে ১৯৮৭ সালে আমার বাবা বান্দরবানে আমার বাসায় বেড়াতে যান। এরপর ১৯৯০ সালে সিলেটে। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী, আমি কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে আমার বাবাকে আমার সেনানিবাসের বাসায় নিয়ে গেলাম আর কর্তৃপক্ষ আমাকে ‘আদর' করল? আমার তৎকালীন বস্ বর্তমানে মেজর জেনারেল রেযাক (অব.) এবং তার বস্ ব্রিগেডিয়ার জে. শাহেদুল আনাম খাঁন (অব.) উভয়ের সম্মতিতেই আমার বাবা আমার বাসায় বেড়াতে যান।
সেখানে তাঁদের দু'জনের সাথেই বাবার দেখাও হয়। আর ঐ সময় আমার বাসায় কোনো দলীয় লোক আসেনি, বৈঠকের তো প্রশ্নই ওঠে না। তৃতীয়বার, ১৯৯৮ সালে আমার বাবা চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বেড়াতে যান। সেবারও আমি আমার বস্কে জানাই। উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালেই আমার বাবা কোর্টের সর্বসম্মত রায়ে তাঁর নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন।
বাবার কি ছেলের বাসায় যেতে অনুমতি লাগে নাকি? কোন্ আইনে আছে? তবুও আমি বস্-এর অনুমতি নিয়েই বাবাকে আমার বাসায় নেই। কিন্তু তখন আমার সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তার বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবেন। আর তার কোনো দেহরক্ষীই নেই, তাই বাসায় রাত যাপনের কথা হাস্যকর। তবে পথে মাইক্রোবাসে কিছু দলীয় লোক ছিল। তারা দুপুরে আববাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই চলে যায়।
আপনি বলেছেন, আববার সঙ্গীদের সাথে নাকি অস্ত্র ছিল। তাই নাকি? কী কী অস্ত্র ছিল এবং কয়টি ছিল? আপনি দেখেছেন? কে দেখেছে? বিস্তারিত জানাবেন কি? এরপর, আমার বাবা ১৯৯৯/২০০০-এ রংপুরে, ২০০১/২০০২-এ মোমেনশাহীতে, ২০০৪-এ মিরপুরে, ২০০৫-এ ঘাটাইলে এবং সবশেষে ২০০৮-এ আমার শেষ কর্মস্থল দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত বীরউত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাসে বেড়াতে যান। আমি ক্রমাগতভাবে আইনের পরিপন্থী কাজ করে গেলাম আর সেনা কর্তৃপক্ষ ‘চেয়ে চেয়ে দেখল'!?
আর হ্যাঁ, আমার সম্পর্কে এত প্রশ্ন তুললেন, বাকি আর ক'টা রেখে দিলেন কেন? প্রশ্ন করলেন না কেন যে, বাংলাদেশে আরো চারটা প্রশিক্ষণ কোর্সে আমার মতো ‘অতি সাধারণ ছাত্র'কে কর্তৃপক্ষ কিসের মোহে/লোভে/লাভে ২টাতে প্রথম এবং ২টাতে তৃতীয় অবস্থান দিলেন? আমার চেহারা দেখে? নাকি আমার বাবার ভয়ে? আপনি কি মনে করেন যে, আপনার এবং আপনার মতো অন্য যারা এ দেশটাকে পৈতৃক সম্পত্তি ভাবেন, তাদের মতো আমিও সেনাবাহিনীকে পৈতৃক সম্পত্তি ভেবে তিরিশ বছর স্বেচ্ছাচারিতা করেছি এবং সকল কর্তৃপক্ষই আমার দাপটের সামনে নিরূপায় আত্মসমর্পণ করেছেন?
শেষ করার আগে আমার বাবার প্রসঙ্গে আপনার মিথ্যা ভাষ্যের প্রতিবাদ করাকেও কর্তব্য মনে করছি। তিনি ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সাধারণ ক্ষমা গ্রহণ না করায় নাগরিকত্ব বাতিল হলে বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডন চলে যান' বলে যে ভাষ্য দিয়েছেন তা নির্জলা মিথ্যা। তিনি ১৯৭১ সালের ২২ নবেম্বর এক সফরে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে যান।
০৩ ডিসেম্বর তিনি বিমানে দেশে ফেরার পথে যুদ্ধ শুরু হলে বিমান ঢাকা বিমানবন্দরে নামতে না পারায় শ্রীলঙ্কা চলে যায়। পরবর্তীতে বিমান সৌদিআরব হয়ে পাকিস্তানে যায়। এর পরপরই তিনি পাকিস্তান ত্যাগ করে লন্ডন চলে যান এবং ১৯৭৮ পর্যন্ত সেখানেই থাকেন। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে দেশে এসে তিনি তার পাকিস্তানি পাসপোর্ট সারেন্ডার করে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এ ব্যাপারে বা অন্য কোনো ব্যাপারেই তিনি কখনো কোনো ছল-চাতুরির আশ্রয় নেননি।
সুতরাং, ১৯৭৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁর দেশে স্থায়ীভাবে থাকার কথা সর্বৈব মিথ্যা। হায়রে অযোগ্য মিথ্যুক!
আপনার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, ভালো হয়ে যান। পরশ্রীকাতরতা, প্রতিহিংসা, গীবত, মিথ্যা, সংকীর্ণতা এসব থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ হোন, প্রকৃত মুসলিম হোন। ভালো, নিরপেক্ষ ও সৎ সাংবাদিক হোন। আশা করি এ ধরনের হলুদ সাংবাদিকতা করার ধৃষ্টতা আর দেখাবেন না।
আর তা না পারলে, ক্ষমা চেয়ে তওবা করে সাংবাদিকতা বাদ দিন।
শুধুমাত্র সম্পাদক সাহেবের উদ্দেশ্যে : এ প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার সাথে আমার টেলিফোন কথোপকথন অনুযায়ী দয়া করে ক্ষমা প্রার্থনা করে ওয়াদা রক্ষা করুন। আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এ সংবাদের সত্যতা যাচাই না করে ছাপানো নীতি বিরুদ্ধ কাজ হয়েছে, যা হলুদ সাংবাদিকতার নামান্তর। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না করার ব্যাপারেও অঙ্গীকার করুন।
তথ্যসূত্রঃ সংগ্রাম>উপসম্পাদকীয় ১৩/১০/০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।