আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিথ্যুক ডিটেক্টর ব্লগেও লাগবে এইবেলা

ফেসবুক আইডি:নাই

মিরাগো সান একজন মহাকাশ পর্যটক, সেই সঙ্গে একজন বিজ্ঞানী। তাঁর নিজস্ব একটি স্পেসশিপ আছে। সেটি একই সঙ্গে মহাকাশযান এবং একটি টাইম-কার। দূর গ্যালাক্সির গ্রহ-নক্ষত্র ও সময়, দুটোর মধ্যেই ভ্রমণ করে বেড়ান তিনি। ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছেন পৃথিবীতে।

এর আগেও অবশ্য এসেছিলেন। এবারের পৃথিবী ভ্রমণে বেছে নিয়েছেন এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশকে। ২০০৮ সাল। ল্যান্ড করার আগে স্পেসশিপ অদৃশ্য করে নিলেন, নামালেন একটা ঝোপের পেছনে। কস্টিউম মেশিন তাঁকে সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক তৈরি করে দিল।

একটা ভুসভুসে জিন্স আর গ্রামীণ চেকের ফতুয়া। সবার অলক্ষ্যে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি, কেউ জানতেও পারল না যে মধ্যবয়স্ক এই মানুষটি বহুদূরের একটি গ্রহের ভবিষ্যতের মানুষ। বিজ্ঞানী মিরাগো ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছেন। কথাবার্তা বোঝার ও বলার জন্য তাঁর সঙ্গে আছে ল্যাংগুয়েজোন-কন্ট্রোলার। তাই অন্যদের কথা বুঝতে পারছেন, তিনি যেটা বলবেন সেটাও অন্যরা বুঝতে পারবে।

হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন একটা মাঠে। মাঠভরা মানুষ, সবাই মুগ্ধ হয়ে আজগর হোসেনের বক্তৃতা শুনছে। এবারের সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তিনি। জিতে গেলে কীভাবে তাঁর এলাকায় উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেবেন সেটাই বলছেন। মিরাগো সানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

লোকটা যে মিথ্যা বলছে সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে, এর পরও সবাই হাততালি দিচ্ছে কেন! মিরাগো সানের কিছু একটা করতে ইচ্ছে হলো। ছুটে গিয়ে স্টেজে উঠলেন। কেউ কিছু বলার আগেই মাইকটা নিয়ে বললেন, ‘আমার কাছে একটা যন্ত্র আছে, যেটা দিয়ে তিনি সত্য না মিথ্যা বলছেন সেটা বোঝা যাবে। আমি সেটা ব্যবহার করব, আপনারা সব রাজি আছেন?’ সবাই সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘রাজি, রাজি। ’ আজগর হোসেন আর তাঁর দলের এত মানুষের কথার প্রতিবাদ করার সাহস পেলেন না।

মিরাগো সান আজগর হোসেনের হাতে ট্রান্সমিটারের তার দুটি লাগিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এবার বক্তৃতা দিন। কথা সত্যি হলে স্ক্রিনে সবুজ বাতি দেখাবে, মিথ্যা হলে লাল বাতি। ’ আজগর হোসেনের গলা শুকিয়ে গেল। তিনি কাঁপা গলায় বললেন, ‘আ-আ-আমার নাম আজগর হোসেন।

’ স্ক্রিনে সবুজ বাতি দেখাল। এরপর তিনি বলতে লাগলেন তাঁর দেশের বাড়ি, বাবার নাম, মায়ের নাম, বাসার ঠিকানা ইত্যাদি ইত্যাদি। লোকজন চিৎকার করে বলল, ‘ইলেকশনে জিতলে কী করবেন সেইটা কন। ’ আজগর হোসেনের হঠাৎ ভয় লাগতে থাকে। যদি লাল বাতি দেখায় তখন সবাই ভয়ংকর রকম খেপে যাবে।

আজগর হোসেন বললেন, ‘নির্বাচনের পরে···ইয়ে মানে····ইয়ে এলাকার উন্নয়ন করে যাব। ’ বলেই ভয়ে ভয়ে তাকালেন ট্রান্সমিটারের দিকে। লাল বাতি জ্বলল। মিরাগো সান ট্রান্সমিটারটা উঁচু করে দেখালেন সবাইকে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল চিৎকার।

সবাই একসঙ্গে গালি দিতে লাগল আজগর হোসেনকে। আজগর হোসেন তখন বিড়বিড় করে বললেন, ‘নিজের উন্নতি করব। ’ বলেই আজগর হোসেন বুঝলেন কত বড় ভুল করে ফেলেছেন তিনি। সেটা শুনেও ফেলল সবাই। ট্রান্সমিটারে জ্বলল সবুজ বাতি।

এবার ভয়ংকর রকম খেপে উঠল জনতা। কেউ জুতা ছুড়ে মারল, কেউ ইট। তারপর সবাই ছুটে আসতে থাকে স্টেজের দিকে। আজগর হোসেন হাত থেকে ট্রান্সমিটারের তার খুলে ফেললেন। স্টেজ থেকে কোনোমতে নেমে দিলেন ছুট।

সব লোক তাঁর পেছনে ছুটতে লাগল। মিরাগো সান ভিড়ের মাঝখান দিয়ে বের হয়ে গেলেন। কিছুদূর যেতেই বুঝলেন, কেউ একজন আসছে তাঁর পিছু পিছু। তিনি থামলেন। লোকটি এসে বলল, ‘আমি একজন সাংবাদিক।

আপনার যন্ত্রটা আমাকে দেবেন প্লিজ? সামনে নির্বাচন, এটা থাকলে এ রকম লোকগুলোর হাত থেকে দেশটাকে বাঁচানো যাবে। ’ মিরাগো সান তাঁর ‘মিথ্যুক ডিটেক্টর’ লোকটিকে দিয়ে চলে এলেন। তাঁর মনটা হঠাৎ করে কেমন জানি উৎফুল্ল হয়ে উঠল। ------------------- – তুমি=সুন্দর, তুমি=আকর্ষণীয়, তুমি=বুদ্ধিমতী, তুমি=মায়াবতী, আমি=মিথ্যুক। ------------------- পথচারীঃ এই মিথ্যুক! তুমি তো অন্ধ নও।

তুমি অন্ধ সেজে ভিক্ষা করছ কেন? ভিক্ষুকঃ ঠিকই ধরেছেন স্যার। যে অন্ধ সে আজ ছুটিতে গেছে। তার জায়গায় আমার ডিউটি পড়েছে। আসলে আমি বোবা। ------------------------------------ উৎসর্গঃ ব্লগে মিথ্যা বলে চাপাবাজি করা তৈলবিদ চাটুকারেরা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।