আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাঁটি হাঁটি কাদা-জল…

তোকে দেখিনা, কতো হাজার বছর হয়ে গেলো...

ঈদের দিনটা বৃষ্টিতে ভিজে আর মোটর সাইকেলের ঘাড়ে বসে কাটিয়ে দিয়েছি। শহরে স্থায়ী হওয়ায় সমবয়সী ভাড়াটিয়া বন্ধুদের কাছে পাওয়া সম্ভব হয়নি। সবাই গ্রামের বাড়ীতে ছুট দিয়েছিলো বলে… ০২ ঈদের পরদিন সকালে পরিকল্পনা অনুযায়ি আমি আর ফয়সাল নবীনগরে একত্র হলাম। সেখান থেকে লেগুনায় যাব খরারচর। তারপর খরারচর বাজার থেকে কৃষ্ণনগর, সুমন-মামুন-রাশেদদের গ্রামে।

আমরা রওয়ানা দিলাম। ‘ডাইরেক্ট’ লেগুনার লম্বা পথ শেষে প্রায় দেড় ঘন্টা পর পৌছলাম খরারচর। ওখান থেকে আরো বিশ মিনিটের পথ শেষে প্রথমে মামুনদের বাসায়। সুমন আর রাশেদও মামুনদের বাসায় আসলো। পৌছানোর খবরটা বাসায় দিতে পারলাম না- ফোনে নেটওয়ার্ক নেই।

ফয়সালেরটায় ব্যালেন্স নেই। আর সুমনদের ফোনে চার্জ নেই… একেবারে অজপাড়াগাঁ! প্রথম খাবার মামুনদের বাসায়ই খেলাম- মুরগীর গোস্ত দিয়ে চিতই পিঠা। পিঠার আকৃতিটা ছিলো অনেকটা চকবারের মতো! আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছিলো খুব। পরেরবার সুমনদের বাসায়- গরুর গোস্ত সাথে পোলাও ও সাদাভাত। সন্ধ্যার পর গ্রামের আঁকাবাঁকা অথচ পাকা পথ ধরে অনেকক্ষণ হাঁটলাম পাচজন মিলে।

মূলত- এমন একসাথে সময় কাটানোর জন্যই আমাদের এতোদূরে আসা। ওদের গ্রামের পথটা সন্ধ্যার পরই গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে যায়। কোথাও কোথাও অবশ্য বৈদ্যুতিক বাতী জ্বলে। আমি কখনো অমন আলো আধারির খেলা মেশানো পথে হাঁটিনি। কেমন গা ছমছম করে!! লোকজন পথে থাকেনা বললেই চলে... সন্ধ্যার পরের ওই অন্ধকারে হাঁটার স্মৃতি আমার অনেক দিন মনে থাকবে।

রাতের খাবারটা রাশেদদের বাসায়। কুপি জ্বালিয়ে সেই খাবার খাওয়ার কথাও ভুলার নয়। খাবারের মেন্যু ছিলো- সাদাভাত মুরগী এবং সাথে গরম ছিদপিঠা। ছিদপিঠা চিনেন তো?! ০৩ রাতে ঘুমানোর আগে ফয়সালের ফোনে আমার ফুপুর কল- সে কি বকা খেলাম! অপরাধ? বাসার সাথে ‘ডিসকানেক্ট’ হওয়াটা। কেউ বুঝতেই চাইলো না দোষটা শুধু আমার না।

মূল দোষটা ওয়ারিদের এবং বিদ্যুৎ বিভাগের আর একটু দোষ আমার নিজের। একটু মানে একেবার কিঞ্চিৎ!! রাত কেটে গেলো গল্পে আড্ডায় এবং একটু ঘুমেও। সকালের নাস্তা মামুনদের বাসায় করলাম। ইচ্ছে ছিলো নাস্তা শেষে বাইরে যাবার, বৃষ্টির জন্য হলো না। রুমে অবশ্য অলস বসে রইলাম না- ফয়সাল ওর নিজের লেখা ও সূর করা ইংরেজি গান শুনালো আর আমি সুমন, মামুন ও রাশেদ তা মন দিয়ে শুনলাম এবং আরো যা করেছিলাম তা পরে একদিন ‘সে দিন যা করেছিলাম’ শিরোনামে লেখবো।

আর খালি গলায় গাওয়া ফয়সালের ইংরেজি গান শোনার লিংকও দিব সেদিন। আপনি ফয়সালের গান শুনে মুগ্ধ না হয়ে পারবেনই না! সত্যি! দুপুরে আবারও সুমনদের বাসায় খেলাম। এবার মুরগীর গোস্ত আর সাদাভাত। এই দুপুরের খাবারই ছিলো- খাওয়ার শেষ পর্ব। ০৪ ফিরার সময় অন্য পথে এলাম আমরা।

প্রথমে রিক্সায়- ত্রিশ টাকা ভাড়া- যেটা সুমন দিয়েছিলো! তারপর মোটর সাইকেলে! হ্যাঁ, আসলেই- আপনি যদি কখনো ধামরাইয়ের খরারচরে যান তাহলে ফিরার পথে ইচ্ছা করলেই ভাড়ায় মোটর সাইকেলে উঠতে পারেন। আমরা যতদূর পথ এসেছিলাম- তাতে ভাড়া নিয়েছিলো পঞ্চাশ টাকা। মোটর সাইকেলের পথ শেষ হওয়ার পরই সেই কাদা-জলে হাঁটা!! মনে হলে এখনো ভয় করছে- এই বুঝি পিছলা খেয়ে পাগাড়ে পড়লাম!! সত্যি ভয়ংকর ছিলো ওই বিশ মিনিটের পায়েহাঁটা পথটা! সত্যি, সত্যি তিন সত্যি! আমরা যখন ওই পিচ্ছিল পথ ধরে হাঁটছিলাম তখনই আমাদের পিছন পিছন আসছিলো দু’জন ষোড়শী! তারা আসছিলো বলেই হয়তো আমাদের আছাড় খেতে হয়নি! মানে পায়ে একটা ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি পাওয়ার’ কাজ করছিলো আর কি!! কাদা-জলের পথ শেষে সেলোতে বংশী নদী পার হলাম। তারপর রিক্সায় সাভার বাস ষ্টেশন। তারপর… না, বলবোনা! বললে যদি আপনি আবার আমাদের বাসায় এসে পড়েন!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।