"... সময়টা ১৯৭৯ সাল। আমি তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্তব্যরত। একদিন হঠাৎ করেই বিকালে ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার থেকে ম্যাসেজ এলো, প্রেসিডেন্ট সাহেব (শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান) আমার ক্যাম্পে রাতযাপন করবেন। খবরটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপরও উপরের নির্দেশ মোতাবেক প্রস্তুতির কাজ শুরু করলাম।
সাধারণত প্রতিটি ক্যাম্পেই ভিআইপিদের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। সর্বোচ্চ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পর্যন্ত আমার ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন। এবার পরিদর্শনে আসছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি, যিনি ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান। তাই নতুনভাবে তড়িঘড়ি করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভিআইপি তাঁবু ঠিক করা, বাঁশের খাট তৈরি, চট দিয়ে আরেকটু সুন্দর করে শৌচাগার বানানো, বন মুরগি দিয়ে রাতের খাবার তৈরি করা, সেন্ট্রি পোস্টগুলোর নিরাপত্তা বাড়িয়ে ক্যাম্পের সব সৈনিককে মোতায়েন করা, এ নিয়ে এপাশ-ওপাশ করতে না করতেই অাঁধার ছুঁই ছুঁই। এরই মধ্যে বিমানবাহিনীর বেল ২১২ হেলিকপ্টারের শব্দ শোনা মাত্রই আমার সন্দেহের অবসান ঘটল।
ভাবতে পারছিলাম না, আমার নিয়ন্ত্রণাধীন এ রকম দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কি কারণে রাষ্ট্রপতি রাতযাপন করবেন! ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠছে, আবার একটু ভয় ভয়ও করছে। প্রেসিডেন্ট সাহেব রাতের খাবার খেয়ে, ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে লণ্ঠনের মিটিমিটি আলোতে বই পড়ছিলেন। আমি নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলাম। রাত যখন গভীর হতে থাকল, হঠাৎ করেই দূর থেকে বাঁশির শব্দ শুনতে পেলাম। অজানা শঙ্কায় আমার বুকটা কেঁপে উঠল।
তখন বিচ্ছিন্নতাবাদী, অনুপ্রবেশকারীদের সন্ত্রাসী হামলায় পার্বত্য এলাকা ছিল খুবই উত্তপ্ত। সম্ভবত এসব স্বচক্ষে পরিদর্শন করতেই প্রেসিডেন্ট জিয়া এখানে এসেছিলেন। আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও সেই বাঁশির শব্দ শুনতে পেলাম। ত্বড়িত গতিতে রাইফেলের বাঁটে আঘাত হেনে রাতের সাবধানতা সংকেত দিয়ে সৈনিকদের সতর্ক করা হলো। প্রেসিডেন্ট সাহেব সংকেত শুনেই ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈধঢ়ঃধরহ, ধহুঃযরহম ৎিড়হম? আমি উত্তরে বাঁশির হুঁইসেলের কথাটি বললাম।
তিনি আমাকে বললেন, কববঢ় ুড়ঁৎ নড়ুবং ধষবৎঃ ধহফ শববঢ় সব রসভড়ৎস! সন্দেহভাজন এলাকায় সেনা মোতায়েন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সার্বিক অবস্থা তদারকি করার জন্য আমি এপাশ থেকে ওপাশ ছুটে বেড়াচ্ছিলাম। আবারও শব্দটি ভেসে এলো। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কেন এই ভৌতিক শব্দটি হচ্ছে। মধ্যরাতে পাহাড়ের চূড়ায় বসন্তের হিমেল হাওয়ায় আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অজানা বাঁশির শব্দের ভয়ে ওই সময় আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো শরীর ঘামে ভিজে জুব জুব হয়ে গিয়েছিল।
প্রেসিডেন্টের তাঁবুর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে ডাকলেন। গিয়ে সালাম দিতেই, আমার অবস্থা বুঝতে পেরে প্রেসিডেন্ট এবার আমাকে বললেন, একটা দা নিয়ে আস। আমি তাকে একটা দা এনে দিলাম। তিনি ডান হাতে দা আর বাম হাতে লণ্ঠন নিয়ে তার জন্য বাঁশ ও চট দিয়ে যে টয়লেট বানানো হয়েছে সেখানে গেলেন। একটি বাঁশের উপরের অংশ প্রায় অর্ধ ফুটের ওপর লম্বা ফাঁকা ছিল।
প্রেসিডেন্ট সেই বাঁশের উপরের ফাঁকা অংশটুকু দা দিয়ে কেটে ফেললেন। ভৌতিক শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমি বুঝতে পারলাম, বসন্তের দখিনা দমকা হাওয়া কিছুক্ষণ পরপর এসে বাঁশের উপরে ওই ফাঁকা গোলাকার ছিদ্রের ভেতর ঢুকে বাঁশির শব্দ করছিল, যা আমি বুঝতে পারিনি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার ঘাম শুকিয়ে গেল।
... "
এবার আমি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সক্রিয় অবস্থান বিশ্ব সমাজের কাছে সমাদৃত। ১৯৪৪ সালে বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ইস্ট রিভারের পাশে অবস্থিত জাতিসংঘে ১৯৮০ সালে সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি উত্থাপন করেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধ ও ইসলামী বিশ্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন অন্যতম।
এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। ওই সময় তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তিনি একের পর এক সমস্যা শুধু শুনেই যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি ঊধর্্বতন সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সমাধানের পন্থা অনুধাবন করার চেষ্টা করছিলেন। কেন যেন বার বার সমস্যার পাশ কেটে সমাধানের চেয়ে আরও গভীর সমস্যা উদ্ভব হওয়ার অবস্থান সৃষ্টি হচ্ছিল।
মিটিংটি হচ্ছিল পড়ন্ত বিকালে ছোট্ট একটি পরিচ্ছন্ন জলাশয়ের পাশে। প্রেসিডেন্ট সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে একটি পাথর কুড়িয়ে দিতে বললেন, তার এডিসিকে। পিনপতন নীরবতার মধ্যে কেউ বুঝতে পারেনি প্রেসিডেন্ট সাহেব কি জন্য পাথর হাতে নিয়ে জলাশয়ের দিকে যাচ্ছেন? ছোট্ট জলাশয়ের পানিগুলো কেন যেন শান্ত ঢেউহীনভাবে নিঃস্তব্দ ছিল। পাথর ছুড়ে মারলেন জলাশয়ের মাঝখানে। সবার উৎসুক দৃষ্টি আকর্ষণ করে, প্রেসিডেন্ট সাহেব বললেন, দেখুন ঢেউগুলো ক্রমান্বয়ে বৃত্তাকারে বড় হয়ে জলাশয়ের পাড়ের দিকে যাচ্ছে।
যেমনিভাবে আজকের এই আলোচনায় বুঝতে পারলাম সমস্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। তারপর তিনি সভাস্থলের বোর্ডে একটি চক নিয়ে পাশাপাশি দুটি বৃত্ত অাঁকলেন। প্রথম বৃত্তটির কেন্দ্র থেকে কয়েকটি তীর চিহ্ন পরিধির দিকে খচিত করলেন, তারপর আবার দ্বিতীয় বৃত্তটিতে একইভাবে অঙ্কন করলেন। তবে ভিন্নতা ছিল দ্বিতীয় বৃত্তের তীর চিহ্ন পরিধি থেকে কেন্দ্রের দিকে চিহ্নিত ছিল। তিনি তীর চিহ্নগুলোকে এস (সলিউশন) এবং কেন্দ্রকে পি (প্রবলেম) দিয়ে আখ্যায়িত করে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, ওই ছোট্ট পুকুরের ঢিলটি যদি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়, তবে সমস্যার ঢেউ গুনে লাভ নেই।
আর সমস্যাকে কেন্দ্রে রেখে পরিধির দিকে ধাবমান না হয়ে উল্টো কেন্দ্রের দিকে তাকান, অর্থাৎ ঘঁপষবঁং ড়ভ ঃযব ঢ়ৎড়নষবস এর দিকে তাকান। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বললেন, 'বিন্দু থেকে বৃত্তে নয়, বৃত্ত থেকে বিন্দুতে। ' মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম আমার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বন্ধুর গল্পগুলো।
১৭ জানুয়ারি, শনিবার, ১৯৮১ সাল, আমার জীবনের একটি অভাবনীয় দিন। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অপেক্ষমাণ বিশাল একটি জাহাজ।
জাহাজে ওঠার লাইনের তিন-চতুর্থাংশ পেছনে দাঁড়িয়ে আছি। একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে জাহাজে উঠতেই নাবিকরা নির্দেশ দিতে থাকল কোন পথে আমাদের জন্য নির্ধারিত কামরাগুলো। দাওয়াত পেয়েছিলাম মেধাবীদের ছাত্র তালিকায়, তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেই সঙ্গে ছাত্রদল থেকে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের প্রথমবারের মতো নির্বাচিত ভিপি। কামরাটি খুঁজে বের করে আমার কাঁধের ব্যাগটি রেখেই প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দেখার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির কাছে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলাম।
কিছুক্ষণ পর আর্মির বিউগলের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখে কালো সানগ্লাস, সুদর্শন-স্মার্ট প্রেসিডেন্ট জেটিতে গার্ড অব অনার নিয়ে অন্য একটি পথে লাল গালিচার মধ্য দিয়ে জাহাজে উঠে গেলেন।
রাজকীয় এক হুঁইসেলের মধ্য দিয়ে জাহাজটি আস্তে আস্তে যাত্রা শুরু করল। তখন প্রায় বেলা ২টা। ধীর গতিতে খরস্রোতা সমুদ্র মোহনার কর্ণফুলী নদী দিয়ে হিজবুল বাহার এগিয়ে চলছে।
একটু দূরেই দেখতে পেলাম কয়েকটি গানবোট। দুটি জাহাজের পেছনে এবং দুটি জাহাজের সামনে, সমান্তরাল গতিতে এগিয়ে চলছে। কিছু দূর যাওয়ার পর কর্ণফুলীর ডান তীরে সুসজ্জিত মেরিন একাডেমীর ক্যাডেটরা, নৌবাহিনীর সৈনিকরা উচ্চস্বরে বিউগল বাজিয়ে লাল-সবুজের পতাকাবাহী জাহাজে স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াকে সামরিক কায়দায় সম্মান জানায়। উজ্জ্বল সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি শান্ত-শীতল নীল জলরাশির ওপর এক অপরূপ জলকেলি করছিল। দেখতে না দেখতেই বিকাল গড়িয়ে সূর্যাস্তের সময় হলো।
কি সুন্দর এই পৃথিবী, বিশাল জলরাশির মধ্যে লাল জ্বলন্ত সূর্যটি অগি্নকুণ্ডের মতো আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছিল। রক্তিম মায়াবি আভা এসে ঠিকরে পড়ছিল জাহাজের ডেকে। আমি একা নই, এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিমনা সব শ্রেণী থেকে দুই হাজারের উপর অতিথি নিয়ে তিনি এ শিক্ষা সফরে বের হন। মূলত হিজবুল বাহারে হাজিরা সৌদি আরব যেতেন পবিত্র হজব্রত পালন করার জন্য। এ ছাড়া মাঝে-মধ্যে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা আসা-যাওয়া করত।
এরপরও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বিরাট অঙ্কের লোকসান গুনতে হতো।
সেই কখন যে খেয়েছি তা ভুলেই গিয়েছিলাম। এরই মধ্যে ডাইনিং রুমে সারিবদ্ধভাবে স্ন্যাকস রাখা হয়েছিল, সেদিকে কারও নজর ছিল না। সন্ধ্যা ৭টায় জাহাজের তৃতীয় তলার পেছনের দিকে সুইমিং পুলের পাশে সবাই জমায়েত হন। আমরা সবাই বসে আছি।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। হঠাৎ দেখতে পেলাম নিরাপত্তা রক্ষীদের কর্ডন ভেদ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এগিয়ে আসছেন। পাশ্বর্ে উপবিষ্ট বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাষ্ট্রপতির সামনে মাইকটি এগিয়ে দিলেন। রাষ্ট্রপতি তার স্বভাব সুলভ সৌজন্য প্রকাশ করে তার চশমা ঢাকা চোখ দুটি দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অবলোকন করলেন।
বললেন, 'শোন ছেলেমেয়েরা, আমি তোমাদের বাংলাদেশের ডাঙ্গা থেকে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের মধ্যখানে নিয়ে এসেছি। ' একটু আবেগময় কণ্ঠে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্য শুরু করলেন, মুহূর্তের মধ্যে সব ফিসফাস শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হলো না সাগরের তরঙ্গের উচ্ছ্বাস, জাহাজের পেছন দিক হওয়াতে ইঞ্জিনের ধাতব গিগি শব্দ ভেসে আসছে। তিনি বলতে শুরু করলেন, 'সমুদ্র হলো অন্তহীন পানির বিস্তার ও উদ্দাম বাতাসের লীলা ক্ষেত্র। এখানে এলে মানুষের হৃদয় একই সাথে উদার ও উদ্যমী সাহসী হয়ে ওঠে।
তোমরা আমার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সংকীর্ণতা ও কূপমূণ্ডকতাকে পরিহার করে সমুদ্রের মতো উদার ও ঝড়ো হাওয়ার মতো সাহসী হতে হবে। '
তিনি বললেন, 'আমি তোমাদের কাছে এখন যে কথা বলব তা আমাদের জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক তাগিদ। এই তাগিদকে স্মরণীয় করার জন্য আমি একটা পরিবেশ খুঁজছিলাম। হঠাৎ বঙ্গোপসাগরের কথা মনে পড়ল। এই উপসাগরেই রয়েছে ১০ কোটি মানুষের উদরপূর্তির জন্য প্রয়োজনেরও অতিরিক্ত আহার্য ও মূল ভূমি ভেঙে আসা বিপুল পলিমাটির বিশাল দ্বীপদেশ_ যা আগামী দু-তিন প্রজন্মের মধ্যেই ভেসে উঠবে।
যা বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন বিন্দু সংযোজনের তাগিদ দেবে। মনে রেখ, আমাদের বর্তমান দরিদ্রতা, ক্ষুধা ও অসহায়তা আমাদের উদ্যমহীনতারই আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তিমাত্র। এর জন্য অন্যের চেয়ে আমরাই দায়ী বেশি। ' তিনি আরও বললেন, 'আমাদের ভিটা ভাঙা পলি যেখানেই জমুক, তা তালপট্টি কিংবা নিঝুম দ্বীপ এ মাটি আমাদের। ১০ কোটি মানুষ সাহসী হলে আমাদের মাটি ও সমুদ্র-তরঙ্গে কোনো ষড়যন্ত্রকারী নিশান উড়িয়ে পাড়ি জমাতে জাহাজ ভাসাবে না।
মনে রেখো, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা ১০ কোটি মানুষ যথেষ্ট সাহসী নই বলে শত্রুরা, পররাজ্য লোলুপ রাক্ষসেরা আমাদের পূর্বপুরুষদের এই স্বাধীন জলাধিকারে আনাগোনা শুরু করেছে। তোমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়ে, দেশের দরিদ্র পিতামাতার সর্বশেষ আশার প্রাণকণা, যাদের ওপর ভরসা করে আছে সারা দেশ, সারা জাতি। তোমরাই হলে বাংলাদেশের হাজার বছরের পরাধীনতার কলঙ্ক মোচনকারী প্রত্যাশার আনন্দ-নিঃশ্বাস। ইতিহাসের ধারায় দৃষ্টিপাত করলেও তোমরা জানবে এই সমুদ্র ছিল আমাদের আদিমতম পুর্ব-পুরুষদের নৌশক্তির স্বাধীন বিচরণভূমি।
এমন কি বৌদ্ধযুগে পাল রাজাদের অদম্য রণপোতগুলো এই জলাধিকারে কাউকেই অনধিকার প্রবেশ করতে দেননি। সন্দেহ নেই আমাদের সেসব পূর্বপুরুষ ছিলেন যথার্থই শৌর্যবীর্যের অধিকারী। তখন আমাদের সেসব পূর্বপুরুষ ছিলেন নগণ্য। কিন্তু আমরা সারাটা উপমহাদেশ, সমুদ্রমেখলা দ্বীপগুলো আর অসমুদ্র হিমাচল শাসন করেছি। বলো, করিনি কি?'
তিনি আরও বললেন, 'আমাদের রয়েছে যোজন যোজন উর্বরা জমি।
একটু আয়েসের ফলেই ফসলে ঘর ভরে যেতে পারে। অর্থের অভাবে শুধু কোনো বৈজ্ঞানিক চাষের উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। কে আমাদের বিনা স্বার্থে এই উদ্যমে সহায়তা করবে? কেউ করবে না। অথচ যে সম্পদের বিনিময়ে অর্থের প্রাচুর্য ঘটে, তা আমাদের দেশের পেটের ভেতরেই জমা আছে। আমরা তুলতে পারছি না।
' তিনি তখন বলতে শুরু করলেন, 'আমাদের রয়েছে সাত রাজার ধন তেল, গ্যাস, কয়লা, চুনা পাথর আরও অনেক কিছু। আমরা তো আমাদের গ্যাস মাত্র খানিকটা তুলেছি, তিতাস, বাখরাবাদের মতো অসংখ্য গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র দরকার। ' তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে আরও বললেন, ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে তেল উত্তোলন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশ্বর্ে দণ্ডয়মান এডিসিকে তেলের শিশিটি দিতে বললেন। আমরা সবাই বিস্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে শান্তকণ্ঠে বললেন, 'আমার জীবনকালে সম্ভবপর না হলে, তোমরা আমার ছেলেমেয়েরা, এই তেল তুলবে। ' তিনি আরও বললেন, 'শোন ছেলেমেয়েরা, আমি তোমাদের সানি্নধ্য পেয়ে খুবই খুশি। তিনটি দিন ও তিনটি রাত আমরা এই দরিয়ায় নোনা বাতাসে দম ফেলতে এসেছি। এখন এ জাহাজটিই হলো বাংলাদেশ। আর আমি হলাম তোমাদের ক্যাপ্টেন।
'
সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো রাষ্ট্রপতির কথা শুনছিলাম। সবার চোখে মনে হচ্ছিল কি যেন বিশাল প্রাপ্তির তৃপ্ত চাহনি। আমরা শুধু জাহাজের ওপর আছড়েপড়া সমুদ্রের ঢেউগুলোর শব্দই শুনতে পাচ্ছিলাম। এরই মধ্যে শিল্পীরা রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান, 'কারার ওই লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট...' গানটি গাইতে শুরু করল। প্রথম রাতে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে জাহাজের বাংকারের বিছানায় নিশ্চিন্ত মনে গভীর সুখ নিদ্রায় রাত পার করলাম।
সকাল সাড়ে সাতটায় নাস্তা সেরে জাহাজের ডেকের ওপর গিয়ে দেখি পাশ্বর্ে আরেকটি ছোট জাহাজ আটকানো আছে আমাদের এই বিশাল জাহাজটির সঙ্গে। সেই জাহাজটিতে সামুদ্রিক জীব-বিজ্ঞানীরা এসেছিলেন আমাদের এই সমুদ্রসীমার ভেতরে অমূল্য জীববৈচিত্র্য সম্পন্ন সম্পদ রয়েছে তার প্রতিপাদন দেখাতে। ঠিক তেমনিভাবে আরেকটি জাহাজে ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রপতিকে তাদের আহরিত খনিজ সম্পদের প্রতিপাদন দেখালেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে সীমানা, খনিজসম্পদ, মৎস্যসম্পদ ও সমুদ্র গহ্বরে অবারিত জলজ ও ঔষধি উদ্ভিদ সম্পদ একের পর এক দেখালেন।
দ্বিতীয় দিন দুপুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, বিমানবাহিনীর জেট বিমানগুলো কিভাবে আকাশ পাহারা দেয়, সেই মহড়া দেখাচ্ছিল।
সেই সঙ্গে যুদ্ধজাহাজ ওমর ফারুক থেকে বিমানবিধ্বংসী কামান গর্জে উঠল। বিকাল বেলায় আবারও যুদ্ধজাহাজ থেকে কীভাবে টর্পেডো ছুড়ে সাবমেরিন ধ্বংস করে সেই মহড়াও দেখানো হলো। বিকালে ডেকের ওপরে তার সঙ্গে আমরা কয়েকজন ছাত্র কথা বলতেই তিনি বললেন, পত্রিকায় রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে নৌবিহারে যাওয়ার সমালোচনা করেছে। আমরা যে কজন ছিলাম তিনি বললেন, 'সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখ, দিগন্ত মেলে কত দূরে এই আকাশটি মিলে গেছে পানির সঙ্গে, তোমাদের মনটিকে এই বিশাল সমুদ্রের মতো আকাশ সমান উচ্চতা নিয়ে বড় করতে হবে। '
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পূর্ব মুহূর্তে আজ সবাই রুম থেকে বেরিয়ে এলেন সমুদ্রবক্ষে সূর্যাস্ত দেখার জন্য।
যখন চারদিকে অাঁধার নেমে এলো, সংকেত পেয়ে সবাই উঠে এলাম জাহাজের ছাদে। বিচ্ছুরিত হলো বিশাল এক আলোর কুণ্ডুলি আকাশে, গিয়ে পড়ল বহু দূরে। আমরা শুধু শুনতে পেলাম গানবোট থেকে বিকট গুলির শব্দ। এ ছাড়া এন্টিএয়ারক্রাফট, যুদ্ধবিমান এফ-৬, মিগ-২১ এর নানা রকম কসরত যেমন : নাইট ফ্লেয়ার, স্মোক ডিসপ্লে ইত্যাদি চলছিল। আকাশে বিমানবাহিনীর মহড়া পাশাপাশি সমুদ্রে নৌমহড়া।
প্রাণজুড়ে আমারা সবাই দেখলাম।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাহাজে অবস্থানরত সব শ্রেণী, পেশা, গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে সকালের নাস্তা কিংবা দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ বা রাতের খাবারের সময় দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সৌভাগ্য হয়েছিল মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নৈশভোজের।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রতিদিন রাতে সব অতিথির সঙ্গে আলাপচারিতা শেষ করে, হিজবুল বাহারে তিনি তার রাষ্ট্রপতির ভ্রাম্যমাণ কার্যালয়ে বসে, রাষ্ট্রপতির দৈনন্দিন কার্যাবলী সম্পাদন করতেন। শুনেছিলাম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের লোকসান গোনা হিজবুল বাহার হস্তান্তর করেছিলেন নৌবাহিনীতে।
তৃতীয়দিনের প্রত্যুষে সূর্য ওঠার আগে কোনো এক সময় রাষ্ট্রপতি আবার চলে এলেন আমাদের হাতছানি দিয়ে তার কর্মব্যস্ত জীবনে। আমাদের জাহাজখানি সুন্দরবন, হিরণ পয়েন্ট হয়ে গভীর সমুদ্রে যায়। ফেরার সময় দিগন্তহীন সমুদ্রের দিকে আনমনে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাবছিলাম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কথা। আমি রাষ্ট্রপতির কথা বলার সময় মাঝে মাঝে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীদের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মনে হচ্ছিল, আমরা সবাই যেন রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের সেই সাত রাজার ধন পেয়েছি। মনে হচ্ছিল, আল্লাহ বোধ হয় তার অবারিত সব অমূল্য সম্পদ আমাদের দিয়েছেন।
আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর সঠিক নেতৃত্বের জন্য হয়তোবা এ সম্পদ আরোহণ করতে পারছি না। মনে মনে, সেই দিন আল্লাহর কাছ দোয়া করেছিলাম, তিনি যেন আমাদের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দীর্ঘজীবী করেন। নিজেকে বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে গর্বিত বোধ করছিলাম। কি নেই আমাদের এ দেশে। মনে মনে কবির দুটি পঙ্ক্তি কথা_ 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ...'
একজন সৈনিকের জীবনে সবচেয়ে মহান ব্রত হলো দেশ ও মাতৃকার সেবায় জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করা।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে, সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রিয় দেশকে স্বাধীন করে তার সামরিক জীবন সার্থক করেছেন। ১৯৭১ সালে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন মেজর হিসেবে সেনাবাহিনীর আইনকানুন উপেক্ষা করে নির্ঘাত কোর্ট মার্শাল হবে জেনেও তিনি বলেছিলেন, উই রিভোল্ট। জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে কুণ্ঠা বোধ করেননি। একজন সামরিক অফিসারের আজীবন স্বপ্নের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছিলেন তিনি, হয়েছিলেন সেনাপ্রধান। পঁচাত্তরের পট-পরিবর্তনের পর, দেশের তাগিদে তিনি আবারও নিজগুণে একাত্তরের ২৭ মার্চ যেভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, হয়েছিলেন তিনি একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক।
তার মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা, দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা, তাকে সুদূরপ্রসারী চিন্তাবিদ বানিয়েছিলেন। যা আমরা সাধারণত দেখতে পাই গামাল আবদুল নাসের, ফিদেল ক্যাস্ত্রো, ডানিয়েল ওর্তেগা, মার্শাল টিটো, কামাল পাশা প্রমুখ রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে। তার চিন্তা-ভাবনার প্রসারতা ও গভীরতার ভিত এত শক্ত ছিল যে, তিনি সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, পাত্র-কাল ভেদে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার মূলমন্ত্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হয়েছিলেন। আমরা দেখেছি পাক-ভারত উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো দর্শনভিত্তিক হয়নি বলে এভারেস্টচুম্বি জনপ্রিয় হয়েও অনেক দল বরফগলা পানির মতো বিলীন হয়ে গেছে। ইতিহাস বলে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৫ সালে এসে মুসলিম নামটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ হয়েছে।
স্থূল চিন্তা-ভাবনা নিয়ে শাসন আর শোষণ করার জন্য এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বারবার তার রূপরেখা পরিবর্তন করেছে। একবিংশ শতাব্দীতে যে আওয়ামী লীগ দেখছি বিংশ শতাব্দীতে তা একনায়কতন্ত্রের বেশে বাকশাল জন্ম দিয়েছিল। বর্তমানে দলটি পরাশক্তির যোগসাজশে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্য এ দেশের মহামূল্যবান সম্পদ বেনিয়াদের হাতে তুলে দিচ্ছে। নবীন ছাত্র হিসেবে যে বক্তব্য শুনেছিলাম শহীদ জিয়ার কণ্ঠে, জলেভাসা আমাদের ভিটেমাটি ওই বঙ্গোপসাগরের আঙিনায় গিয়ে বিন্দু বিন্দু করে জমে আমাদের ভৌগলিক সীমানার পরিবর্তন আনবে। তাই তো আমরা আজ পেয়েছি নিঝুম দ্বীপ।
ব্রিটিশ নাগরিক রেডক্লিভের অঙ্কিত সীমানা হাড়িয়া ভাঙ্গা নদীর পাড়ে বঙ্গোপসাগরে ভেসেওঠা তালপট্টি হবে আমাদের আস্তানা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেছিলেন, আমাদের দেশে আছে অমূল্য সম্পদ তেল, গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর ইত্যাদি। হিজবুল বাহারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীদের তিনি আরও বলেছিলেন, আমার সময়ে যদি এ মহামূল্যবান খনিজসম্পদ উত্তোলন নাও করতে পারি, তোমরা তা করবে। আজ দেখতে পাচ্ছি, দার্শনিক জিয়ার প্রতিটি তথ্যই ছিল সত্য। তার এই অমোঘ সত্য উচ্চারণের কারণে ১৯৮১ সালের ৩০ মে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানকে।
এই তো সে দিনের কথা, নবম জাতীয় সংসদে সংবিধান কর্তন করতে গিয়ে মহাজোট সরকার বাধ্য হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বিচু্যুত হয়ে শহীদ জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে মেনে নিতে। আজ ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ সালের এই দিনে ১৯ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে এ দেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। আজ তাই জাতীয়তাবাদী দলের সৈনিকরা এই দিনেও বলছে, লও লও লও সালাম, শহীদ জিয়া লও সালাম। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, সবাই বলে জিয়া জিয়া।
লেখক : সাবেক মন্ত্রী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।