তাঁর সাথে আমার মতের অমিল ছিল বিস্তর। তারপরও দেখা হলেই
হ্যান্ডশ্যাক করতাম সহাস্যে । আমাকে দেখলেই বলতেন - '' সব ফকিরই
ফকির নয় , যেমন ফকির ইলিয়াস '' ।
আমি হাসতাম। হাসতেন উপস্থিত সবাই।
মতের অমিলের মহাসাগর আমাদের মাঝে কখনও ই শ্রদ্ধা-স্নেহে ফাটল ধরায় নি। তাঁর সামনেই তাঁর
সমালোচনা করেছি। তিনি শুনেছেন। আমাকে কয়েকবার ই বলেছেন,
'' তুমি তো আমার বিরুদ্ধে অনেক লিখেছো ''।
আমি বলেছি , আপনার বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ নেই।
আমি
আপনার নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে লিখেছি।
..........................
সাইফুর রহমান গায়ের কোট স্পর্শ করে বলতেন, আমার মাঝে কোনো দুর্নীতি নেই।
তার এই কথার বিরুদ্ধে আমি লিখেছি অনেক বার। বহু বার।
২০০২ সালে আমি সিলেটে গেলে সেখানে একদল বারকি শ্রমিকের সাথে
আমার দীর্ঘ কথা হয়।
তারা সিলেটের কোম্পানীগন্জের ভোলাগন্জে
বারকি শ্রমিক হিসেবে খাটেন।
সেই শ্রমিকরা আমাকে জানিয়েছিলেন , তাদের উপর কিভাবে চাঁদাবাজির
খড়গ নামায় নাসের রহমানের মাস্তান রা।
সাইফুর রহমান নিউইয়র্কে এলে আমি সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাই।
তিনি বলেন , এমন তথ্য তার জানা নেই। তারপরও তিনি বিষয়টি দেখবেন।
না , কোনো ফলই হয় নাই ।
ঐ এলাকার বারকি শ্রমিকরা নাসের রহমানের মাস্তানদের হাত থেকে রেহাই পান নি।
সিলেটে সাইফুর রহমানের নাম বিক্রী করে অনেক শীর্ষ দুর্ণীতিবাজ গড়ে
উঠেছিল । তা কারো অজানা নয়।
............................
খুব সম্ভব ২০০৪ সালে সপরিবারে দেশে চলে যান আমার বন্ধু ,
লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিন।
নবাব উদ্দিন মৌলভী বাজারের সন্তান। নিজ গ্রামের বাড়ীতে তিনি আক্রান্ত হন, নাসের রহমানের মাস্তান বাহিনী কর্তৃক।
নবাব উদ্দিনের অপরাধ ছিল , জনমত পত্রিকায় সাইফুর রহমানের পোষ্য
দুর্নীতিবাজদের নিয়ে দীর্ঘ রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল।
নবাব উদ্দিন ভয়ে পালিয়ে জান নিয়ে চট্টগ্রাম হয়ে বিলাত আসেন।
তাকে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসতে সহায়তা করেন, জনমত এর
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি , হোটেল আগ্রাবাদের সত্তাধিকারী মিসেস মনোয়ারা
হাকিম আলী ।
বিষয়টি আমাকে খুব পীড়া দেয়।
সাইফুর রহমান নিউইয়র্ক এলে তাকে আমি বিষয়টি প্রশ্ন করি।
তিনি বলেন , '' কে কি করেছে আমি তো জানি না। তবে নবাব আমার
বিরুদ্ধে যা তা লিখেছে। ''
আমি বলি , নবাব উদ্দিন তো সাক্ষী প্রমান সহ লিখেছেন।
সাইফুর রহমান বলেন - ''রাখো তোমার সাক্ষী প্রমান।
আমার বিরুদ্ধে লেখে এমন সাহস কই পেলো ?''
আমি ও ক্ষুব্ধ হই। কথা কাটাকাটি হয় তার সাথে।
............................
আরেকবার তিনি আলোচনায় আসেন একটি বক্তব্য দিয়ে।
'' কোথাকার কোন নজরুল ইসলাম '' বলে কটাক্ষ করেছিলেন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে।
যা দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলে।
এর প্রতিবাদ করে আমি ও লিখি ঢাকার কাগজে।
..........................
যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী ব্যাংক স্থাপনের দাবি ছিল প্রবাসীদের ।
পরে সোনালী এক্সচেন্জ কোম্পানী খোলা হয়। এতে সাইফুর রহমানের
বিশেষ ভুমিকা ছিল।
মনে পড়ছে , প্রবাস বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের নিষয় নিয়েও কয়েক দফা
বৈঠক হয়েছিল তার সাথে। নিউইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট আসার বিষয়েও
তার প্রচেষ্টা ছিল আন্তরিক।
প্রবাসীদের দাবী- দাওয়া তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে শোনতেন।
..............................
টিভি খুলে তাঁর এই মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদ শোনে স্থির থাকতে পারিনি।
তিনি বেশ স্নেহ করতেন বলেই হয়তোবা , কান্না সংবরণ করতে পারিনি।
তাঁর সুনাম ক্ষুন্ন করেছিল কতিপয় ছাপোষা মাস্তানরা ।
তিনি সেগুলোকে শক্ত হাতে দমন করেন নি। সেকথা বলেছিও তাকে
সামনা সামনি।
কিন্তু সেসব কথার প্রতিকার তিনি করেন নি। কোনো গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে হয় নি।
তার চামচারা যত্রতত্র তার নাম ব্যবহার করে বিলবোর্ড / সাইন বানিয়েছে। তা অনেক সময় হয়েছে গণমানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই।
তা না করলেই ভালো হতো।
...................................
সাইফুর রহমান আজ নেই। সিলেটের মাটির মমতা নিয়ে তিনি চলে গেছেন পরপারে।
তিনি থেকে যাবেন তাঁর সৎ কর্মগুলোতে।
আমি সাধ্য অনুযায়ী তাঁর ভুলের কথা তাকে জানাতে চেয়েছি। বলতে
চেয়েছি। এতে আমার কোনো কার্পণ্য ছিল না।
না , তাঁকে কখনও ই আমি কটাক্ষ করতে চাইনি।
ক্ষমা করবেন , শ্রদ্ধেয় সাইফুর রহমান।
আপনার আত্মা চির শান্তিতে ঘুমাক। মানুষের শেষনিদ্রাই তো তার
পরম পাওয়া । #
নিউইয়র্ক / ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।