সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
পরিশ্রম তথা কাজ ছাড়া জীবনে কেউ সফল হতে পারে না। আর তাই তো ইসলাম ধর্মে কাজের উপর বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেবল পড়াশুনা করলেই চলবে না, নিজের অন্য যেসব কাজ আছে সেগুলোও সাধ্যানুযায়ী করতে হবে। কারণ আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এবং নবী বংশের মহান ইমামগণ নিজের কাজ নিজেই করে গেছেন। রাসূলেখোদা বলেছেন, 'নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়।
আর কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। ' নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন, তেমনি নিজে তা করিয়ে দেখিয়ে গেছেন
একবার এক সফরে বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছার পর রাসূলে (সাঃ) ও তাঁর সাহাবী নিজ নিজ বাহন থেকে নেমে পড়লেন। নিজেদের মালপত্র নামিয়ে রাখলেন নির্ধারিত স্থানে। তারপর সকলে মিলে ঠিক করলেন, একটি দুম্বা জবাই করে খাবার তৈরি করা হবে। একজন সাহাবী বললেন, দুম্বা জবাই করার দায়িত্ব আমার।
আরেকজন বললেন, দুম্বার চামড়া ছাড়ানো ও গোশত কাটার দায়িত্ব আমি নিলাম। তৃতীয় জন বললেন, গোশত রান্না করার দায়িত্ব আমার। এভাবে সাহাবীরা নিজ নিজ দায়িত্ব ভাগ করে নিলেন। এসময় রাসূল (সাঃ) বললেন, "কাঠ কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব আমার। "
রাসূলের কথা শুনে এক সাহাবী বলে উঠলেন, 'হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা উপস্থিত থাকতে আপনি কষ্ট করবেন কেন ? আপনি বিশ্রাম নিন।
আমরা আনন্দের সাথে সমস্ত কাজ ঠিকঠাকমত সেরে নেবো। সাহাবীদের কথা শুনে রাসূলেখোদা বললেন, " আমি জানি এ কাজ তোমরা করে নিতে পারবে। কিন্তু মহান আল্লাহ সে বান্দাকে কখনোই ভালবাসেন না, যে বন্ধুদের মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে । " এ কথা বলে তিনি বনের দিকে চলে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে জ্বালানী কাঠ ও খড়-কুটো নিয়ে ফিরে এলেন। আরেকদিনের ঘটনা।
রাসূল (সাঃ) এর কাফেলাটি অনেকক্ষণ যাবত পথ চলার কারণে সবার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ দেখা যাচ্ছিল। বহনকারী পশুগুলোও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। এসময় কাফেলাটি এমন একটি স্থানে পৌঁছলো যেখানে কিছু পানি ছিল। কাফেলা থেমে গেলে রাসূলেখোদা উটের পিঠ থেকে নিচে নেমে এলেন। এরপর সবাইকে নিয়ে তিনি পানির দিকে পা বাড়ালেন ওজু করার জন্য।
কিন্তু কয়েক ধাপ চলার পর কাউকে কিছু না বলে আবার নিজের উটের দিকে ফিরে এলেন। রাসুলুল্লাহর সাহাবী ও সাথীরা আশ্চর্য হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন যে, মনে হয় যাত্রাবিরতির জন্য এ স্থানটি নবীজীর পছন্দ হয়নি। এখনই হয়তো তিনি রওনা হবার নির্দেশ দেবেন।
কাফেলার সবাই যখন রাসূলের নতুন নির্দেশ শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন তখন দেখা গেল, মহানবী উটের কোমর বাঁধার রশি হাতে নিলেন এবং উটের কোমর বাধতে শুরু করলেন। তাড়াতাড়ি বাঁধার কাজ শেষ করে তিনি আবার পানির দিকে গেলেন ওজু করতে।
এ সময় চারদিক থেকে সাহাবীরা এসে বললেন, হে আল্লাহ রাসূল! আপনি এ কাজের জন্য আমাদেরকে কেন হুকুম দিলেন না ? আপনি কেন কাজটি করতে গেলেন ? আমরা তো গর্বের সাথে এ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।
নবীজী তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, " নিজের কাজে কখনো অপরের সাহায্য নেয়া উচিত নয়। কার কারো ভরসা করাও ঠিক নয়। সে কাজ যত ছোট কিংবা যত বড়ই হোক না কেন। " রাসূলের জবাব শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হয়ে গেলেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।