সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।
প্রথমটা বলি।
গতকাল বিকেলে ২৮তম বিসিএস লিখিত এর ফলাফল দিয়েছে। এই অধম পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু, রোল নং মনে ছিল না।
অফিসেই ছিলাম সে সময়। এক বন্ধুর সাহায্যে পিডিএফটা ডাউনলোড করে বাসায় ফোন করে রোল নং নিলাম। এরপর খুঁজেও নাম্বারটা পেলাম না। একটু দুঃখ হলো। এই ফাঁকে আরেক বন্ধু ফোন করে ওর ডাক্তার ভাইয়ের রেজাল্ট জেনে নিল আর আমার হয় নি শুনে আফসোস ও করল।
কিন্তু, আমার উপরে আমার অগ্রজসুলভ কলিগ অপু ভাইয়ের বিশ্বাস আমার নিজের চেয়েও বেশী। উনি আরেকবার ভাল করে খুঁজে ঠিক বের করে ফেললেন আমার নাম্বারটা। তারপর সোজা জড়িয়ে ধরলেন। অন্য রকম অনুভূতি।
আমার ব্লগে যারা দয়াপরবশ হয়ে ঢুঁ মারেন তারা ভালই জানেন আমি কী পরিমান পিকনিক মুডে পরীক্ষাগুলো দিয়েছি।
দুইটি উদাহরন।
বৌদি সকাশে আমার বিসিএস প্রিলি
সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেলো রে! বিসিএস পরীক্ষা ও বাদ গেলো না!
কিন্তু, এখন তো গাড্ডায় পড়ে গেলাম। দেখা যাবে, ভাইবাতে অনুর্ত্তীর্ণ হলাম আর নিজের অকৃতকার্যতা স্বীকার না করে ঠিকই সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দেব। বলব, পলিটিক্যাল লিংক ছিল না। তাই হয় নি।
এর চেয়ে চান্স না পাওয়াই বোধ হয় ভাল ছিল। যাই হোক, যদ্দুর এসেছি, তাই অনেক।
এবার, দ্বিতীয়টা বলি। এটা আরো ভাল খবর।
গত পরশু বিকেলে আন্দরকিল্লা হতে ট্যাক্সী নিয়ে বাসায় আসছিলাম।
হাতে অনেক গুলো বই, অফিসের ব্যাগ আর কিছু ইফতারি। এর ফাঁকে হাত হতে কখন যে মোবাইলটা ট্যাক্সীর সিটে পড়ে গিয়েছে টেরই পাই নি। বাসার সামনে এসে ব্যাগপত্র নিয়ে নেমে ভাড়া দিয়ে চলে এলাম। বাসায় ঢুকে ব্যাগপত্র নামিয়ে রেখে পকেটে হাত দিতেই বুঝে গেলাম মোবাইল ফেলে দিয়েছি। দোতলা হতে নামতে নামতে ট্যাক্সী উধাও।
সাথে আম্মুর নাম্বার থেকে ফোন দিলাম, বারে বারে রিং হচ্ছে; কেউ ধরে না। একটু পর দেখি মোবাইল বন্ধ। আশা ছেড়ে দিয়ে পরদিন নতুন সীম তোলার জন্য আলমারি হতে সিমের কাগজপত্র বের করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখছি এমনসময় দেখি আমার হারিয়ে যাওয়া নাম্বার থেকে আম্মুর নাম্বারে ফোন! রিসিভ করার পর ভদ্রলোক বললেন, "আপনার ফোন? ট্যাক্সীতে পেলাম। ইফিতারের পর আমি ফোন করলে এসে নিয়ে যাবেন!"
আমি তো পুরা টাশকি! ইফতারের পর অপেক্ষা করছি। আর তো ফোন করে না! রাত সাড়ে ন'টার দিকে ফোন দিয়ে বলল আমার বাসার কাছের একটা ওয়ার্কশপে যেতে।
গিয়ে দেখি ভদ্রলোক রাইডারের ব্যবসা করেন , ঐ ওয়ার্কশপে বসে গাড়ির কাজ করাচ্ছেন। পরিচয় দেয়া মাত্র মোবাইল দিয়ে দিলেন। বিরিয়ানী খাচ্ছিলেন, আমাকে জোর করে এক প্লেট ধরিয়ে দিলেন। আমি সিম্পলি বাকরুদ্ধ। অনেক ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, "আমি ঠিক কিভাবে আপনাকে সম্মান করতে পারি।
" ভদ্রলোক বললেন, "কিছুই করতে হবে না। আপনাকে আপনার মোবাইল বুঝিয়ে দিয়েই আমি খুশী। তবে, ওয়ার্কশপের লোকগুলোকে পারলে কিছু টাকা দিয়ে দিন। ওরা একটু চা-নাস্তা করুক। " পাঁচশ টাকা দিয়ে ভাবছিলাম পকেটে আরো কিছু টাকা থাকলে তাও দিয়ে আসতাম।
বাস্তবতার বিচারে এটি হয়তো আগের খবরের চেয়ে কম ভাল খবর। কিন্তু, আমার বিচারে এর চেয়ে ভাল খবর আর হতেই পারে না। মানুষের উপর প্রায় হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস আবার ফিরে পেলাম- এর বড় কথা আর কী হতে পারে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হারানোর ক্ষেত্রে আমার দক্ষতা কিংব্দন্তীর পর্যায়ে পৌঁছেছে। বছর দুয়েক আগে আমার সব সার্টিফিকেট, আর দুইটা পেনড্রাইভসহ আরেকটা ব্যাগ ফেলে গিয়েছিলাম।
আমি খুব আশায় ছিলাম যেই পাবেন ফেরত দেবেন। নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার সবই ছিল। ঐ ডকুমেন্টগুলো অন্য কারো কাজেও লাগার কথা না। তবু কেন যে দিল না!
যাই হোক, সুখ-দুঃখ, পাওয়া-না পাওয়া নিয়েই এই মানব জন্ম। একটু রয়ে সয়ে মানিয়ে চললে বোধহয় শান্তিতেই কেটে যায়! কী বলেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।