শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... একটা লাইব্রেরিতে বসে আমরা নিয়মিত আড্ডা দেই। সন্ধার পরে আমরা ঢুলতে ঢুলতে হাজির হই। গিয়ে দেখি দুজন স্যার বসে আছে। এখানে আড্ডার প্রায় সব সদস্যই সরকারী কলেজের শিক্ষক। একজন কথা বলছেন আর একজন মাথা দুলাচ্ছেন।
আমি তাদের পাশে বশে গেলাম। প্রতিদিন আড্ডা দেই মানে হচ্ছে, আমি বসে বসে শুনি আরকি? পঞ্চাষোর্ধ ব্যক্তিদের সাথে আড্ডা দেবার মজাই আলাদা কিছুই বলতে হয়না শুনলেই তারা খুশি। আমি তাই আড্ডার একনিষ্ট এবং নিয়মিত সদস্য। সবচেয়ে জুনিয়র বলে আমার মতামত নেয়ার খুব একটা আবশ্যকতা থাকেনা।
আমি মনযোগ দিয়ে শুনছি কি বিষয়ে কথা হচ্ছে।
যিনি বক্তা তিনি মাঝে মাঝে আড্ডায় আসেন। তিনি পড়ান দর্শন। বয়স ষাটের কাছা কাছি, দাঁড়ি মোস রাখেন না , খবই স্মার্ট দেখলে প্রথমবার দেখে বয়স অনুমান করতে পারি নাই। এবং যিনি মনোযোগি শ্রোতা তিনি পড়ান একাউন্টিং। দুজনই সনাতন ধর্মের লোক।
দুজন ইসলামিষ্ট এক হলে যেমন কোরান বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ এবং নবি মুহাম্মদকে বিজ্ঞানিদের বিজ্ঞানী বলে মনে করেন। এই দুইজনের আড্ডাও হচ্ছে এমনই। তারা রামকৃষ্ণ কে বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী এমন গল্প গুজব করে যাচ্ছেন। আমার করার কিছুই নেই। টিভির রিমোট টিপছি ।
এরই মধ্যে আরো দুজন এসে হাজির। আমাদের আড্ডার কোরাম পূর্ণ হয়েছে। এখন নানা ব্যপারে আড্ডা হবে। ব্যক্তিগত আড্ডার আর কি দরকার।
আমি অস্ফুট স্বরে বললাম বিজ্ঞান ছাড়ওতো রামকৃষ্ণকে নিয়ে আলোচনা করা যায়।
কি দরকার ধর্ম বিজ্ঞান একসাথে খিচুরি তৈরি করার যেই খিচুরি দুর্গন্ধ যুক্ত খাওয়ার অযোগ্য।
এইবার দার্শনিক দাঁড়িয়ে গেলেন, এই ছেলে তুমি জান কিছু? ফিলসফি কি বোঝ? আমি একজন ফিলসফির শিক্ষক। বিজ্ঞান বিজ্ঞান কর,পরমাণুর সম্পর্কে প্রথম ধারনা দেন কে জান?
পাশে বসা স্যার দার্শনিক( দর্শনের শিক্ষক) কে বসতে বলেন। এবং তিনি বসেন। কিন্তু বার বার দাঁড়িয়ে যান।
ক্লাস করার মতো হাত নেড়েনেড়ে কথা বলে চলেছেন।
আমি বললাম ডাল্টনই তো পরমাণু সম্পর্কে .....
দার্শনিক এইবার চেয়ার ঠেলে দাঁড়িয়ে গেলেন। বুঝলাম ওনার আর বসার কোন ইচ্ছে নাই।
তিনি শুরো করলেন থেলিস, অ্যানাক্সিম্যান্ডার,অ্যানাক্সি মেনিস থেকে শুরো করে বোর পরমানু মডেল পর্যন্ত বর্ননা করে এসে থামেন। তিনি বৃহত্তর ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কিছুটা ভুল বলেন।
একজনের তত্ত্ব অন্যজনের নামে এবং কিছুটা কাটছাট হচ্ছে। কিন্তু তিনি থামার পাত্র নয়। বলেই চলছেন। সবাই মন দিয়ে শুনছে। আমার কাছে কিছুটা বোরিং লাগলেও কেউ কিছু বলছে না বলে আমিও চুপ করে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে শুনে যাচ্ছি।
তো পরমাণুর মডেল বর্ণনা করার পরে, আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু এই মডেলে ঈশ্বরের অবস্থান কোথায়?
এবার পারলে টেবিলের উপর উঠে পরেন। আর আগের চেয়ে ভোকাল চড়িয়ে বলতে থাকেন। দর্শন ব্যপারটাকি ছেলে খেলা পেয়েছ? দর্শন হচ্ছে বিজ্ঞানের বাপ মা... তার পর চলছেই চলছে। এক সময় টেবিল থেকে পেপার ওয়েট পড়েযায়।
আমি উঠাতেই একজনের চোখে চোখ পরে, তিনি যেন ইশারায় কি দেখাচ্ছেন। এবার সবার মুখের দিকেই তাকালাম , সবাই করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে। সেই দিন দশটায় চা খাবার নাম করে আমরা এই যাত্রায় রেহাই পাই।
পরে জানতে পারি , সেই স্যারের মাথায় কিছুটা সমস্যা আছে। এইটা সবাই জানে তাই তাকে কখনো ঘাঁটায় না।
এবঙ আমার আহম্মকি পনায় তারা চরম বিরক্ত। আমি যেন ভবিষৎতে এমন না করি এই প্রতিশ্রুতিও আদায় করা হয়। বুঝতে পারলাম এক খান মহা ভুল করেফেলেছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।