আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ আমরা"

"সকল বস্তু তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠে"

এই লেখাটি মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য। অন্যেরা যারা পড়বেন তারা নিজ দায়িত্বে পড়বেন। শুভ ব্লগিং। উদ্দেশ্যহীন পথে ঘুরপাক খেতে খেতে দিশেহারা আজ আমাদের দেশের মুসলিমরা, কত শত প্রশ্ন আজ তাদের মনের মাঝে। কত প্রকার চিন্তা ঘুরে-ফিরে কিন্তু কোন উপযুক্ত সমাধান চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় না।

জ্ঞানের বিশাল সমুদ্রের মাঝে অবগাহন করাও হয়েছে এবং জ্ঞানের অন্বেষণে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার তৎপরতাও বহাল রয়েছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কোথায় যেন ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। কত শত পি. এইচ. ডি. ডিগ্রী ধারী রয়েছে কিন্তু তাও সমাধান হচ্ছে না, মুসলমানরা মনে হয় আরো বিপদের অগভীর সমুদ্রে সীমাহীন ঘুর্ণিপাকে না জানা রাস্তায় দিকভ্রান্ত হয়ে ঘুরে ফিরছে। কত শত প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে, কত জন টাকা দিয়ে সাহায্য করছে তাও কোন পরিবর্তন নেই। সবদিকেই কেমন যেন হাহাকার একটা পরিস্থিতি।

জীবনের গ্লানি টানতে টানতে মানুষ অস্থির প্রায়। পরামর্শ দেওয়ার লোকের অভাব নেই, বিদেশ থেকে বড় বড় পন্ডিতরা এসে কত শত বুদ্ধি বাতলে দিচ্ছে কিন্তু তাও কিছুই হচ্ছে না। কত চিন্তা, কত গবেষণা, কত প্রবন্ধ রচনা, কত আলোচনা-সমালোচনা কিন্তু সবশেষে সেই একই ফলাফলঃ হাহাকার সমৃদ্ধ ঘুর্ণিপাকে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ মুসলিমরা। ওয়াজ-নসিহতের অভাব নেই, কত শত ফজিলত বর্ণনা করা হয় সেখানে; অমুক আমল করলে এত এত সওয়াব, অমুক আমল করলে রিজিক বাড়ে, অমুক তাসবীহ পড়লে বিপদ কাটে, অমুক আমল করলে অমুক অমুক উন্নতি সাধিত হয় কিন্ত জীবন যুদ্ধে যেখানে ব্যর্থ সেখানে হাজার হাজার কিংবা লাখ-কোটি সওয়াব আর ফজিলতে মুক্তি মিলছে না বিভ্রান্ত মুসলমানদের। বিভিন্ন ফজিলত পূর্ণ রাতে ইবাদত-বন্দেগী হিসেবে তাসবীহ জপা আর নফল নামাজের হিড়িক লেগে যায়, মসজিদে মুসল্লিদের ভীরে জায়গা দেওয়াই অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে যায় কিন্তু তারপরও দ্রব্যমূল্য যেমন উর্ধ্বগতির ছিল তেমনি থেকে যায়, খাদ্যে যেমন ভেজাল ছিল তেমনি থেকে যায়, যারা ঘুষ খেত তারা আরো বিপুল বিক্রমে ঘুষ খায়, যারা সুদ খেত তারা বড় বড় নোবেল-টোবেল পুরস্কার পায়।

কিন্তু বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ মুসলমানদেরর মুক্তি মিলে না। কিন্তু কেন? ঘাটতি কোথায় তাহলে? বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে মুসলিমরা? বিভ্রান্তির শুরু যেখান থেকে সেটার মুলৎপাটন করতে হবে, বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে হবে তাহলেই মুসলমানদের মুক্তি মিলতে পারে। কিভাবে বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে বের হওয়া যায় সেই বিষয়টি নিয়েই কিছু আলোচনা করবো। মুসলমান হিসেবে প্রথম যে কর্তব্যটি বর্তায় তাহলো আকীদা-বিশ্বাসকে দৃঢ় করা। সঠিক জ্ঞানের ভিত্তিতে নিজের বিশ্বাসকে দৃঢ় করা আর এর জন্য প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট সর্বান্তকরণে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

এটাই ইসলামের প্রধান দাবী। কারণ, ইসলাম শব্দের অর্থই হচ্ছে “আত্মসমর্পণ করা”। আর এই আত্মসমর্পণ বলতে বুঝায় সমগ্র দেহসত্ত্বা ও মনসত্ত্বাকে মহান আল্লাহর আদেশের নিকট আত্মসমর্পণ করে দেওয়া। “স্মরণ কর যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ অনুগত হও। সে বললোঃ আমি বিশ্বপালকের অনুগত হলাম” (কুরআন ২:১৩১)।

মানুষ যখন সর্বান্তকরণে তার দেহসত্ত্বা ও মনসত্ত্বাকে মহান আল্লাহর দরাবারে আত্মসমর্পণ করবে তখনই সমাজে শান্তি আনিত হবে। এর জন্যই ইসলাম শব্দের আরেকটি অর্থ হলো শান্তি বা শান্তির মধ্যে প্রবেশ করা। একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সত্যিকারের মুসলিমের সংজ্ঞা হিসেবে রাসূল (স) বলেছেন: “সত্যিকার মুসলিম হচ্ছে সেই যার কথা ও কর্ম থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে”। পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করা হচ্ছে একজন মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তভূক্ত হয়ে যাও”।

(কুরআন ২:২০৮)। এখন আমরা যদি আমাদের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব আমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করিনি, আংশিক প্রবেশ করেছি। আল্লাহর হুকুম কিছু মানছি আর কিছু মানছি না, কিছু আইন মানছি আর কিছু আইন অমান্য করছি এক কথায় বললে বুঝায় বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। সত্যিকার ভাবেই যদি আমরা ইসলামে প্রবেশ করতাম তাহলে আজ আমরা এমন কথা বলতাম না বা এমন কাজ করতাম না যা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। আমরা কটু কথা বলে মানুষের মনে দুঃখ দেই, বিভিন্ন খারাপ কাজ করে মানুষকে কষ্ট দেই যেমন: চাদাবাজি, ঘুষ, রাহাজানি, হত্যা, খাদ্যে ভেজাল মেশানো, সুদের কড়ার গ্রাসে মানুষকে আবদ্ধ করানো, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা, আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের বানানো আইন প্রয়োগ করা প্রভৃতি।

রাসূল (স) বলেছেন: “সত্যিকার মুসলিম হচ্ছে সেই যার কথা ও কর্ম থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের কথা ও কর্ম থেকে কি আমরা অন্য মুসলমানদের নিরাপদে রাখছি? এই বিষয়টি এমন কোন কঠিন বিষয় নয় যে বিস্তর পড়ালেখা বা ডক্টরেট ডিগ্রী লাগবে। একটু শান্ত মনে চিন্তা করলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠবে যে কেন আজকে আমাদের এই অবস্থা। ইসলাম সম্পর্কে আমাদের ধারণা ঘোলাটে, ইসলাম সম্পর্কে জানার প্রধান দুইটি উৎস হলো, কুরআন এবং সহীহ হাদীস। আজ আমরা কুরআন এবং হাদীস না পড়ে বিভিন্ন শর্টাকার্ট পথ খুজে ফিরছি।

বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ ইবাদতের সন্ধান করছি যাতে কিছু তাসবিহ আর নফল নামাজ পড়ে কোটি কোটি সওয়াবের পেছনে ছুটছি বেহেশতে যাওয়ার জন্য! যেখানে মূল আকীদা-বিশ্বাসই ঠিক নেই, যেখানে আমি মহান আল্লাহর নিকট সর্বান্তকরণে আত্মসমর্পণ করলাম না সেখানে এই কতগুলো ফজিলতপূর্ণ নফল ইবাদত কি আমাদের মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম করবে? আমরা কি শান্তির দেখা পাব? বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তা করা আবশ্যক। বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা দরকার কিন্তু সংক্ষিপ্ত পরিসরে ব্লগে বেশী বড় লেখা হলে অনেকেই পড়ে দেখেন না। তাই আজ এটুকুই। আরেকদিন ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিত সে বিষয় নিয়ে লিখব, ইনশাল্লাহ। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.