ভালোবাসি মানুষকে
জেলখানায় ভূত !
৮৭ সাল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। আমিও সেই আন্দোলনে সামিল। এক পর্যায়ে আমাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করে তিন মাসের ডিটেনশন দিলো জালিম সরকার। কুড়িগ্রাম জেল, অকারে ছোটো।
আমি মেডিকেলে রাজবন্দীর মর্য্যাদা পেলাম।
এরই মাঝে বর্ষা এসে গেলো। সেই বর্ষার এক রাত। তখন আনুমানিক দু'টো বাজে। নির্ঘুম রাতে চায়ের তেষ্টা পেলো।
মন্টু নামে এক ছেলে আমার ফুট-ফরমাস খাটার জন্য নিযুক্ত ছিলো। তাকে বললাম একটু চা বানাও। জেল খানার সম্বল থালা-বাটি-কম্বল বলে একটা কথা আছে। সেই থালা-বাটির বাটিতে চা বানানো হলো। সেই চায়ে উড়ে এসে ভাগ বসালো জেল খানার এক বাবু ( জেলে কারারক্ষীদের বাবু বলে সম্বোধন করতে হয়)।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে দমকা বাতাস। কারারক্ষী জানালো, সময় পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার বদলী লোক এখনো আসছে না। উসখুশ করছে সে।
আমার ওয়ার্ডের সামনে একটা গেট আছে। গেট আর ওয়ার্ডের মাঝখানে ৬০/৭০ গজ ফাঁকা জায়গা।
আমি বসে আছি কম্বলের উপর, গরাদের সামনে। স্বল্প আলোয় গেটের সামনে একটা ডালিম গাছের ডালের ফাঁক দিয়ে হঠাৎ বর্ষাতি পড়া এক কারারক্ষীর অবয়ব ফুটে উঠলো। আমি তখন আমার সাথে থাকা কারারক্ষী সিরাজুলকে বললাম, আপনার ডিউটি শেষ বদলী লোক এসে গেছে। ওই কথা শোনার পর সিরাজুল তরিঘরি করে গেটের দিকে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আমাকে বললো, আপনি কি সত্যি সত্যি বদলী ডিউটিতে আসা কাউকে দেখেছেন ? আমি আবারো বললাম হাঁ দেখেছি।
এ কথা শোনার পর আবার সে জেল খানার প্রধান ফটকে গেলো। সেখান থেকে সে ফিরে এসে জানালো, গেটের সেন্ট্রি তাকে বলেছে, কোনো কারারক্ষী বদলী ডিউটিতে যোগ দেয়ার জন্য জেলের ভিতরে ঢোকেনি।
এরপর যা ঘটলো তা নিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিকর ব্যাপার। প্রায় ২০ মিনিট পর বদলী কারারক্ষীরা ভিতরে এলো। তারা সব কিছু শোনার পর ভয় পেতে শুরু করলো।
একজন বললো আমি ভূত দেখেছি। আর একজন বললো, সে যখন রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে কর্মরত ছিলো সেখানে এরকম ভূত দেখেছিলো। তার ভাষায় জেলে যে সমস্ত কয়েদীর ফাঁসি হয় তাদের অশরিরী অতৃপ্ত আত্মা জেলের ভিতর ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ পেলে কাররক্ষীদের ঘাড় মটকে দেয়। এরপর সেখানে এসে জড়ো হলো জেলের ভিতরে ডিউটিরত ১০/১২ জন রক্ষী।
অবস্থা এমন দাড়ালো কেউ আর তাদের জায়গা মতো ডিউটিতে যাচ্ছে না। কেউ আবার সুরা পড়ে গায়ে ফু দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রাচীরে ঘেঁসে যাদের ডিউটি তারা একেবারেই বেঁকে বসলো। এ খবর এক পর্যায়ে জেলারের কানে পৌঁছালো। অগ্নিশর্মা হয়ে আমার দিকে কটমট তাকাচ্ছেন আর কারারক্ষীদের ধমকাচ্ছেন ডিউটিতে যাওয়ার জন্য।
একজন কেঁদে বললো, স্যার আমার বাল-বাচ্চা আছে..। আবার ধমক জেলারের। এক পর্যায়ে ডিউটিতে গেলো সবাই। পরদিন সকালে জেলার আমাকে ডেকে পাঠালেন তার অফিসে। সেখানে যাওয়া পর আমাকে প্রচুর ধমকানো হলো।
বলা হলো যারা রাজনীতি করে তারা সব যায়গায় বিসৃঙ্খলা সৃষ্ঠি করে। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের মতো আমার শাস্তি হলো। জেনারেল ওয়ার্ডে চোর-ছ্যাচরদের সাথে থাকার জন্য কম্বল, থালা-বাটি সহ পাঠানো হলো। আমাকে শাস্তি দিলে কি হবে, কারারক্ষীদের মন থেকে আর ভূতের ভয় যায় না। তার জানে ধর্মে আমার বিশ্বাস নাই, আমি ভূত দেখলে তা অবশ্যই সত্যি।
আমি ওদের যতো বোঝানোর চেষ্টা করি ভুতে আমার বিশ্বাস নাই, আমি যা দেখেছি তা আমার দৃষ্টি ভ্রম তা ওরা কিছুতেই বিশ্বাস করে না। এরই মাঝে চার মাস পার গেলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে মুক্তির আদের আসে। আমি জেল থেকে মুক্তি পাই। আর গোটা জেল জুড়ে থেকে ভূতের ভয়...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।