আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাথুরে ছড়ার জলে, পাহাড়প্রেমী চলে.....

^^^^^^^^^

১ম দিন: রুমা টু বগালেক ট্রেকিং ২য় দিন: বগালেক টু কেওক্রাডং ট্রেকিং শেষ দিন: বগালেক টু রুমা বাজার ট্রেকিং তখনো বগার বুকে আধখানা চাঁদের প্রতিবিম্ব ছিল, সাথে কয়েকটা তারা। আলো ফোটার আগেই আমরা পঁচিশজন, সৌম্য ভাই এর ভাষায় 'পাগলা ট্রেকার' আর দু'জন গাইড রুমা বাজার এর উদ্বেশ্যে বগালেক ছাড়ার জন্য তৈরি। সকালের নাস্তা করা হবে ভাঙ্গা ঝর্ণা পৌঁছে, আমি ভাবলাম এখানে আর মুখ ধুয়ে সময় নষ্ট করে কি হবে, ভাঙ্গা ঝর্ণা পৌঁছেই মুখ ধুব। টিপটিপ বৃষ্টির সাথে হেড ল্যাম্প আর টর্চের আলো জ্বেলে আমরা আঁকা বাঁকা পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করি। অল্প চলার পর মুরং পাড়ার কুকুরগুলো আমাদের দেখে বিরামহীনভাবে ঘেউ ঘেউ করে যায়, হয়তো ভাবে ভোর রাতে তাদের এলাকায় কোন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী।

মেঘে ভিজে মাটিগুলো বিপদজনকভাবে পিছলা ছিল, তাই একে অন্যের থেকে কিছুটা ব্যবধান রেখেই নামছিলাম। যতই নিচে নামি বৃষ্টির কোন চিন্হ দেখলাম না, তার মানে শুরুতে যা আমাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিল সেগুলো মেঘ ছিল। প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে আমরা কয়েকজন আগে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে পৌঁছি, অন্যদের জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের ব্যাগ এ যা ছিল সেগুলো দিয়েই সকালের নাস্তা করে ফেলি। সাইদ ভাই, ইশতি ভাই দেখি ঝর্ণার জলে গোসল করার জন্য নেমে পড়েছেন, শেষে আমিও তদের সাথে যোগ দিই। একে একে প্রায় সবাই নেমে পড়েন।

ঝর্ণার গভীর কূপের মত জায়গাটির শীতল পানি একটানা নেমে আসার সব ক্লান্তি মুছে দিয়েছিল। এরপর দলের সাথে পাউরূটি আর জ্যাম দিয়ে নাস্তা করে আমরা কয়েকজন আগেই হাঁটা শুরু করি, উদ্বেশ্য তাড়াতাড়ি রুমা পৌঁছে একটু জিরিয়ে নেয়া। তারপর কখনো ঝিরির ঠান্ডা পানি দিয়ে কখনো জংগুলে পথে, কখনো বড় বড় পাথর ডিংগিয়ে আমরা চলতে থাকি। ইচ্ছে করছিল ঝিরির পাগল করা মৃদু স্রোতে গা ভাসিয়ে দিই। ঝিরিতে কখনো হাঁটু পানি, কখনো কোমর সমান ডুবে যাচ্ছিলাম।

বগামুখপাড়া এসে চা পানের পর আবার একটা হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে একসময় লাইরাম্পির খুব কাছে এসে দেখি আমার প্যান্ট এ রক্তের দাগ, জোঁক মনে করে খুঁজতে থাকি সবখানে। পরে টের পাই আমার কুঁচকিতে ছিঁড়ে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে। রুমা বাজারের খুব কাছে আরো একটা কঠিন বাঁধা তখনো বাকি ছিল, লাইরাম্পি পাড়া। কঠিন খাড়া চড়াই, উঠতে উঠতে আর শেষই হতে চায়না।

এদিকে আমার হার্ট এমন বিট করছিল যেন ফেটেই যাবে। বৃষ্টিতে পিছলা খাড়া পথের ধারে আমাকে কাঁদো কাঁদো মুখে বসে থাকতে দেখেই মনে হয় নামতে থাকা তিন পাহাড়ি তরুণী তাদের ভাষায় কি যেন বলে খিলখিলিয়ে হাসছিল। কোনমতে নিজেকে টেনে লাইরাম্পির একদম উঁচুতে নিয়ে যাই, সেখানে রাখি পানির ট্যাংক থেকে মাথায় ইচ্ছে মত পানি ঢালি, পান করি। এর পর হেলে দুলে নামতে থাকি, পথে চমৎকার মিষ্টি আর বড় সাইজের চম্পা কলা কিনে খাই, একটা মারফা কিনে নিই সবাই মিলে খাবো বলে। রুমা বাজারে ব্যাগপ্যাক রেখে আমি, সৌম্যভাই, সাঈদভাই মিলে যৌবনা সাংগুতে গোসল করতে নামি।

এক হাঁটু পরিমাণ পানিতেও স্রোতের এমন জোর একটু আলগা দিলেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ইশতি ভাই স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কাটতে চাইতেছিলেন, সামনে না এসে উনি পেছনেই যাচ্ছিলেন। সব ক্লান্তি মুছে দিয়েছিল বর্ষার সাংগু নদীতে দূরন্ত সে গোসল। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে যারা রুমা পৌঁচেছেন তাদের কাছে বিদায় নিয়ে আমি আর চন্দনভাই আগেভাগে বান্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাই। লোকাল ট্রলারে কাইক্ষংঝিরি, এরপর বাসে বান্দরবন।

বান্দরবন থেকে সিএনজি অটোতে কেরানীহাট, সেখানথেকে লোকাল মাইক্রোবাসে চট্টগ্রাম শহরে এসে পৌঁছি। বাসায় পৌঁছে কাপড়গুলো বদলে এক ঘুমে পরদিন সকাল। সকালে উঠেই মনে মনে গুন গুন করে উঠি, "কবে যাবো পাহাড়ে, আহারে আহারে........"

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.