আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বসুন্ধরা সিটিতে আগুন এবং সাংবাদিক ভাইদের extra দায়িত্ব (বিষ্ময়বোধক !) ও (প্রশ্নবোধক?)

.

ঠিক তখন আগুনের খবর বা তার পরিস্থিতি সম্পর্কে না যতটুকু জানা যাচ্ছিলো, তার চেয়ে বেশী শোনা যাচ্ছিলো সাংবাদিক-ভাইদের ভেতরে ঢুকতে না দেয়ার অভিমানী সুর। আগুনের লেলিহান শিখা তখনও ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েনি, যা পড়েছিল সিটি’র দায়িত্বে নিয়োজিত একদল নিরাপাত্তা বাহিনীর লাঠি হাতে মলের সম্মুখে রাত জেগে পাহাড়া দেবার নির্দোষ চিত্রকে অপরাধী করে তুলবার এক মহা প্রয়াসের সফল নাট্যচিত্র। গতকাল (পচিশেঁ আগষ্ট,দুই হাজার নয় ইং) রাত প্রায় বারোটা পনের কিংবা তার আগে বা পরে হবে, দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম শপিং মলে আগুন লাগার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আরো উল্লেখযোগ্য হয়ে পড়ে কারণ এক বছরের অর্ধেক সময় পার না হতেই এমন ঘটনা আরো একবার যখন ঘটলো, স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি উদ্বিগ্ন হবারই মতো। এই তো গত তেরো মার্চ’দুই হাজার নয় ইং দেশের ইতিহাসের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ওই প্রতিষ্ঠানের সাত জন কর্মী মারা যান ও আরো কিছু কর্মী আহত হন এবং ওই গ্রুপের কর্পোরেট অফিসের বেশ কিছু ফ্লোর ভস্মীভূত হয়।

রাত তখন বারোটার-ও কিছু বেশী, রিমোটের বাটন গুলি তড়িত গতিতে চেঞ্জ করছি, এ চ্যানেল থেকে ও চ্যানেল। সব চ্যানেলেই একই খবর “আগুন নিয়ন্ত্রনে ………………. র‌্যাব ও পুলিশের সামনে লাঠি হাতে ……………এখানে উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা ……………. নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে ধস্তাধস্তি, মারামারি ……..” মূল খবর দাড়ালো… কেন ঢুকতে দেয়া হলনা, বাধাঁ কেন দেয়া হলো, কর্মীরা কেন লাঠি হাতে দাড়ায়ে, সমস্ত বিষয়টিকে উষ্কে দেয়ার মতন, এহেন কার্যালাপ অতিরঞ্জিত, বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। বিষয়টা এমন হাস্যকর মনে হয়েছে সাংবাদিক ভাইদের আচরণে, তারা আগুনের ভেতর থেকেই নিউজ সংগ্রহ করবেন। সিএনএন, বিবিসি, আলজাজিরা .. দেখেই বুঝি অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের .. ঝড়, যুদ্ধের ভেতর থেকেই যেভাবে তারা খবর সংগ্রহ করেন, সেভাবেই হয়তো তারাও চেয়েছিলেন। আমি মানি এটাই সাংবাদিকতা, নির্ভীক, অকুতোভয় সেনার মতো সংবাদ সংগ্রহে তারা যেতে পারেন যেকোন জাগায়, কিন্তু ভাইয়েরা এটাও মাথায় রাখতে হবে “সেফটি ফার্স্ট” ‘ইগো ক্রাইসিস’-এ ভুগছিলেন বোধহয় সাংবাদিক ভাইয়েরা! তাদেরকে ঢুকতে না দেয়ায় তাদের ইজ্জতে লেগেছে, কারণ তাদের গায়ে লাগানো আছে কোন মিডিয়ার সিল।

আজকাল আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলেই চোখ-মুখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন মিডিয়ার অনেক শক্তি। তারা সব কিছু ওলট-পালট করে দিতে পারে। আসেন এবার একটা গাজাখুড়ি গল্প শুনি ; মিডিয়ার এক সাংবাদিক ভাইয়ের টেলিফোনের আপডেট শুনছিলাম টেলিভিশনে, রাত তখন সাড়ে বারোটারও কিছু পরে। স্টুডিও’তে থাকা সুন্দরী খবর পাঠিকা উদ্বেগহীন কন্ঠে তাকে ফোনে জানতে চাইলেন, “হ্যালে হ্যালো” .. কিছুক্ষন পর লাইনটি কানেক্ট হলো “… হ্যা আমি শুনতে পারছি” … ইত্যাদি ইত্যাদি, এক পর্যায়ে তিনি জানালেন বসুন্ধরা সিটির আশে পাশের কোন এক সুউচ্চ বিল্ডিং-এর কোন বাসিন্দা আট তলায় আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে তিনিই প্রথম ফায়ার বিগ্রেডকে খবর দেন …(অবশ্য তার এ বাক্যের আগে পরে ‘মনে পড়ে’ বাক্যটি যুক্ত করেছিলেন, এটা আমার মনে আছে)। আচ্ছা বলেন, এইটা কিভাবে বিশ্বাস করি, রাত এগারোটা উনপঞ্চাশে প্রথম এলার্ম বাজে এবং তাৎক্ষনিকভাবে ফায়ার ও নিরাপত্তা কর্মী সেখানে উপস্থিত হয় সেখানে রাত বারোটা তিরিশের পরের খবর ‘বাহিরের কারও দেখা প্রথম আগুনের শিখায়, তিনিই ফায়ার বিগ্রেডকে খবর দ্যান”; সত্যি বলতেছি আমি জীবনে বহু আজগুবী গল্প শুনেছি, ছোটবেলায় কল্পকথা পড়েছি, মাঝে সিন্দাবাদের কাহিনীও দেখেছি.. কিন্তু “মনে করা” বা ভাবনায় “ভেবে দেখা” এরকম আজীব সাংবাদিকতা দেখিনি।

(গাজাখুড়ি হলেও গল্পটা সত্যি) হ্যা, সংবাদ সংগ্রহের অধিকার তাদের এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সংবাদ পরিবেশনও তাদের দায়িত্বের প্রথম স্তরেই পড়ে, কিন্তু এমন আচরণ সত্যি দু:খজনক, যখন একজন সাংবাদিকের কাছে এমন অহেতুক উপস্থাপনায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের সুশৃঙ্খল বাহিনীকে অযথা দোষারোপ করা হয়, প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তাদের ছেলেমানুষী দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারিনি, বারবার না করা হচ্ছে কিন্তু তারা ঢুকবেই, এমনটাই যেন, বাবা ছেলেকে বারণ করছে ‘খোকা! ওরে যাসনে’, বাচ্চা ছেলে তখন গগনবিদারী কান্না জুড়ে দিয়ে ‘না আমি যাবোই যাবো’ । ধরা যাক, ১৩মার্চ বসুন্ধরা সিটি’র আগুনের কথা, সেরকম যদি কিছু হতো, যা বাইরে থেকে অনুমান সম্ভব নয়, এরকম পরিস্থিতিতে একজন বা একাধিক সাংবাদিকভাইদের ভেতরে ঢুকতে দিয়ে তাদের জান মালের নিরাপত্তা কে নেবে ? আল্লাহ না করুক যদি কোন দূর্ঘটনা সত্যি ঘটে যায়, তখন কর্তৃপক্ষকে তুলোধুনো করতে কি কেউ বাকী রাখবে ? “কেন নিরাপত্তা ছাড়াই তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হোলো? “ “এমন পরিস্থিতিতে কেন সতকর্তা ছাড়াই তাদেরকে ছাড়া হোলো” “নিউজ কাষ্টিং তো তাদেরকে দিয়ে বাইরের করানো যেতো!, কেন তাদেরকে ভেতরে নেয়া হলো” এরকম হাজারো অবাস্তব এবং কল্পনীয় প্রশ্নে কর্তৃপক্ষকে তখন আর কেউ আস্ত রাখতে চাইতোনা ! এবার আসি কিছু উদাহরণ পর্বে, (ওই রাত্রে আমার পরিচিত একজন কলিগ ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন) এক সাংবাদিক ভাই (বোধহয়)তার বসকে ফোনে বলছে “স্যার, আমাদের সাংবাদিকদেরকে ওরা দাড়াতেই দিচ্ছেনা, আমরা কি এখন অন ইয়ারে যাবো ? ওদের লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের অনেক সাংবাদিককে মেরে শুয়াই দিছে, কয়েকজন হাসপাতালে …. … “ একজনকে বলতে শুনলাম “মামলা করবো…. স্যার” হায়রে বিচিত্র দেশ ! একদিকে ডুবে আর একদিকে ভাসে (নিজ দায়িত্বে বুঝে নিবেন) আর এক সাংবাদিক ভাই ঠেলাঠুলিতে সামান্য আহত মানে পায়ে চোট পেয়েছেন “এই যে ভাই একটু পা’টা সোজা করেন, এই যে এদিকে এদিকে একটু ব্যাকা করেন, আহারে ভাই ক্যামেরায় আসে না তো! . হু হু ঠিক আছে, এই বার শুরু করেন” …. “এইমাত্র এক সাংবাদিক ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন, তার পায়ে প্রচন্ড আঘাতের চিহ্ন ………. তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে” ………………. বলেন, এইগুলো কি হইতেছিলো ওই সময়! সবচেয়ে মজা পাইলাম কাল সকালে যখন, ব্লগের এক ভাই তার এক পোষ্টে ঘটনাস্থলে ‘মৃত’ থাকার গুজবও রটিয়ে দিলেন, যেটা কাল রাতে ছড়ায়নি (বোধহয় ভাইয়েরা ভুলে গিয়েছিলেন) যাক, অনেক হয়েছে, এখন মূল তথ্য দেই … আগুন, নয় কিংবা দশ তলা যেখানে গোল্ডস’জীমের পুরুষ ও মহিলাদের ফ্লোর সেখানে কোন আগুন লাগেনি, যদিও টেলিভিশনে শুরু থেকেই ওই ফ্লোরগুলির কথা বলা হচ্ছিলো। শুধু ওই ফ্লোরগুলিতে আগুনের ধোয়া ঢুকে ফায়ার এলার্মগুলি বেজে উঠে, অবশ্য তার আগে যে স্থান বা খাবার দোকানে আগুনের সূত্রপাত সেখানটার এলার্ম বাজলে ফায়ার কর্মীরা প্রথমেই সেখানে উপস্থিত হন এবং নিজস্ব অগ্নি নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। ততক্ষনে ফায়ার বিগ্রেড টিম চলে আসে।

সংশ্লিষ্ট দোকানে সামান্যই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। কোন হতাহতের প্রশ্নই আসেনা। ……………………. আধুনিক এ স্থাপত্য ঢাকাবাসী’র কাছে এক বিশাল গর্ব। তাই উৎকন্ঠার ব্যপারটিও চোখে পড়বার মতো। বসুন্ধরা সিটির এ ধরনের দূর্ঘটনার সংবাদ যে ‘জাতীয় সংবাদ’ হতে পারে সেটাই স্বাভাবিক, কারণ অবকাঠামোগত একটি সুউচ্চ আধুনিক দালানের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনই সীমাবদ্ধ নয়, এছাড়াও এখানে রয়েছে হাজারো মানুষের রুজি রোজগার এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য।

এখন লেখার সমাপ্তি টানতে চাই, আমরা যারা সাধারণ, সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমাদের বরাবরের মতোই প্রত্যাশা থাকে বস্তুনিষ্ঠ এবং সত্যনির্ভর সংবাদ ও তথ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। মানুষ আমরা এতটাই অবুঝ নয় যে, ক্যামেরর সামনে দাড়িয়ে যা কিছু বলা হবে তার পেছনে যে অন্য কিছু থাকবেনা, তা কিন্তু নয়। সত্য সবসময়ই বেরিয়ে আসে, এটাও যেমন সত্য, মিথ্যা উপস্থাপনে সাময়িক কৃতিত্ব পাওয়া গেলেও কর্তৃত্ব পাওয়া যায়না। সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আহব্বান এমন পরিস্থিতিতে, হাজারো মানুষ আপনাদের কাছ থেকে যেটা শুনবে সেটাই বিশ্বাস করতে চাইবে, কারণ তখন বাছ বিচারের কোন সুযোগ থাকেনা, তাই এমন কোন খবর প্রচার বা উপস্থাপনে বিরত থাকুন যা মানুষের মনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।