আমি জানি ভাল কিছু করার মাঝে প্রকৃত আনন্দ । আমি সব ভালদের সঙ্গী হতে চাই।
সদলবলে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহমেদের প্রশিকা ভবনে ঢোকার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরের ওই ভবন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল শনিবার বর্তমান ও সাবেক কমিটির সমর্থকদের মধ্যে টানা ৬ ঘন্টা সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) প্রশিকা ভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনায় রাত পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।
সদলবলে কাজী ফারুক আহমেদের প্রশিকা ভবনে ঢোকার চেষ্টার কারণে রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় ওই ভবনে শনিবার সকাল থেকে সংঘর্ষ চলছে। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজী ফারুক মিছিল নিয়ে সকাল থেকে বেশ কয়েকদফা ভবনে ঢোকার চেষ্টা চালান।
তবে ভবনের ভেতরে থাকা প্রশিকাকর্মীদের ইট-পাটকেলের মুখে তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কাজী ফারুক লাঠিসোটাসহ কয়েকশ লোকের মিছিল নিয়ে ভবনের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন। তবে দুপুর পৌনে ১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে ওই সময় কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ভবনের সামনে সড়কে কাজী ফারুকের লোকজন অবস্থান নিয়ে প্রশিকা ভবন থেকে কাউকে বের হতে না দেয়ার ঘোষণা দেয়।
অপরদিকে ১৪তলা ওই ভবনের ভেতরে থাকা লোকজনও ইট ছোঁড়ার মাধ্যমে ভবনে ঢোকার চেষ্টা প্রতিরোধ করে। কাজী ফারুক অসুস্থ হওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, আমি প্রশিকার বৈধ চেয়ারম্যান। গত ২৪ জুন এজিএমে (বার্ষিক সাধারণ সভা) আমাকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। আমি আমার অফিসে যোগ দিতে এসেছি। কিন্তু আমাকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
কাজী ফারুকের মিছিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির লোক। তাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সহায়তা করছে। আর ভবনের ভেতরে থাকা লোকজন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনপুষ্ট। তবে কাজী ফারুকের মিছিলের মতো ভেতরে থাকা কর্মীরাও ‘জয় বাংলা' শ্লোগান দিচ্ছিল।
স্থানীয়রা জানান, কাজী ফারুকের সমর্থকরা সকাল থেকেই প্রশিকা ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকে। সকাল ৯টার দিকে তারা ভবনে ঢুকতে চায়। তখন ভবনের ভেতরে থাকা প্রশিকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাধা দেয়। তখন দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ১১টার দিকে কাজী ফারুক মিছিল নিয়ে আসেন।
তবে সকালেও তাকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। কাজী ফারুকের সমর্থকরা অনেকেই পেশাদার গুন্ডার মতো আচরণ করে।
স্থানীয়রা বলছে, পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তবে সে অভিযোগ নাকচ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর অঞ্চলের উপ-কমিশনার চৌধুরী মনজুরুল কবীর। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল না।
সেখানে যা ঘটছে, তা প্রশিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এ কারণে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না হয়, তা আমরা দেখছি।
কাজী ফারুকের বিরুদ্ধে প্রশিকাকর্মীদের অভিযোগ, তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছিলেন। এ নিয়ে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গত ২৪মে কাজী ফারুককে প্রশিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পর্ষদ। তার স্থলাভিষিক্ত হন এডভোকেট মো. আব্দুল ওয়াদুদ আহমেদ।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরদিন কাজী ফারুক হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার পাশাপাশি তাকে প্রশিকার চেয়ারম্যান ঘোষণারও আবেদন করা হয়। ৩১ মে আদালত তার আবেদন নাকচ করে দেয়। কাজী ফারুক ‘ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
প্রশিকার বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, যে জিনিসটি বিচারাধীন রয়েছে সেখানে উনার (কাজী ফারুক) মতো একজন শিক্ষিত উন্নয়নকর্মীর এমনভাবে গুন্ডাবাহিনী নিয়ে হামলা শোভনীয় নয়।
প্রশিকার পরিচালক (মাইক্রোক্রেডিট ফিল্ড অপারেশন) আব্দুর রউফ বলেন, কাজী ফারুকের সন্ত্রাসীদের হামলায় আমাদের প্রায় ৫০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত রাতে পল্লবী থানায় যোগাযোগ করলে ডিউটি অফিসার জানান, এ ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি। তবে সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তিনি আরো জানান, সংঘর্ষ সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর দুটো পর্যন্ত চলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।