পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।
শিরোনামের প্রশ্নটি প্রথম মনের কোনে উঁকি দেয় যখন মহাত্মা আহমদ ছফা এই ধুলির ধরা থেকে বিদায় নেবার জন্য শ্রাবণের ১৩ তারিখে বঙ্গতয় ১৪০৮ সাল কে বেছে নিলেন ।
শ্রাবণ মানেই তো মেঘের (নাকি আঁকাশের ) ক্রন্দন
যাকে আমরা মিষ্টি করে বৃষ্টি বলি
সেই বৃষ্টির দিনে (বা বাদর দিনে )
আনন্দ করে ভেজা যায়
কিংবা বাদুর ঝোলার মত বাসে চড়ে আফিস করে কামলাগিরীও করা যায় কিন্তু মরা কি ঠিক ?
“বৃষ্টিতে তো সবই ভিজে যায়
ওই দেখুন আজিমপুর গোরের লাশগুলিও ভিজে যাচ্ছে “
কে বলল এই কথা
গলাটা চেনা ঠেকে
চিনতে পেরেছি
এতো স্বয়ং আহমদ ছফারই গলা
হুমায়ুন কবির আর ফরহাদ মজহারকে বলছেন তার বিপ্লবী তত্ত্ব
কিন্তু তিনি তো কালের নিয়মে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ।
তার নিজেরই বয়ান -
“অনাদি অনন্তকাল নয় পরমায়ু
প্রাণের সন্তাপ নেবে জল আর বায়ু।
এই প্রাণ অন্ধকারে কোনো একদিন
সময়সিন্ধুর বুকে হয়ে যাবে লীন।
হাওয়াতে খোদাই করা অমর অক্ষরে
আমার করুণ মুখ যুগ যুগ ধরে
সময় সাগর বুকে বিদ্রোহী পদ্মের মতো ছড়িয়ে সুঘ্রাণ
গেয়ে যাবে মুক্তি প্রেম আনন্দের গান। “
-আহমদ ছফা।
মিরপুরের অদুরে তুরাগ তীরে কবরস্থ করার সময় ছফার লাশও কি ভিজে গিয়েছিল ?
ভিজবেই তো “বৃষ্টিতে তো সবই ভিজে যায় ”কিংবা বিপ্লব প্রত্যেকেরই মুক্তি আনে ।
তবে, কি তিনি তার বিপ্লবী তত্ত্ব প্রমানের জন্যই শ্রাবণ কে বেছে নিলেন ?
২। “বৃষ্টি আসলে সবকিছুই ভিজে যায় ”
এই বুলি ছফা প্রচার করেন তার লেখাজোখার শুরুর কাল মানে ষাটের দশকে কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা দরকার যেন তাকে আমরা ষাটের প্রোডাক্ট মনে না করি ।
যা বলছিলাম “সুর্য তুমি সাথী” দিয়ে উপন্যাসের পথে যাত্রা শুরু ছফার কিন্তু সবাই একমত হবেন ছফা আহমদ ছফা হয়ে উঠেছেন “অঙ্কার ” এ এসে । “কার রক্ত বেশী লাল- আসাদের না আমার বোবা বৌয়ের ''- সে মিমাংসার চেষ্টা আছে “অলাতচক্র” বা “একজন আলি কেনানের উত্থান পতনে ” । যাক সে আলোচনা যেহেতু বর্তমান রচনার লক্ষ্য নয় তাই এখানেই বিরতি ।
৩। বোধিসত্ত্ব আলোকিতেশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন -"যতক্ষন জগতের একটি মাত্র প্রাণীবদ্ধ থাকিবে ততক্ষন আমি নির্বান লইব না" ।
আমাদের কালের চিন্তক সলিমুল্লাহ খানের ভ্রম “বোধিসত্ত্ব আলোকিতেশ্বর কি এই জন্মে চাঁটগা বসে আহমদ ছফা নামে নির্বান লইলেন ?”
কিন্তু শুধু নির্বাণই কি যথেষ্ট
বাসনার জয় পরাজয়ই কি শেষ কথা
যদি করুনার যোগ না হয় তবে নির্বাণ আর নাস্তিতে প্রভেদ কোথায় ?
“অঙ্কারে” ছফা যদি সিদ্ধ
“বাংগালী মুসলমানের মন”এসে মননে পক্ক
“বুদ্ধি বৃত্তির নতুন বিন্যাস” এ বিদ্বৎ সমাজের যথাচিত্রক
তবে “পুস্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরান” এ তিনি বুদ্ধ ।
মহামতি বুদ্ধের ন্যায় ছফা তাই তার পুরানের সমাপ্তিতে মুখ খোলেন :
“সকলে আমার মধ্যে আছে , আমি সকলের মধ্যে রয়েছি । …..আমার পাখি পুত্রটি আমাকে যা শিখিয়েছে কোনো বৃহৎ গ্রন্থ , কোনো তত্ত্বকথা কোনো গুরুবানী আমাকে সে শিক্ষা দিতে পারেনি । একমাত্র অন্যকে মুক্ত করেই মানুষ নিজের মুক্তি অর্জন করতে পারে । ”
কিন্তু আমার প্রশ্ন -
ছফা এই বুদ্ধত্ব লাভের পরও
কি করে আমাদের মুক্ত না করেই নিজে
ফানার পথ লইলেন
তাও এই ভরা শ্রাবনে !
আমরা অন্যকে মুক্ত করে মুক্তি আনতে পারি কিনা
সেই পরীক্ষা নেয়ার জন্যই
কি তিনি আমাদের এতিম করে গেলেন ?
আবার তার তত্ত্ব নিয়েও তো ঝামেলা
অন্যের মুক্তির আগে -
নিজের মুক্তি কি নিশ্চিত করা দরকার নয় ?
যে নিজে মুক্ত নয় সে অন্যের মুক্তি আনবে কি ভাবে
নিজের দাসত্ব থেকে মুক্ত না হয়ে অন্যের মুক্তি কি সম্ভব ?
কি জানি বাপু !
সবই ধুয়াশা ঠেকছে
শুধু আশা ছাড়া সবই ধুয়া ধুয়া ধুয়া ধুয়া
কিন্তু আশাও তো বেশ্যা- বলেছেন ল্যুসুন ।
কেউ কি একটু এগিয়ে আসবেন এই বেক্কলকে জ্ঞান দিতে ।
দোহাইঃ
১। ফরহাদ মজহার, যুগান্তর ৩ আগস্ট ২০০১
২। “নির্বাণ”হরপ্রাসাদ শাস্ত্রী রচনা সংগ্রহ ,৩য় খন্ড , কলকাতা ১৯৮৪
৩। ভুমিকার পরিবর্তে , সলিমুল্লাহ খান , আহমদ ছফা উপন্যাস সমগ্র , মওলা ব্রাদার্স , ফেব্রু ২০০৪
৪।
আহমদ ছফা , পুস্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ , সন্দেশ , ফেব্রু ১৯৯৬
৫। আহম্দ ছফার কবিতা ,শ্রী প্রকাশ , ফাল্গুন ১৪০৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।