আমি পূজারী,শুধুই তোমার প্রেমের
১৯ জানুয়ারী,সোমবার। ০৭ ব্যাচের ওরিয়েনটেশন। বেশ ব্যস্ত মনে হচ্ছে তিতিরকে। বিকেল চার টায় বুয়েটের হল রুমে অরিএন্টেশান হবে। যারা এ বছর চান্স পেয়েছে তাদের সবাইকে আজ ডাকা হয়েছে সেখানে।
ভিসি স্যার আজ তাদের সামনে কথা বলবেন। সবাইকে মেইল করে সেকথা জানান হয়েছে। আর বলা হয়েছে সবাই যেন তাদের এডমিসন কোড এবং পাসওয়ার্ড নিয়ে আসে।
তিতির তাড়াতাড়ি তার রুমের দেয়ালে টাঙ্গানো এল.সি.ডি. স্ক্রীণে বুয়েটের পুরো ম্যাপ টা দেখে নিল। কিভাবে যেতে হবে তাও প্রায় মুখস্থ করে ফেললো।
সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে-ভাবতেই তার যেন কেমন লাগছে!অনেক বড় হয়ে গেছি-মনে মনে ভাবল।
বেছে বেছে একটা সুন্দর জামা পরল। বড় ভাইয়া কিনে দিয়েছে। বুয়েটে চান্স পাওয়া উপলক্ষে। গোলাপি রঙের টী-শার্ট আর নীল একটা জীন্স।
ভালোই মানিয়েছে-আয়নায় দেখে বোঝালো নিজেকে। সাদা চূড়ি পরল। মাথায় লাগালো হ্যাট। আর ব্যাগ তো আছেই।
এখন বাজে ৩ টা ৪০।
আরও অনেক সময় বাকি। তারপরেও প্রথম দিন বলে কথা। একটু তড়াতাড়িই বের হতে হবে। তাছাড়া রাস্তাও ঠিক মত চেনে না ও। শুধু জানে পলাশী বাজারের কাছে নামতে হবে।
বাড়ি থেকে বের হবার আগেই আবার ব্যাগ টা ঠিক মত গুছিয়ে নিল সে। ক্রে্ডিট কার্ড, আই.ডি. কার্ড, সিকিউরিটি বক্স সবগুলো ঠিক মত আছে কিনা আরেকবার দেখে নিল।
বাসা থেকে বের হয়েই দেখে লিফট নীচ তলায়। ৫৬ তলা থেকে সিড়ি বেয়ে নীচে না নেমে কিছুক্ষণ ওয়েট করাই ভাল। তাই সে ওয়েট করতে লাগলো।
মিনিট খানিক পরেই লিফট আসলো। তিতির তাড়াতাড়ি চড়লো তাতে। বাটন চাপলো গ্রাউন্ড ফ্লোরের। দেড় মিনিট লাগলো নীচে নামতে। লিফটের ভেতরে একটা লেখা ছিল এরকম-“this lift is installed and maintained by L.Tech under the supervision of ME department,BUET”.এর আগেও সে লেখা্টা অনেক বার পড়েছে কিন্তু কিছু মনে হয় নি।
এই বার পড়তে গিয়ে গর্বে যেন তার বুকটা ভরে গেল। আসলেইতো ,বুয়েটই সেরা।
লিফট থেকে নেমেই একটা ট্রাম পেয়ে গেল সে। সামনের দিকে সিট ফাকা না থাকায় গেল না। একটা মেট্রো ট্রেনে উঠলো।
ওঠার সাথেই ড্রাইভার ক্রেডিট কার্ড বারকোড রীডারের সামনে ধরে ভারার টাকা নিয়ে নিলো।
সিটে বসে তিতির সামনের টিভিতে চোখ রাখলো। সংবাদ হচ্ছে। একটা রোবট খবর পড়ছে। খবরে বলছে যে আজ সারা দেশের সবগুলো ভার্সিটিতে এক সাথে ক্লাস শুরু হচ্ছে।
তিতির এটা আগে থেকেই জানত। সে তার কোলে রাখা ডিজিটাল ডাইরিতে চোখ রাখলো। তার সব বন্ধুরা অনলাইনে স্ট্যাটাস দিয়ে রেখেছে-আজ প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যাচ্ছি। সেও তার স্ট্যাটাস চেঞ্জ করে ওদের মত করেই লিখলো।
মিনিট পাচেক পরেই ট্রেন টা থামলো একটা স্টেশনে।
তিতির নামলো। নেমে দেখে স্টেশন টা একটা বাজারের উপরে। ওর বুঝতে বাকি থাকল না যে এইটাই পলাশী বাজার। কোথায় যেন শুনেছিলো যে পলাশী নামটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিষয়ক কোন একটা যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত। ঠিক জানেনা সে।
পরে জানতে হবে ভাবতে ভাবতে এস্কেওলেটরে করে নীচে নেমে আসে।
সে ভাল ভাবে চারিদিকে খেয়াল করলো। বেশ কয়েকটা রাস্তা এসে মিলে গেছে এখানে। চারদিকে বিশাল বিশাল দালান। কত সুন্দ্র দেখতে।
সবগুলোর ডিজাইন অত্যন্ত চমতকার। এই রকম পরিচ্ছন্ন আর ঝকঝকে তকতকে জায়গা সে আর আগে কোথাও দেখেছে বলে মনে পড়ে না। এক পাশে একটা উচু টাওয়ার-উপরে লেখা-“BUET”। সে রাতে মাঝে মাঝে এই টাওয়ারের আলো দেখতো। তখন কি সে জানত যে এখানেই তাকে একদিন পড়তে হতে পারে!!!
রাস্তার মোড় টা খুবই ব্যস্ত।
এক পাশে ইডেন কলেজ। অন্যপাশে ঢাকা ভার্সিটির হল। হলগুলোর দিকে তাকালে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। কী সাজানো গোছানো। কাচের বাউন্ডারী দেয়ালের মাঝ দিয়ে সবুজ মাঠ দেখা যাচ্ছে।
খুব ভাল লাগে তিতিরের এই ভেবে যে এগুলো এখন সে নিয়মিত দেখতে পাবে। তার মনে এই ধারনা জন্মায় যে তাদের বুয়েটের হলগুলো নিশ্চই আর সুন্দর হবে। সেই পাশে আরও একটা বিল্ডিং দেখতে পেল সে। ভাষা শহীদ বরকত জাদুঘর।
কিন্তু তার তো যাওয়া দরকার বুয়েটে।
ঠিক কোন রাস্তা ধরে যাওয়া দরকার বুঝতে পারছে না। হঠাত তার চোখ পরলো একটা কালো স্ক্রীণে। সেখানে একটা তীর ভেসে উঠলো। পরে লেখা আসলো-“বুয়েটের নবাগত তরুণ শিক্ষার্থীদের স্বাগতম”। তিতির খেয়াল করল তীর বরাবর একটা লাইন।
সে বুঝতে পারলো তাকেও ওখানেই দাড়াতে হবে। সে তাড়াতাড়ি লাইনে দাড়ালো।
ঘড়িতে বাজে ৩ টা ৫৫। এখনো পাচ মিনিট বাকি। অন্য কোন দিক না তাকিয়ে সে সবার সাথে লাইন ধরে এগুতে লাগলো হল রুমের দিকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।