সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
প্রবাসী ব্যাংক ও সংস্কৃতির দিনবদল কবে হবে?
প্রবাসী বাঙালি তথা বাংলাদেশীদের সংখ্যা এখন হেলা-ফেলার নয়। প্রবাসী এই যে বিপুল জনগোষ্ঠী এদের সাথে বিভিন্ন দেশে কথা বলে বুঝেছি-ওদের জন্মভূমির টান স্বদেশবাসীর চাইতেও অধিক। প্রমাণ তো পাঠানো রেমিটেন্স। উদ্বেগ-আকুলতা আর দেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টাতেই চোখে পড়বে। বিনিময়ে তারাও কিছু প্রত্যাশা করেন।
সে প্রত্যাশা যতটা না ব্যক্তিগত তারচে' অধিক সামষ্টিক।
ডিজিটাল সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক চালু করার। এমন সিদ্ধান্তের কথা আমরা যুগ যুগ ধর শুনে আসলেও সে সিদ্ধান্ত সেই তিমিরেই ডুবে গিয়েছে বারবার। এখন যিনি গভর্নর তিনি তো ভিন্ন ধরনের বাঙালি। প্রবাসীরা যেমন হাড় ভাংগা খাটুনী খেটে জীবন গড়েন-তিনিও ছাত্র জীবনে তেমন কস্ট করে জীবন গড়েছেন-তাঁকে নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত নেই।
তিনি কি এ কাজটি সঠকি ভাবে শুরু করে শেষ করতে পারবেন? প্রতি মাসে, প্রতি বছরে আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও মানি এজেন্টের মারফত যে অর্থ দেশে পাঠানো হয় তার একশত ভাগের এক ভাগ খদ্দের জুটাতে পারলেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কপাল খুলে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি নিছক রাজনৈতিক ওয়াদা নাকি সত্যিকার প্রতিজ্ঞা? প্রতিজ্ঞা যদি কার্যকারণে সত্য হয়ে না ওঠে তবে তা স্বপ্ন বলা ভালো দুঃস্বপ্ন আমাদের জীবনে এমনিতেই ভ্রান্তি-বিলাসের পর্যায় নেই, অর্থকড়ি নিয়ে যত কম ভ্রান্তি, যত কম বিভ্রান্তি ততোই মঙ্গল। তবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আইডিয়া বা ধারণাটা কিন্তু মন্দ ছিল না, বর্তমান সরকার এবং সরকারি দলের একটি বিষয়ে কপাল বরাবরই ভালো, সুধিজন, বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া ও দক্ষ বাঙালি সব সময়ই এদের পক্ষে, অর্থনীতিবিদ নামে পরিচিত বিদগ্ধজনদের অনেকেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কনসেপ্ট বা ধারণাটিকে মূর্ত করার অভিজ্ঞতা রাখেন। এদের সততা ও কর্মনিষ্ঠা পরীক্ষিত। ফলে দূর থেকে যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে উদ্যোগ আর নির্দিষ্ট কর্মপন্থার অভাব, সাথে আছে রাজনৈতিক জটিলতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা, দিন বদলের সরকার কিভাবে পরিবর্তন ঘটাবেন? কোন্ যাদুমন্ত্রে? অর্থনীতি যদি সবল হয়, চাকা আপনাতেই ঘুরতে শুরু করবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বা সরকারি সমন্বিত উদ্যোগ-সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখন থেকে তা শুরু করতে না পারলে বিপুলা এই ধরণীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতো চিরদিন ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।
এবার বলি-বিদেশে বাংলাদেশী সংস্কৃতির বিশয়। এ জাতীয় প্রত্যক্ষ সমস্যাগুলো নানাবিধ পরোক্ষ অসুবিধা ও জটিলতার জন্ম দেয়। আমার পরিচিত কানাডায় মাইগ্রেট করা এক বাঙালি দম্পতির সন্তানকে নিয়ে সে কি তুলকালাম ঘটনা- সন্তানের মা কেঁদে আকুল, পিতা দিশেহারা, এক সময় প্রায় ঠিক করে নিলেন, দেশেই চলে যাবেন।
ঘটনা কি? সন্তানটি এখন বয়ঃসন্ধিতে রবি ঠাকুরের ফটিকের বয়সী। জীবনের কোন হিসেব বা অর্থ খুজে পায় না। মনে হয় বাপে তাড়ানো, মায়ে খেদানো, তার ওপর প্রবাসী জীবনের চাপ, ঘরে বাংলা, বাইরে ইংরেজী মাঝখানে স্যান্ডউইচের মতো চিড়ে চ্যাপটা কিশোর বিদ্রোহ করে বসলো। তার ধারণা তার নামটি(মুহম্মদ সাইফুল্লা আকবর) বড় পুরনো, আর ইংরেজী ভাষাভাষীদের উচ্চারণে দুর্বোধ্য ও জটিল! সে নিশ্চিত এ নাম নিয়ে আর যাই হোক জীবনে বড় হওয়া যাবে না- ফলে সে মাইকেল, জন, রিচার্ড এ জাতীয় একটি নাম নিতে আগ্রহী। বেপরোয়া সন্তানের এ আবদারকে মূল্যচ্যুতি ও পরিবার থেকে পৃথক হবার আগাম নোটিস ভেবে পিতা-মাতার ঘুম হারাম।
বিশয়টা শুনে আমি অবাক হলেও দমে যাইনি। আমার বাসায় বেড়াতে এলে ছেলেটিকে ডেকে মাইকেল মধুসূদনের গল্প শোনালাম। বললাম, অশিক্ষিত শিক্ষাহীন এশিয়া, আফ্রিকা বন-জঙ্গলের দেশের মানুষ যদি মাইকেল জ্যাকসন, বারাক ওবামা বা ওয়াশিংটনের নাম নির্ভুলভাবে বলতে পারে সভ্য ইংরেজভাষীরা কেন তোমার চমৎকার নামটি উচ্চারণ করতে পারবে না? জীবনে নিজের গিন্নীকেও আমি কোনদিন কথায় বশ করতে পারিনি। এ ছেলেটি কেন জানি বশ মেনে নিলো, কিন্তু সে তো একা বা বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। তাই সমস্যার উৎসে যেতে হবে, আমাদের যে প্রবল ক্ষমতার সংস্কৃতি তা কি আমরা বাইরে প্রতিযোগিতা বা আত্মগর্বে নিজেরা সন্তুষ্ট থাকলেও বাইরের পৃথিবীকে বশ করা যাবে না।
দেখুন তো কি কাণ্ড! প্রবাসী ব্যাংক এমনকি সংস্কৃতির পৃথিবীব্যাপী বিস্তার কোনটাই কিন্তু ঠিকমতো এগুচ্ছে না, তাহলে দিন বদলটা হবে কিভাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।